সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফেসবুক-বিতর্ক শুধু ভারতের নয়

ফেসবুকে ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়ানোর পরিণতি কী হতে পারে বাংলাদেশেও তার কমবেশি অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের প্লাটফর্ম হিসাবে মার্ক জাকারবার্গের এই বাণিজ্যিক প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আর এই বাণিজ্যিক বিবেচনাই এখন এই প্লাটফর্মের ভালোত্বকে ক্রমশই মন্দের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমে সবার অবাধে মতপ্রকাশের সুযোগ তৈরি হওয়ায় তাকে সাধারণের ক্ষমতায়ন ও অধিকতর গণতন্ত্রায়নের সহায়ক হিসাবে গণ্য করা হচ্ছিলো। কিন্তু, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংগঠিত গোষ্ঠীর ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো , প্রাণসংহারি দাঙ্গা সৃষ্টি এবং নির্বাচনকে প্রভাবিত করার মত অপরাধে এই প্লাটফর্মটি ব্যবহৃত হচ্ছে। আর তা বন্ধে ফেসবুকের ব্যর্থতাকে কেউ বলছেন গাফিলতি এবং কেউ বলছেন অক্ষমতা। তবে, বাজার অর্থনীতির সূত্র বিবেচনায় কেউ কেউ বাণিজ্যিক স্বার্থকেও প্রধান বলে মনে করছেন।

ইউরোপ ও আমেরিকায় বিষযটি নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হলেও বিষয়টি নিয়ে আমাদের উপমহাদেশে তেমন একটা উচ্চবাচ্য হয়নি। এমনকি, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বৌদ্ধধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর বিদ্বেষ ছড়ানো এবং গণহত্যায় দেশটির সামরিকবাহিনীর অপপ্রচারে সহযোগিতার অভিযোগ উঠলেও তা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি। জাতিসংঘ নিয়োজিত স্বাধীন তদন্তকারীরা তাঁদের প্রতিবেদনে ফেসবুকে এই রোহিঙ্গাবিদ্বেষ প্রসারের বিশদ বিবরণ ও প্রমাণ তুলে ধরেছেন। অবশেষে, গণহত্যার তিনবছর পর, গেল সপ্তাহে ফেসবুক এবিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনকে সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করেছে। 

এর কয়েকদিন আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে ভারতে মুসলিমবিদ্বেষ ছড়ানোয় ফেসবুকের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠায় দেশটিতে এখন বিষয়টি নিয়ে জোর রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। পত্রিকাটি জানায় ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা টি রাজা সিং ফেসবুকে রোহিঙ্গা মুসলিম অভিবাসীদের গুলি করে হত্যা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন, মুসলমানদের বিশ্বাসঘাতক অভিহিত করেন এবং মসজিদগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন। ফেসবুক ইন্করপোরেটেড এর পক্ষে প্লাটফর্মটির ব্যবহারকারীরা নীতিমালা অনুসরণ করছেন কিনা তার ওপর নজরদারির দায়িত্ব ছিল যাঁদের তাঁরা গত মার্চেই রাজা সিংয়ের বক্তব্যগুলোকে শুধু বিদ্বেষমূলক হিসাবেই চিহ্নিত করেন নি, বরং বিপজ্জনক হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করেন। কিন্তু, ভারতে ফেসবুকের নীতিমালা কার্যকরের দায়িত্ব যাঁর, সেই আঁখি দাস মি রাজা সিংয়ের বিরুদ্ধে ঘৃণাপ্রতিরোধ নীতি প্রয়োগে অস্বীকৃতি জানান। ইকুয়ালিটি ল্যাব নামের একটি দক্ষিণ এশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখিয়েছে ফেসবুকে মুসলিমবেদ্বেষী আধেয়গুলোর অধিকাংশই বিজেপির সহযোগী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আরএসএসর সদস্যরা শেয়ার করে থাকেন। আর, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নজরে আনার পরও ৯৩ শতাংশ আধেয় সরানো হয়নি।

পত্রিকাটি বলছে ভারত ফেসবুক এবং ফেসবুক ইনকরপোরেটেডেরে মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইনস্টাগ্রামের সবচেয়ে বড় বাজার হওয়ায় কোম্পানিটি ক্ষমতাসীন দলের প্রতি পক্ষপাত করছে বলে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক কর্মীরা অভিযোগ করেছেন। ভারতে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩২ কোটি ৮০ লাখ এবং হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪০ কোটি। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে মিস আঁখি ফেসবুক কর্মীদের স্পষ্ট করেই বলেছেন যে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ভারতের বাজারে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

২ সেপ্টেম্বর ভারতের পার্লামেন্টের একটি কমিটি ফেসবুকের এই রাজনৈতিক পক্ষপাত এবং বিদ্বেষ প্রসার বন্ধে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে কোম্পানিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি শুনানিও করেছে। তবে, শুনানির আলোচনা প্রকাশ করা হয় নি। কমিটি কোনো সুপারিশমালা তৈরি করলে হয়তো তা জানা সম্ভব হবে। দেশটির প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস এবং দলটির অন্যতম নেতা রাহুল গান্ধী ফেসবুকের এই পক্ষপাত এবং বিজেপিপ্রীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। দলটির পক্ষ থেকে মার্ক জাকারবার্গের কাছে দুই দফা চিঠি দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত অভিযোগ তদন্তে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় চিঠিতে অবশ্য কংগ্রেস বলেছে যে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হয় বিদেশি কোম্পানির এমন কোনো কাজের বিরুদ্ধে আইনগত ও বিচারিক ব্যবস্থা কী নেওয়া যায় তা তাঁরা বিচেনা করছেন। বিপরীতে, বিজেপি রক্ষণাত্মক না হয়ে আরও আক্রমণাত্মক কৌশল গ্রহণ করেছে। ভারতের প্রযুক্তি মন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদ উল্টো জাকারবার্গের কাছে অভিযোগ করেছেন ডানপন্থী রক্ষণশীল অনেক আধেয় (কনটেন্ট) ফেসবুক সেন্সর করছে। 

