সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রক্তাক্ত জুলাইয়ের নৃশংসতার বিচারকে অগ্রাধিকার দিন

ইয়ামিনের নাম হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা, কিংবা মনে রাখিনি। ইয়ামিন হচ্ছে সেই ছেলে, যাকে মড়ার মতো পড়ে থাকা অবস্থায় দেখা গিয়েছিল পুলিশের সাঁজোয়া যানের ছাদে। সেখান থেকে তাঁকে রাস্তায় ফেলে দেয় পুলিশের এক সদস্য। তাঁর একটি পা আটকে যায় সাঁজোয়া যানের চাকায়। এরপর দেখা গেল, সেই পুলিশ গাড়ি থেকে নেমে আহত ইয়ামিনকে পিচঢালা সড়কের ওপর টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে নিচ্ছেন। তখনো ওই তরুণ জীবিত। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া তো দূরের কথা, সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে আরেক পাশে ফেলে দেওয়া হলো তাঁকে। ভিডিওটি প্রথম যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসে, তখন বিশ্বাস হয়নি এমন বর্বর নিষ্ঠুরতা বাংলাদেশে ঘটতে পারে। মনে হয়েছিল, এটা হয়তো গাজার ছবি, যেখানে ইসরায়েলী সেনারা ফিলিস্তিনিদের মানুষ গণ্য করেন না। 


ইয়ামিনের জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলোর করুণ ভিডিওটি ১৮ জুলাইয়ের হলেও তার এক বা দু’দিন পর ইন্টারনেট আবার সচল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সেটাই যে পুলিশের চরম নিষ্ঠূরতার একমাত্র নজির ছিল না, তা পরের দিনগুলোয় স্পষ্ট হতে থাকে। ষ্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটার প্রায় চার সপ্তাহ হতে চলেছে, অথচ এখনো নতুন নতুন অজানা–অদেখা ভিডিও প্রকাশিত হচ্ছে এবং কল্পনাশক্তিকে হার মানানো নিষ্ঠুরতার বিভিন্ন ঘটনা আমরা জানতে পারছি। সংবাদমাধ্যমের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ উঠে যাওয়ার পর এখন বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল বিভিন্ন ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছে, অনুসন্ধান চালাচ্ছে এবং বিচ্ছিন্নভাবে অপরাধ তুলে ধরার পাশাপশি অপরাধীদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। 


এসব প্রতিবেদন থেকে খন্ড খন্ড চিত্র পাওয়া যাচ্ছে অনেক। কিন্তু নৃশংসতার সামগ্রিক চিত্র আমরা এথনো জানি না। সরকারের তরফ থেকে এখনো এমন কোনো উদ্যোগ ঘোষণা করা হয় নি যাতে সব অপরাধের সাক্ষ্য–প্রমাণ কেন্দ্রীয়ভাবে নথিবদ্ধ ও সংরক্ষণ করা থাকে। এগুলোর সংরক্ষণ বিচারের জন্য অত্যন্ত জরুরি। স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রথমে যাঁর ওপর পড়েছিল, সেই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের মুখে আমরা শুনেছি, নিহতের সংখ্যা এক হাজারের বেশি। অর্থাৎ এক হাজারের বেশি নিহতের পরিবার তাদের প্রিয় স্বজনের হত্যার বিচারের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। কিন্তু বিচারের কথাটি আলোচনায় ততটা শোনা যাচ্ছে না, যতটা শোনা যাচ্ছে সংবিধান সংশেধন বা পুর্নলিখন, নির্বাচনের রোডম্যাপ, সংস্কার এবং বিভিন্ন পেশাজীবীর নানারকম স্বার্থভিত্তিক দাবিদাওয়ার কথা। 


ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার প্রশ্নেও সরকার কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে, তা মনে হচ্ছে না। সব ধরনের বিতর্কের উর্ধ্বে উঠে তাঁর বিচারের জন্য সেরা জায়গা দ্যা হেগের আর্ন্তজাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) বলে আর্ন্তজাতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলেও সরকার তা এখনো গ্রহণ করেনি। কিন্তু ব্যক্তি উদ্যোগে তিনি ইতিমধ্যেই শতাধিক মামলায় আসামি। শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকদের অনেকের বিরুদ্ধেই এভাবে একের পর এক হত্যা মামলা হচ্ছে, যার কারণে সরকার ঢালাও মামলার বিষয়ে সতর্ক করে বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীন দেশের ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধের বিচারের বিষয়ে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য প্রয়োজন বিচারের বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রকাশ করা। 


লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বিচারের জন্য রাজনীতিকদের নাম যতটা আসছে, ততটা কিন্তু ক্ষমতার অপপ্রয়োগকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর লোকজনের কথা আসছে না। এর কারণ বরাবরের মতোই পুলিশ নিজেদের গা বাঁচানোর জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানত: পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবির সদস্যরা গুলি চালালেও তাঁদের বিচার কীভাবে হবে, তা মোটেও পরিষ্কার নয়। সেনাবাহিনীরর বিরুদ্ধেও দু–একটি জায়গায় গুলি চালানোর অভিযোগ আছে। তবে সেনাপ্রধান সেনা আইনে সেগুলো তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। এখন অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের  অপরাধের বিচারের কী হবে, তা নিশ্চিত করা দরকার। 


