সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রতিবেশীর সম্পর্কে ন্যায্যতা কোথায়


বুয়েটের ছাত্র আবরার ফেসবুকে ফাহাদ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের সর্বসাম্প্রতিক অবস্থার বিষয়ে হতাশা ও ক্ষোভমিশ্রিত মতামত প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ড যৌক্তিকভাবেই পুরো দেশের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। স্বভাবতই ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সাম্প্রতিক চুক্তি বা সমঝোতাগুলোর বিষয়ে নিবিড় পর্যালোচনা এখন অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে। এই অস্বস্তিদায়ক এবং স্পর্শকাতর বিষয়ে আলোচনা বিতর্ক যত কম হয় ততই ভালো বলে কারো কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু, চাপা অসন্তোষ যে ধীরে ধীরে বড়ধরণের বিপত্তির কারণ হতে পারে, সেকথাটি মনে রেখে বিতর্কের সুযোগ আরও প্রসারিত করা প্রয়োজন। চুক্তির খুঁটি-নাটি এবং আনুষঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা উচিত।
জনধারণা এবং প্রকৃত সত্য সবসময় এক নাও হতে পারে। কিন্তু, জনধারণা সবসময়েই গুরুত্বর্পূণ। তা সে রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হোক কিম্বা কর্তৃত্ববাদী। গণতন্ত্রে জনধারণায় বিভ্রান্তি প্রতিকারের সেরা উপায় হচ্ছে স্বচ্ছ্বতা, যাতে তথ্যনির্ভর যৌক্তিক বিতর্কে সত্য প্রতিষ্ঠা পায়। আর, কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় সত্য প্রকাশ পেলে শাসকের ক্ষমতার ভিত ধসে পড়ার আশংকার কারণে উল্টোটাই বেশি ঘটে। বিভ্রান্তি সৃষ্টির কাজটা রাষ্ট্রের তরফেই করা হয়। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে বাংলাদেশে ধীরে ধীরে যে ধারণাটি প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে তা হচ্ছে, আমরা অন্যায়ের শিকার এবং লাভ-ক্ষতির নিক্তিতে আমাদের প্রতিবেশী একতরফা সুবিধাভোগী। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফরে সম্পাদিত সাতটি সমঝোতা স্মারকের বেলায়ও সেটিই ঘটেছে।এক্ষেত্রে, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, সেটা ভারত সারা জীবন মনে রাখবেবক্তব্যটিও অনেকে উদ্ধৃত করে থাকেন। ওই বছরের ৩০ মে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেছিলেন আমরা কোনো প্রতিদান চাই না। তবে হ্যাঁ, স্বাধীনতাযুদ্ধে সহায়তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। 
ওই বছর এপ্রিলে বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন এবং কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মাননা নেওয়ার জন্য তিনি কোলকাতা গেলে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তাঁর একটি বৈঠক হয়। আনন্দবাজার তখন খবর ছাপে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগেই তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছেন। পত্রিকাটি লিখেছিলো প্রধানমন্ত্রী প্রতিদান চেয়েছেন। তিনি কী প্রতিদান চেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেছিলেন। তখনই প্রশ্নটা উঠেছে - প্রতিদান নয়, পাওনাটা তো চাইতে হবে। এবারের সাতটি সমঝোতা স্মারকও সেই নিরিখে পর্যালোচনা করা হলে প্রচলিত জনধারণাই জোরদার হয়। 
দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে যেসব সমঝোতা স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা বলা আছে সেগুলো হচ্ছে: উপকূলীয় নজরদারি ব্যবস্থা, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহণের বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর- এসওপি, ফেণী নদী থেকে ভারতের ১.৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার যা ত্রিপুরার সাবরুমে খাওয়ার পানি সরবরাহে ব্যবহৃত হবে , বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের প্রকল্প ঋণ কাজে লাগানো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব হায়দরাবাদের মধ্যে সমঝোতা স্মারক , সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিনিময় এবং যুব উন্নয়নে সহযোগিতার চুক্তি।

