সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শিক্ষাঙ্গণে যৌন হয়রানি ও ক্ষমতার রাজনীতি

তিন–চার দশক আগেও দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মোটামুটি দুই হাতের কড়ায় গোণা যেত বলে কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু একটা অঘটন ঘটলে, তা নিয়ে দেশে একটা তোলপাড় শুরু হতো। কিন্তু এখন রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবলিক) সংখ্যা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তালিকা অনুযায়ী ৫৫টি আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১০টি। ফলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র–ছাত্রীদের নানারকম হয়রানি–নির্যাতন কিম্বা কথিত শিক্ষক ও প্রশাসকদের অন্যায়–অনিয়ম বা দূর্নীতির খবরও আর সংবাদপত্রের পাতায় খুব একটা চোখে পড়ার মতো করে ছাপা হয়না। 


বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে শিক্ষার সঙ্গে যেহেতু বাণিজ্যের বিষয়টি জড়িত এবং অনেক ক্ষেত্রে সেটাই মূখ্য, সেহেতু সেসব প্রতিষ্ঠানে সুনাম তৈরি ও রক্ষার বিষয়গুলো একটু আলাদা গুরুত্ব পায়। রাজনৈতিক নিয়োগ বা রাজনৈতিক ভর্তির ব্যাপারগুলো ততটা চোখে পড়ে না। অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক যোগসাজশ থাকলেও বাণিজ্যের প্রয়োজনে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায় বিষয়টি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। তার অবশ্য অন্য খেসারত যে নেই, তা বলা যাবে না। চিন্তা ও  মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর খড়গ নেমে আসার কিছু কিছু নজির তো মোটামুটি সবারই জানা। 


কিন্তু কথিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। সময়–সময় যেসব দূর্নীতি ও দলবাজির খবর প্রকাশ পায়, তার সমতুল্য কিছু অন্য কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় না। যেমন উপাচার্য হয়ে তাঁর পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়, দূরাত্মীয়, স্বল্প–বেশি–পরিচিতদের যেভাবে নিয়োগ ও ঠিকাদারি দেওয়ার ধুম দেখা যায়, তা রাষ্ট্রের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ওই মাত্রায় প্রায় অসম্ভব। সবার ক্ষেত্রে যে এটি ঘটে, তা নয়। তবে যতগুলো ঘটেছে ও ঘটছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ক্ষমতা ও দূর্নীতি–স্বজনপ্রীতি সমার্থক হয়ে যেতে বেশিদিন অপেক্ষার বোথ হয়  প্রয়োজন হবে না। এসব ক্ষমতার উৎস আবার রাজনৈতিক আনুগত্য এবং তার স্থায়ীত্ব ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর নির্ভরশীল।


দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাড়া আর কারো সভা–সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার অনেক আগেই হরণ করা হয়েছে। মাঝখানে একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ায় কিছুদিনের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা বদলাবে বলে ক্ষীণ সম্ভাবনা তৈরি হলেও প্রশাসনের পক্ষপাত ও ভিন্নমতকে সুরক্ষা দিতে অস্বীকৃতির কারণে তা আর হয়নি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে  ছাত্র সংসদের কোনো নির্বাচনও হয় না, আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কারো কোনো কথা বলার অবকাশও তৈরি হয়নি। সোজা কথায়, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্রলীগই সর্বেসর্বা। 


সম্প্রতি যৌন হয়রানি ও নিপীড়ণের কারণে বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খবরের শিরোনাম হয়েছে। ২০ মার্চের প্রথম আলোর ’যৌন হয়রানির ঘটনা বারবার’ শিরোনামের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ জানানোর কমিটি আছে, যা গঠিত হয়েছে ২০০৯ সালের এক রিট আবেদনে হাইকোর্টের নির্দেশনায়। কিন্তু অভিযোগ জমা পড়ার সংখ্যা ২৭টি এবং তা মাত্র পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই অর্ধেকের বেশি – ১৪টি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি, রাজশাহীতে ৬টি, চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২টি করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের যাঁদের সঙ্গেই প্রথম আলো কথা বলেছে, তারা মোটামুটি নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিয়েছেন যে অভিযোগ করার ব্যবস্থা সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জানে না এবং যত অঘটন ঘটে, তার বেশির ভাগই প্রকাশ পায় না।  

 

