সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গণমাধ্যম: নতুন বৈশ্বিক অঙ্গীকার কতটা আন্তরিক ?


স্বাধীন সাংবাদিকতা কী ধরণের আক্রমণের মুখে তার কতগুলো প্রতীকি ছবি আছে। ২০১৪-১৫ সালে কায়রোর আদালতে লোহার খাঁচায় সাদা-কালো খোপের ছাপওয়ালা কয়েদির পোশাকে হাজির ৩জন সাংবাদিকের ছবি সেগুলোর অন্যতম। কাতারি মালিকানাধীন বৈশ্বিক টিভি আল-জাজিরার ওই তিনজন সাংবাদিকের মধ্যে আগে থেকেই সুপরিচিত ছিলেন অষ্ট্রেলীয় পিটার গ্রেস্ট। মিশরের নতুন স্বৈরশাসক আল-সিসির সরকার পিটার ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছিলেন এবং আদালত তাঁদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়। বিশ্ব জুড়ে প্রতিবাদ এবং পাশ্চাত্যের নেতাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য চাপের কারণে ৪০০ দিন কারাভোগের পর পিটার ছাড়া পান। সেই পিটার গ্রেস্ট গত ১১ জুলাই লন্ডনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার বৈশ্বিক সম্মেলনে প্রশ্ন করেন যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার কথা যেসব গণতান্ত্রিক দেশে উচ্চারিত হয়, সেসব দেশ আদতে এই স্বাধীনতার সুরক্ষায় আন্তরিক কিনা?

ডিফেন্ড মিডিয়া ফ্রিডম শিরোনামে অনুষ্ঠিত এই বৈশ্বিক সম্মেলনের যৌথ উদ্যোক্তা ও আয়োজক যুক্তরাজ্য এবং কানাডা। শতাধিক দেশের প্রায় ৬০ জন মন্ত্রীসহ দেড় হাজারেরও বেশি সাংবাদিক এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল প্রতিপাদ্য ছাড়াও আনুষঙ্গিক অনেকগুলো বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকটি সমান্তরাল আয়োজনও ছিল। ওইসব বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, ভুঁয়া খবরের দৌরাত্ম্য মোকাবেলা এবং আইনগত সুরক্ষার প্রশ্ন।

সাংবাদিকতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন দুটির মধ্যে প্রায়শ:ই দ্বিতীয়টি বেছে নেওয়ার একটি প্রবণতা রয়েছে বলে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি মন্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেন সাংবাদিক পিটার গ্রেস্ট। তিনি বলেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে রক্ষা করা যেহেতু জাতীয় নিরাপত্তার অংশ এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা যেহেতু গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ, সেহেতু এই দুটির মধ্যে একটিকে অন্যটির ওপরে অগ্রাধিকার দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট অবশ্য পিটারের বক্তব্যের জবাবে বলেছেন পরস্পরবিরোধী লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলেও তারা উভয়েই ঠিক হতে পারে। তবে, এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্ন, অন্যান্য সব কিছুর চেয়ে বেশি গুরুত্বর্পূণ। একে অন্য কিছুর বিনিময়ে বিসর্জন দেওয়া চলে না। গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর জন্য এবিষয়টি যেমন গুরুত্বর্পূণ, তেমনই দ্রুত সব সমস্যার সমাধান সম্ভব এমনটিও মনে করার কারণ নেই। তিনি মিয়ানমারে রয়টার্সের দুজন সাংবাদিকের সাম্প্রতিক মুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন যে এজন্যে প্রকাশ্যে চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি অনেক অপ্রকাশ্য-কূটনৈতিক চেষ্টাও চালাতে হয়েছে।

