সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে কিছু জরুরি প্রশ্ন

 দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদের নির্বাচন ঘিরে যে রাজনৈতিক আবহ তৈরি হয়েছে, তা একইসঙ্গে যেমন উপভোগ্য হয়ে উঠেছে, তেমনি কিছুটা উদ্বেগেরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ কী, অনেকগুলো প্রজন্মের তা জানারই সুযোগ হয়নি। অনেক বছর ধরে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা ভোটাধিকার চর্চার সুয়োগ পায়নি। ছাত্র–জনতার অভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যূত শেখ হাসিনার আমলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলেও তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে। এই পটভূমিতে এবারে অনুষ্ঠেয় ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ ও উদ্দীপনার পাশাপাশি উদ্বেগ–উৎকন্ঠা থাকা খুবই স্বাভাবিক।


শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের যে স্বৈরতান্ত্রিক রুপান্তর, তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে নিরন্তর সংগ্রাম করে যখন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো ক্লান্তি ও হতাশার শিকার হওয়ার মুখে ঠিক তখনই ছাত্র–তরুণেরা বিপুল প্রাণশক্তি যোগান দিয়ে আন্দোলনকে গণঅভ্যূত্থানের রুপ দিতে সক্ষম হয়। সেই তরুণদের সবচেয়ে অগ্রসর অংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একান্তই নিজস্ব নির্বাচন উৎসব ইতিমধ্যেই দেশে এবং দেশের বাইরেও নজর কেড়েছে এবং ক্রমশই তার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। 


তরুণদের আন্দোলনের একটা বৃহৎ অংশ, বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের অবশ্য আপাতত এই সুযোগ মিলছে না এবং কবে সেটি হবে, তা–ও বলা সম্ভব নয়; কিন্তু রাষ্ট্রীয় অর্থায়নের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের কিছুটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি বা ভিপিদের কথা স্মরণ করলেই জাতীয় রাজনীতিতে এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব কতটা ব্যপক, তা বোঝা যায়। এমনকি সর্বশেষ যে নির্বাচনটি হয়েছিল, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক থাকলেও তাতে নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূর মাত্র বছর পাঁচেকের মধ্যেই জাতীয় রাজনীতিতে একটি স্বীকৃত নাম। তিনি একটি দলের প্রধান এবং তাঁর দল গণঅধিকার পরিষদকে জোটে টানার জন্য একাধিক বড় দলের আগ্রহের বিষয়টিও অজানা নয়। 


৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন থেকে তাই কোন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসে, তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। তবে ফল যা–ই হোক না কেন, এই নির্বাচনকে নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন ও অনুসিদ্ধান্ত এখন খুবই প্রাসঙ্গিক। ফেব্রুয়ারিতে পরিকল্পিত জাতীয় নির্বাচনের একটি ক্ষুদ্রাকার মহড়া হিসাবে এই নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধরন, প্রচার কার্যক্রম, প্রার্থীদের আচরনবিধি প্রতিপালন, মূলধারার গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা, ভোট ব্যবস্থাপনা এবং আইন–শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো থেকেই এসব প্রশ্ন ও অনুসিদ্ধান্ত। 


এবারের ডাকসু নির্বাচনে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে জড়িত বৈধ রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগী ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রায় সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিচ্ছে। বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন, আছেন অতীতের চেয়ে বেশি নারী প্রার্থী। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, যে অপরাধের কারণে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ, সেই ছাত্রলীগের ছদ্মপরিচয় যাঁরা ব্যবহার করেছেন, তাঁরা নতুন বা আসল পরিচয়ে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিতে পারছেন, তাঁদের অতীতের দায় গ্রহণের কী হলো? ছাত্রলীগের সব ধরনের বাড়াবাড়ি ও অন্যায়–অবিচারে তাঁরাও সক্রিয় অথবা নীরব অংশগ্রহণকারী ছিলেন, তাঁরা কি কোনোধরণের ক্ষমাপ্রার্থনা ছাড়াই পুর্নবাসিত হতে পারেন? জাতীয় নির্বাচনেও কি এ প্রশ্ন আসবে না? কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ সম্পাদক মো. আবু হানিফের কথাই ধরা যাক।  তিনি এখন ওই ওয়ার্ডের জামায়াতের সভাপতি এবং তাঁর দাবি  – আগেও তিনি জামায়াতের সদস্য ছিলেন কিন্তু কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগে ছিলেন।


