সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ বিতর্কে কিছু প্রশ্ন

 নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে কিম্বা রাজনীতিতে সংকট তৈরি হলে ঢাকায় কূটনীতিকদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এসব কূটনীতিকে কার সঙ্গে কথা বলছেন, কোথায় কী মন্তব্য করছেন – এগুলো বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। তবে অতীতের তুলনায় বর্তমান সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এ বিষয়ে অসহিষ্ণুতা ও অস্থিরতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গুমের শিকার পরিবারগুলোর সংগঠন ’মায়ের ডাক’ –এর সংগঠক সানজিদা ইসলামের বাসায় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গেলে সেখানে এক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাষ্ট্রদূত যখন সে বাসায় গেলেন, তখন সেখানে মায়ের কান্না নামের অন্য আরেকটি সংগঠনের সদস্যরা একটি স্মারকলিপি নিয়ে হাজির হন। ১৯৭৭ সালে তখনকার সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার বিরুদ্ধে  অভূত্থান ও পাল্টা অভ্যূত্থানের পালায় নিহত এবং বিতর্কিত সামরিক বিচারে ফাঁসি হওয়া সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের পরিবারগুলো সেসব ঘটনার তদন্ত ও বিচারের দাবিতে সংগঠিত হয়ে গড়ে তুলেছে ’মায়ের কান্না’ নামের সংগঠন। সম্ভাব্য হাঙ্গামার আশঙ্কায় বৈঠক শেষ না করেই রাষ্ট্রদূত হাসকে সেখান থেকে চলে যেতে হয়। 


ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রীরা রাষ্ট্রদূতের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশসহ নানা রকম মন্তব্য করেছেন। কোনো কোনো মন্তব্যে কূটনৈতিক শিষ্টাচারও মানা হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন ধারনাও দিতে চেয়েছেন যে ওই বৈঠকের কর্মসূচি সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনো আগাম তথ্য ছিল না। ঘটনার আকস্মিকতায় তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাকি ইউনিফর্ম পরারও সময় পাননি। আর তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, “‘মায়ের কান্না’র স্মারকলিপি রাষ্ট্রদূত নিজে অথবা তার অধীন কর্মকর্তারা গ্রহণ করলে পিটার হাস’ বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতেন।” কূটনীতিকদের ঢাকা শহরেও নিরাপত্তার দায়িত্ব হচ্ছে পুলিশের কূটনৈতিক সুরক্ষা ইউনিটের এবং তাদের আগাম না জানিয়ে পশ্চিমা দেশের কোনো কূটনীতিকের কোথাও যাওয়ার কথাও নয়। সুতরাং ওই কর্মসূচি সম্পর্কে পুলিশের কাছে আগাম তথ্য না থাকার দাবি বিস্ময়কর।  সামরিক শাসনামলের অন্যায়–অবিচারের অভিযোগের তদন্ত ও বিচার যেখানে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব, সেখানে একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে এবিষয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার যৌক্তিকতাও স্পষ্ট নয়। গুমের ক্ষেত্রে অভিযোগগুললো তদন্তে সরকার অস্বীকৃতি না জানালে নিশ্চয়ই তাতে বিদেশিদের নাক গলানোর সুযোগ থাকত না?


বিষয়টি নিয়ে সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত ও অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে এখন অন্য আরেকটি দেশের রাষ্ট্রদূত বিবৃতি দিয়ে বলছেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনো দেশের  হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। রুশ রাষ্ট্রদূতের এই আকস্মিক বিবৃতি, যা ক্ষমতাসীন সরকারের অবস্থানের প্রতি সমর্থন প্রকাশ ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়, সেটাও কি একধরণে নাক গলানো নয়? এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার বলেছেন যে রাষ্ট্রদূতকে রাস্তায় স্মারকলিপি দেওয়া সঠিক কোনো প্রক্রিয়া নয়। এ কথাটা দুই দিন আগে তিনি কেন বলেননি, তা আমাদের বোধগম্য হয় না। 


দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কথিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ সম্পর্কে বর্তমান সরকারের নীতিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এর দ্বিমুখী বৈশিষ্ট্য। পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের যেখানে বলা হয় অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কূটনীতিকদের আচরণ ও অধিকারবিষয়ক চুক্তি ভিয়েনা সনদের পরিপন্থী, সেখানে অপশিচমা দেশের বেলায় এরকম হস্তক্ষেপ সরকারের জন্য সহায়ক মনে হলে তখন তাকে বরং উৎসাহিত করা হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে প্রভাবিত করতে ভারতের তখনকার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের হস্তক্ষেপ এক্ষেত্রে স্মরণ করা যায়। আর চলতি বছরেই আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন তাঁর সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে তিনি ভারতের সাহায্য চেয়েছেন। রাশিয়ার সর্বসাম্প্রতিক সহায়তাকেও (বিবৃতি) সরকার নিশ্চয়ই প্রত্যাখ্যান করবে না?  