এগুলোর মধ্যে প্রথমটি অর্থাৎ, উপকূলীয় নজরদারির ব্যবস্থার বিষয়ে দুই দেশের কোনো তরফেই বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয় নি। তবে, আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিষয়টিতে একধরণের ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতায় উদ্বিগ্ন ভারত বাংলাদেশের চীনা সাবমেরিন কেনার পর থেকেই অস্বস্তিতে ভুগছিল। এই অঞ্চলে চীনের সামরিক প্রভাব যাতে বিস্তৃত হতে না পারে সেজন্য দেশটি বেশ কিছুদিন ধরেই তৎপর এবং তার পরিনতিই এই উপকূলীয় নজরদারি ব্যবস্থা। কেউ কেউ এখন এমন আশংকাও প্রকাশ করেছেন যে এর ফলে চীন-ভারত দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ একটি অনিচ্ছুক পক্ষ/ অংশীদার হয়ে পড়তে পারে। স্পষ্টতই: তা হবে বাংলাদেশের সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় নীতির পরিপন্থী। জাতীয় পরিসরে কোনোধরণের বিতর্ক ও রাজনৈতিক মতৈক্য ছাড়া এধরণের পদক্ষেপ কেন জনসমর্থন পাবে তা সরকারকেই ব্যাখ্যা করতে হবে।

বিবৃতিতে যে ক্রমানুসারে সাতটি চুক্তির উল্লেখ আছে তার পরের দুটি বন্দর ব্যবহারের নিয়মনীতি এবং ফেণী নদীর পানি প্রত্যাহারের বিষয়টিতে সুবিধাভোগী নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই। কেউ খাওয়ার পানি চাইলে না করা যায় না, অথবা মানবিক বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত - এমন যুক্তি বেশ জোরালো, সন্দেহ নেই। কিন্তু, এর পাশাপাশি অবৈধভাবে ৩৬টি জায়গা থেকে ত্রিপুরা যে পানি প্রত্যাহার করছে সেই অন্যায় প্রতিকারের কথা কেন নেই? চুরিও চলবে, আবার মানবিক সহায়তাও দেওয়া হবে এমন আচরণ কীভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে ? ভারতের প্রকল্প ঋণ নিয়েও আছে ঢের বিতর্ক। যেমন, প্রকল্পের উপকরণ সংগ্রহে ভারতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বাধ্যবাধকতার কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা বা শিক্ষা ও যুব বিনিময়ের সুফল যে অনেকটাই সীমিত এবং তা উভয় দেশের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

যৌথ বিবৃতির ৫২টি অনুচ্ছেদের মধ্যে মোটা দাগে যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে: দ্বিপক্ষীয় বন্ধনকে কৌশলগত সম্পর্কে উত্তরণ ঘটানো, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপনা, উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক ব্যাবসায়িক অংশীদারিত্ব, জল-স্থল-আকাশপথে সংযোগ জোরদার করা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সমৃদ্ধকরণ, উন্নয়ন সহযোগিতা সংহতকরণ, আন্ত:সীমান্ত জ্বালানি সহযোগিতা, শিক্ষা এবং যুব বিনিময়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যূত লোকজন, এই অঞ্চল এবং বিশ্বে অংশীদারিত্ব এবং উচ্চপর্যায়ের সফরের মাধ্যমে গতিশীলতাকে টিকিয়ে রাখা। এসব আলোচিত বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ, নির্দেশনা এবং অঙ্গীকারগুলোর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের স্বার্থগুলো সমান গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার পেয়েছে কীনা সেটাও মূল্যায়ন করার অবকাশ আছে।

সীমান্ত নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে উভয়দেশের মধ্যে লোকজনের চলাচলের সুবিধা বাড়ানোর কথা এসেছে। কিন্তু, একই সঙ্গে সীমান্তে যেসব জায়গায় এখনও কাঁটাতারের বেড়া তৈরি হয়নি সেখানে তা সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধের বিষয়ে অবশ্য এরকম স্পষ্ট নির্দেশনার বদলে সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ জোরদার করতে বলা হয়েছে। আদর্শ প্রতিবেশি দেশ সীমান্তে এধরণের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করেছে এমন নজির বিশ্বে আর কটি আছে, তা আমাদের জানা নেই। কার্যত ভারত তার বৈরি প্রতিবেশিদের সীমান্তেও এভাবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে নি।

উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব বা কথিত উইন-উইন বিজনেস পার্টনারশিপে দ্বিপক্ষীয় পূর্ণাঙ্গ বা কম্প্রিহেনসিভ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে একটি যৌথ সমীক্ষার কথা বলা হয়েছে। এই সমীক্ষায় বাণিজ্য সহযোগিতায় আনুপাতিক ন্যায্যতা কতটা নিশ্চিত হয়েছে, সেটি স্পষ্ট হতে পারে বলে আশা করা যায়। বৃহদাকার অর্থনীতি হওয়ায় বাণিজ্য সহযোগিতায় ভারতই যে অপেক্ষাকৃত বেশি লাভবান হবে সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু, আনুপাতিক ন্যায্যতার প্রশ্ন কোনোভাবেই উপেক্ষণীয় নয়। এবং এখনও পর্যন্ত আলামত মেলে যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ছোট হলেও বাংলাদেশি অনেক পণ্যের ওপরই অন্যায্য প্রতিবন্ধক টিকিয়ে রাখা হয়েছে। বিবৃতিতে জ্বালানি খাতে ভারত থেকে বিদ্যূত আমদানির ক্ষেত্রে সহযোগিতার বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় তরলীকৃত গ্যাস বা এলপিজি সরবরাহ প্রকল্প উদ্বোধনের কথা বলা হয়েছে। এই গ্যাস সরবরাহ নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে - বাংলাদেশ নিজেই যখন গ্যাস সংকটের মুখোমুখি এবং এলপিজির পুরোটাই আমদানির ওপর নির্ভরশীল, তখন আমদানি করা গ্যাস পুনরায় রপ্তানির যৌক্তিকতা কী ? এতে করে আদৌ কোনো মূল্য সংযোজন হবে, নাকি বিশেষ কোনো ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থই এক্ষেত্রে মূখ্য।

সংযোগ বাড়ানোর বিষয়ে বিবৃতির একটা উল্লেখযোগ্য অংশই হচ্ছে সমুদ্রবন্দর, নৌবন্দর এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে ভারতের পণ্য চলাচলের বিষয়। বিপরীতে, ভারতের বন্দর ও নৌপথ বাংলাদেশী পণ্য পরিবহনের বিষয়টিতে প্রয়োজনীয় পদ্ধতি নির্ধারণে আলোচনার কথাই শুধু বলা আছে। তিস্তার পানিবন্টন প্রশ্নে অবশ্য এই বৈঠকে কোনো প্রাপ্তির প্রত্যাশা ছিল না। যৌথবিবৃতিতে ২০১১ সালে সম্পাদিত অর্ন্তবর্তী চুক্তির বিষয়ে অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার যে কথা প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তব্যে এসেছে তাতে বাংলাদেশে হতাশা বাড়া ছাড়া কমার কথা নয়। বিবৃতিতে বাংলাদেশে গঙ্গা-পদ্মা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের টেকনিকাল কমিটি গঠনের বিষয়ে গত আগস্টে সচিবপর্যায়ের আলোচনায় বিবৃতিতে সন্তোষ প্রকাশই বলে দেয় তা এখনও কতটা অনিশ্চিত। ফেনী নদীর বিষয়ে খসড়া চুক্তিকে চূড়ান্ত রুপ দেওয়া এবং অন্য ছটি নদী মনু, মুহুরি, খোয়াই, গুমতি, ধরলা ও দুধকুমারের পানি ভাগাভাগির বিষয়ে অর্ন্তবর্তী চুক্তির খসড়া তৈরির নির্দেশনা এই বিবৃতির আরেকটি গুরুত্বর্পূণ দিক। অভিন্ন ৫৪টি নদীর মধ্যে একমাত্র ব্যাতিক্রম ফেণী। বাকি ৫৩টির পানিপ্রবাহের নিয়ন্ত্রণ ভারতের হওয়ায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মানবিকতার প্রশ্ন অনুপস্থিত থাকলে ন্যায্যতা বা বঞ্চনার হতাশাই তো স্বাভাবিক।  

হতাশা যে রোহিঙ্গা প্রশ্নেও স্বাভাবিক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের মানবিকতার প্রশংসা আর উদ্বাস্তুদের জন্য কিছু ত্রাণ পাঠানোর চেয়েও যে বৈশ্বিক ফোরামে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ভারতের সমর্থন বেশি জরুরি সেকথা সবারই জানা। দূর্ভাগ্যজনকভাবে গত দুই বছরে বৈশ্বিক ফোরামগুলোতে ভারত বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ায়নি। অথচ, যৌথবিবৃতিতে এই অঞ্চল এবং বিশ্বে বিশেষত জাতিসংঘে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করার কথা বলেছে। কাশ্মীর প্রশ্নে বাংলাদেশের ভূমিকায় ভারত তাই সন্তোষও প্রকাশ করেছে। কথিত নাগরিকপঞ্জির সম্ভাব্য বিপদ নিয়েও বৈশ্বিক পরিসরে তৈরি হওয়া উদ্বেগ-উৎকন্ঠার বিপরীতে বাংলাদেশের অবস্থানও অস্বাভাবিক মাত্রায় সংযমী। বিবৃতিতে তার কোনো স্থান হয়নি। অনেকেই অবশ্য একে আত্মঘাতি বলেই বর্ণনা করেছেন। বিশেষত: প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী প্রায় পাঁচ দশকের অবস্থান বদলে দিয়ে দ্য হিন্দু পত্রিকাকে বলেছেন বাংলাদেশি প্রমাণ হলে আসামের বাংলাভাষীদের গ্রহণ করা হবে। নথিপত্র না থাকায় যাদেরকে বাংলাদেশি দাবি করে অভারতীয় বলা হচ্ছে তাদের কাছে বাংলাদেশ সরকার কী প্রমাণ চাইবে?     

