সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যে চক্রে মালিক-শ্রমিক একাকার


স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা সহপাঠী হত্যার বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামার পর তাদের আন্দোলন আর শুধু একটি জোড়াখুনের ঘাতকদের বিচারের দাবিতে সীমাবদ্ধ নেই। তাদের দাবির মধ্যে আছে সড়কের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকগুলো বিষয়। পুলিশ যেসব লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে অক্ষম, যেসব অচল মেয়াদোর্ত্তীণ গাড়ি রাস্তা থেকে তুলে দিতে পারে না তারা সেগুলোর দায়িত্বও ক্ষণিকের জন্য হলেও নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে। আর, তারা একজন মন্ত্রীর অমানবিক আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছে। একজন মন্ত্রীর গাড়িকেও ট্রাফিক আইন না মেনে উল্টো পথে চলায় বাধা দিয়ে তাকে ফিরে যেতে বাধ্য করেছে। এসব প্রতিবাদের মূল কথা হচ্ছে বিচারহীনতা এবং অন্যায়ের অবসান।


এই আন্দোলনে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক সমাবেশগুলোর মতো কোনো চাকচিক্যর্পূণ ফেস্টুন নেই, নামী-দামী শিল্পীদের আঁকা ছবি নেই, নিহত সহপাঠীর পোট্রেট নেই। আছে লেখার খাতার সাদা কাগজে হাতে লেখা পোস্টার, তাও রাজনৈতিক দলগুলোর পোস্টারের চেয়ে একেবারে আলাদা। পোস্টারের লেখাগুলো কোনো পেশাদারের কাজ নয়, আনাড়ি হাতের লেখা। কিন্তু, একেবারে মনের কথাগুলো লেখা। এসব পোস্টারে বহুদিনের জমে থাকা কষ্টের কথা লেখা আছে। রাস্তাগুলো যেসব দুর্বত্তের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে তাদের সেসব দুর্বত্তপনা বন্ধের দাবির কথা লেখা আছে। যারা আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখান, তাদেরকে আইনের আওতায় আনার কথাই আছে এসব পোস্টারে।

অনেক দিন ধরেই অভিযোগ উঠছে যে সড়কে যা ঘটছে তার সবটাই দূর্ঘটনা নয়, অনেকগুলোই হত্যাকান্ড যার নেপথ্যে আছে টাকার নেশা। মালিক এবং শ্রমিকদের মূল নীতি দুটো: ১. যত বেশি ট্রিপ, তত আয়; এবং ২. যত বেশি যাত্রী / পণ্য তোলা যায় তত বেশি মুনাফা । সেখানে যাত্রী বা অন্য সড়কব্যবহারকারীর নিরাপত্তার প্রশ্ন গৌণ। আইন অথবা আইনপ্রয়োগকারী যাতে কোনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তার ফাঁক-ফেকরও তাঁদের জানা। সুতরাং, বছরে চার হাজার ( সরকারী হিসাবে) কিম্বা একুশ হাজার ( বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ডাব্লু এইচওর তথ্য)  মৃত্যুতেও সড়ক পরিবহন খাতের সংস্কার হয় না। এসব মৃত্যু অথবা হত্যার বিচার হয় না। সড়কে বিশৃঙ্খলা এবং নৈরাজ্যের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এই বিচারহীনতা। আর তার নেপথ্যে আছে পরিবহনখাতে দৌরাত্ম্যকারী মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিত্বকারীদের অসৎ স্বার্থের বোঝাপড়া।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মালিক এবং শ্রমিকের স্বার্থের এরকম সম্মিলন বিরল। সাধারণভাবে সবদেশেই শ্রমিকরা তাঁদের ইউনিয়ন করেন তাঁদের মজুরি বাড়ানো এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে। ব্যাক্তিখাতের শিল্প হিসাবে তাঁদের দেনা-পাওনার হিসাব মালিকদের সঙ্গেই বোঝাপড়া করার কথা। কিন্তু, গত কয়েক দশকে সড়ক পরিবহন খাতে যতধরণের ধর্মঘট বা সভা-সমাবেশ হয়েছে প্রায় সবই হয়েছে মালিক-শ্রমিকের যৌথ উদ্যোগে। মালিক ও শ্রমিকের এই বিরল ঐক্য এবং নানাধরণের অন্যায়-অনিয়মে  কখনও সামনে থেকে আবার কখন্ও নেপথ্যে নেতৃত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।

