সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগই যখন অজুহাত

গত ২৮ আগস্ট, মঙ্গলবার যে সময়ে নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের ওপর বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষেরই সেসময়ে গভীর ঘুমে থাকার কথা। ভোর রাত ২টায় শুরু হয়ে প্রায় সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলা বিতর্কের সময়ে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেষ্ঠ্য ব্যাক্তিরাও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ‍কিনা কে জানে! তবে, পুরো অধিবেশনটি এখনও জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে চাইলেই যে কেউ সেটি দেখে নিতে পারেন। নিরাপত্তা পরিষদের এই উন্মুক্ত অধিবেশনে স্থায়ী সদস্য পাঁচটি দেশের মধ্যে রাশিয়া এবং চীনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনার পর বাংলাদেশের মিয়ানমার নীতির যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকটি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং তাদের মানবিক সহায়তা কার্য্যক্রম পর্যালোচনার জন্য পূর্বনির্ধারিত ছিল। কিন্তু, মাত্র একদিন আগে প্রকাশিত জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনটি স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে। প্রতিবেদনে জাতিসংঘ তদন্তকারীরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গানিধনে পরিচালিত সামরিক অভিযান পরিচালনায় গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল। সেনাপ্রধানের প্রকাশ্য বক্তব্য-বিবৃতিতে কথিত বাঙ্গালী সমস্যার চিরতরে সমাধানের আকাঙ্খার কথা বহুবার বলা হয়েছে। সুতরাং, গণহত্যার অভিযোগে সেনাপ্রধানসহ পদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের বিচার হওয়া উচিত। বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে প্রতিবেদনকে বিচারের পথে একটা গুরুত্বর্পূণ পদক্ষেপ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।
সুতরাং, নিরাপত্তা পরিষদ তদন্ত দলের সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা অত্যন্ত জোরের সঙ্গে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন এবং কুয়েত। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস তাঁর বক্তব্যে বলেছেন যে তদন্ত রিপোর্টে স্পষ্ট হয়েছে যে আর্ন্তজাতিক আইনে মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী গুরুতর অপরাধ করেছে। মহাসচিবসহ যাঁরা তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন তাঁরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে এধরণের নিষ্ঠূরতার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না ঘটে সেজন্যেই বিচারের ওপর জোর দেন। তাঁরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা সত্ত্বেও কোনো অগ্রগতি না হওয়ার জন্য মিয়ানমারকেই দায়ী করেন।
তবে, প্রথম ধাক্কাটা আসে রুশ প্রতিনিধির কাছ থেকে। রাখাইন সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কোফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের ৮৮টি সুপারিশের মধ্যে ৮১টি মিয়ানমার সরকার ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন করেছে বলে তিনি দাবি করেনে। আসলে এই দাবিটি এর আগে মিয়ানমার সরকারের তরফ থেকেই করা হয়েছে। তবে, এই দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা এতোটাই প্রশ্নবিদ্ধ যে তা কূটনৈতিক মহলের আলোচনায় কার্য্যত উপেক্ষিতই হয়ে আসছে। রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি লেবেনজিয়া এরপর বলেন, সমস্যাটি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানে যে উদ্যোগ চলছে সহায়তা করা উচিত এবং তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে সবার বিরত থাকা উচিত। তিনি এমনকি আগস্টের গোড়ার দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পুর্নবাসনের প্রস্তুতি দেখানোর কথাও বলেন। সন্ত্রাস মোকাবেলায় মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযান পরিচালনার যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টাও তাঁর বক্তব্যে ছিল।
এরপর, চীনা রাষ্ট্রদূতও দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগ ও সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ওপর জোর দেন। চীনা দূত অবশ্য আনান কমিশনের কতগুলো দফা বাস্তবায়িত হয়েছে তার কোনো হিসাব দেওয়ার পথে পা বাড়ান নি। তিনি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর জোর দেন। সংকট নিরসনে চীন তিনদফা পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থাগ্রহণের সুপারিশ করেছে এবং সেগুলো বাস্তবায়নের ওপর তিনি জোর দেন। ওই তিনদফা হচ্ছে : ১. সহিংসতা বা বৈরিতার অবসান; ২. রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন ও ৩. রাখাইনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
অগাস্টের শুরুতে মাহমুদ আলীর সফরের সময়ে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে টেলিফোন হটলাইন প্রতিষ্ঠার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটিকে এক বড় অগ্রগতি হিসাবে দাবি করেন চীনা ও রুশ রাষ্ট্রদূত। রাশিয়া এবং চীনের ম্থায়ী প্রতিনিধিদের বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশের অনুসৃত নীতির বিস্ময়কর সামঞ্জস্য (অ্যালাইনমেন্ট) লক্ষ্যণীয়।   চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে যে তিনটি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমাধানের কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশের মনোযোগও সেগুলোতেই নিবদ্ধ বলে মনে হয়। মন্ত্রীপর্যায়ের সফরগুলোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় কাগুজে সমঝোতায় বাংলাদেশের তুষ্ট থাকায় সেই ধারণাই মেলে।তা নাহলে, গণহত্যার নিন্দায় বিস্ময়কর নীরবতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবি তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দ্বিধা ও সংশয়ের আর কোনো ব্যাখ্যা আমরা পাই না। আঞ্চলিক জোট বিমসটেকের সদ্য অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকটের কথা উচ্চারিত না হওয়ার কারণ কি এই দ্বিপক্ষীয় সংলাপের নীতি?  প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেওয়ার উদারতা ও মহানুভবতার জন্য বৈশ্বিক স্বীকৃতিতে তুষ্ট হওয়ায় রাজনৈতিক লাভ থাকলেও মূল সমস্যার কোনো সমাধান নেই।
নিরাপত্তা পরিষদে গত মাসে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে ব্রিটেন। রোহিঙ্গা সংকটে ব্রিটেন বেশ জোরালো অবস্থান নিয়েই বাংলাদেশের পাশে ছিল। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাই বাংলাদেশের কাছ থেকে একটা জোরালো প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিত ছিল। ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেকেই তাৎক্ষণিকভাবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কিন্তু, জাতিসংঘ তদন্তকারীরা গণহত্যার মত অপরাধের এতো শক্তিশালী প্রমাণ প্রকাশ করার পরও ঢাকা সুযোগটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করে নি।নিরাপত্তা পরিষদের  বৈঠকটির আগে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হওয়ার সুযোগ ছিল। নিরাপত্তা পরিষদের এই অধিবেশনে সবার শেষে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তাঁর বক্তব্যে অবশ্য সংকট নিরসনে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন তার শেষদফায় ছিল রোহিঙ্গা নিধনে জড়িতদের বিচারের কথা। অথচ, অভিজ্ঞতা বলছে, আর্ন্তজাতিক পরিসরে যখনই মিয়ানমারের সামরিকবাহিনীর এই ঘৃণ্য অপরাধের বিচারের দাবি জোরালোভাবে উত্থাপিত হচ্ছে কিম্বা শক্তিশালী দেশগুলো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার উদ্যোগ নিচ্ছে তখনই তাঁরা একটু নড়েচড়ে বসছেন।