সাধারণভাবে প্রার্থীরা যেভাবে আচরণবিধি অনুসরণের চেষ্টা করেছেন, তা বেশ উৎসাহজনক। অন্তত যখন–তখন মিছিল, মাইকে বিকট শব্দে ভোট চাওয়ার শব্দদূষণ, দেওয়াললিখন, পোস্টার–ব্যানার–ফেস্টুনের উৎপাত থেকে মুক্তি দেওয়ার একটা ভালো নজির ডাকসুর নির্বাচনে তৈরি হচ্ছে।  প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনীতিকরা জাতীয় নির্বাচনে এসব উত্তমচর্চায় উৎসাহিত হবেন কি? 


অবশ্য এ কথাও অনস্বীকার্য যে মূল ধারার গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্মগুলোতে অবাধে প্রচারের সুযোগ পাওয়ায় পুরোনো রীতির প্রচারে অযথা খরচ ও শ্রম দিতে হচ্ছে না। বা প্রথাগত গণমাধ্যম ভূমিকা এ ক্ষেত্রে বেশ প্রশংসনীয় এবং তাদের উদ্যোগগুলো সহজেই নজর কাড়ে। টেলিভিশন চ্যানেলের খোলা মঞ্চে বিতর্কের আয়োজন, রাতের টক শোগুলোয় প্রার্থীদের উপস্থিতি এবং সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকারগুলো সব শিক্ষার্থীকে জেনেবুঝে ভোটের সিদ্ধান্ত নিতে যে সহায়তা করবে, তা মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এসব অনুষ্ঠান ও সাক্ষাৎকারের সম্পাদকীয় দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরাও মোটামুটি নিরপেক্ষতা বোঝায় রেখেছেন এবং দল–নির্দল নির্বিশেষে সব প্রার্থীকে কথা বলার পর্যাপ্ত সুযোগ দিচ্ছেন। ব্যতিক্রম ঘটলেও তার মাত্রা উপেক্ষণীয়। এই মডেলটা তাঁরা যদি জাতীয় নির্বাচনেও বজায় রাখতে পারেন, তাহলে তা সুষ্ঠূ প্রতিযোগিতাকে সমৃদ্ধ করবে। 


সোশ্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্মের চিত্রটা অবশ্য ভিন্ন। এক দশক আগে ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি, বিজেপি ও তার নেতা নরেন্দ্র মোদির উত্থানের কথা সোশ্যাল মিডিয়ার রুপান্তর সম্পর্কিত পাঠ্যসূচির একটি বিষয়। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই টুইটারে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ছিলে বিশ্বে সর্বাধিক। পরে সাংবাদিক স্বাতী চর্তূবেদির অনুসন্ধানী গ্রন্থ ’আই এম এ ট্রল : ইনসাইড দ্য সিক্রেট ওয়ারল্ড অব দি বিজেপিস ডিজিটাল আর্মি’ বইয়ে প্রকাশ পায় কীভাবে দলটি একটি বিশাল বটবাহিনী গড়ে তুলেছে। লাখ লাখ ভুয়া অ্যাকাউন্ট দলটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করে মোদির ভাবমূর্তি গড়ে তোলায় সফল হয়। আমাদের দেশেও যে মডেলটি অনুসৃত হচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একটি বটবাহিনী আলবটর এবং অন্যটি লালবটর নামে অভিহিত হচ্ছে। তবে আলবটরের সঙ্গে তার প্রতিপক্ষ সংখ্যার বিচারে মোটেও তুলনীয় নয়। 


