সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বৈষম্যের উন্নয়নে ধানের দাম


কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশের উন্নয়ন হয়েছে বলেই কৃষক ধানের দাম পাচ্ছে না। উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সরকারি গাড়ি দেওয়ার অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবরটি অত্যন্ত তাৎপ তাৎপর্যপূর্ণ হলেও অধিকাংশ সংবাদপত্রের ভেতরের পাতায় কোনমতে একটুখানি জায়গা পেয়েছে। অনেকে কাগজে আবার সেটুকু জায়গাও হয় নি। হবে কি করে, চারিদিকে এতোসব মুখরোচক এবং উত্তেজক খবরের ছড়াছড়ি।  

শুধুমাত্র ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে কতগুলো খবর হয়েছে তার হিসাব রাখাই তো কঠিন। মোটা দাগে যেগুলো খবর হয়েছে তার তালিকা করলে যেটা দাঁড়ায় তা অনেকটা এরকম: ১.নতুন কমিটিতে পদ বিক্রির অভিযোগ; ২. শিবিরকর্মীর কমিটিতে পদ লাভ; ৩, পদবঞ্চিতদের সংবাদ সম্মেলনে হামলার কারণে মধুর ক্যান্টিনে মারামারি; ৪. অতীতে অন্য সংগঠনের ছাত্রীকে প্রায় বিবস্ত্র করার মত অপরাধে অপরাধীর নিজদলের কমরেডদের হাতে মার খেয়ে আহত হওয়া; ৫. কোটাসংস্কার আন্দোলনের সময়ে রাতেরবেলায় হলের বাইরে বিক্ষোভ করায় সাধারণ ছাত্রীরা তিরস্কৃত হলেও ছাত্রী হলের নেত্রীদের গভীর রাতে টিএসসিতে আপোসরফার বৈঠকে গিয়ে লাঞ্ছিত হওয়া; ৬. রাতের বেলায় রাজু ভাস্কর্যে পদবঞ্চিতদের অবস্থান ধর্মঘট; ৭. টিভি চ্যানেলে এবং ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতাদের ব্যাক্তিগত চরিত্র নিয়ে সহযোগী নেত্রীদের নানা অভিযোগ; ৮. আওয়ামী লীগ নেতাদের হস্তক্ষেপ ও সমস্যা সমাধানের আশ্বাস; এবং ৯. সর্বসম্প্রতি বহিষ্কৃত একজন ছাত্রলীগ নেত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা। 

১০ বছর ধরে প্রতিপক্ষদের ঠ্যাঙ্গানি দেওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠা হাতগুলো যখন নিশপিশ করে তখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ না থাকলে নিজেদের ওপরই শক্তিপ্রয়োগের চর্চা বজায় রাখা প্রয়োজন হয়। নাহলে, হাত-পায়ে জং ধরার আশংকা তৈরি হয় বলেই এই সাংগঠনিক বিবাদের উপকারিতাকে অস্বীকার করা যাবে না। এর সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে ডাকসু ভিপিকে ‘ধাক্কাধাক্কি‘ এবং ইফতার খাওয়ায় বাধা দেওয়া । তাছাড়া, ফেসবুক খ্যাতির যুগে কৃষকের খরচ কমানোর নামে শহর থেকে যাওয়া ছাত্রলীগ নেতারা ধানের শীষ হাতে ছবি প্রকাশই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন?

ফিরে যাই কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য ও উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সরকারি গাড়ি দেওয়ার প্রসঙ্গে। খবরটিতে বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন দর্শনের নিখুঁত প্রতিফলন রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সরকারী গাড়ি হচ্ছে উন্নয়নের প্রতীক। এসব গাড়ি দিয়ে বোঝানো যায় যে গ্রামাঞ্চলেও অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে, গাড়ি চালানোর মত রাস্তা হয়েছে, তা সেই রাস্তা যত খারাপ অথবা ভাঙ্গাচোরাই হোক না কেন। সরকারী কর্মকর্তাদের কৃষির উন্নয়নে মাঠপর্যায়ে আরও সচল এবং সক্রিয় করতে সরকার যে উদ্যোগী তেমন একটা ধারণাও এতে তৈরি করা সহজ হবে, তা সে আসল উদ্দেশ্য যদি আমলাদের খুশি করাও হয়।  

