সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০১৮ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সরকারের ‘মহানুভবতার‘ রাজনীতি

অনেক মা-বাবার কান্না, সহপাঠীদের চাপা ক্ষোভ এবং নাগরিকসমাজের প্রতিবাদের মুখে প্রথমে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সমর্থক ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকে এবং পরে কোটাসংস্কার আন্দোলনের কয়েকজন নেতা বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ঈদের আগে তাঁদের মুক্তিলাভ পরিবারগুলোতে স্বস্তি এবং আনন্দ এনে দিয়েছে সন্দেহ নেই। এসব ছাত্র-ছাত্রী এবং একজন নারী শিক্ষক কয়েকদিন থেকে কয়েকসপ্তাহ দু:সহ কারাজীবন কাটানোর পর জামিন পেয়েছেন। আদালত তাঁদেরকে জামিন দেওয়ার পর আইনমন্ত্রী বলেছেন সরকার মানবিক কারণে মহানুভবতা দেখিয়ে তাঁদের মুক্তি দিয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘ আমরা মহানুভবতা দেখিয়েছি। এখন আমরা আশা করছি, ওরা আর কোনও গুজবে কান দেবে না, গুজব ছড়াবে না, কোনও গুজবে বিভ্রান্ত হবে না। একইসঙ্গে একজন নাগরিক হিসেবে দেশের প্রতি দরদ, ভালোবাসা, মমতা ও দেশাত্মবোধ দেখাবে ‘ (বাংলা ট্রিবিউন, ২০ আগস্ট, ২০১৮)। ব্যাক্তিজীবনে ত্যাগের শিক্ষা দেয় যে ঈদ, সেই উৎসবের আগে সরকারের এই কথিত ‘ মহানুভবতা ‘ য় মুগ্ধ হয়ে অনেকে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আবার, অনেকে এর মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজেছেন। যাঁরা এর মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছেন তাঁদের

শরণার্থী সংকটে নিরাশার এক বছর

গতবছরের ২৫ আগস্টের রাতটা কেমন ছিল সেটা যদি কুতুপালং কিম্বা কক্সবাজারের অন্যান্য শিবিরে আশ্রয় নেওয়া প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর কাছে জানতে চাওয়া হয় তাহলে সম্ভবত তাঁরা সবাই বলবেন আমরা ঐ দু:স্বপ্ন স্মরণ করতে চাই না। এর দুদিন আগে, ২৩ অগাস্ট, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির কাছে আরাকান রাজ্যের স্থায়ী শান্তি আনার লক্ষ্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান তাঁর সুপারিশমালা পেশ করেন। তার ৪৮ ঘন্টা না পেরোতেই, আগে শোনা যায়নি এমন এক গেরিলাগোষ্ঠী, আরসা ‘ র আর্বিভাব ঘটলো। চরম নিষ্ঠূরতা এবং দূর্নীতির জন্য খ্যাত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জন্য তৈরি হয়ে গেল ধর্মীয় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের অজুহাত। সিরিয়ার মত মিয়ানমারেও তাঁর শান্তির উদ্যোগ এবং পরিকল্পনার করুণ অপমৃত্যু প্রত্যক্ষ করেই গেলসপ্তাহে কোফি আনান পরপারে লোকান্তরিত হয়েছেন। কূটনীতিক কোফি আনানের দূতিয়ালি ব্যর্থ হওয়ার দায় অবশ্য তাঁর একার নয়, পুরো বিশ্বের – আমাদের সবার। কূটনৈতিক মহলে এমন একটি কথা চালু আছে যে সংকট দীর্ঘায়িত করতে হলে জাতিসংঘকে যুক্ত করুন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যের পরস্পরবিরোধী স্বার্থের টানাপোড়েনে অধ

