সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মানবাধিকার না আমলা পুনর্বাসন

বাংলাদেশের সাংবিধানিক এবং আধা বিচারিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে রূপান্তরের পালায় এবার নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছে। রাজনৈতিক আনুকূল্য পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের প্রাধান্যের কারণে নির্বাচন কমিশন কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তা নিয়ে খুব একটা বিতর্কের অবকাশ নেই। এবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও এর সংক্রমণ ঘটেছে। যদিও এর আগে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ও অনুগতদের প্রাধান্য মানবাধিকার কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর সরকার কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান, পূর্ণকালীন সদস্য এবং খণ্ডকালীন সদস্যদের নিয়োগ দেওয়ার পর দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়ায় সে রকম বক্তব্যই উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করে, এমন বেসরকারি কয়েকটি সংগঠনের জোট হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, মানবাধিকারসংক্রান্ত কাজের কোনো অভিজ্ঞতা যাঁদের নেই, তাঁরাই নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছেন। ফোরাম বলেছে, নাগরিক সমাজের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল এ কমিশন প্রতিষ্ঠিত হলেও নানা কারণে গত ১০ বছরেও প্রতিষ্ঠানটির নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটিকে মূলত সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মক্ষেত্র হিসেবে রূপান্তর করা প্রতিষ্ঠানটির কার্যকারিতাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং এর গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস করবে। এই ফোরামের সদস্য নয়, এ রকম আরেকটি সংগঠন ‘অধিকার’ বলেছে, কমিশন গঠনে আইন অনুযায়ী মানবাধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি মানা হয়নি। এ রকম অবস্থায় মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে এই কমিশনকে অর্থায়নের যৌক্তিকতা নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন।
মানবাধিকার ফোরাম এবং অধিকার অবশ্য অভিযোগ করেছে, এই নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার নিজের তৈরি আইনও মানেনি। বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব অবশ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এবং তারা ২০০৭ সালে এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইনটি তৈরি করে এবং ২০০৮ সালে কমিশন প্রতিষ্ঠা করে। পরে ২০০৯ সালে সংসদে আইনটি অনুমোদিত হয়। এই আইনের ৬.২ ধারা বলছে: ‘আইন বা বিচারকার্য, মানবাধিকার, শিক্ষা, সমাজসেবা বা মানবকল্যাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখিয়াছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্য হইতে চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, এই ধারার বিধান সাপেক্ষে, নিযুক্ত হইবেন।’ আইনের বিধান এবং সরকারের পদক্ষেপে সংগত কারণেই প্রশ্ন ওঠে যে আমলাদের সরকারি দায়িত্ব পালন বা রাষ্ট্রীয় কর্ম সম্পাদনের অভিজ্ঞতাকে কি সরকার সমাজসেবা বা মানবকল্যাণে অবদান বিবেচনা করছে? করদাতাদের বেতন-ভাতায় পরিপুষ্ট কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকে জনকল্যাণের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করতে হলে তার আগে দেশের কৃষক-শ্রমিক ও অন্যান্য পেশাজীবীদের অবদানও তো স্বীকার করা প্রয়োজন।
 ২০০৯ সালের আইনে কমিশন গঠনের জন্য বাছাই কমিটির একটি বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে: ‘চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রদানের জন্য নিম্নবর্ণিত সাত সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠিত হইবে: ক) জাতীয় সংসদের স্পিকার, যিনি ইহার সভাপতিও হইবেন; খ) আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী; গ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী; ঘ) চেয়ারম্যান, আইন কমিশন; ঙ) মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও চ) স্পিকার মনোনীত দুজন সংসদ সদস্য, যাহাদের একজন সরকারদলীয় এবং অন্যজন বিরোধীদলীয় হইবেন।’ ওই আইনেই বলা আছে, প্রতিটি শূন্যপদের বিপরীতে কমিটি দুজনের নাম সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটির সুপারিশের মধ্য থেকেই চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের নিয়োগ করেন। এই আইনটিও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা মানবাধিকারকর্মীরা শুরু থেকেই বলে আসছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই আইনে বাছাই কমিটিতে সরকারের প্রতিনিধিত্ব প্রায় একচেটিয়া। কিন্তু তারপরও অন্য আর কারা বাছাই কমিটির তালিকায় ছিলেন, তা সরকারের তরফে প্রকাশ করা হয়নি।
