সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত


ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব বিধান নিয়ে আশঙ্কা ও  উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছিল, সংসদীয় কমিটিতে অনেকটা তাড়াহুড়ো করে চূড়ান্ত করা খসড়ায় সেগুলোর প্রায় সবই রেখে দেওয়া হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ তাই যথার্থভাবেই তার  প্রতিক্রিয়ায় এটা স্পষ্ট করে তাঁদের বিস্ময় ও হতাশার কথা জানিয়েছেন। সম্পাদক পরিষদকে ধন্যবাদ যে তাঁরা তাঁদের বিবৃতিতে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে সংসদীয় কমিটি আরও এক দফা তাঁদের কথা শোনার আশ্বাস দিয়েও শেষপর্যন্ত কথা রাখেননি। এর আগে তথ্যমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছিলেন যে সম্পাদক এবং সাংবাদিক-প্রতিনিধিদের মতামতকে তাঁরা বিবেচনায় নেবেন। বোঝাই যাচ্ছে ওগুলো ছিল কথার কথা। নাগরিক সমাজ বা বিভিন্ন পেশাজীবিদের মতামতকে গ্রহণ করার বদলে আলোচনা নামের আনুষ্ঠানিকতা পালন যে সরকারের অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে এই ডিজিটাল আইনের ক্ষেত্রে সেরকম প্রমাণই পাওয়া যাচ্ছে।  

এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে চলতিবছরের মাঝামাঝি সময়ে সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে  আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে বহুলনিন্দিত তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা থাকবে না এবং ওই ধারায় মামলা করতে হলে পুলিশ সদরদপ্তর বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনমোদন প্রয়োজন হবে। সেই আশ্বাসের কয়েকদিনের মধ্যেই ব্যবধানে ইন্টারনেটে দুটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট সাময়িকভাবে অচল করে দেওয়া হয়েছিল। ওই দুটি সংবাদমাধ্যমের একটি ছিল দেশের সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার, আর অপরটি ওয়েবভিত্তিক বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। প্রথমটির অনলাইন পোর্টালে প্রবেশপথ বন্ধ করা হয় ২ জুন এবং পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রেও ১৮ জুন একই ধরনের পদক্ষেপ নেয় বিটিআরসি।

সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার এবং সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে হওয়া দুটো ছাত্র-যুব আন্দোলনের সময় দেখা গেছে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার হরেদরে অপপ্রয়োগ। ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে খ্যাতিমান আলোকচিত্রী শহীদুল আলমকে সরকারবিরোধী মতপ্রকাশের কয়েকঘন্টার মধ্যেই গ্রেপ্তার করে ৫৭ ধারার মামলা করায়কার অনুমোদন ছিল বা ছিল না সেসব প্রশ্ন অবান্তর হয়ে পড়েছে।  

মূলধারার সংবাদমাধ্যমের ওপর নানাধরণের উপদেশ ও ভীতিপ্রদর্শনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টার কারণে সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে গুজবের ডালপালা বিস্তৃত হতে থাকলে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগ প্রকট হয়ে ওঠে। গুজবেরও প্রকারভেদে ভিন্ন-ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কথিত ভালো গুজব আর মন্দ গুজবের চর্চা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সরকারের একজন জেষ্ঠ্য উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের সমর্থকদের প্রয়োজনে ফেসবুকে একশোটি ভুঁয়া আইডি খোলার পরামর্শ দিয়েছেন। আর, অন্যদিকে, তথ্য প্রতিমন্ত্রী গুজব চিহ্নিতকরণ ও তা বন্ধের জন্য তাঁর মন্ত্রণালয়ে একটি নতুন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা বলেছেন।

