সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ডিজিটাল অবরোধের মুখে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা

ঈদের দিন ছিল বিশ্ব মুক্ত সংবাদমাধ্যম দিবস। বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষের মতো এবার একইভাবে ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারেনি নিহত সাংবাদিক কোম্পানিগঞ্জের বুরহানউদ্দিন মুজাক্কির ও নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের পরিবার। মুজাক্কির ও ইলিয়াসের পরিবার দুটির জন্য এটি দ্বিতীয়বছরের মত নিরানন্দ ঈদ। 


গত বছর মুক্ত সংবাদমাধ্যম দিবসে এঁদের দুজনের কথাই লিখেছিলাম। মুজাক্কির নিহত হয়েছিলেন ক্ষমতসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের ভাইয়ের পারিবারিক-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে। আশঙ্কা ছিল ওই হত্যার কোনো বিচার মিলবে না। এখন পর্যন্ত সেই আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার মত কোনো আলামত নেই। ইলিয়াস অবশ্য অতটা ক্ষমতাধর কারো বিরুদ্ধে কিছু লেখার জন্য প্রাণ হারান নি , তিনি লিখেছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালীদের বেআইনী গ্যাস চুরির কথা। সেই হত্যার বিচারেও  কোনো অগ্রগতির কথা জানা যায় না। 


প্রায় এক দশক আগে নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত শেষ করার জন্য দেশের সবচেয়ে চৌকস বলে কথিত বাহিনীও গেল ২৬ এপ্রিল ৮৮তম বারের জন্য আদালতের কাছ থেকে সময় নিয়েছে। সময় নেওয়ার শতক পূর্ণ হলেও ওই তদন্ত শেষ হবে, এমন আশা কেউ করেন কি না, জানি না। 


ভারতের জাতীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) এর একটি প্রতিবেদন ছেপেছে দেশটির প্রধান বাণিজ্যবিষয়ক সংবাদপত্র বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, যাতে লন্ডনের ইকোনমিস্ট পত্রিকার একজন সাংবাদিক সুজানা স্যাভেজের একটি টুইট উদ্ধৃত করা হয়েছে । বাংলাদেশের নতুন প্রযুক্তি আইন সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে লেখা প্রতিবেদনে উদ্ধৃত সুজানার টুইটে বলা হচ্ছে, তাঁকে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং পরে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। `বাংলাদেশি টেক ল উড গ্যাগ জার্নালিস্টস, এম্বেড অথরিটারিয়ানিজম` শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সরকার যে ধরনের নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী হয়েছে, তা এক ভয়ের সংস্কৃতি, আতঙ্ক ও ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের জন্ম দেবে। 


সুজানার আলোচিত টুই্টটিতে দেখা যাচ্ছে তিনি হাসপাতালে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর বাসায় ফেরার ছবি দিয়ে বলেছেন, ঢাকা থেকে ফেরার পর দৈহিক-মানসিক আঘাতের কারণে তাঁর মস্তিষ্কে একধরণের সমস্যা (ব্রেন এনিউরিজম) দেখা দেয়, যাতে হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়। তিনি অবশ্য এর আগেও গত বছরের ২৩ আগস্ট ইকোনমিস্টের এক পডকাস্টে ঢাকায় তাঁর হেনস্তা হওয়ার কথা বলেছিলেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁর এই অভিযোগের কোনো জবাব বা ব্যখ্যা দিয়েছে বলে শুনিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বিষয়টির উল্লেখ একেবারে উপেক্ষণীয় বিষয় নয়। 


