সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গল্প বলার স্বাধীনতা চাওয়া নিয়ে যত কথা

 এমন দিন খুব বেশি একটা আসে না, যেদিন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী পত্রিকায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সামগ্রিকভাবে শিল্পকলা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ পায় গত অক্টোবর সেটাই হয়েছে বিশ্ব জুড়ে অনলাইনে পত্রিকাটি পড়ে প্রায় কোটি ৮০ লাখ পাঠক সেই নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, যাতে বাংলাদেশের সিনেমার সাম্প্রতিক কিছু ভালো আলোচিত চলচ্চিত্রের কথা উঠে এসেছে তবে দূর্ভাগ্য উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে প্রতিবেদনটির বিচার্য আলোচনা মূলত সেন্সরশিপ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষীয় হয়রানি   

প্রতিবেদনের শুরুতে বাংলাদেশের তারকা পরিচালক মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর `শনিবার বিকেল` ছবিটির ছাড়পত্র না পাওয়ার কথা বলা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের দিল্লি প্রতিনিধি মুজিব মেশাল ঢাকার সাংবাদিক সাইফ হাসনাত তাঁদের যৌথ প্রতিবেদনে বলেছেন, ফারুকী তাঁর চলচ্চিত্রটির চিত্রায়নের আগেই তার কাহিনির নাট্যরুপের পান্ডুলিপি তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে অনুমোদন নিয়েছিলেন বাংলাদেশীদের পাশাপাশি ভারতীয় ফিলিস্তিনি শিল্পীদের কাজে নেওয়ার বিষয়েও অনুমতি নিয়েছেন ২০১৬ সালে ঢাকায় বেকারিতে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার ওপর নির্মিত ছবিটি বিদেশে বিভিন্ন উৎসবে প্রদর্শিত হয়ে প্রশংসিত হয়েছে , পুরস্কার পেয়েছে; কিন্তু সরকার দেশের ভিতরে তা প্রদর্শনের অনুমতি দিচ্ছে না 


তিন বছর ধরে ফিল্ম সেন্সর বোর্ড ফারুকীর আপিল প্রত্যাখ্যান করে চলেছে, কিন্তু তাঁর কথায় কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানানো হচ্ছে না তিনি আরো জানিয়েছেন, ছবিটি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে পারে কিম্বা ধর্মীয় অস্থিরতা তৈরি করতে পারে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্লেষক অধিকারকর্মীরা এই ছবিটিকে ছাড়পত্র না দেওয়ার বিষয়টিকে অবাধে মতপ্রকাশের সুযোগ সঙ্কুচিত করার আলামত হিসাবে বর্ণনা করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা তাঁদের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গীবাদের বিশ্বাসযোগ্য হুমকি রয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি জনগণকে দারিদ্রমুক্ত করার কার্যক্রমকে কক্ষচ্যূত করে দিতে পারে 

    

শুধু ফারুকীর শনিবার বিকেল নয়, সৈকত নাসিরের বর্ডার ছবিটির ছাড়পত্র আটকে দেওয়ার কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক ছবিটির কাহিনি বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলের, যাতে ভারতীয় একজন নেতার খুন বিভিন্ন অপরাধের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সেন্সর বোর্ড ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলে ছাড়পত্র দেয় নি ছবিতে সাতক্ষীরা অঞ্চলের একজন গডফাদারের কাছে এলাকার মন্ত্রী- এমপিরা জিম্মি এমন দৃশ্যায়ন থাকায় বোর্ডের পরিচালক জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলে বাস্তবে এরকম কোনো পরিস্থিতি নেই চলচ্চিত্র যে কল্পনানির্ভর সৃজনশীলতা, তা ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তারা বুঝতে চান না বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে 


