সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সরকারবিরোধীদের তালিকা কেন ও কোন আইনে

গত ২৬ সেপ্টেম্বর একজন পাঠক আমার কাছে একটি সরকারি চিঠির ছবি পাঠান, যেটি পুলিশের বিশেষ শাখা (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) থেকে জারি করা। একটি জেলার বিশেষ শাখার পুলিশ সুপারের (এসপি) চিঠিটি এক দিন আগের, যাতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিএনপিসহ অন্যান্য সরকারবিরোধী সংগঠনের অর্থ জোগানদাতা ও সংগঠকদের নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, মুঠোফোন নম্বরসহ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হয়েছে।
ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে পাঁচজন করে আর জেলা পর্যায়ে আটজনের তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এরপর ঢাকার ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ১ অক্টোবর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, পুলিশের বিশেষ শাখা ২২ সেপ্টেম্বর ৬৪টি জেলার এসপি এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারদের এ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছে (পুলিশ প্রিপেয়ারিং লিস্টস অব বিএনপি-জামায়াত প্যাট্রনস)। তারপর এসপি ও পুলিশ কমিশনাররা ওসিদের তারবার্তা পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজটি করতে বলেছেন।
খবরটি নিয়ে তাৎক্ষণিক তেমন একটা আলোচনা চোখে পড়েনি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ৬ অক্টোবর প্রথমবারের মতো বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে বিরোধীদের দমনের উদ্দেশ্যেই এ ধরনের তালিকা করা হচ্ছে। অভিযোগটি যে গুরুতর, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
তবে মির্জা ফখরুলের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এ সম্পর্কে প্রথম আলোর প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার এই কাজ করতে যাবে কেন? সরকার পুলিশকে দিয়ে এমন কিছু করছে না। এসব ঢালাও অভিযোগ।’ (ঘরে ঘরে গিয়ে পুলিশ বিরোধীদের নাম নিচ্ছে: বিএনপির অভিযোগ।)
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য ঠিক হলে প্রশ্ন ওঠে, পুলিশ কি তাহলে নিজস্ব উদ্যোগে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে? খবরটি সংবাদপত্রে প্রকাশের আগেও সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে ডিবিসি টেলিভিশনেও প্রচারিত হয়েছে। ডিবিসির প্রতিবেদকের কাছে পুলিশের ঢাকার একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, রুটিন কাজের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতাদের তথ্য তাঁরা ফাইলে সংরক্ষণ করে থাকেন। পুলিশের ব্যাখ্যা যা-ই হোক না কেন, রুটিন হিসেবে কিংবা অন্য কোনো কারণে সরকারবিরোধীদের সম্পর্কে বিশেষ খোঁজখবর যে চলছে, তা মোটামুটি নিশ্চিত।
সরকারের অজান্তে, অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেছে বেছে শুধু সরকারবিরোধীদের তালিকা করা হয়ে থাকলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ হওয়ার কথা এবং যে বা যারা এ ধরনের ক্ষমতাবহির্ভূত বেআইনি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। মন্ত্রীর কথায় বোঝা যায়, সে রকম কিছু হয়নি, হলে তিনি তা বলতেন, অভিযোগ নাকচ করতেন না।
পুলিশের বিশেষ শাখার নির্দেশনায় যে সরকারবিরোধী সংগঠনের কথা বলা হয়েছে, তা শুধু রাজনৈতিক দল না হয়ে ছাত্র, শ্রমিক, নাগরিক অধিকার সংগঠনও হতে পারে। শর্ত শুধু একটাই—তারা সরকারবিরোধী কি না। সরকারবিরোধিতা কবে থেকে অপরাধ বা আইনশৃঙ্খলার বিষয় হলো, তা আমাদের জানা নেই। বিরোধী দল অভিধাটিকে পুলিশ কি তাহলে বাংলাদেশ থেকে বিদায় দিয়ে দিয়েছে? সবাইকে কি এখন শুধু সরকার সমর্থক হতে হবে?
বাংলাদেশের সংবিধান বলছে, রাষ্ট্র সবার সমমর্যাদা ও সম–অধিকার নিশ্চিত করবে (অনুচ্ছেদ ২ক) এবং সবাইকে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হলো {৩৯(১)}। আরও বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে’ (৩৮)। চিন্তার স্বাধীনতার ভিত্তিতে সমিতি বা সংগঠন করার অধিকার চর্চাকারী সরকারের বিরোধিতা করলে তার অধিকার সরকার সমর্থকের চেয়ে কম বা আলাদা হবে কেন?
সংবিধানেই বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না’ (৩২)। সুতরাং পুলিশ কোন আইনে সরকারবিরোধীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে এবং তালিকা করে তা সংরক্ষণ করছে, সে প্রশ্নের উত্তর প্রয়োজন। তা ছাড়া এসব তথ্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হচ্ছে বা হবে কি না, সে প্রশ্নও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
কোনো অপরাধের সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কোনো নাগরিক সম্পর্কে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, যেমন তিনি কাকে চাঁদা দিয়েছেন, কাকে কী বাবদ অর্থ দিয়েছেন—এসব বিষয়ে খোঁজখবর করা, অন্য কথায়, তদন্ত করার আইনগত অনুমতি কোনো বাহিনীর নেই। আর সম্ভাব্য অপরাধের তদন্তও ঢালাও হতে পারে না। সব জেলার উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্দিষ্টসংখ্যক নেতা একযোগে কোনো অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা করছেন, এমন অবিশ্বাস্য ও উদ্ভট দাবি নিশ্চয়ই কেউ করবে না। এর পেছনে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকার প্রশ্নটির যৌক্তিকতা তাই সহজে নাকচ করা যায় না।
