সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইউনূস-তারেকের ‘সন্তুষ্টি’তে স্বস্তি টেকসই হবে কি

রাজনৈতিক বিতর্ক যে সাম্প্রতিক সময়ে নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাভাবিক কাজকর্ম ও গতিকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাধাগ্রস্ত করছিল, তা সবার জন্যই একটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে দীর্ঘ নির্বাসনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাতের উদ্যোগে তাই স্বাভাবিকভাবেই সবার কৌতূহল ও আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। বৈঠকের আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ও বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যেও প্রকাশ পায় যে উভয় দিক থেকেই এই বৈঠকের তাগিদ অনুভূত হয়েছে। বৈঠকের পর উভয় তরফেই আলোচনার ফলাফলে যে ‘সন্তুষ্টি’ প্রকাশ করা হয়েছে, তা সবার জন্যই স্বস্তিদায়ক।  

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্বস্তি স্থায়ী হবে কি না? সংকটের গভীরতা বা উভয় পক্ষের মধ্যে দূরত্ব কতটা প্রকট ছিল, তার ওপরেও কিন্তু স্বস্তির স্থায়িত্ব কিছুটা নির্ভর করে। সাধারণভাবে যে ধারণা তৈরি হচ্ছিল, তা হলো বিএনপির মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা বা সন্দেহ তৈরি হয়েছে। অবশ্য এ সন্দেহ দলটির নেতৃত্বের মধ্যে যতটা না দেখা যাচ্ছিল, তার চেয়ে বেশি প্রকট ছিল মাঠ দখলের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়া ধৈর্যহারা লোকজনের এবং ষড়যন্ত্রতত্ত্বের প্রবক্তাদের কথাবার্তায়। অর্ন্তবর্তী সরকারের সমর্থকদেরও একটি অংশ সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়, ইউনূস সরকারকে ৫ থেকে ১০ বছর সুযোগ দেওয়ার পক্ষে যে প্রচার শুরু করে, তা–ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অবিশ্বাস তৈরির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

গতকাল আলোচনার পর উভয় পক্ষের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো থেকে জেনেছি যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা আগেও যেমন নমনীয় অবস্থানের কথা বলেছিলেন, এ বৈঠকেও তেমনই নমনীয় ছিলেন। শুরুতেই তাই সিদ্ধান্ত হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করা প্রয়োজন হবে। রমজান যেহেতু মধ্য ফেব্রুয়ারির পরপরই শুরু, সেহেতু নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো আপত্তি নেই। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে অন্তত প্রতীকী সাফল্যের প্রশ্নটি প্রধান উপদেষ্টার ন্যূনতম লক্ষ্য। এত বড় একটা গণ–অভ্যুত্থানের পর দেশের দায়িত্ব নিয়ে এটুকু স্মারক তৈরি করতে চাওয়া খুবই স্বাভাবিক।

বিপরীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও যে ন্যূনতম সংস্কার এবং বিচারের জন্য সময়ের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়েছেন, তাতে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে বাস্তববাদিতার প্রতিফলন ঘটেছে। এগুলো সম্পন্ন করার জন্য কোনোভাবেই বাড়তি সময় দেওয়া যাবে না এমন কোনো অনমনীয় অবস্থান তিনি নেননি। নির্বাচনের সময় নিয়ে উভয় পক্ষের এই নমনীয়তা উভয় পক্ষের মধ্যে আপাতদৃষ্টে সৃষ্টি হওয়া দূরত্বের অবসান ঘটিয়েছে। এরপর মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান দুজনে প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট একান্তে আলোচনা করেছেন।

সব মিলিয়ে দেড় ঘণ্টার সাক্ষাতের ৯০ শতাংশের মতো সময় যে তাঁরা একান্তে আলোচনা করলেন, তাতে কী কী প্রসঙ্গে কথা হয়েছে, তা নিয়ে নানা রকম জল্পনা চলতে পারে। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিবের বরাতে জানা যাচ্ছে, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের ভাবনা ও পরিকল্পনাগুলো তারেক রহমান মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তুলে ধরেছেন। সাধারণভাবে রাজনীতিবিতৃষ্ণ ব্যাংকার–অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি নেতার এসব ভাবনায় চমৎকৃত হয়েছেন বলেই শুনেছি। ভবিষ্যতে এগুলো বিশদে জানার কৌতূহল আমাদের আপাতত সংবরণ করতেই হচ্ছে।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীদের মধ্যে যে ধরনের সন্দেহ–সংশয় দেখা যাচ্ছিল, তা যে কখনো কখনো শালীনতার সীমাও ছাড়িয়ে গেছে, তা বলাই বাহুল্য। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বেশ কিছু ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন; কিন্তু তা পর্যাপ্ত ছিল কি না, সেই প্রশ্ন তাঁদের ভেবে দেখতে হবে। বড় দলে শৃঙ্খলা প্রতিপালন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ, সন্দেহ নেই। স্বৈরাচারমুক্ত দেশকে সবাই নতুন বাংলাদেশ বলতে চাইলে বড় দলকে এই চ্যালেঞ্জে সফল হতে হবে।