জুলুম এখন নতুন রেওয়াজ

জুলুম বা নির্যাতন এখন নতুন রেওয়াজ বা ফ্যাশন। এগুলো আমার কথা নয় এবং কোনো দেশকে নির্দিষ্টভাবে লক্ষ্য করেও এই বক্তব্য দেওয়া হয়নি, যদিও অনেকেই অনেক দেশের সঙ্গে এর আংশিক বা পুরোপুরি মিল খুঁজে পেতে পারেন। চার বছর ধরে মানবাধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে অনেকটা হতাশার সঙ্গে বিদায় নেওয়ার সময়ে এসব কথা বলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার যেইদ রাদ আল হুসেইন। তিনি বলছেন, বিশ্বে নির্যাতন বা জুলুম আবার ফিরে আসছে। মানুষের অধিকার রক্ষাই হচ্ছে এখনকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ (সূত্র ইউএননিউজ, ১৫ আগস্ট, ২০১৮)।  জর্ডানের রাজবংশের সন্তান এই কূটনীতিক জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের প্রধান পদে আরও এক মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ থাকলেও তিনি সেই সুযোগ নিতে আগ্রহী হননি। গত ডিসেম্বরে তিনি তাঁর সহকর্মীদের কাছে পাঠানো এক ই-মেইলে ওই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। ই-মেইলে তিনি তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত উপলব্ধির যেসব কথা জানিয়েছিলেন, ফরেন পলিসি সাময়িকী সেটির বক্তব্য প্রকাশ করে দেয় (ফরেন পলিসি, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭)। তখনই তিনি বলেছিলেন, মানবাধিকারের সুরক্ষা বা তার পক্ষে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এখনকার পরিবেশটা আতঙ্কজনক। ওই পরিবেশকে তিনি দায়িত

সত্য বলায় সংযত হবেন কেন ?

বহু বছর পর আমরা একটি সাংবিধানিক পদের অধিকারী অত্যন্ত দায়িত্বশীল একজন ব্যাক্তির সরল স্বীকারোক্তি পেলাম। তবে, সত্য যেহেতু সবার জন্য সবসময় সুখকর নয় সে কারণে তাঁর প্রতি অনেকেই কিছুটা নিষ্ঠুর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (প্রনিক) খান মোহাম্মদ নূরুল হুদা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে কোথাও কোনো অনিয়ম হবে না - এমন নিশ্চয়তা দেওয়ার সুযোগ তাঁর নেই। সংবিধানে নির্দিষ্ট শপথবাক্য পাঠের বছর দেড়েক পর দায়িত্বপালনে নিজেদের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করতে পারাই এই স্বীকারোক্তির কারণ কিনা তা আমরা জানিনা। তবে, এই অকপটে স্বীকারোক্তির জন্য আমাদের উচিত তাঁকে ধন্যবাদ জানানো। সাধারণ নির্বাচনের মাস চারেক আগেই দেশবাসীকে এই ঘাটতির দিকটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বরং একটা সুযোগ করে দিয়েছেন যাতে সমস্যাটা সমাধানের চেষ্টা করা যায়।   ক্ষমতাসীন দলের একজন গুরুত্বর্পূণ নেতা এবং মন্ত্রী অবশ্য তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন যে দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের আরও সংযতভাবে কথা বলা উচিত। ক্ষমতাসীন দলের নেতা না হলে প্রনিককে এভাবে সবক দেওয়া যেতো কীনা সন্দেহ। নির্বাচনে অনিয়ম হলে কমিশন কেন তা প্রতিকার করতে পারে না ক্ষমতাসীন দলের এই প্রতিক্র

‘ভালো’ গুজব ও ‘মন্দ’ গুজবের কাল

প্রকৃত সত্যের চেয়েও মানুষের আবেগ ও ব্যক্তিগত বিশ্বাস যখন জনমত তৈরিতে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে, সেই সময়টাকে বলা হচ্ছে সত্য-উত্তর যুগ বা পোস্ট-ট্রুথ এরা। পোস্ট-ট্রুথ ২০১৬ সালের সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হিসেবে আবির্ভূত হলে পরে অক্সফোর্ড ডিকশনারির সম্পাদকমণ্ডলী ২০১৭ সালে এই ব্যাখ্যাটি দিয়েছিল। কেমব্রিজ ডিকশনারি তা আরও সহজ করে বলেছে পোস্ট-ট্রুথ হচ্ছে এমন একটি পরিস্থিতি, যেখানে মানুষ আসল ঘটনা বা সত্যের বদলে তাদের আবেগ ও বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে কোনো একটি যুক্তিকে গ্রহণ করে নেয়। সত্য যেখানে গৌণ, সে রকম রাজনৈতিক পরিবেশের আলোচনাটা যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনের সময় থেকে শুরু হলেও তার অভিজ্ঞতা যে আমাদের দেশে নেই তা নয়। বরং, দিন দিন তা প্রকট হচ্ছে। সত্য গৌণ হলে গুজব, অর্ধসত্য এবং নিরেট মিথ্যার রমরমা প্রসার ঘটতে বাধ্য। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের পটভূমিতে গুজব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তবে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের কথাবার্তা এবং কাজে মনে হচ্ছে এই গুজবেরও দুটো শ্রেণি বা ধরন আছে। একটা হচ্ছে ‘ ভালো ’ গুজব, আরেকটা ‘ মন্দ ’ গুজব। এখানে একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ৬ আগস্ট স্বল্প প্রচ