মন্ত্রীত্ব লাভের আগে থেকেই শাজাহান খান সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের নেতা। অনেকের মতে পরিবহন শ্রমিকদের নেতৃত্বের কারণেই তাঁর কপালে মন্ত্রীত্বের তিলক পড়েছে। অভিযোগ আছে তাঁর পরিবার সড়ক এবং নৌপথ উভয়খাতেই পরিবহন ব্যবসায় জড়িত। সার্বিক ও কনক পরিবহন নামে দুটি বাস কোম্পানি আছে শাজাহান খানের পরিবারের। পরিবহন খাতের লোকজনের দাবি, এই দুটি কোম্পানি শাজাহান খানেরই। শাজাহান খান একাধিকবার বলেছেন, এটা তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা। মালিক এবং শ্রমিক এই দুই আপাতবিরোধী পক্ষের স্বার্থের সম্মিলন ঘটার কারণও সম্ভবত এটি।  

পরিবহন খাতের কাছে জনগণের জিম্মিদশার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে এই খাতে রাজনীতিকদের স্বার্থ যার প্রধান অংশ আর্থিক আর বাকিটা রাজনৈতিক। গণপরিবহনে শৃংখলা আনার চেষ্টাগুলো তাই একের পর এক ভেস্তে গেছে। ২০০৮ সালে অনুমোদিত কৌশলগত পরিকল্পনা (স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান এসটিপি) বাস্তবায়নের উদ্যোগ পরিত্যক্ত হয়েছে। পরে, ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক আরেকটি সমন্বিত পরিকল্পনার কাজ শুরু করলেও তাঁর মৃত্যূর পর সেই উদ্যোগেরও কোনো খবর নেই। যেহেতু গণপরিবহনের একটা বড় অংশের মালিক প্রভাবশালী মন্ত্রী, সাংসদসহ ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিকদের সেহেতু সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোও অনেকটা তাঁদের নিয়ন্ত্রণে। তাছাড়া, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের দূর্নীতি তো আছেই। আন্দোলনকারী ছাত্র-তরুণরা অনেক জায়গায় চালকদের লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চেয়েছে, এটা একটা ভালো সূচনা। কিন্তু, জাল লাইসেন্সের যে ছড়াছড়ি ( খসড়া হিসাবে অন্তত ৯ লাখ। সূত্র: বিক্ষোভে দুশ্চিন্তা, সামলানোর চেষ্টা, প্রথম আলো, ২ আগস্ট, ২০১৮) তাতে অনেক লাইসেন্সধারীর হাতেই এসব যানবাহন নিরাপদ নয় ।  


প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ শাহিদা তারেখ , আশরাফুন্নেছা মোশাররফ, সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমানসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সরকারী এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকরই আত্মীয়ের নামে পরিবহন ব্যবসা আছে ( পরিবহন খাত মন্ত্রী, সাংসদসহ আ লীগ নেতাদের কবজায়, প্রথম আলো, ২ আগস্ট, ২০১৮) । মসিউর রহমান রাঙ্গা পরিবহন মালিকদের সমিতির নেতা। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এরকম বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারীরা মন্ত্রীত্বের পদে আসীন হতে পারেন কিনা সন্দেহ। আমাদের সংবিধানে মন্ত্রীদের জন্য যে শপথবাক্য লেখা আছে ( ---এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন-অনুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করিব।)  তা মানতে হলে ওইসব স্বার্থ ত্যাগ না করে কিভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন সম্ভব তা বোঝা মুশকিল। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখনই এই একই ধারা বজায় ছিল। তৎকালীন মন্ত্রী ও বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস ছিলেন পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক।