অর্থনৈতিক নীতি কিংবা পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক বিতর্ক যেভাবে হয়েছে, তা–ও কিন্তু সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির অন্যতম কারণ। অন্তর্বর্তী সরকার যে অর্থনীতিতে একটা স্থিতিশীলতা তৈরি করতে পেরেছে এবং আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তির অব্যাহত অপপ্রচারের পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহানুভূতি ও সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছে, এগুলো ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সরকারের কাজ অনেকটাই সহজ করে দেবে। না হলে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটা রাজনৈতিক সরকার গঠিত হলেই যে তা এসব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে সক্ষম হতো, এ কথা কেউই জোর দিয়ে বলতে পারে না।

বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানোর কারণে অন্য কারও সঙ্গে যেন দূরত্ব তৈরি না হয়, সেটাও কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিএনপির প্রতি ঈর্ষাকাতর বা বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা আছে, এমন দু–একটি দল লন্ডনের এই বৈঠককে ইতিবাচকভাবে না–ও নিতে পারে। নির্বাচনের সময় প্রশ্নে ছাড় দিয়ে বড় দলের প্রতি আনুকূল্য দেওয়া হলো কি না—এমন প্রশ্ন তারা তুলতে পারে। কেননা আমরা ইতিমধ্যে ছাত্রদের গড়ে তোলা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও তার পৃষ্ঠপোষকদের মুখ থেকে বিএনপির প্রতি অভিযোগ তুলতে শুনেছি যে তারা সংস্কার ও বিচারকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এই সমালোচনা অযৌক্তিক নয়; কিন্তু তা যেন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে অনৈক্য উসকে না দেয়, সেদিকেও সবার নজর রাখা দরকার।  

লন্ডনের বহুপ্রতীক্ষিত বৈঠকটি নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে সৃষ্ট মতভেদ দূর করার প্রত্যাশা যে পূরণ করেছে, তার পেছনে অধ্যাপক ইউনূসের লন্ডনের অন্য একটি আলোচনারও কিছুটা ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। ১১ জুন রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স বা চ্যাথাম হাউসের আয়োজনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় তিনি বেশ কয়েকটি বিষয়ে তাঁর অবস্থান খোলাসা করেছেন। তাঁর পরিকল্পনা ও ভাবনা নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠছিল, তার বেশ কয়েকটির সোজাসাপটা উত্তর ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচারকারীদের সৃষ্ট ধোঁয়াশা অপসারণ করেছে। ওই আলোচনায় ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণের বিষয়টি তিনি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেন এবং গণভোটের ধারণাও নাকচ করে দেন। বহু সমালোচক অভিযোগ করে আসছিলেন যে ডিসেম্বর ২০২৫-এর পর নির্বাচন বিলম্বিত করার পেছনে অধ্যাপক ইউনূসের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। তাঁদের দাবি ছিল, একটি গণভোটের মাধ্যমে তাঁর ম্যান্ডেট দীর্ঘায়িত করা হতে পারে। ইউনূসের স্পষ্ট বক্তব্য এসব সন্দেহ অনেকটাই দূর করে।

সেদিন চ্যাথাম হাউসের আলোচনায় মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেছেন, ‘আমাদের ক্যাবিনেটের (উপদেষ্টা পরিষদ) কারোরই এ ধরনের কিছু করার ইচ্ছা নেই। আমাদের কাজ হচ্ছে মসৃণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং একটি নির্বাচিত, জনসমর্থনপ্রাপ্ত সরকারের কাছে ক্ষমতা তুলে দেওয়া।’ এই মন্তব্যে দুই সাবেক ছাত্রনেতার উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকার কারণে সৃষ্ট আশঙ্কা প্রশমিত হওয়ার কথা। অভিযোগ রয়েছে যে এই দুই নেতা আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং নির্বাচনী সময়সূচি ঘোষিত হলে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দেবেন। অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্য ইঙ্গিত দেয়, তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন যে তাঁরা তাঁদের বর্তমান অবস্থানকে নির্বাচনী সুবিধা নেওয়ার জন্য ব্যবহার করবেন না।

অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে দেখা করার সময় তারেক রহমান তাঁকে একটি কলম ও দুটি বই উপহার দিয়েছেন। বই দুটির একটি হচ্ছে নেচার ম্যাটার্স এবং অন্যটি নো ওয়ান ইজ ঠু স্মল টু মেক আ ডিফারেন্স। দ্বিতীয় বইটি পরিবেশবাদী আন্দোলনের বর্তমানের সবচেয়ে পরিচিত মুখ গ্রেটা থুনবার্গের লেখা। পরিবেশ ও ব্যক্তিপর্যায়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগের শক্তি—এই দুটি বিষয়ই মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। মানতেই হবে, উপহার নির্বাচনও ছিল ইঙ্গিতপূর্ণ।

(১৪ জুন, ২০২৫ তারিখের প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...