মন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যায় এই উন্নয়ন দর্শনে কৃষির উন্নয়ন মানে কৃষকের উন্নয়ন নয়। কেননা, তাঁর কথায় উন্নয়নের কারণে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু, ফলন ভালো হলেও তা বেচে চাষের খরচ না ওঠায় কৃষক যে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন তাতে কারো কিছুই আসে যায় না। কৃষকের সুরক্ষা সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয় হলে হতাশাগ্রস্ত চাষী যখন মাঠের ধানে আগুন লাগিয়েছেন তখন কৃষির উন্নয়নের নামে আমলাদের জন্য শত শত গাড়ি হস্তান্তর নিষ্ঠুর তামাশা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। কৃষিবিদ কৃষিমন্ত্রী ফলনবৃদ্ধি, উন্নত চাষাবাদ, বীজ-সার-কীটনাশকের মত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতেই পারেন এবং এগুলোর ব্যবস্থাপনায় উৎসাহিত করতে কৃষিবিদদের প্রণোদনাও দিতে পারেন। কিন্তু, কৃষক যদি ফলনের দাম না পায় তাহলে এসব আয়োজনই তো অর্থহীন। তখন তো চাষাবাদ ছেড়ে দেওয়াই তার জন্য ভালো।  

উন্নয়নের এই নতুন দর্শনে কৃষিমন্ত্রীর চেয়ে সম্ভবত আরও একটু বেশি এগিয়ে আছেন খাদ্যমন্ত্রী। তা নাহলে, কৃষকের ক্ষোভকে তাঁর নাশকতা মনে হওয়ার অন্য আর কী ব্যাখ্যা থাকতে পারে ? গত ১৫ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জে সরকারীভাবে বোরো সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধনের সময়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, সরকারকে বিপর্যস্ত ও বিব্রত করতে একটি অশুভ চক্র কৃষকদের উসকানি দিয়ে ধানের জমিতে আগুন দিয়েছে মন্ত্রী হওয়ার আগে খাদ্যমন্ত্রীর পেশাগত পরিচয় ছিল ব্যবসায়ী হিসাবে। তাঁর সেই সময়ের মূল ব্যবসা খাদ্যদ্রব্যের সুনির্দিষ্টভাবে বললে ধানের ব্যবসা। এই ব্যবসার ভেতর-বাইরের সবকিছু তাঁর নখদর্পণে থাকার কথা। সরকারী ধান কেনার প্রক্রিয়ায় কৃষকরা যে কত অসহায় এবং এই ব্যবস্থার পুরো সুবিধাটা যে মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা (ধানকল ও চাতালের মালিক) পেয়ে থাকেন, সেটা তাঁর অজানা থাকার কথা নয়। 

তা ছাড়া, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সরকারী কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে দুপয়সা কামিয়ে নেন সেটাও কোনো নতুন তথ্য নয়। সম্ভবত: সেকারণেই তিনি ওই একই অনুষ্ঠানে বলেছেন যে সরকারী দলের লোকজন কোনো ঝামেলা করবে না। অথচ, একজন ইউএনও এবং একজন জেলা প্রশাসকের উদ্যোগী হয়ে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা ব্যাতিক্রম হিসাবে সংবাদ হয়েছে। অন্য সব জায়গায় কৃষকেরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ধানক্রয়ের যে সরকারী লক্ষ্যমাত্রা তা মোট উৎপাদনের দশ শতাংশেরও কম হওয়ায় বাজার চাঙ্গা করার জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। ঋণখেলাপিদের সুদ মওকুফের জন্যে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার সংস্থান করা গেলেও কাদামাখা কৃষকের ক্ষতি পোষানোর ব্যবস্থা করার সামর্থ্য আমাদের নেই।   

ঈদে সন্তানের চাহিদা মেটাতে পারবেন না বলে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় যে অভাবী কৃষকের আত্মহত্যার খবর দিয়েছে ইত্তেফাক (২১ মে), আমার আশংকা তাকেও না শেষপর্যন্ত নাশকতা বলা হয়। পাঁচ বছর আগে একজন মন্ত্রী নতুন মন্ত্রীসভায় জায়গা না পাওয়ায় টিভি কামেরার সামনেই কেঁদে ফেলেছিলেন, কারণ তাঁর স্বপ্ন ভেঙ্গে গিয়েছিল। যে কৃষক ধান চাষ করেছেন তাঁর স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে প্রতিক্রিয়াটা কী হওয়া উচিত তা নিশ্চয়ই কাউকে বলে দিতে হবে না ? 
 