সরকার চায় না এমন কোনো তথ্য বা মতামত প্রকাশ বন্ধ করাই যে এসব পদক্ষেপের লক্ষ্য তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিভিন্ন সামাজিক ইস্যূতে সাম্প্রতিক সময়ের নাগিরক অসন্তোষ এবং নির্বাচনব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে রাজনৈতিক ক্ষোভ এর মধ্যে সরকারবিরোধিতার যে অভিন্ন উপাদান তাতে সরকার যে উদ্বিগ্ন তাতে সন্দেহ নেই। সরকারের সেই অস্থিরতারই আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে প্রশাসনের হাতে আরো নিবর্তনমূলক ক্ষমতাগুলোকে কেন্দ্রীভূত করা। ডিজিটাল আইন তৈরিতে তাড়াহুড়ার কারণ সম্ভবত সেটাই। কেননা, সরকার স্পষ্টতই বুঝতে পারছেন যে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতাধন্য বেসরকারী টিভি চ্যানেলগুলো দ্রুতগতিতে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। নতুন প্রযুক্তির কারণে প্রথাগত গণমাধ্যমগুলোর অনেকেই এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে পেরে উঠছে না। এই তথ্য প্রযুক্তির বিকল্পে নিয়ন্ত্রণ আরোপ তাই এখন সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইনটির খসড়া প্রকাশের পর দেখা যায় যে বিদ্যমান তথ্য প্রযুক্তি আইনের ধারা ৫৭ এর উপাদানগুলো আলাদা করে ৪টি ধারায় (ধারা ২৫, ২৮, ২৯ এবং ৩১) বিন্যস্ত করা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ তাই ওই খসড়ার এসব ধারাসহ মোট আটটি বিধান নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানিয়েছিল। সম্পাদক পরিষদ মনে করে, এসব ধারা বাক্‌স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বাধা হতে পারে। এ ছাড়া ১০টি পশ্চিমা দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকেরাও এই আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।  
এই খসড়ার আরেকটি বিপজ্জনক উপাদান হচ্ছে পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা বহাল আছে। এ ক্ষেত্রে শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালকের অনুমতি নেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ৫৭ ধারার ব্যাপক অপপ্রয়োগের কারণে দাবি উঠেছিল যে উপযুক্ত আদালতের অনুমোদন ছাড়া এধরণের তল্লাশি এবং গ্রেপ্তারের সুযোগ না রাখা। বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সেটাই রীতি। কিন্তু, সে পরামর্শ উপেক্ষিত হয়েছে। কথিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ-সংক্রান্ত ধারায় সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগকে আমলে নেওয়া হয়নি। এই ধারায় সংশোধনী এনে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ শব্দের সঙ্গে শুধু যুক্ত করা হয়েছে প্রচার শব্দটি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া সংসদে অনুমোদিত হলে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে এবং ক্ষমতাসীনদের ভাষ্যের বাইরে অন্য কিছু আর প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়ার প্রভাব যে শুধুমাত্র গণমাধ্যমের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে না তা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কর্মী এবং সাধারণ নাগরিকদের অনেকের দন্ডিত হওয়ার ঘটনায় দেখেছি। কিন্তু, সরকারবিরোধী রাজনীতির দৈন্যদশা এবং নাগরিক সমাজের অগ্রসর অংশের মধ্যে দোদুল্যমানতা অথবা সু্বিধাবাদিতার পিছুটানের কারণে কোনো কার্যকর প্রতিবাদ-আন্দোলন গড়ে ওঠেনি।   