ভিয়েনা সনদ নিয়ে যে সরকারের এত কথা, সেই সনদের ব্যাখ্যা নিয়ে কিন্তু কোনো সর্বজনীন ঐকমত্য নেই। এডিনবরা ইউনিভার্সিটির স্কুল অব লর আইনের রিডার পল বেহেরেন্স  তাঁর ’ডিপ্লোম্যাটিক ল ইন এ নিউ মিলেনিয়াম’ এ ’দ্য ডিউটি অব নন ইন্টারফিয়ারেন্স’ অধ্যায়ে এবিষয়ে বেশ কিছু দৃষ্টান্ত দিয়ে বিষয়টি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর কথায় ভিয়েনা সনদে ’স্বাগতিক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার যে দায়িত্বে’র কথা আছে তাতে কোন আচরণগুলো দায়িত্বের আওতাভুক্ত, তা নির্দিষ্ট করা নেই। এমনকি, ’অভ্যন্তরীন রাজনীতি’তে হস্তক্ষেপ না করার নীতিও যুক্তির ধোপে টেকে না। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলছেন যে রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসাবে একজন রাষ্ট্রদূত কোনো দেশে যাচ্ছেন, তিনি সেই স্বাগতিক দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে নিজের রাষ্ট্রের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক, কারণ তিনি তাঁর দেশের স্বার্থেরই তো প্রতিনিধিত্ব করেন। বাংলাদেশ যে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আই পি এস) এবং তার বিপরীতে চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের টানাপোড়েনের কেন্দ্রে আছে, সে কথা তো সবারই জানা। পররাষ্ট্রবিষয়ক নীতি আলোচনায় এসব দেশের অংশগ্রহণ কি তাহলে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো নয়? 


কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ ও কূটনৈতিক দায়িত্বপালনের বিতর্কের বিষয়ে তিনি জিম্বাবুয়ের একটি নজির দিয়েছেন। ২০০৭ সালে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত  ক্রিস্টোফার ডেল এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছিলেন। বিদেশি কূটনীতিকেরা বিরোঘীদলকে সমর্থন করছে বলে তখনকার প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে যে অভিযোগ করেছিলেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত ডেল বলেন, জিম্বাবুয়ের সরকার ভিয়েনা সনদের একটি অংশের ওপর জোর দিলেও অন্য অংশটি উপেক্ষা করছে; যেখানে বলা হয়েছে, স্বাগতিক রাষ্ট্র কূটনীতিকদের দেশটির অবস্থা এবং উন্নয়নের চিত্র নির্ধারণের সুযোগ দেবে। এরকম আরেকটি উদাহরণ দিয়েছেন কেনিয়ার, যেখানে ২০০৪ সালে বৃটিশ–কেনিয়া চেম্বারের এক সভায় বৃটিশ হাইকমিশনার সরকারের ভিতরের দূর্নীতির কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। কেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই সমালোচনায় ক্ষুব্ধ হন। হাইকমিশনারকে তলব করে ওই বক্তব্যের  ব্যাখ্যাও দাবি করা হয়। যুক্তরাজ্য তখন ছিল কেনিয়ার সর্ব্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশ এবং দূর্নীতির বিষয়ে সরকারের কাছে আগে একান্তে উদ্বেগ প্রকাশের পরও পরিস্থিতর উন্নতি না হওয়ায় তিনি প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন। ওই মন্তব্যের কেন্দ্রে যে তাঁর দেশের স্বার্থরক্ষার বিষয় ছিল, তা অনস্বীকার্য। 


পল বেহেরেন্স বলছেন দ্বিতীয় যে ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীন বিষয়ে কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপের প্রশ্ন সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দেয়, সেটি হচ্ছে মানবাধিকার। ভিয়েনা সনদে কূটনৈতিক দায়িত্বের পরিধি যেহেতু নির্দিষ্ট করে তালিকা করা নেই, সেহেতু আর্ন্তজাতিক আইনের আওতায় কূটনীতিকরা প্রয়োজনমতো ভূমিকা পালন করে থাকেন। তিনি বলছেন, আর্ন্তজাতিক আইনে আর্ন্তজাতিক আদালতের রায়ে মানবাধিকারের বিষয়টি ’এরগা ওমনে’ ( erga omnes) হিসাবে স্বীকৃত। লাতিন পরিভাষার ’এরগা ওমনে’ এর মানে হচ্ছে ’সবার প্রতি দায়বদ্ধতা’। স্বাগতিক রাষ্ট্র যাকে হস্তক্ষেপ গণ্য করে তাকে যৌক্তিকতা দেওয়ায় কূটনীতিকরা আর্ন্তজাতিক আইনের কথা বললেও এ বিতর্কের অবশ্য কোনো আইনগত নিষ্পত্তি হয়নি। 


মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণ বা ভোটাধিকারের প্রশ্নে বিদেশি কূটনীতিকদের ভূমিকা নিয়ে যত বিতর্কই থাক, এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ভূমিকা নতুন কিছু নয়। ওয়াশিংটন কিম্বা ইউরোপের রাজধানীগুলোতে কোনো দেশের বিষয়ে যে ধরনের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গী ধারন করা হয়, সে সব দেশের প্রতিনিধিরা তার বাইরে কিছু করেন না। তাঁরা কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শের পক্ষেও কথা বলেননি। বরং এর উল্টোটা দেখা গেছে কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের ক্ষেত্র। এখানে প্রতিবেশী মিয়ানমারের উদাহরণ টানা যায়। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিপীড়ণ ও গণহত্যাকে সে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয় বলে অভিহিত করেছিল কোন  কোন দেশ, তা সবারই জানা।


যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে মানবাধিকারের প্রশ্নে যে একটা কালোছায়া পড়েছে, তা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুরো একটি বাহিনী, র‍্যাব ও কয়েকজন কর্মকর্তার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাই হচ্ছে এর উৎস। এবারে আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার দিবসে নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা না আসায় সরকারের একাধিক মন্ত্রী আত্মতুষ্টি প্রকাশের পাশাপাশি নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না বলে আমাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন নিষেধাজ্ঞার কথা আসছে কেন? আগে তো পুরোনো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কী হলো, সেটা জানা দরকার। 


(২৩ ডিসেম্বর, ২০২২–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...