সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দিল্লি থেকে গুজরাটের ছায়া সরবে কি


রোববার অনেক কাগজেই শিরোনাম হয়েছে স্বাভাবিক হচ্ছে দিল্লি। কিন্তু, যে বিদ্বেষের রাজনীতি এতো বড় একটা সহিংসতার জন্ম দিয়েছে সেই রাজনীতিতে তা কিভাবে সম্ভব? একসময়ে বিবিসিতে আমার সহকর্মী ছিলেন, এখন কোলকাতার আনন্দবাজারে কাজ করেন ঈশানী দত্ত রায়। ঈশানী এই ধন্দের কথা ফেসবুকে লিখেছেন : কাজ করতে করতে হঠাৎ হোঁচট খেতে হয়। যা এত দিন নিয়মমাফিক লেখা হয়েছে, তা লিখতে গিয়ে মনে হয়, এটা কি লেখা যায়? যেমন ধরুন, সংবাদ সংস্থা লিখছে, normalcy is returning to Delhi. বাংলায় লেখা হয়েছে এত দিন বা হবে, দিল্লির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। স্বাভাবিক? সংঘর্ষ নতুন করে হয়নি, অন্তত খবর আসেনি, দোকানপাট অল্প খুলছে। লোকজন বাড়ির বাইরে পা রেখেছেন। সেটা স্বাভাবিক? স্বাভাবিক কাকে বলে? এ ধরনের ঘটনার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়? হতে পারে? মানুষের ঘর, মন স্বাভাবিক হয়ে যাবে? সব স্বাভাবিক বোঝাতে পারলে, লেখাতে পারলে শাসক গোষ্ঠীর সুবিধা। বা আমাদের মতো মানুষেরও সুবিধা, যারা আকছার বলি, আর তো কেউ মরেনি, তা হলেই হল!

ঈশানী আরো লিখেছেন,
আবার ধরুন দিল্লিতে একাধিক মানুষ বলছেন, বানানো নাম বলে নিগ্রহ বা মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন। যেমন মুসলিম বলেছেন হিন্দু নাম। কথাগুলো আমরা রিপোর্টে লিখছিও। আজ হঠাৎই মনে হল, হিন্দু নাম কী, মুসলিম নাম কী? রাম, শ্যাম, যদু, মধু হিন্দু, রহমান, শাহরুখ মুসলমান। ওই যে পিস্তল হাতে উন্মত্ত ছেলেটি, নাম শাহরুখ, পুরো নাম প্রকাশিত হলে জানা গেল, শাহরুখের পরে আরও কিছু আছে। ছেলেটি মুসলিম নয়। ধরা যাক কারও নাম শিউলি। কী বুঝবেন হিন্দু না মুসলিম। সাধারণত হিন্দু পরিবারে এবং সাধারণত মুসলিম পরিবারে বিশেষ কিছু নামের তালিকা অনেকেই দিয়ে দেবেন জানি। আরবি উৎসের কথাও উঠবে। তা সত্ত্বেও খুব অদ্ভুত লাগল পুরো ঘটনাটা। নরেন্দ্র মোদী যে বলেছেন যে পোশাক দিয়েই চেনা যায়, পুরো ব্যাপারটাই তো সেই রকম

নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের ( আরএসএস) এর আদর্শে পোশাক, খাবার, সংস্কৃতি এগুলো ধর্মীয় পরিচয় নির্ধারণে বিশেষভঅবে গুরুত্বর্পূণ। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিক্ষোভের কারণে সৃষ্ট সহিংসতার মুখে রামলীলা ময়দানের জনসভায় মোদি বলেছিলেন পোশাক দেখলেই চেনা যায় কারা সহিংসতা সৃষ্টি করছে। আর, তারপর বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গী ইন্দোরে বললেন চিড়ে খাওয়া দেখে বাংলাদেশীদের চেনা যায়।  তাঁদের মূল কথা হচ্ছে , ভারতীয় পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে হিন্দুত্ব এবং তা পোশাক, খাবার এবং জীবনধারায়। ৪৯ বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যেভাবে লুঙ্গি তুলে মুসলমানিত্ব যাচাই করতো সেই একইভাবে দিল্লিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা টাইমস অব ইন্ডিয়ার আলোকচিত্রি অনিন্দ্য চৌধুরীর হিন্দুত্ব পরীক্ষা করতে চেয়েছিল।