নির্বাচনের বছরখানেক আগে এ ধরনের সংবিধানপরিপন্থী ও বেআইনি উদ্যোগ নিয়ে বিরোধী রাজনীতিকেরা যে বিচলিত বোধ করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। ২০১৮ সালের বহুল বিতর্কিত ও সমালোচিত নির্বাচনের কিছু ঘটনা এখানে স্মরণ করা যেতে পারে। হঠাৎ তখন বিভিন্ন জায়গায় পুরোনো মামলা থাকার অজুহাতে বিরোধী দলের সংগঠক ও কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হতে থাকে। ভোটের এক দিন আগে, এমনকি ভোটের দিন সকালে প্রার্থীর এজেন্টদের অনেককে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে দিন শেষে দূরে কোথাও ছেড়ে দেওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। মুঠোফোন নম্বর ও ঠিকানা যে এ ধরনের কাজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিএনপি ও অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সম্প্রতি জনজীবনের সংকট, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্নকারী বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যখন একের পর এক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে, তখন ক্ষমতাসীন দলের কর্মী হামলা ও পুলিশের মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের ঘটনাও বাড়ছে।
আর সেসব সহিংসতার পর পুলিশ ইতিমধ্যে যেসব মামলা দিয়েছে, সেগুলোয় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যাও ইতিমধ্যে দাঁড়িয়েছে কয়েক হাজার। সরকারবিরোধী নেতা–কর্মীদের তালিকা তৈরির খবরে তঁাদের মধ্যে ভীতি ছড়ানোর সম্ভাবনাও প্রবল। সরকারবিরোধীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে তঁাদের আন্দোলনবিমুখ করার কৌশল হিসেবেও যদি এ ধরনের তালিকা তৈরি করা হয়, তাহলেও এ বেআইনি কাজ সমর্থনযোগ্য নয়।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, তিনি এসপি ও ডেপুটি কমিশনার পর্যায়ের সাতজনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাঁদের কথায় এ কার্যক্রমের বিষয়টি স্পষ্ট। তিনি নাম উল্লেখ না করে বিশেষ শাখার একজন পদস্থ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করেছেন, যিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগে এমনটি করাই হয়। বর্তমান সরকার যেহেতু ক্ষমতায় আছে একটানা ১৩ বছর, সেহেতু ধরে নেওয়া যায়, ওই কর্মকর্তা বর্তমান সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর কথাই বুঝিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগে এসব লোকজনকে আগে থেকেই নজরদারিতে রাখা হয়, যাতে তাঁরা কোনো সহিংসতা বা নৈরাজ্য তৈরি করতে না পারেন। আর্থিক লেনদেনেও নজরদারি করা হয়। সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের তহবিলের বিষয়ে নিরীক্ষা ও তদারকির অধিকারী হচ্ছে একমাত্র নির্বাচন কমিশন। কমিশনের এ ক্ষমতা ও এখতিয়ারে অন্য কারও হস্তক্ষেপ বিস্ময়কর। এমনকি আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ মিললে, তা-ও তদন্তের এখতিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের।
পুলিশ এবং প্রশাসনের কথিত অতি উৎসাহী অভিযোগ এর আগেও বহুবার শোনা গেছে। কিন্তু শুধু সরকারবিরোধী হওয়ার কারণে কোনো রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীকে বিশেষ নজরদারির আওতায় আনার মতো কার্যক্রমের বিষয়ে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কেউই দায় এড়াতে পারে না।
পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বাহিনীর সব কাজে সরকারের আইনগত কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা। তাই তাদের অজ্ঞাতে এমন কার্যক্রম সরকারের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাধ্য। আর নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধীদের কোণঠাসা করা বা তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণে নীরব দর্শক হিসেবে নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না। কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যত রাজনৈতিক বিতর্কই থাকুক না কেন, এ কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে তাদের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

(১৩ অক্টোবর, ২০২২–’র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

স্বৈরতন্ত্রের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার নিকৃষ্ট পরিণতি

ছাত্র–জনতার অভ্যূত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত মন্তব্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। গত ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণ এবং সম্প্রতি মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতায় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য – এই দুইয়ের একটি যে অসত্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিতর্ক শুরু হওয়ার পর তাঁর দপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা–ও অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। তিনি সর্বশেষ বিবৃতিতেও মতিউর রহমান চৌধুরীকে অসত্য কথা বলার বিষয়টি স্বীকার যেমন করেন নি, তেমনি এমন দাবিও করেননি যে তাঁকে ভূলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।  ৫ আগস্ট যদি তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রশ্নে অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তা খুবই গুরুতর হিসাবে বিবেচিত হতে বাধ্য। কেননা তা ছিল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের তথ্য। আবার যদি তিনি মানবজমিন সম্পাদকের কাছে আলাপচারিতায় অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তাঁর কাছে যে দেশবাসী প্রশ্নের জবাব চাইতে পারে, তা হলো অর্ন্তবর্তী সরকার যখন সবকিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছে, দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তখন তিনি কেন এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন? তাঁর উদ্দ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...