আনন্দবাজার কূটনীতিকদের উদ্ধৃত করে বলেছে, গত পাঁচ বছরে ধারাবাহিক ভাবে একটি মাত্র প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক ধরে রাখা গিয়েছে। সেটা বাংলাদেশ। আমরাও বলি ভারত-বাংলাদেশ বন্ধৃত্ব এখন অনন্য উচ্চতায়। কিন্তু, অনন্য উচ্চতাও একতরফা বা একদিকে বেশি হলে তা বরং দৃষ্টিকটুই হয়। সম্ভবত: সেকারণেই প্রবীণ রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য আলোচনা-বিতর্কের কথা বলেছেন, রাশেদ খান মেনন বলেছেন ভারতকে বুঝতে হবে, কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। এঁদেরকে নিশ্চয় ভারতবিরোধী তকমা দিয়ে নাকচ করা যাবে না ? 
(১৬ অক্টোবর, ২০১৯‘র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime in N

একটি জরিপ, নৈরাশ্য ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্ন

উন্নত গণতন্ত্রে সরকার , সরকারপ্রধান, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল এবং বিভিন্ন বিতর্কিত ইস্যুতে প্রায়ই জনমত জরিপ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কখনো বিশ্ববিদ্যালয়, কখনো সংবাদমাধ্যম, আবার কখনো বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব জরিপ করায়। বেশ কিছু পেশাদার জরিপকারী প্রতিষ্ঠানও আছে, যারা শুধু জরিপের কাজ করে। এসব জরিপ আমাদের গণমাধ্যমগুলোর অনলাইন ভোটের মতো নয়, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুধু সেই ওয়েবসাইটের নিয়মিত ব্যবহারকারীদের মতামত ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের দেশে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রায় দুই দশক বার্ষিক জরিপে রাজনীতির গতিপ্রকৃতির চমৎকার প্রতিফলন দেখা যেত। কিন্তু গণতন্ত্রের ক্ষয়সাধনের সঙ্গে সঙ্গে সেই চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়িক প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে জরিপ করতে গেলে সরকারের সায় আছে কিনা সেটা দেখা হয়, নইলে পেশাদার বিশেষজ্ঞরা বা তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলো ওই দায়িত্ব নিতে চান না। কথা বলার ভয়ের মতো মতামত জানতে চাওয়াতেও এক ধরনের ভয়ের আসর পড়েছে। গণতন্ত্র প্রসারে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট, আইআরআই এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তারা এখনো মাঝে মধ্যে স্পর্শকাতর রাজন

ভিসা নিষেধাজ্ঞা গুরুতর, সাংবাদিক নির্যাতন কী

একই দিনের দুটি সংবাদ শিরোনাম, ’৯ মাসে ২১৭ সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার: আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ এবং ’পিটার হাসের বক্তব্য স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর চাপ, সমাবেশে সাংবাদিকনেতারা’। দুটো খবরই সাংবাদিকতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে। তবে একটি খবর, যাতে আছে সেই সব সাংবাদিকদের কথা, যাঁরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শারীরিক ক্ষতি অথবা গ্রেপ্তার ও মামলার কারণে হয়রানির শিকার হয়েছেন; আর অন্যটিতে ভবিষ্যতে কোনো গণমাধ্যমকর্মী যুক্তরাষ্ট্র যেতে চাইলে ভিসা না পাওয়ার কারণে তিনি বা তাঁর যে সম্ভাব্য ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়ে আশঙ্কা। সাংবাদিকদের নিপীড়ন–নির্যাতন ও হয়রানির বিষয়ে গবেষণার কাজ ও তা প্রকাশের দায়িত্ব পালন করেছে একটি মানবাধিকার সংগঠন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার দুশ্চিন্তায় প্রতিবাদী হয়েছেন সাংবাদিকদের অপেক্ষাকৃত নতুন একটি প্লাটফর্ম জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট।  বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিয়মিত কাজের একটি হচ্ছে বিভিন্ন নিপীড়ন–নির্যাতন ও হয়রানির মত অধিকার লংঘনের তথ্য সংগ্রহ করা এবং তারই অংশ হিসাবে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ পেশা সাংবাদিকতার ওপর তাদের আলাদা মনোযোগ। তাদের প্রকাশিত হিসাব