সহিংসতা বন্ধ হওয়ার পর সাংবাদিকরা এখন প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে যেসব বিবরণ শুনছেন এবং যেসব ছবি ও ভিডিও প্রকাশ পাচ্ছে তাতে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য হিসাবে বেছে নিয়ে যে সংঘবদ্ধ ও সংগঠিত নৃশংসতা চালানো হয়েছে তার আলামতগুলোর সঙ্গে ২০০২ সালের গুজরাটের অদ্ভূতরকম মিল পাওয়া যাচ্ছে। গুজরাট হত্যাযজ্ঞের সময়ে সেই রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জুটিই যে এখন কেন্দ্রে ক্ষমতার শীর্ষ দুই পদের অধিকারী সেটাই একমাত্র মিল নয়। আনন্দবাজার পত্রিকাতেই প্রেমাংশু চৌধুরী হামলার শিকার লোকজনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর (বিএসএফ) জওয়ান মহম্মদ আনিসের বাড়িতে হামলার সময় হামলাকারিরা হুংকার দিয়েছিল ইধার আ পাকিস্তানি! তুঝে নাগরিকতা দেতে হ্যায়। গোলকপুরির ছাই হয়ে যাওয়া টায়ার মার্কেটের ব্যবসায়ী জামিল সিদ্দিকি জানিয়েছেন তাঁদেরকে বলা হয়েছিল সিএএ-এনআরসি নিয়ে অশান্তি পাকাচ্ছিস। গুজরাটের মত দাওয়াই না-দিলে চলবে না। ভারতের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকগুলোর শিরোনামেও বলা হয়েছে গুজরাট মডেল দিল্লি পৌঁছেছে।
গুজরাটের মতই দিল্লিতেও পুলিশ আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা না দিয়ে হয় নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছে, নয়তো দাঙ্গাবাজদের সহায়তা দিয়েছে। বিবিসি পুলিশ এবং হামলাকারীদের যৌথভাবে হামলা চালানোর ভিডিও দেখিয়েছে। পুলিশ যেন হঠাৎ উগ্র জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছে। বহুলপ্রচারিত এক বীভৎস ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে চারজন আহত তরুণ মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে , আর পুলিশ তাদেরকে লাঠি দিয়ে মারতে মারতে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়াচ্ছে। ওই চারজনের মধ্যে একজনের সেখানেই মৃত্যু ঘটেছে। বিজেপির মাইনরিটি সেলের সহসভাপতি আখতার রাজার ঘরবাড়িও রেহাই পাইনি। কেননা, এই হামলার পিছনে যে রাজনীতি তার লক্ষ্য, উগ্র হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা। অবরুদ্ধ হয়ে থাকা আহতদের প্রাণরক্ষার চেষ্টায় চিকিৎসা দিতে না পারায় উন্নত হাসপাতালে তাঁদের স্থানান্তরের চেষ্টায় একদল চিকিৎসক ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে আদালতের শরণাপন্ন হলে রাতের বেলায় বিচারপতির বাসায় আদালত বসে। বিচারপতি এস মুরলীধরের বাসায় দুজন বিচারপতির বেঞ্চ এক নজিরবিহীন আদেশে সেই রাতেই তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। পরদিন ওই একই বিচারপতিদ্বয়ের বেঞ্চ উসকানি ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের জন্য বিজেপির কপিল মিশ্রসহ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়ে পরদিন তা আদালতকে জানানোর আদেশ দেন। কিন্তু, সেই রাতেই বিচারপতি মুরলিধরের বদলির আদেশ জারি হয়। আর, বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ প্রতিপালনের সময় এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন হাইকোর্টের অন্য আরেকটি বেঞ্চ। অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট এখন শুক্রবার এই শুনানি অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিয়েছেন।
অধিবর্ষের অধিদিন, ২৯ ফেব্রুয়ারি, দিল্লিতে শান্তি মিছিলের নামে আবারও শক্তির মহড়া হয়েছে। জাতিগত ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত কপিল মিশ্র সেই মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন। দিল্লি অ্যাগেনস্ট জিহাদি ভায়োলেন্স লেখা ব্যানার বহনকারী সেই মিছিলেও শ্লোগান উঠেছে বিশ্বাসঘাতকদের তাড়াও। অন্য আরেকটি মিছিলে বিশ্বাসঘাতকদের গুলি করার শ্লোগানও দেওয়া হয়। কথিত স্বাভাবিকতা ফিরে আসার আবরণের আড়ালে কীধরণের অস্বাভাবিকতা বিরাজ করছে এগুলো তারই আলামত। প্রধানমন্ত্রী কিম্বা সরকারের শীর্ষপর্যায়ের কেউ ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্দশা দেখতে কিম্বা সান্তনা দিতে বা সমবেদনা জানাতে যান নি। বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য ফেলে যাঁরা পালিয়ে অন্য কোথাও আশ্রয় নিয়েছেন, আতংক তাঁদের তাড়া করে ফিরছে।  
যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এক বিশেষ সম্পাদকীয়তে এই সহিংসতার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দায়ী করেছে। আশু কারণ হিসাবে প্রধানমন্ত্রী মোদির অন্যায্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি পত্রিকাটি বলেছে, বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদ হচ্ছে এমন এক রাজনীতি যা ঝুঁকিতে থাকা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার মাধ্যমেই ক্ষমতায় আরোহণ করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সফরের প্রসঙ্গ টানার পাশাপাশি পত্রিকাটি অবশ্য একথাও উল্লেখ করেছে যে অনেক দেশই তাঁর বিপজ্জনক ডানপন্থী জনতুষ্টিবাদকে মেনে নিয়েছে। আসামে প্রায় ২০ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব হরণ এবং ভারত-শাসিত কাশ্মীরের জনগোষ্ঠীকে অবরুদ্ধ করে রাখার পিছনেও মূল কারণ সংখ্যালঘু মুসলিমবিদ্বেষী নীতি।  
আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং বৃহৎ প্রতিবেশি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সম্পর্কের গুরুত্ব নিয়ে খুব একটা বিতর্কের অবকাশ নেই। কিন্তু, তাঁর ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখায় কোনো বাধা থাকার কথা নয়। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব মানে কোনো একটি রাজনৈতিক দল বা একটি আদর্শের সঙ্গে সমঝোতা বা সংহতি নয়। দুই দেশের জনগণের মধ্যেকার সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হোক , সেটা সবারই প্রত্যাশা। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে রাজনীতিতেও কোনো পার্থক্যরেখা থাকবে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজেপির সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের যেধরণের ঘনিষ্ঠতা দেখা গেছে তাতে বিদ্বেষনির্ভর রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি আমাদের কোনোধরণের অস্বস্তির আলামত মেলে না। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অস্বাভাবিক অস্থিরতায় আর্ন্তজাতিক পরিসরে সমর্থনের জন্য বৃহৎ প্রতিবেশিকেই ভরসা মানাই এর কারণ কিনা - এমন প্রশ্ন তাই উঠতেই পারে।
বাংলাদেশের বিরোধীদের রাজনৈতিক জোট সম্পর্কে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের রাজনীতিক এবং কূটনীতিকদের প্রকাশ্য মন্তব্যগুলো এখনও কেউ বিস্মৃত হননি। অথচ, জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো সহিংসতার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং পাশ্চাত্যের দেশগুলো মতামত দিলেও আমাদের বিবেচনায় তা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিদ্বেষের রাজনীতি কোনো সীমানার মধ্যে আবদ্ধ থাকে না। নাগরিকত্ব আইনের ধাক্কা যে বাংলাদেশেও অনুভূত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে, সেকথা অনস্বীকার্য্য। এই বাস্তবতায় জনমনের অস্বস্তি - অসন্তোষ দূর করার প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করা চলে না।  সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে ভারত তো সবসময়েই আমাদেরকে পরামর্শ দেয়। তার উল্টোটা কি একবারও হতে পারে না? ভারতের নতুন পররাষ্ট্রসচিবের ঢাকা সফরে সরকার কথাগুলো খোলাসা করতে পেরেছে কি?
(৫ মার্চ ২০২০র প্রথম আলোয় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...