সাম্প্রতিককালের আলোচিত ছবি `হাওয়া`-এর পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে ছবিতে পাখি খাঁচায় আটকে রাখার দৃশ্য দেখানোয় যে মামলা হয়েছে, সে প্রসঙ্গও বাদ যায় নি মেজবাউর পত্রিকাটিকে বলেছেন, পাখিটিকে অল্পসময়ের জন্য খাঁচায় রেখে চিত্রায়নের কাজ শেষে ছেড়ে দেওয়ার পরও অভিযোগ উঠেছে `` যে কোনো কিছুতেই যে কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে`` উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, পাখিটিকে মুক্ত করে দেওয়ার পর মনে হয়, ‘আমিই খাঁচায় আটকে গেছি‘ পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদের সময় খিস্তি-খেউড় করার জন্য `নবাব এলএলবি` ছবিটির কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে স্মরণ করা যেতে পারে, নবাব এলএলবি ওয়েবসিনেমার পরিচালক প্রযোজককে কারাগারে যেতে হয়েছিল এবং সরকার-ঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি তখন তাদের পাশে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল আর তখন পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা জারি করা হয় যে কোনো নাটক-সিনেমায় পুলিশের চরিত্র চিত্রায়ন করতে হলে তা যেন তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না করে এবং সেজন্যে পুলিশকে আগাম কাহিনি সংলাপ দেখিয়ে নিতে হবে


কয়েক সপ্তাহ আগে নির্মাতা, শিল্পী কলা-কুশলীরা যে প্রতীকি সেট তৈরি করে কাঁটাতারের ওপারে বসে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, তার ছবিটিকে প্রধান ছবি হিসাবে ব্যবহার করে পত্রিকাটি সেখানে সিনেমা জগতের শিল্পীদের দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরেছে বিধিনিষেধ চলতে থাকলে তাঁরা যে তাঁদের কথা বলতে পারবেন না, সে কথাই ছিল সেই সংবাদ সম্মেলনের মূল বক্তব্য তাঁদের পিছনে টাঙ্গানো ব্যানারে লেখা ছিল ` গল্প বলার স্বাধীনতা চাই` নিউইয়র্ক টাইমস দুই বাংলায় জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসানের কথাও জানিয়েছে জয়া বলেছেন, শিল্পের ওপর চাপ সৃষ্টির সব পদক্ষেপ বন্ধ করতে হবে শুধু চলচ্চিত্র নয়, সবধরণের শিল্পে স্বাধীনতা থাকতে হবে- অন্যথায় আমরা কীভাবে লিখবো, অভিনয় করবো , কিম্বা আমাদের নিজের ভাষায় কথা বলবো? এসব সমালোচনাকে ক্ষমতাসীন দল কীভাবে দেখছে? পত্রিকাটি লিখেছে, আওয়ামী লীগের কর্মকর্তারা চলচ্চিত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকার সমালোচনায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে দাবি করেছেন। 


জুলাই মাসে হিরো আলম নামে খ্যাত সামাজিক মাধ্যমের তারকা আশরাফুল আলমকে পুলিশ আটক করে মুচলেকা নিয়ে মুক্তি দেওয়ার ঘটনাটিও পত্রিকাটি মনে করিয়ে দিতে ভোলেনি বেসুরো গান গাওয়ার জন্যই তাকে পুলিশ আটক করেছিল, কারণ অভিযোগ হচ্ছে, এতে করে বাঙালি সংস্কৃতির অবমাননা হয়েছে পুলিশের উপ-কমিশনার হাফিজ আল আসাদকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ``বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে বিকৃত করে এমন কোনো ব্যাঙ্গাত্মক অবমননাকর আধেয় সে তৈরি প্রকাশ করবে না,  এমন লিখিত মুচলেকা দেওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে`` পুলিশের বক্তব্যে দেশের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার কী অভাবনীয় চিত্র ফুটে উঠেছে, তা নিশ্চয়ই নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না     

