সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে অর্থনীতি সচল করা


ব্যবসায়ীরা শুধুই মুনাফার পিছনে ছোটেন এবং ব্যবসার কাছে জীবনের গুরুত্ব প্রায়শই উপেক্ষিত হয় এমন একটা ধারণা সমাজে প্রবল। অতিছোঁয়াচে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে পোশাকশিল্প সীমিত আকারে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর সারাদেশেই তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-বিতর্ক দেখা গেছে। অনেকের মধ্যেই তৈরি হয়েছে হতাশা। বিশেষ করে যাঁরা আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দূর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার কথা জানেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতি ছাড়া অন্য কিছু হিসাবে ভাবতে পারছেন না। এরই মধ্যে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গী ও   অগ্রসর চিন্তার অধিকারী কয়েকটি বণিক সমিতির প্রতিনিধিরা এক যৌথ নিবন্ধে সাহসের সঙ্গে ঘোষণা করেছেন জীবন ও জীবিকা এটি নয়তো ওটি সিদ্ধান্তের ব্যাপার নয়। তাঁরা এখনই সাবধানতা থেকে সরে না এসে, অর্থনীতি পুরোপুরি খুলে দেয়ার সঠিক সময়টি নির্ধারণ করার জন্য তথ্য-উপাত্তের ব্যবহার করে সময়োচিত সিদ্ধান্তনেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
চারজন ব্যবসায়ী নেতার সঙ্গে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধানও অর্থনীতি সচল করার ক্ষেত্রে সাবধানতার নীতি অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন। এঁরা হলেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, দেশের অন্যতম প্রধান বণিকসভা ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবির ,  বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভলেপমেন্ট, বিল্ড এর চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান , এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের  ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মনজুর এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। তাঁদের নিবন্ধে পোশাক কারখানা খোলার নীতির সরাসরি সমালোচনা না থাকলেও প্রচ্ছন্ন অসন্তোষ সুস্পষ্ট। তাঁরা লিখেছেন,  প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সংগঠন যেমন- তৈরি পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের প্রতিনিধিরা নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে কারখানা খোলার অনুমতি নিতে সক্ষম হয়েছেন। সরকার, জীবন ও জীবিকার তুলনামূলক পরিমাপের কঠিন পরিস্থিতিতে সীমিতভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় চালু করার দুরূহ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে; তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সিদ্ধান্তটি হয়তো বা যথাযথ সময়ের একটু আগেই এবং যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই চলে এসেছে

এসব ব্যবসায়ীনেতা ও গবেষকের ভাষ্যমতে বর্তমান পরিস্থিতিতে ওষুধ শিল্প এবং রফতানি খাত ২৬ এপ্রিল থেকে কোভিড সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিতভাবে কারখানা চালাতে পারছে, যদিও প্রথম থেকেই এ ধরনের একটা সুযোগ তাদের দেয়া হয়েছিল। ব্যাংকিং সেবা আগে সীমিত পরিসরে চলছিল, সেটার পরিসর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং পণ্য পরিবহন সেবাও খুলে দেয়া হয়েছে। তবে যেহেতু বেশ কিছু খাতে সীমিত শব্দটার দিকে নজর না দিয়ে অনেক কলকারখানা পুরোদমে চালু হয়ে গেছে, সেগুলোর সঙ্গে আনুষঙ্গিক সেবা যেমন- আহার-বাসস্থান, সেগুলোও চালু হয়ে গেছে। ইফতারি বেচাকেনাও সীমিত পরিসরে চালু করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। চিন্তার কারণ এটাই যে, সীমিত শব্দটার কার্যকারিতা কতটুকু থাকবে- মান্যের চেয়ে অমান্যই বেশি হবে হয়তো।

যাঁরা এই মতামত প্রকাশ করেছেন তাঁরা পোশাকখাতের মত বড় রপ্তানিখাতের প্রতিনিধিত্ব করেন না ঠিকই, কিন্তু অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্প এবং দেশীয় শিল্প-বাণিজ্যে তাঁদের ভূমিকা মোটেও উপেক্ষণীয় নয়। চা এবং চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিতে এঁদের অন্তত দুজন প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এছাড়া, তাঁরা অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। বিস্ময়করভাবে, তাঁদের এই সাবধানবাণী এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সচল করার সম্ভাব্য উপায় সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো খুব একটা আলোচিত হয় নি। সরকারের নীতিনির্ধারকরাও সংবাদপত্রে প্রকাশিত নিবন্ধটি দেখেছেন বলে মনে হয় না। অন্তত: গত দুদিনের সিদ্ধান্তগুলোতে তার কোনো ছাপ পড়ার আলামত মেলে না। হতে পারে, সরকারের কর্তাব্যাক্তিরা হয়তো সংক্রমণ ছড়ানোর ভিত্তিহীন অপপ্রচারের শিকার হয়ে ছাপা খবরের কাগজ পড়ছেন না। তবে, এই নিবন্ধ প্রমাণ করে যে জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় সংকট থেকে মুক্তিলাভের প্রশ্নে সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য ব্যবসায়ীদের মতামত গ্রহণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথবা, এমনও হতে পারে সরকারকে যাঁরা প্রভাবিত করতে পারেন কেবলমাত্র তাঁদের মতামতের ভিত্তিতেই সরকারি পদক্ষেপগুলো ঘোষিত হয়েছে।