নতুন কমিশনে যাঁরা নিয়োগ পেলেন, তাঁদের পরিচয় আগে একটু খুঁটিয়ে দেখা যাক। তাহলেই বোঝা যাবে যে কী কী কারণে মানবাধিকারকর্মীরা হতাশ হয়েছেন ও উদ্বিগ্ন বোধ করছেন। নতুন কমিশনের লক্ষণীয় দিকগুলো হচ্ছে: ১. সাতজনের মধ্যে তিনজনই হলেন সাবেক সচিব। ২. এই তিন সচিবের একজন হলেন কমিশনের চেয়ারম্যান এবং একজন সার্বক্ষণিক সদস্য। ৩. সাবেক এই তিনজন সচিবের কেউই মানবাধিকার রক্ষার কাজে অভিজ্ঞ নন। ৪. বরং সাবেক একজন স্বরাষ্ট্রসচিব, যিনি জননিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁকে করা হয়েছে পূর্ণকালীন সদস্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে যখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ ওঠা অব্যাহত থেকেছে, তখন সেসব বাহিনীর ওপর প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অধিকারী কর্মকর্তাকে মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্বে নিয়োগ। ৫. নারী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা হলেও অধিকারকর্মী বা বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাঁদের কোনো স্বীকৃতির কথা জানা যায় না। ৬. কমিশনে সাবেক দুজন জেলা জজ এবং একজন নারী আইনজীবীকে অবৈতনিক সদস্য করা হয়েছে। কিন্তু কমিশনের আইনে কোরামের যে বিধান আছে, তাতে অবৈতনিক সদস্যদের দু-একজনের অনুপস্থিতিতে কমিশন পরিচালনায় এই তিনজন সাবেক সচিব বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। রাজনৈতিক সরকারের আনুকূল্যের কারণে তাঁরা স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন, এমন ধারণা করার অবকাশ কম।
কমিশনের বিদায়ী চেয়ারম্যানও ছিলেন একজন সাবেক সরকারি আমলা এবং তখনো তাঁর নিয়োগ নিয়ে ঢের বিতর্ক হয়েছিল। ফলে আশা করা হয়েছিল যে এবার হয়তো সরকার মানবাধিকার কমিশনকে অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের পুনর্বাসনের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে না। তা ছাড়া, আন্তর্জাতিক পরিসর থেকেও কমিশনকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য একাধিকবার সুপারিশ এসেছে। যার মধ্যে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত মানবাধিকার পরিস্থিতির নিয়মিত পর্যালোচনা, ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ এবং গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত নির্যাতনবিরোধী কমিটির (ক্যাট) পর্যালোচনাতেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ এসেছে। কমিশনের গঠন এবং তার কাজের ক্ষমতা ও দায়িত্বের পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্যারিস নীতিমালা অনুসরণের জন্য ওই সব সুপারিশে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
দেশে দেশে মানবাধিকার কমিশন যাতে সরকারের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত না হয়, সে কারণেই ১৯৯৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব পাস করে, যা প্যারিস প্রিন্সিপলস নামে পরিচিত। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ ধরনের জাতীয় প্রতিষ্ঠান গঠনে যেন বহুমত ও গোষ্ঠীর প্রতিফলন ঘটে এবং প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়। এতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে নির্বাচন অথবা অন্য কোনো পন্থায় এর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যেন এমন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যাতে নাগরিক সমাজের সামাজিক শক্তিগুলোর বহুত্বমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়, যাঁরা মানবাধিকারের সুরক্ষা ও প্রসারে কাজ করেন। এরপর প্রস্তাবটিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে—এতে থাকবে: ক) মানবাধিকারের জন্য এবং জাতিগত বৈষম্য মোকাবিলায় কাজ করে, এমন বেসরকারি সংগঠন বা এনজিও, ট্রেড ইউনিয়ন, সামাজিক ও পেশাগত সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব; খ) ধর্মীয় বা আদর্শগত চিন্তাধারার প্রতিনিধিত্ব; গ) বিশ্ববিদ্যালয় এবং যোগ্য বিশেষজ্ঞ; ঘ) সংসদ; এবং ঙ) সরকারি দপ্তর বা বিভাগগুলো (এঁদের প্রতিনিধিত্ব থাকলে তাঁরা শুধু পরামর্শকের মতো আলোচনায় অংশ নেবেন)।
এবার দেখা যাক আমাদের মানবাধিকার কমিশন সম্পর্কে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মূল্যায়ন কী? এ ক্ষেত্রে সর্বসম্প্রতি জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী বিশেষজ্ঞ কমিটি, ক্যাটের মূল্যায়ন স্মরণ করা যেতে পারে। ক্যাট গত ৮ আগস্ট প্রকাশিত তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে: কমিশনের সদস্যদের বাছাই ও নিয়োগ-প্রক্রিয়া এবং ‘প্রিন্সিপলস রিলেটিং টু দ্য স্ট্যাটাস অব ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর দ্য প্রমোশন অ্যান্ড প্রোটেকশন অব হিউম্যান রাইটস’ (প্যারিস প্রিন্সিপলস) অনুসারে দায়িত্ব পালনে কমিশনের যথেষ্ট জনবল ও আর্থিক সংগতি না থাকার বিষয়ে কমিটি উদ্বিগ্ন। মানবাধিকার কমিশন প্রসঙ্গে ক্যাটের সুপারিশগুলোর মধ্যে কমিশন গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে: প্যারিস নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটি পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও মেধাভিত্তিক নির্বাচন ও নিয়োগদান-প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সরকার মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যেই জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ উপেক্ষা করেছে। সুযোগ তৈরি হলেও স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক কমিশন গঠনের পথে সরকার এগোয়নি। বরং প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে তাকে দুর্বল ও গুরুত্বহীন করে তোলার সব আয়োজনই সম্পন্ন হয়েছে। জাতীয় প্রতিষ্ঠানের এই উল্টো যাত্রার ফলে মানবাধিকার রক্ষার লড়াইটা এখন একান্তই নাগরিক সমাজের।
(৬ অক্টোবর, ২০১৯‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...