উদ্বেগ যতটুকু দেখা যাচ্ছে তা মূলত গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যেই। যাঁরা শংকিত তাদের আশংকা সাংবাদিকতা শেষপর্যন্ত সরকারী সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পুর্নলিখন এবং সম্পাদনাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। রাষ্ট্র, সমাজ, শিল্প-সাহিত্য, ধর্মীয়ভাবনা, ব্যবসা-বাণিজ্য , জীবনযাত্রা ইত্যাদি সবকিছুর ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষীয় ভাষ্য কিম্বা প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা দূ:সাধ্য হয়ে পড়বে। সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের বিবরণও ক্ষমতাসীনদের বিবেচনায় ক্ষতিকর গণ্য হলে তাও প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। সোজা কথায় বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বা তথ্য অধিদপ্তরের ভাষ্য প্রকাশের বৃত্তের মধ্যেই গণমাধ্যম আবদ্ধ হয়ে পড়বে। উন্নয়নের গনতন্ত্রে অবশ্য এটি নতুন কিছু নয়।
প্রস্তাবিত আইনের আরেকটি বিতর্কিত বিধানটি ৩২ ধারায় যে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল তার সমালোচনা অবশ্য সরকার গ্রহণ করেছে। সেজন্যে সরকারকে হয়তো ধন্যবাদ জানানো যেত। কিন্তু, খসড়াটির রুপান্তর ঘটাতে গিয়ে সেখানে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টকে অর্ন্তভুক্ত করায় সরকারের উদ্দেম্য যে মহৎ নয়, তার প্রমাণ মিলেছে। ঔপনিবেশিক আইন এখন অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই অচল। সম্প্রতি মিয়ামমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার তথ্যসম্বলিত সরকারী নথির কপি রাখার দায়ে দেশটির আদালত রয়টার্সের দুজন সাংবাদিককে সাতবছর করে জেল দিয়েছে। মিয়ানমার যে গণতন্ত্র থেকে এখনও অনেক দূরে সেকথা আমরা সবাই জানি। তাহলে কী গণতন্ত্রের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব বাড়তেই থাকবে?   
অতীব ক্ষমতাধর সাংসদের ফারমার্স ব্যাংকের অর্থলোপাটের তথ্য, ক্রেস্টের স্বর্ণেরর ১২ আনাই মিছে, ভুয়া সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সচিব হওয়ার কেলেংকারির মত খবরগুলো অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতায় পড়লে এসব  অপরাধের কথা আমরা কোনোদিন জানতে পারতাম না। যেকোনো অপকীর্তি, অনিয়ম বা বিব্রতকর বিষয় গোপন রাখার তাগিদ আমলা এবং রাজনীতিকদের মধ্যে অনেক বেশি সেটা আমরা সবাই জানি। এখন অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টকে যে সরকার গণমাধ্যমের কন্ঠরোধের হাতিয়ার বানানো চেষ্টা করছেন তাতে সাংবাদিকদের আতঙ্কিত হওয়ারই কথা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকার বিষয়েও অপপ্রচারের একটি বিধান এই আইনে রেখে দেওয়া হয়েছে। এধরণের বিধান যে মুক্তচিন্তা এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যের গবেষণাকে বাধাগ্রস্ত করবে সেই সমালোচনা কার্য্যত উপেক্ষিত হয়েছে।
ফলে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়গ যে শুধু সাংবাদিকতার ওপর নামছে তা নয়, এটি পুরোসমাজেরই মুক্তচিন্তা এবং স্বাধীনচিন্তা ও মতপ্রকাশের পথ বাধা তৈরি করবে। তবে, সমাজের অন্যান্য অংশের চেয়ে সংবাদমাধ্যমের জন্য চ্যালেঞ্জটা একটু বেশিই। এক্ষেত্রে, সম্পাদক পরিষদ এই খসড়া প্রত্যাখ্যান করে একটি গুরুত্বর্পূণ জাতীয় দায়িত্ব পালন করায় তাঁদেরকে ধন্যবাদ। রাজনৈতিক বিভাজন ও সুবিধাবাদিতার বেড়াজালে আটকে থাকার কারণে এবিষয়ে সাংবাদিকসমাজের ঐক্যবদ্ধ কোনো অবস্থান গ্রহণ সম্ভব কিনা আমরা জানি না। তবে, এটুকু আমরা বলতে পারি যে এই খসড়াটি এভাবে আইনে রুপান্তরিত হলে তা সংবাদমাধ্যম , সাংবাদিকতা পেশা এবং গণতন্ত্রের জন্য তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। এই আইন গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রের জন্য একটি অশনি সংকেত।
(১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত বিশ্লেষণ। )

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...