সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাম জোটের গণশুনানি ও সাংবাদিকতার নতুন পাঠ


শুক্রবার বাম জোটের গণশুনানিতে উঠে আসা প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা নির্বাচন কতটা অবাধ , সুষ্ঠূ অংশগ্রহণমূলক হয়েছে তার একটি গুরুত্বর্পূণ দলিল। বাম জোটের প্রার্থীরা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। কিন্তু, তারপরও তাঁদেরকে যেধরণের পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে তা অবিশ্বাস্যভাবে গুরুতর। ন্যূনতম গণতন্ত্রেও এধরণের অভিজ্ঞতা জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার ঝড় তোলার কথা। কিন্তু, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে একধরণের নির্লিপ্ততা লক্ষ্যণীয়।

গণমাধ্যম নিজেরা নির্বাচনের যে চিত্র তুলে ধরতে পারেনি সেটি প্রার্থীদের জবানিতেও তুলে ধরার ক্ষেত্রে কার্পণ্য বিস্ময়কর। এটা কী সংর্কীণতা না স্বনিয়ন্ত্রণ (সেলফ-সেন্সরশিপ)? নাকি অন্যকিছূ ? দলীয় আনুগত্য অথবা অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে পক্ষপাত ? নাকি কোনোধরণের ভীতি গণমাধ্যমকে পেয়ে বসেছে?

একটি শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি পত্রিকা মোটামুটি বিশদ বিবরণসম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও ঘোষণা দিয়েছে যে তারা ‘‘could not independently verify the allegations that were raised at the hearing‘‘ প্রশ্ন হচ্ছে, ক্ষমতাসীন জোট বা সরকার যখন বলছে সুষ্ঠূ নির্বাচন হয়েছে তখন পত্রিকাটি কি তা যাচাই করে দেখেছে?

মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় আরেকটি নতুন ধারা যুক্ত হতে চলেছে। এই ধারার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যই সত্য এবং তা যাচাইয়ের অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু, সরকার চায় না বা তাদের ক্ষোভের কারণ হতে পারে এমন তথ্য প্রকাশে সংশয় তৈরি করা।

বাম জোটের প্রার্থীরা যেসব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন সেগুলো মোটেও দু‘একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, যে গণমাধ্যম তা টের পায় নি এবং যাচাই করার সুযোগও ছিল না। গণশুনানিতে ৮০ জনেরও বেশি প্রার্থী তাঁদের প্রায় অভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। এতোগুলো জায়গার এতোসব ঘটনা গণমাধ্যমের দৃষ্টির আড়ালে ঘটে থাকলে তা হবে সাংবাদিকতার এক হতাশাজনক ব্যর্থতা। নির্বাচনের আগে-পরে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাতে এসব অনিয়মের অনেক খবরই প্রকাশিত হয়েছে। তাহলে আবার স্বাধীনভাবে অভিযোগ যাচাইয়ের প্রশ্ন আসছে কেন? নাকি, সাংবাদিকতায় এখন আমাদের নতুন পাঠ প্রয়োজন ?


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ব্লেয়ার কি বাংলাদেশ সরকারের পরামর্শকের ভূমিকা নিচ্ছেন?

সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার প্রায় অঘোষিত এক সফরে গত সপ্তাহান্তে ঢাকা ঘুরে গেছেন। আগে থেকে এই সফরের কথা বাংলাদেশ সরকার কিম্বা তাঁর ইনিস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জ থেকেও ঘোষণা করা হয় নি। সফরের সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁর এই সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও বাংলাদেশ সরকার কিম্বা তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকেও কিছু জানানো হয়নি। তবে ইনিস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জের ওয়েব সাইটে তাঁদের কাজের যে বর্ণনা  দেওয়া আছে তাতে বলা আছে, ’’তাঁরা বিশ্ব জুড়ে রাজনৈতিক নেতাদের নীতি, কৌশল এবং তা বাস্তবায়নের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন এবং তাঁরা এ কাজে প্রযুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন”।  তাঁর এই বেসরকারি সফর সম্পর্কে বাংলাদেশের সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, টনি ব্লেয়ার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক ও ইংল্যান্ড দলের বাংলাদেশ সফরসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরও পরিদর্শন করেছেন। তবে এসব আনুষ্ঠানিকতার বাইরে তাঁর সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে  কোনো তরফেই কিছু বলা হয়নি। বাংলাদেশে মি ব্লেয়ারের এনজিও

একটি জরিপ, নৈরাশ্য ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্ন

উন্নত গণতন্ত্রে সরকার , সরকারপ্রধান, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল এবং বিভিন্ন বিতর্কিত ইস্যুতে প্রায়ই জনমত জরিপ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কখনো বিশ্ববিদ্যালয়, কখনো সংবাদমাধ্যম, আবার কখনো বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব জরিপ করায়। বেশ কিছু পেশাদার জরিপকারী প্রতিষ্ঠানও আছে, যারা শুধু জরিপের কাজ করে। এসব জরিপ আমাদের গণমাধ্যমগুলোর অনলাইন ভোটের মতো নয়, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুধু সেই ওয়েবসাইটের নিয়মিত ব্যবহারকারীদের মতামত ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের দেশে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রায় দুই দশক বার্ষিক জরিপে রাজনীতির গতিপ্রকৃতির চমৎকার প্রতিফলন দেখা যেত। কিন্তু গণতন্ত্রের ক্ষয়সাধনের সঙ্গে সঙ্গে সেই চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়িক প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে জরিপ করতে গেলে সরকারের সায় আছে কিনা সেটা দেখা হয়, নইলে পেশাদার বিশেষজ্ঞরা বা তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলো ওই দায়িত্ব নিতে চান না। কথা বলার ভয়ের মতো মতামত জানতে চাওয়াতেও এক ধরনের ভয়ের আসর পড়েছে। গণতন্ত্র প্রসারে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট, আইআরআই এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তারা এখনো মাঝে মধ্যে স্পর্শকাতর রাজন

ভারত কেন গণতন্ত্রের বদলে স্থিতিশীলতার কথা বলছে

শুরুতেই চলতি সপ্তাহের দুটো খবরের দিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। প্রথমটি  বাংলাদেশের সরকারি বার্তা সংস্থা, বাসসের  ১৭ ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদন। এতে তারা জানিয়েছে, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর বলেছেন, ’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী। কারণ, তিনি স্বৈরাচার থেকে  দেশকে মুক্ত করেছেন।’ ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘৫২ বছরে বাংলাদেশের অর্জন এবং আগামী দশকগুলোতে এই অঞ্চলে এবং এর বাইরে দেশটির অবস্থান’ শীর্ষক একটি আলোচনায় তিনি ছিলেন মূল বক্তা। তিনি আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ’বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় তিনি এখানে দারুণ আনন্দ দেখতে পাচ্ছেন।’   দ্বিতীয় খবরটিও ভারতের আরেকজন সাবেক কূটনীতিকের বক্তব্যসম্পর্কিত, যা তিনি ১৮ ডিসেম্বর ঢাকাতেই একটি দৈনিকের আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলেছেন। বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কে নির্বাচিত হবেন, সে বিষয়ে দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটা বোঝা যে নির্বাচনে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ভারত গণতন্