কোটা সংস্কার আন্দোলনে উপূর্যপুরি নির্যাতনের শিকার বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদেরের ‘ডাকসুতে জিতা লাগবে না, কেবল বেঁচে থাকতে চাই’ – মন্তব্য থেকেই অনলাইনে আক্রমণের তীব্রতা ও মানসিক আঘাতের ক্ষতের গভীরতা উপলব্ধি করা যায়। কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে না দাঁড়িয়ে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ভিপি প্রার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমাও নারীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক ও শালীনতাবর্জিত অনলাইন আক্রমণের কথা বলেছেন। 


কয়েকটি বাম সংগঠনের এক প্রার্থীকে আদালতে মামলা করার জন্য গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও নারীদের জন্য নির্বাচন কতটা বাড়তি বিপদের কারণ হতে পারে, তা প্রকাশ করে দিয়েছে। আমরা জানি ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য নোয়াখালির সুবর্ণচরে এক মা কীভাবে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। সুতরাং আগামী জাতীয় নির্বাচনেও নারীদের এই বাড়তি ঝুঁকি মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ যে ভোলা যাবে না, ডাকসুর নির্বাচন তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। 


নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়ার বিপদ ডাকসুতে যতটা দেখা গেল, বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা – জাতীয় নির্বাচনে তা দেখা দেবে শতগুণ বড় আকারে। প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোকে নির্বাচন প্রভাবিত করতে পারে এমন ভুয়া অ্রাকাউন্টগুলো বা বটবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল? অন্তত সরকার এবং ডিজিটাল মাধ্যমের তদারকি প্রতিষ্ঠান বিটিআরসিকে কি এই ঝুঁকির কথা জানিয়ে সহায়তা চেয়েছিল? 


এবারের ডাকসু নির্বাচনে ব্যতিক্রমী আরেকটি বিষয়ের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। সেটি হচ্ছে, লড়াইয়ের সঙ্গী কমরেডের প্রতি সম্মান দেখানোর অনন্য নজির গবেষণা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সানজিদা আহমেদ তন্বির বিরুদ্ধে কোনো সংগঠনের প্রার্থী না দেওয়া। গত বছর ১৫ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন সানজিদা। ভোটের ফল যা–ই হোক, তাকে স্বাগত জানিয়েও বলব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমাও একইধরনের সম্মান পেতে পারতেন। নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াইয়ের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের গণহত্যার বিরুদ্ধে তাঁর যে নৈতিক অবস্থান, তার জন্য তাঁর এই সম্মান পাওয়া উচিত। ফিলিস্তিনি গণহত্যায় ইজরায়েলের সহযোগী হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাহসী নারীর পুরষ্কার প্রত্যাখ্যান কোনো সামান্য বিষয় নয়। তাঁর এই ত্যাগ সবার জন্য শিক্ষণীয় হয়ে রইল। 


(৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫–এর  প্রথম আলো পত্রিকায় নিবন্ধটি সামান্য সম্পাদিত আকারে প্রকাশিত হয়েছে। )


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

How to Describe the Awami League Accurately?

In an article titled ‘How Not to Describe the Awami League’ , published in this paper, British journalist David Bergman rightly underscores the importance of accuracy in labeling a political party—particularly when such labels carry potential legal consequences. Those familiar with Bergman’s work over the years know that he has consistently taken on politically sensitive and controversial subjects, often at significant personal and professional cost. His courage and commitment to journalistic integrity deserve recognition. Bergman is correct in asserting that “while serious criticisms of the Awami League are both valid and necessary, they must be proportionate and grounded in fact.” His analysis focuses primarily on the legal validity and appropriateness of labeling the Awami League as “fascist” or “Nazi.” He argues that comparing the party to the Nazi regime trivialises the scale of Nazi atrocities and misrepresents the complexities of Bangladeshi politics. Indeed, any historical comp...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...