গুজব, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং হেলমেটবাহিনী

হঠাৎ করে ঢাকা পরিণত হয়েছে গুজবের শহরে। শুধু ঢাকা নয়, পুরো দেশই গুজবের কারখানায় পরিণত হয়েছে। গুজব বন্ধের উপায় হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ার চাপে থাকা মূলধারার গণমাধ্যমকে আরও স্বাধীনতা দেওয়ার বদলে সরকার নিয়ন্ত্রণের পথ বেছে নিয়েছে। এমনকি, সরকারের কট্টর সমর্থক টিভি চ্যানেলও বাদ যায়নি। জনমনে ‘আতঙ্ক এবং জনবিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা’ তৈরির অভিযোগ করা হয়েছে দুটি চ্যানেলের বিরুদ্ধে। সরাসরি সম্প্রচারে উত্তেজনা ছড়ানো সম্প্রচার নীতিমালার পরিপন্থী বলে হুঁশিয়ার করা হয়েছে অন্যদের। মূলধারার গণমাধ্যমে খবর না পেলে বিকল্প পথে গুজব যে আরও ফুলে ফেঁপে উঠবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। সরকার যখন কী কী ঘটেনি বলে ঘোষণা দেয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, কী কী ঘটেছে। গুজবের কারণে সরকার এখন ২৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেটে, বিশেষত মোবাইল নেটওয়ার্কে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। সরকারের বহুল বিজ্ঞাপিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’কে অ্যানালগ যুগে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় বিস্মিত মানুষের মনে যদি প্রশ্ন জাগে, সরকার কিছু গোপন করতে চায় কি না, তাহলে কি সেটা অন্যায় হবে? সাংবাদিকদের ওপর হামলা তো তথ্যপ্রবাহ বন্ধের চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। সপ্তাহখানেক ধরে ‘রাষ্ট্র

যে চক্রে মালিক-শ্রমিক একাকার

স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা সহপাঠী হত্যার বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামার পর তাদের আন্দোলন আর শুধু একটি জোড়াখুনের ঘাতকদের বিচারের দাবিতে সীমাবদ্ধ নেই। তাদের দাবির মধ্যে আছে সড়কের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকগুলো বিষয়। পুলিশ যেসব লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে অক্ষম, যেসব অচল মেয়াদোর্ত্তীণ গাড়ি রাস্তা থেকে তুলে দিতে পারে না তারা সেগুলোর দায়িত্বও ক্ষণিকের জন্য হলেও নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে। আর, তারা একজন মন্ত্রীর অমানবিক আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছে। একজন মন্ত্রীর গাড়িকেও ট্রাফিক আইন না মেনে উল্টো পথে চলায় বাধা দিয়ে তাকে ফিরে যেতে বাধ্য করেছে। এসব প্রতিবাদের মূল কথা হচ্ছে বিচারহীনতা এবং অন্যায়ের অবসান। এই আন্দোলনে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক সমাবেশগুলোর মতো কোনো চাকচিক্যর্পূণ ফেস্টুন নেই, নামী-দামী শিল্পীদের আঁকা ছবি নেই, নিহত সহপাঠীর পোট্রেট নেই। আছে লেখার খাতার সাদা কাগজে হাতে লেখা পোস্টার,  তাও রাজনৈতিক দলগুলোর পোস্টারের চেয়ে একেবারে আলাদা। পোস্টারের লেখাগুলো কোনো পেশাদারের কাজ নয়, আনাড়ি হাতের লেখা। কিন্তু, একেবারে মনের কথাগুলো লেখা। এসব পোস্টারে বহুদিনের জমে থাকা কষ্টের কথা লেখা আছে।