শুরুতে যে ইয়ামিনের হত্যার কথা বলেছি, তার পরিবার মামলা করার য়ে অভিজ্ঞতার কথা বলেছে, তাতে পুলিশের বিচারের বিষয়ে কথা বলা জরুরি হয়ে পড়েছে। সমকাল জানিয়েছে, শেখ হাসিনা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেই সময়ে সাভারে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের আসামি করে গত ২৫ আগস্ট ঢাকার আদালতে মামলা করেন ইয়ামিনের মামা আবদুল্লাহ আল মুনকাদির রোকন। আদালত এজাহার গ্রহণে সাভার থানাকে নির্দেশ দিলেও আট দিন পর পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করেছে। ইয়ামিনের পরিবার জানিয়েছে, স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা বাসায় এসে ‘অনুরোধ’ করেছিলেন, তাদের আসামির তালিকা থেকে বাদ দিতে। তাঁরা শেখ হাসিনাসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করতে বলেন । 


ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমার বাসায় পুলিশ এসেছিল কয়েকজন। তারা বলে, তারা সহযোগিতা করতে চায়। কীভাবে এজাহার করতে হবে বলল। ওরা একটা এজাহারের খসড়া দিতে চেয়েছিল। তাতে দেখা গেল, সব (আসামি) রাজনৈতিক নেতার নাম। পুলিশের কারও নাম নাই।’ অনুমান করা অযৌক্তিক হবে না, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার যে স্তুপ তৈরি হচ্ছে, তাতে পুলিশের হাত আছে এবং তারা নিজেদের নাম বাদ দেওয়ার সাধ্যমত চেষ্টা করে চলেছে। 


পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুলিশ তদন্ত করার যে সেকেলে রীতি চালু আছে, তা যে এক ধরনের প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়, এটি সর্বজনস্বীকৃত। তাই এর আগে পুলিশের সংস্কারের জন্য তৈরি সুপারিশমালায় বৃটেনের পুলিশ কমপ্লেইন্টস কমিশনের আদলে একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির কথা ছিল, যা আওয়ামী লীগ তার শাসনামলে বাস্তবায়ন করেনি। এ রকম স্বাধীন ও স্বতন্ত্র তদন্তপ্রক্রিয়া ছাড়া কোনো পুলিশ সদস্যের অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার কার্যত অসম্ভব। 


গত মঙ্গলবার সাবেক দুই আইজির গ্রেফতার অবশ্য নেতৃত্ব পর্যায়ে জবাবদিহিতার জন্য একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। সাভারে ৫ আগস্টে সাভারে কয়েকজন বিক্ষোভকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর তাদের মরদেহ অর্মযাদাকরভাবে ভ্যানে তোলা ও পরে পুলিশের গাড়িতে রেখে আগুন দিয়ে পোড়ানোর যে ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে, সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এর আগে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিমানবন্দর থেকে আটক হয়েছেন। তবে, মাঠ পর্যায়ে আর কোনো কর্মকর্তা আটক হয়েছেন বলে শোনা যায়নি। 


পুলিশের উর্ধ্বতন কিছু কর্মকর্তার নিয়োগ চুক্তি বাতিল, চাকরিচ্যূতি ও মাঠপর্যায়ের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারের বেশ কিছু পদক্ষেপের কথাও সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু, এগুলোর কোনোটিই তাঁদের অপরাধের মাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সাজা নয়। আমি যে শতাধিক ভিডিও ফুটেজ দেখেছি, তার কোনোটিতেই এমন একজনকেও দেখা যায়নি যে প্রাণহানি এড়ানোর মতো সতর্কতা অবলম্বন করছেন; বরং তাঁদের অনেকের মধ্যেই দেখা গেছে একধরনের উন্মত্ততা।


রাজনৈতিক নির্দেশনায় আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো যে চরম নৃশংসতার নজির তৈরি করেছে, তা শুধু সাভারের দুটো ঘটনায় নয়, ঢাকার প্রায় সব জায়গাতেই ঘটেছে। পুলিশী নৃশংসতা মানুষকে এতটাই ক্ষুব্ধ করেছে, যে শেখ হাসিনার পলায়নের পর পুলিশ সদস্যরাও আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র ফেলে ও পোশাক ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। কর্তৃপক্ষের আদেশ মানতে তাঁরা বাধ্য ছিলেন বলে অনেকে হয়তো যুক্তি দিতে পারেন, কিন্তু আইনের পরিপন্থী অন্যায় আদেশ অমান্য করাই বরং তাঁদের কর্তব্য ছিল। বেঙ্গল পুলিশ অ্যাক্ট এবং ফৌজদারী কার্যবিধিতে শক্তিপ্রয়োগের যেটুকু অনুমতি ও নিয়ম আছে, তা হত্যার উদ্দেশ্যে প্রাণঘাতি অস্ত্রের ব্যবহার অনুমোদন করে না।  


নতুন নতুন ইস্যূ তৈরি হওয়া এবং তাকে ঘিরে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার কারণে অতীতে অনেক গুরুতর বিষয় জনপরিসরের আলোচনা থেকে হারিয়ে গেছে। সময়ের ব্যবধানে মানুষ তা বিস্মৃত হয়েছে। রক্তাক্ত জুলাইয়ের নৃশংসতার সেভাবে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তাই কোনোভাবেই উপেক্ষণীয় নয়। মানবতাবিরোধী এ সব নিকৃষ্ট অপরাধের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাই বিচারের দাবিটিই সবার কাছে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। 


(৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...