তাঁরা লকডাউন বা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিভিত্তিক, বিজ্ঞান ও তথ্যভিত্তিক, পর্যায়ক্রমিক পথে শিথিল করা বাঞ্ছনীয় বলে যে অভিমত দিয়েছেন তা বিবেচিত হলে অন্তত দোকানপাট সীমিতআকারে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হতো না।  পোশাক কারখানাগুলোর ক্ষেত্রে পরিধিটা যে আর সীমিত থাকেনি এবং স্বাস্থ্যবিধিও প্রায় অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অত্যন্ত সীমিত আকারের শনাক্তকরণ পরীক্ষার মধ্যেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার পোশাকশ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগজনক বিবেচনা করে সাভার এবং গাজীপুরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও প্রশাসন ইতোমধ্যেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়েছেন। ইকোনমিস্ট সাময়িকী ৩০ এপ্রিল জানিয়েছে বিজিএমইএর প্রধান পোশাকশ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য বলছে যে ব্রিটিশ ব্রান্ডগুলো প্রায় তিনশো কোটি ডলারের ক্রয় আদেশ বাতিল করেছে। রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর লবিং এবং শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর দেনদরবারের কারণে শেষপর্যন্ত তারা যে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তাহোল লকডাউন জারির পূর্বপর্যন্ত তৈরি হওয়া পোশাক তাঁরা গ্রহণ করবেন, কিন্তু তার পরের গুলো নয়। কারখানাগুলো খোলার সিদ্ধান্তের জন্য রপ্তানির শর্তপূরণের কথাগুলোকে কি তাহলে অজুহাত হিসাবে অভিহিত করা অন্যায় হবে?

পাশ্চাত্যের মত বাংলাদেশের বিপণিকেন্দ্রগুলোতে সুপারস্টোর বা মেগাশপ তেমন একটা নেই। অধিকাংশই ছোট বা মাঝারি আকারের দোকান। এই সব দোকানে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব কার্যকর হবে এমনটি কেবলমাত্র তাঁরাই আশা করতে পারেন, যাঁরা নিজেদের কেনাকাটাগুলো বিদেশের আলোঝলমলে শপিংমলগুলোতে করে অভ্যস্ত। একথা ঠিক যে এসব দোকান সারাবছর ঈদের অপেক্ষায় থাকে। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন হাজার হাজার হকার এবং ফুটপাতে বসা অস্থায়ী দোকানদার। এসব দোকানমালিক ও ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে সরকারের ওপর চাপ তৈরি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু, এধরণের স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর চাপ নাকচ করার সামর্থ্য সরকারের নিশ্চয় আছে? নাকি, পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার ভুলকে আড়াল করার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ আরও কিছু ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দেওয়া হচ্ছে? যাতে কী কারণে সংক্রমণ বাড়লো তা আলাদা করে চিহ্নিত করার অবকাশ না থাকে?          

করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার এখন উর্ধ্বমুখী। মৃত্যুর সরকারি পরিসংখ্যান এখনও আতঙ্কজনক নয় মনে হলেও তার যথার্থতা প্রশ্নাতীত নয়। রোগ শনাক্তকরণ কার্যক্রমের সীমিত পরিসরের কারণে সংক্রমণের আসল চিত্র নিয়ে সংক্রমণবিশেষজ্ঞরাও  সংশয় প্রকাশ করেছেন। তবে, এতো সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তাঁদের পূর্বাভাষ হচ্ছে চলতি মাসের মাধামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত এই সংক্রমণের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ অব্যাহত থাকবে। যার মানে হচ্ছে ঈদের সময়টিতেও সংক্রমণ ঝুঁকি অত্যন্ত বিপজ্জনক মাত্রায় থাকতে পারে। এরকম উচ্চঝুঁকির মধ্যে উৎসবের ধর্মীয় গুরুত্বের বাইরে অন্যান্য জৌলুশ তেমন একটা থাকার কথা নয়। তাছাড়া, প্রায় ছয় সপ্তাহ দেশের কোটি কোটি মানুষ  যে  কর্মহীনতা ও রুজিবঞ্চনা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁদের সব ত্যাগ নস্যাৎ করার মত ঝুঁকি গ্রহণের যৌক্তিক ব্যাখ্যা কী? বিশ্বের যেসব দেশে সংক্রমণের প্রথম ধাক্কা ইতোমধ্যেই নিয়ন্ত্রণে এসেছে তারা কেউই স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব ভঙ্গ হয় এমন কোনো পদক্ষপ এখনও নেয় নি। এমনকি, চীনেও নানাধরণের নিয়ন্ত্রণ এবং বিধিনিষেধ বহাল আছে।

ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে এঁরা হয়তো সংখ্যাগরিষ্ঠের কাতারে পড়বেন না। কিন্তু, তাতে তাঁদের বক্তব্যের সারবত্তা ও যৌক্তিকতা কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন হয় না। সংক্রমণের ব্যাপকতা এড়াতে পারার সুফল যেন দ্রুত অপরিকল্পিত কোনো পদক্ষেপের কারণে আমরা হারিয়ে না ফেলি‘ – এর চেয়ে শক্তিশালী যুক্তি আর কী থাকতে পারে? সেরকম হলে দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়তে পারে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে লকডাউন করতে হলে সমাজের দীর্ঘমেয়াদি প্রভূত ক্ষতিসাধন হতে পারে, তাঁদের এই কোমল হুঁশিয়ারিতে ইউরোপীয় নেতাদের বিশেষ করে এঙ্গেলা মেরকেল এবং বরিস জনসনের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে সরকার কি এসব বক্তব্য বিবেচনায় নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করবে?
(৭মে, ২০২০‘র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...