পিটিআই`র ভাষ্যমতে কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চেয়েও নতুন আইন কঠোরতর এবং বাংলাদেশকে তা কার্যত একটি নজরদারিমূলক রাষ্ট্রে রুপান্তরিত করবে। ভিন্নমত, বাকস্বাধীনতা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার শেষ সুযোগটুকুও কেড়ে নেওয়া হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে গণমাধ্যমশিল্পের উল্লেখযোগ্য বিকাশ হলেও অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম বর্তমান সরকারেরর সমর্থক উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও গণমাধ্যমের মালিকানার মধ্যে এক অসৎ যোগসাজশের প্রতিফলন মেলে। দলীয়ভাবে লাইসেন্স দেওয়া, তাদের আয় নিয়ন্ত্রণ এবং নিবর্তনমূলক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং ডিজিটাল মাধ্যমের সীমারেখা সরকার নির্ধারণ  করে দিচ্ছে। ভারতীয় সংবাদ সংস্থাটি লিখেছে, রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ( এপারেটাস) ব্যবহার করে `অদৃশ্য ভীতি` তৈরি করা হচ্ছে। নিবর্তনমূলক নিয়ন্ত্রণের আইনিব্যবস্থা ছাড়াও গণমাধ্যমের রাজনৈতিক মালিকানার দ্রুত বিস্তারের কারণে গণমাধ্যমে যেধরণের নীতিমালা দাঁড়িয়েছে তা অবাধ তথ্যপ্রবাহে বাধা তৈরি করছে এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে। টেলিভিশন এবং সংবাদপত্র সাংবাদিকতার প্রশ্নে অব্যাহতভাবে আপোস করতে বাধ্য হচ্ছে। তারা স্বনিয়ন্ত্রণ ও সরকারের সমালোচনামূলক কন্ঠ ও মতামত রুদ্ধ করার মাধ্যমে টিকে আছে। 


‘আর মাইরেন না, নিউজ করবো না‘ – বলে প্রলাপ বকা অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিলেন চট্টগ্রামের যে সাংবাদিক, সেই গোলাম সারোয়ারের কথা আমরা সবাই হয়তো বিস্মৃত হয়েছি। আজকের সূর্যোদয় নামের একটি পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরোর এই সাংবাদিক একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর ভাইয়ের অনিয়ম-অন্যায়ের খবর প্রকাশ করার কারণে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অপহরণকারীরা তিন দিন ধরে অকথ্য নির্যাতন চালানোর পর ২০২০ সালের পয়লা নভেম্বর তাঁকে সীতাকুন্ডের বড় কুমিরার এক খালপাড়ে ফেলে রেখে গিয়েছিল। গত বছরেও মুক্ত সংবাদমাধ্যম দিবসে তাঁর দূর্ভোগের কথা লিখেছিলাম। এবার লিখতে হচ্ছে তাঁকে নিয়ে নিষ্ঠুর রসিকতার কথা। পুলিশ তদন্ত করে তাঁকে অপহরণের কোনো প্রমাণ মেলেনি বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। তারপর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার মত সেই মন্ত্রীর ভাইয়ের উল্টো দায়ের করা কথিত মানহানির মামলা তদন্ত করেছে পুলিশের বিশেষায়িত শাখা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হয়রানি ও ভীতিপ্রদর্শনের কারণে অনেকদিন গৃহবন্দী থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি এলাকা ছাড়া হয়েছেন। 


ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যে ভিন্নমত প্রকাশ ও সমালোচকদের ‘শিক্ষা‘ দেওয়ার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, তা সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতেও স্পষ্ট।এই আইনে জামিন পাওয়া একটু কঠিন। আদালতের জামিন দেওয়ার ক্ষমতা যতটুকু আছে এবং জামিন পাওয়ার অধিকার আইনে স্বীকৃত হলেও ডিজিটাল আইনের মামলায় জামিন না দেওয়াই রীতি হয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিন বছর পূর্তিতে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের এক গবেষণায় বলা হয়েছে গত অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ওই আইনে তাঁরা ৬৬৮ টি মামলার সন্ধান পেয়েছেন (সরকারিভাবে এর কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়নি)। এসব মামলার ৮৫ শতাংশই করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আর অভিযুক্ত ব্যাক্তিদের প্রতি চারজনে একজন হলেন সাংবাদিক। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাংবাদিকের সংখ্যাও অসমভাবে বেশি। গ্রেপ্তারকৃত ৪৯৯ জনের মধ্যে ৪২ জনই সাংবাদিক। 