পরিস্থিতির আরেকটা খন্ডচিত্র পাওয়া যায় ১৯ মার্চের মানবজমিন পত্রিকায় ’রক্ষকই ভক্ষক’ শিরোনামের প্রতিবেদনে। খন্ডচিত্র বলছি একারণে যে তাদের ওই প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ঘটনার কথা তুলে একটা সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস দেখেছি। কিন্তু, তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ময়মনসিংহের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একইরকম অভিযোগ ও শিক্ষক বহিষ্কারের তথ্যের উল্লেখ নেই। বোঝাই যাচ্ছে সামগ্রিক চিত্র যতটা খারাপ, ততটা পত্রিকার পাতায় একসঙ্গে আসে না। বিচ্ছিন্ন–বিক্ষিপ্তভাবে আসে, যা চোখ এড়িয়ে যায়, নয়তো চোখ সওয়া হয়ে যায়।  


ক্ষমতা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ার প্রভাবে বিচারহীনতার একটা আবহ যে তৈরি হয়েছে এবং অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে, সে কথারও উল্লেখ আছে উভয় প্রতিবেদনে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যৌন হয়রানির অভিযোগ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ছাত্রদের চেয়ে কম নয়। এসব শিক্ষকদের অনেকেই অপেক্ষাকৃত তরুণ। যদিও কোনো বিজ্ঞান ভিত্তিক সমীক্ষা নেই, তবুও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে এসব অপেক্ষাকৃত তরুণ শিক্ষকদের সম্পর্কে যা জানা যায়, তাতে তাঁরা শিক্ষকতা পেশায় ঢুকেছেন বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে এবং তাঁদের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক পরিচয় ও আনুগত্য একটা আবশ্যিক শর্ত। 


রাষ্ট্রীয় পরিসরে ক্ষমতার একচেটিয়াত্বের পরিণতিতে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো কীভাবে ক্ষূণ্ণ হয়েছে, তা নতুন করে বলার কোনো প্রয়োজন নেই।  সেবা খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, পুলিশ, প্রশাসন কারোরই কোনো জবাবদিহির বালাই নেই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমত দমনে কে কতটা সফল বা দক্ষ, তার ভিত্তিতেই পদোন্নতি ও পদক মেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলো এর ব্যতিক্রম নয়। ফলে এখানেও ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা প্রকট রুপ নিয়েছে। সিনেট, সিন্ডিকেট কোথাও কার্যকর জবাবদিহির কোনো ব্যবস্থা নেই। ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীদেরও মতপ্রকাশের কোনো ফোরাম নেই।  


ছাত্রলীগ পরিচয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দাপট দেখানো ছাত্রনেতানেত্রীদের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজি, ঠিকাদারি, সিট বাণিজ্যের মতো অপরাধের অভিযোগের পাশাপশি যৌন হয়রানি ও নিপীড়ণের অভিযোগেরও কমতি নেই। ছাত্রলীগের এ ধরনের অপরাধের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সংবাদ বেশি আসলেও  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাও গত কয়েকবছরে আলোচনায় এসেছে। এমনকি কলেজ পর্যায়েও এরকম অভিযোগ আছে। কিন্তু খুব কমক্ষেত্রেই অপরাধের তদন্ত বা সাজা হয়েছে। যে হাতে গোণা কয়েকটি ঘটনায় সাজা হয়েছে, সেগুলো প্রধানত প্রশাসনিক শাস্তি, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বা স্থায়ী বহিষ্কার। কিন্তু ফৌজদারি অপরাধের যে নির্ধারিত সাজা, তা থেকে তারা রেহাই পেয়ে গেছে।    


ক্ষমতাকাঠামোর এই ভারসাম্যহীনতা বা একচেটিয়াত্ব শুধু আওয়ামী লীগ নয়, অন্য যে কোনো দলের ক্ষেত্রেও যদি তৈরি হতো, তাহলেও যে একই হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি হতো, তাতে সন্দেহ নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এবং একজন সহকারী প্রক্টর গ্রেপ্তার হয়েছেন। তদন্ত হচ্ছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর,  চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ফল মিলেছে। এর আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলপরীর কথা হয়তো সবার মনে আছে। ছাত্রলীগ নেত্রীদের হাতে র‍্যাগিং ও যৌন হয়রানির শিকার ফুলপরীর জন্যও সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনে নামায় অভিযুক্তরা শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। আশার কথা প্রতিবাদের কার্য়কারিতা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। 


(২১ মার্চ, ২০২৪–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...