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কীভাবে ক্রমশই খর্ব হচ্ছে, তার বিবরণে লেখক-সাংবাদিকদের কথাও বাদ যায় নি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক হওয়ার পর কারাগারে লেখক মোশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকার সমালোচনার কারণে তাঁকে আটক করা হয় অন্তত অর্ধডজনবার তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কীভাবে ভিন্নমত সমালোচনা বন্ধের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, তার বিবরণও দিয়েছে পত্রিকাটি সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের গবেষণা উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, আইনে ২২০০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন আর আর্টিকেল নাইন্টিনকে উদ্ধৃত করে নিউইর্য়ক টাইমস লিখেছে, গত ৯মাসে প্রধানমন্ত্রী তার ঘনিষ্ঠ রাজনীতিকদের সমালোচনার জন্য মামলা হয়েছে ২৫টি  ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন পত্রিকাটিকে বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি বার্তাকক্ষ সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনামূলক কোনো খবর প্রকাশের আগে দু`বার ভাবে 


নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, বিশ্লেষক অধিকারকর্মীরা বলছে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের মধ্যেকার পার্থক্য বিলীন হয়ে গেছে আগামী নির্বাচনে মেয়াদ নবায়নের লক্ষ্যে শাসনক্ষেত্রে যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা কর্তৃত্ববাদি আগের নির্বাচনগুলো ভোট জালিয়াতি বিরোধীদের ভীতিপ্রদর্শনের জন্য বিতর্কিত বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে  প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি বিপ্লব বড়ুয়া নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, অবাধে মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে যারা দাবি করছে, তারা আসলে সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রচার চালাচ্ছে তিনি বলেছেন, আমরা সংবিধানে নিশ্চিত করা সব অধিকার সমুন্নত রাখতে চাই ক্ষমতাসীন দলের ব্যাখ্যা যে সবাই গ্রহণ করছে না, তা–ই উঠে এসেছে  `আর্ট উইদারস ইন কান্ট্রি হয়্যার এনিথিং ক্যান বি ডিমড থ্রেট` শিরোনামের প্রতিবেদনে 

 

গণতন্ত্রের দৈন্যদশায় কর্তৃত্ববাদের প্রবণতা যে রাজনীতির গন্ডি ছাড়িয়ে সংস্কৃতির অঙ্গণেও প্রসারিত হবে, তা অপ্রত্যাশিত নয় যা অপ্রত্যাশিত, তা হলো, বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গণের যে চিত্রটি বিশ্বের সামনে প্রকাশ পেল, তা সুখকর নয়। আমরা অবশ্য আরো জানি নিয়ন্ত্রণের খড়গে দেশে যাত্রা অনুষ্ঠানের চর্চা বন্ধ হয়ে গেছে,বাউল শিল্পী রীতা দেওয়ান, কার্টুনিস্ট কিশোরকে জেল খাটতে হয়েছে। হতাশার কথা হলো, সংস্কৃতি অঙ্গণে অধিকারের লড়াইটা সেভাবে গড়ে উঠছে না, রাষ্ট্র ও কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকতার জালে তা আটকা পড়ছে। 

(৬ অক্টোবর, ২০২২–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

স্বৈরতন্ত্রের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার নিকৃষ্ট পরিণতি

ছাত্র–জনতার অভ্যূত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত মন্তব্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। গত ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণ এবং সম্প্রতি মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতায় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য – এই দুইয়ের একটি যে অসত্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিতর্ক শুরু হওয়ার পর তাঁর দপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা–ও অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। তিনি সর্বশেষ বিবৃতিতেও মতিউর রহমান চৌধুরীকে অসত্য কথা বলার বিষয়টি স্বীকার যেমন করেন নি, তেমনি এমন দাবিও করেননি যে তাঁকে ভূলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।  ৫ আগস্ট যদি তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রশ্নে অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তা খুবই গুরুতর হিসাবে বিবেচিত হতে বাধ্য। কেননা তা ছিল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের তথ্য। আবার যদি তিনি মানবজমিন সম্পাদকের কাছে আলাপচারিতায় অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তাঁর কাছে যে দেশবাসী প্রশ্নের জবাব চাইতে পারে, তা হলো অর্ন্তবর্তী সরকার যখন সবকিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছে, দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তখন তিনি কেন এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন? তাঁর উদ্দ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...