বিশ্ব জুড়ে জনতুষ্টিবা্দী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতাদের উত্থান ও গণতন্ত্র দূর্বল হতে থাকার কারণে  স্বাধীন সাংবাদিকতা ক্রমশই কঠিন হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসী যুদ্ধও রণাঙ্গনের বাইরের স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য নতুন হুমকি যোগ করেছে। ঢাকায় রূশ দূতাবাসের সাম্প্রতিক বিবৃতির কথা এক্ষেত্রে স্মরণ করা যায়। যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ডিজিটাল মাধ্যমেও চলছে নানাধরণের নিয়ন্ত্রণ এবং ভুয়া খবর ও অপপ্রচার। 


মুক্ত সাংবাদিকতায় কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর নিয়ন্ত্রণের নতুন ক্ষেত্র হচ্ছে ডিজিটাল জগৎ। এই পটভূমিতে ইউনেস্কো এবারের মুক্ত সংবাদমাধ্যম দিবসের প্রতিপাদ্য  ঠিক করেছে ডিজিটাল অবরোধে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা (জার্নালিজম আন্ডার ডিজিটাল সিজ)। এই ডিজিটাল অবরোধ ঠেকানো বা ভাঙ্গাই এখন সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রধান করণীয়। ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনিস্টিটিউট (আইপিআই) এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর প্রতি ১০ দফা সুপারিশ দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে ওইসব দেশ যেন স্বদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করে; আইন তৈরি ও প্রয়োগের বেলায় এমন কিছু না করে, যার অনুকরণে কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো এই স্বাধীনতা খর্ব করতে পারে; সামাজিক মাধ্যম ও অনলাইন নিয়ন্ত্রণের আইন যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মান অনুযায়ী হয়; গুজব মোকাবিলার লড়াই যেন এমন না হয় যা নিবর্তনমূলক সরকারগুলোকে আরও খারাপ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ করে দেয়; সাংবাদিক এবং নাগরিক গোষ্ঠীর ওপর বেআইনি নজরদারি থেকে নিবৃত্ত থাকা; সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলার প্রতি শূণ্য সহনশীলতা; সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ওপর হামলার জন্য সরকারগুলোর জবাবদিহির বিষয়টিকে পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রে স্থান দেওয়া।  


সাংবাদিক ও ভিন্নমতের ওপর হামলার জন্য জবাবদিহির বিষয়টিকে পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রে না হলেও গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে নেওয়ার কাজটি অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র করেছে বছরখানেক আগেই। আমাদের মতো দেশগুলোতে তা অবশ্য খুব একটা আলোচিত হয় নি, যেমনটি হয়েছে মানবাধিকারের বিষয়টিতে। ম্যগনেটস্কি আইনে র‍্যাবের সাতজন কর্মকর্তা ও পুরো বাহিনির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণেই আমরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির এই উপাদানটির কথা জানি। সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর হামলা এবং দেশে-বিদেশে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য অনুরুপ আরেকটি নিষেধাজ্ঞার আইন হয়েছে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক সৌদি ভিন্নমতাবলম্বী জামাল খাশোগির হত্যাকান্ডের পর। ওই নিষেধাজ্ঞা খাশোগি নিষেধাজ্ঞা নামে পরিচিত এবং এই আইন প্রথম প্রয়োগ করা হয়েছে সৌদি আরবের ওপর, যখন দেশটির ৭৬ জন কর্মকর্তা ও নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বেলারুশের অজ্ঞাতসংখ্যক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, কার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে, তারা তা আগাম না-ও প্রকাশ করতে পারে। 


এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সুরক্ষায় যৌথভাবে বেশ কিছু কার্যক্রম নিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতারক্ষায় এখন সাংবাদিকতায় নিয়োজিতদের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে ডিজিটাল অবরোধ কতটা অলঙ্ঘনীয় হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি আইন অ উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় বোঝা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো মোকাবিলায় আমরা কি আমাদের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হব, নাকি রাজনীতি ও স্বার্থের ভেলায় ভেসে যাবো? 

(৬ মে, ২০২২-`র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...