সরকার কৃষকদের উৎপাদন খরচের ওপরে নির্ধারিত দামে ধান-চাল কিনলে বাজারে ধান চালের দাম বাড়ে। ফলে, এই পদ্ধতি অনেকদিন ধরেই ছালু আছে। কিন্তু, এবারের সমস্যা জটিল হয়েছে যেসব কারণে সেগুলো মোটামুটিভাবে হচ্ছে: ১. প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ভালো ফলন ২. সরকারের অপ্রয়োজনীয় আমদানি; ৩. অতীতের মজুত ব্যবহৃত না হওয়ায় গুদাম না থাকা ;  ৪. মধ্যস্বত্ত্বভোগী হিসাবে চাতাল / ধানকল মালিকদের সংঘবদ্ধ দৌরাত্ম্য এবং ৫. ধান সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের কমিশন বাণিজ্য। অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার মূল কারণ অস্বাভাবিক মাত্রায় আমদানি। নির্বাচনের বছরে বিদেশে টাকা পাচার অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যাওয়ার যে অতীত দৃষ্টান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে তার আলোকে গেল মওসুমে চাল আমদানিতে উৎসাহের একটা ব্যাখ্যা মেলে। ফলে, অল্প কয়েকজন আমদানিকারক আর কিছু মধ্যস্বত্ত্বভোগীর সমৃদ্ধির বিপরীতে লাখ লাখ কৃষকের দূর্ভোগ বাড়া ছাড়া কমার কথা নয়।  

প্রতিবেশী দেশ ভারতে গতবছর এবং এবছরের গোড়ায় কৃষকদের অভূতপূর্ব জাগরণ দেখা গিয়েছিল। বছরখানেকের মধ্যে অন্তত পাঁচবার সেখানকার কৃষকরা মুম্বাই এবং দিল্লির উদ্দেশ্যে দীর্ঘ পদযাত্রা করেছিলেন। মুম্বাইতে ছিল রাজ্য পর্যায়ের আন্দোলন। আর, দিল্লিতে ভারতজুড়ে পরিব্যাপ্ত আন্দোলন। সেখানেও কৃষকদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল ফসলের ন্যূনতম দাম নির্ধারণ, কৃষি ঋণ মওকুফ, খরার মোকাবেলায় বিশেষ সহায়তার মত বিভিন্ন দাবি। গণতন্ত্রে যেমনটি ঘটে থাকে ভারতে তাই হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো কৃষকদের ওইসব দাবিতে নজর দিতে বাধ্য হয়েছে। কৃষকদের দেনা মওকুফের অঙ্গীকার করে কংগ্রেস মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে সরকারগঠনে সফল হয়েছে। আর, জাতীয় নির্বাচনেও কংগ্রেস একই অঙ্গীকার করেছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি নির্বাচনের আগে স্বীকার করেছে যে কৃষক আন্দোলন তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে।

বাংলাদেশে অবশ্য চিত্রটা একেবারেই আলাদা। গণতন্ত্রের নাজুক অবস্থায় এমনকি বামপন্থীরাও কৃষক আন্দোলনের সামর্থ্য হারিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে মন্দ ঋণ অবলোপন, ঋণখেলাপিদের বকেয়া সুদে ছাড় এবং সুবিধাভোগী বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতে নানাধরণের কর রেয়াতে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার সুবিধা দিতে পারলে বিপন্ন কৃষকদের সুরক্ষা দিতে সরকারের এতো অনীহা কেন? উত্তরটা অবশ্য জানা থাকলেও তা বলতে পারার সাহসটা সম্ভবত হারিয়ে গেছে। সরকারের উন্নয়ন দর্শনে সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থ প্রধান নয়, মুষ্টিমেয়ই প্রধান। যেকারণে দেশে বৈষম্য বেড়েই চলেছে। খেতের ধানে আগুন লাগানো কি বৈষম্যের উন্নয়নকেই না বলছে না?
(৩০মে, ২০১৯‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের কলাম।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...