স্বাধীন সাংবাদিকতার মূল্য যে কত চড়া তার সাম্প্রতিক আরেক নজির হচ্ছে সউদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির নৃশংসতম হত্যাকান্ড। তৃতীয় আরেকটি দেশে সউদি সরকারের বেতনভুক্ত ঘাতকদল কূটনৈতিক খোলসে ফাঁদ পেতে খাশোগিকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে। বিশ্ব জুড়ে এই হত্যাকান্ডের বিবরণ ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় তুললেও পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর অনেকেই সউদি সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে উৎসাহী নয়। মুক্ত সাংবাদিকতার বিরোধী কর্তৃতত্বাদী দেশগুলোর সঙ্গে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নানাধরণের স্বার্থকেন্দ্রিক আপোষরফার এসব দৃষ্টান্ত তাই লন্ডন সম্মেলনে বারবার আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলার বিষয়ে আল-জাজিরা টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের জন্য জেল খাটা আলোকচিত্রী শহীদুল আলম যখন এই সম্মেলনে কথা বলেছেন তখন নিশ্চয়ই প্রতিনিধিদের অনেকের চোখে তাঁর গ্রেপ্তারের সময়কার ছবি ভেসে উঠেছিল।

সম্মেলনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে করুণ চিত্র উঠে এসেছে, সেই পরিসংখ্যানগুলো নতুন নয়। ফ্রিডম হাউজের হিসাব তুলে ধরে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে বিশ্বের মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ এমন সব দেশে বাস করেন যেখানে গণমাধ্যম র্পূণ স্বাধীনতা ভোগ করে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্ধৃত হিসাব অনুযায়ী গতবছরে বিশ্বে ৯৯ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন, যা এক দশক আগের তুলনায় দ্বিগুণ।গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩৪৮ জন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় বিচারহীনতার চিত্র সবচেয়ে ভয়াবহ। প্রতি ১০টি সহিংসতার অভিযোগের ৯টিতেই বিচার হয় নি। বছরের পর বছর হত্যাসহ এসব সহিংসতার তদন্তও ঝুলে থাকে।

দেশে দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকারের উত্থান স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বড় বাধা তৈরি করেছে বলেও সম্মেলনে অভিমত উঠে আসে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার ডেভিড কে বলেন, ভিন্নমত দমনে কতৃত্ববাদী সরকারগুলো আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট সুবিধাকে মানুষের অধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাঁর মতে গুজব ও সংঘাত ছড়ানোর বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণের ভার সরকার নয়, বরং, বিভিন্ন অংশীজনের সমন্বয়ে গঠিত নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে থাকা উচিত।

রিপোর্টাস স্য ফ্রঁতিয়ের বৈশ্বিক মুক্ত সংবাদমাধ্যম সূচক ২০১৯ উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ মন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন যে সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করা শীর্ষ ১০টি দেশ হচ্ছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তালিকায় সবচেয়ে কম দূর্নীতির দেশ বা সফেদ দেশ। আর, সবচেয়ে দূর্নীতিগ্রস্ত চারটি দেশের অবস্থান গণমাধ্যম সূচকের সর্বনিম্নের ১০টির মধ্যে। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ও রাজনীতিক লর্ড অ্যাক্টনের কথা - পাওয়ার টেন্ডস টু করাপ্ট অ্যান্ড অ্যাবসলুট পাওয়ার করাপ্টস অ্যাবসলুটলি‘ (ক্ষমতা দূর্নীতির ঝোঁক তৈরি করে, আর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিরঙ্কুশভাবে দূর্নীতিগ্রস্থ করে) উদ্ধৃত করে তিনি বলেন প্রকৃত জবাবদিহিতার জন্য মুক্ত সংবাদমাধ্যম অপরিহার্য্য।