জাতিসংঘ তদন্তকারীরা তাঁদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এমাসেই মানবাধিকার পরিষদে পেশ করবেন এবং তারপর তা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যাবে। তখন নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদ উভয় ফোরামেই এটি আলোচিত হবে বলে ধারণা করা যায়। এবারেও যদি আমরা কাগুজে আশ্বাস ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বৃত্তে আটকে থাকি তাহলে তা হবে দূর্ভাগ্যজনক। এক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি রিয়াজুল হকের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে আমরা বলবো বাংলাদেশকে আরও সক্রিয় এবং অ্যাগ্রেসিভ হতে হবে
মিয়ানমারে সামরিকবাহিনীর এই নিষ্ঠূরতা ও বর্বরতার সবচেয়ে বেশি মূল্য দিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। কিন্তু, দেশটির রোহিঙ্গা বিতাড়ণ অভিযানের প্রত্যক্ষ চাপ ও ক্ষতির শিকার হচ্ছে যে বাংলাদেশ তা সর্বজনস্বীকৃত। যুক্তরাজ্যের আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, অ্যালেস্টার বার্টের সাম্প্রতিকতম হুঁশিয়ারির কথাও আমাদের স্মরণে রাখা প্রয়োজন। তাঁর দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকবে মন্তব্য করে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রোহিঙ্গা সংকটের সহজ কোনো সমাধান নেই। যে সমস্যার সহজ সমাধান নেই তা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশংকা প্রবল। অথচ, সংকট মোকাবেলায় আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে মতভিন্নতা যেমন প্রকট, তেমনই আর্থিক সহায়তা দেওয়ায় অনীহাও লক্ষ্যণীয়।
নিরাপত্তা পরিষদে মহাসচিব গুতেরেসের দেওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে উদ্বাস্তুদের জরুরি ন্যূনতম সেবাগুলোর জন্য জাতিসংঘ যে ৯৫ কোটি ডলার তহবিলের আহ্বান জানিয়েছিল তাতে এপর্যন্ত মাত্র ৩৩ শতাংশ সংস্থান হয়েছে। ভবিষ্যতে এই অর্থায়নযে আরও কমবে তা মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায়। বিশ্বজুড়েই মানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাতিসংঘের অভিজ্ঞতায় সেরকমটিই দেখা যায়। শেষবিচারে দীর্ঘায়িত সংকটের ভার আমাদের কাঁধেই থেকে যাবে।
জাতিসংঘের এই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিরাপত্তা পরিষদে মতভেদ অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। তবে, আর্ন্তজাতিক অপরাধ আদালত বিচার অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিলে অথবা অন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থায় ভবিষ্যতে বিচারের ব্যবস্থা করা সম্ভব হলে মানবাধিকার পরিষদের এই তদন্তকারীদের কাজ নি:সন্দেহে গুরুত্বর্পূণ দলিল হিসাবে বিবেচিত হবে।
জাতিসংঘের এই তদন্ত প্রতিবেদনের আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বর্পূণ, যদিও সংবাদমাধ্যমে তা খুব একটা গুরুত্ব পায় নি। প্রথমত: রোহিঙ্গা নির্মূল ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রের বিদ্বেষমূলক নীতির প্রতিকার ও সেবিষয়ে আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারে জাতিসংঘ প্রতিনিধির দপ্তরের ভূমিকা কি ছিল তা জরুরিভিত্তিতে তদন্তের জন্য এই প্রতিবেদনে আহ্বান জানানো হয়েছে। অভিযোগটির কথা আগে শোনা গেলেও তা আলোচনা থেকে প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। এই বৈশ্বিক সংস্থার নিজেদের জবাবদিহিতার বিষয়টি মোটেও উপেক্ষণীয় নয়।

(২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের নিবন্ধ।) 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...