রাজনীতিকদের আর্থিক স্বার্থের আরো একটি দিক আছে, যা হোল এই খাতে আদায় হওয়া চাঁদা। এসব চাঁদার টাকার ওপর বহু কথিত শ্রমিক নেতার জীবনযাপন নির্ভরশীল। ফলে, ওইসব নিম্ন এবং মধ্যমসারির নেতারা বড়নেতাদের আর্শীবাদ প্রত্যাশী এবং বড়নেতারা তাদের ওই আনুগত্যকে দলীয় রাজনীতির প্রয়োজনে যখন যেমন সম্ভব ততোটিাই কাজে লাগান। বিরোধীদলের ঢাকামুখী সমাবেশগুলোর দিনে সবধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া এবং ২০১৫ তে বালির ট্রাকে অবরুদ্ধ বিরোধীনেত্রীর বাড়ির উদ্দেশ্যে মিছিলের কথা নিশ্চয়ই কারো বিস্মৃত হওয়ার কথা নয়। ছাত্রদের চলমান আন্দোলনের সময়েও তিনি ৭১ টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে হত্যার বিচারের মত বিষয়ে পরিবহনখাতের অন্যায় দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবেও তিনি বলেছেন এসব শ্রমিকরা বিরোধীদের জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন রুখে দাঁড়াতে যে ত্যাগ স্বীকার করেছে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া তাঁর দায়িত্ব।

গত কয়েকবছরের পরিবহন খাতের ধর্মঘটগুলোর হিসাব করলে দেখা যাবে এগুলোর প্রায় সবগুলোই হয়েছে মালিক এবং শ্রমিকদের ঐক্যের নামে। তবে, কার্য্যত মালিকদের স্বার্থে যেমন ভাড়া বাড়ানো কিম্বা কথিত পুলিশী হয়রানির বিরুদ্ধে। বিপরীতে, পরিবহন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, কাজের সময় ঠিক করা কিম্বা চাকরির নিশ্চয়তার দাবিতে কোনো ধর্মঘটের নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ, দুই-তিন দশক আগের ইতিহাসে ফিরে তাকালে দেখা যাবে পরিবহন খাতে তখন এরকম নৈরাজ্য ছিল না। কমিউনিস্ট নেতা মসজুরুল আহসান খানে এর নেতৃত্বাধীন ইউনিয়নকে অন্তত মালিকদের পক্ষে লাঠি ধরতে কেউ দেখেনি। তবে, মূলধারার রাজনীতিতে বামপন্থীরা যেভাবে পিছিয়ে পড়েছেন, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনও তা থেকে রক্ষা পায় নি। ফলে, এখনকার ইউনিয়ন মালিকপক্ষ এবং রাজনীতির ঘুঁটিতে রপান্তরিত হয়েছে। এঁরা এখন তাঁদের সহকর্মী বাসচালক জাহাঙ্গীর আলমের নিহত কন্যার হত্যার বিচার দাবিতে রাজপথে নামা কিশোর-তরুণদের ওপর হামলে পড়তেও দ্বিধা করেন না। ক্ষমতার রাজনীতির গুণ এমনই মোহনীয়!

তবে, এসব শক্তিপ্রয়োগে ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যায্য আন্দোলন দমনের চেষ্টা করা হলে তা পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। সরকারের তরফে দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মেনে নেওয়ার কথা বলার পর এধরণের হামলার পুনরাবৃত্তি হলে আস্থার সংকট বাড়বে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে দাবি মানার ঘোষণার পর পিছিয়ে যাওয়ার নজির ছাত্র-ছাত্রীদের সংশয়বাদী করে তুললে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে, তার চেয়েও বড় কথা পরিবহন খাতে তৈরি হওয়া নীতিহীন দুষ্টচক্রকে ভাঙ্গতে না পারলে এই ক্ষোভ আবারও চাঙ্গা হবে। কেননা, এসব ছাত্র-ছাত্রীদের পোস্টার এখন বলছে:  
যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ
যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তুমিই বাংলাদেশ
(৩ অগাষ্ট, ২০১৮র প্রথম আলোয় প্রকাশিত নিবন্ধ।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...