সম্মেলনের প্রাক্কালে অবশ্য সাংবাদিকদের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে এমন ৩৩টি বৈশ্বিক সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে যে বিশ্বনেতারা কেবল বক্তব্য দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতে পারে না। এতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার এমন দৈন্যদশার জন্য আন্তর্জাতিক আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দূর্বলতা ও ত্রুটিকে দায়ী করা হয়। সাংবাদিক হত্যা, তাদের ওপর হামলা ও নির্যাতন বন্ধ, হত্যা ও সহিংসতার সব ঘটনার নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ছাড়া বিশ্বনেতাদের কোনো অঙ্গীকার কার্যকর ফল দেবে না বলে বিবৃতিতে তাঁরা যে অভিমত প্রকাশ করেছেন এই সম্মেলন তাতে তেমন একটা পরিবর্তন আনতে পারবে বলে আশাবাদী হওয়া কঠিন।  
সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য ফলাফল হচ্ছে : ১. গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য একটি বৈশ্বিক অঙ্গীকার প্রকাশ; ২.মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন নামে একটি প্লাটফর্মের আত্মপ্রকাশ; ৩.মিডিয়া ফ্রিডম কনটাক্ট গ্রুপ নামে কূটনীতিকদের নেটওর্য়াককে কাজে লাগানো; ৪.সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা দেওয়ায় জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আর্ন্তজাতিক সংস্থাকে সহযোগিতা এবং ৫. ব্রিটেনের সাবেক প্রধান বিচারপতি লর্ড ন্যূবারগার এবং অমল ক্লুনিকে প্রধান এবং উপ-প্রধান করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় আইনগত কাঠামো উন্নয়নের বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা , প্রশিক্ষণ এবং আইনগত সহায়তার জন্য একটি বৈশ্বিক তহবিল প্রতিষ্ঠারও ঘোষণা দেওয়া হয়।
আপাতদৃশ্যে, এসব সিদ্ধান্তকে প্রয়োজনীয় এবং যৌক্তিক বলে বিবেচনা করা হলেও অনেকক্ষেত্রেই অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। প্রথমত: অঙ্গীকারটি বৈশ্বিক হলেও তাতে কতগুলো রাষ্ট্র স্বাক্ষর দেবে তা মোটেও স্পষ্ট নয়। সম্মেলনে বলা হয়েছে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় তা স্বাক্ষরের সুযোগ থাকছে। সুতরাং, তার আগ পর্যন্ত অস্পষ্টতা থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া, উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্য এই অঙ্গীকার যতটা সহজ কর্তৃত্ত্ববাদী দেশগুলোর জন্য তা ততোটাই জটিল এবং কঠিন। কোনোধরণের নজরদারি, নিরীক্ষা এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা ছাড়া এধরণের অঙ্গীকারে আমাদের মত দেশগুলো এগিয়ে আসলেও তা বাস্তবে কোনো ফারাক তৈরি করবে না। সর্বোপরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর মত রাজনীতিকদের কারণে কথিত উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে কোনো ভূমিকা নেবে কিনা সেই সন্দেহ থেকেই যায়। তৃতীয়ত: নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তার কারণে কূটনৈতিক সম্পর্কে ছাড় দেওয়ার রীতি থেকে কটি দেশ বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। সম্মেলনের ঘোষণায় ফিলিস্তিনী সংঘাতে সাংবাদিক হত্যার প্রসঙ্গ অনুচ্চারিত থাকাতেও মানবাধিকার কর্মীদের অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন এবং তা এই উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের কোনো বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে কেন উত্থাপিত হলো না, তা স্পষ্ট নয়। বিবিসি জানিয়েছিল যে তথ্যমন্ত্রী এই সম্মেলনে যোগ দিতে লন্ডনে এসেছেন এবং এক সাক্ষাৎকারে তাদেরকে  বলেছেন ‘‘ বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে।" (স্মরণ করা যেতে পারে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বৈশ্বিক সূচকে ১৮০ টি দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য ওপরের দিকে ৩৩তম অবস্থানে আর বাংলাদেশ নীচের দিক থেকে ৪০ তম।)  কিন্তু, সম্মেলনের আগেই তিনি দেশে ফিরে যান। সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনার অংশ নিয়েছেন। রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে অঙ্গীকার করার জন্য নির্ধারিত অধিবেশনে বাংলাদেশের তরফ থেকে বিবৃতি দেয়া হবে বলে তালিকায় নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সবকটিই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকোচনের জন্য কয়েকবছর ধরেই সমালোচিত হচ্ছে। তারপরও পাকিস্তানের মন্ত্রী ওই মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন এবং দর্শকসারি থেকে দুয়োধ্বনি শুনেছেন। এরকম বিড়ম্বনার আশংকা বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। তথ্যমন্ত্রীর সদর্প বক্তব্যে তো অন্তত তা-ই মনে হয়!
(১৭ জুলাই, ২০১৯‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত নিবন্ধ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...