ফেসবুকের জননীতি বিষয়ক পরিচালক নিল পটস পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠকের পরের দিন কংগ্রেসকে চিঠি দিয়ে অভিযোগের জবাব দিয়ে পক্ষপাতিতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ টিমের এবং বাইরের সামাজিক মতামত বিবেচনায় নেওয়া হয়। আঁখি দাসের পক্ষে সাফাই দিয়ে তিনি বলেছেন সিদ্ধান্ত কোনো ব্যাক্তি এককভাবে গ্রহণ করেন না। একইদিনে ফেসবুক রাজা সিংয়ের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার কথাও জানিয়েছে।

বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে যে ভারতে ফেসবুকের বড় আরেকটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ হচ্ছে দেশটির সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স জিওর সঙ্গে মিলে হোয়াটসঅ্যাপ পে নামের ডিজিটাল লেনদেনের প্লাটফর্ম চালু করা। ধারণা করা হয় ভারতের ডিজিটাল বাজারের আকার হচ্ছে দশ হাজার কোটি ডলারের। রিলায়েন্স জিওতে ফেসবুকের বিনিয়োগের পরিমাণ হচ্ছে ৫৮০ কোটি ডলার। ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে মুকেশ আম্বানির ঘনিষ্ঠতাও অনেকদিন ধরেই বহুলআলোচিত। তবে, এই ডিজিটাল পে প্লাটফর্মটির অনুমোদনের বিষয়টি এখন ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

ভারতের ফেসবুক বিতর্কে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কী আছে ? এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে, প্রশ্নের উত্তরটা খুব একটা কঠিন নয়। ভারতের যে অংশগুলো আমাদের সীমান্তের লগোয়া তার মধ্যে বৃহত্তম অংশটি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওই রাজ্যের বাসিন্দারাও বাংলাভাষী। পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছরের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও বিদ্বেষ উসকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। তার প্রভাব সীমান্তের এপারে পড়বে না এমনটা কেউই জোর দিয়ে বলতে পারবেন না। সম্প্রতি এমন ভিডিও ফেসবুকের নিউজফিডে ভেসে উঠতে দেখেছি যাতে একজন বাঙ্গালী তরুণ স্পষ্টতই ধারালো অস্ত্র উঁচিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অশ্রাব্য ভাষায় গালি ও হুমকি দিচ্ছে। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই সে সীমান্তের কোন পারের বাসিন্দা। এরকম আধেয় বাড়বে বৈ কমবে না। নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি নিয়ে আসামে সৃষ্ট মানবিক সংকটও এক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ হতে পারে।          

একইভাবে, সীমান্তের আরেকদিকে মিয়ানমারে আগামী নভেম্বরে নির্বাচন হবে। সেখানেও রোহিঙ্গা এবং সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলোর প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রচার ও উসকানি বাড়বে বলে ফেসবুক নিজে থেকেই বিশেষ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তারা তথ্যের সত্যাসত্য যাচাইয়ের জন্য বুম, এএফপি ফ্যাক্টচেক এবং ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডোর সঙ্গে কাজ করার কথা জানিয়ে ১ সেপ্টেম্বর তারা বলেছে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও নির্বাচনী অপপ্রচার চিহ্নিত করতে তারা তাদের নজরদারি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বাড়াচ্ছে। তবে, ফেসবুকের রেকর্ডের কারণেই তার ওপর ভরসা রাখা কঠিন।

আমাদের উপমহাদেশের তুলনায় অবশ্য ফেসবুক সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়েছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই। আর, তা তৈরি হয়েছে সামাজিক আন্দোলনের কারণেই। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার ( বিএলএম) এর মতোই সামাজিক আন্দোলন #স্টপ হেট ফর প্রফিট (#StopHateForProfit) এর লবিংয়ের কারণে কোটি কোটি ডলারের বিজ্ঞাপন হারিয়েছে ফেসবুক। যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি নাগরিক অধিকার সংগঠনের সম্মিলিত আন্দোলন এই #স্টপ হেট ফর প্রফিট। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের হিসাবে প্রায় পাঁচশো কোম্পানি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও ফেসবুক শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তাঁর সমর্থকদের মিথ্যাচার এবং বিদ্বেষমূলক আধেয় প্রচার বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। কিন্তু, জনপ্রতিক্রিয়ার চাপে এখন তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। 

 

ফেসবুক এবং টুইটারের মত বৈশ্বিক পরিসরে বিস্তৃত প্লাটফর্মগুলোয় আমাদের আসক্তিই এগুলোর প্রধান শক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক আন্দোলনের কারণে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও উস্কানির প্রচার বন্ধে তারা কিছুটা তৎপর হয়েছে। জাতিসংঘ ফোরামের সমালোচনা তাদেরকে বাধ্য করেছে মিয়ানমারে মনোযোগী হতে। ভারতে নাগরিক প্রতিরোধ সফল হবে, না-কি বাণিজ্যিক স্বার্থই প্রাধান্য বজায় রাখবে, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

 

আঁখি দাসের সাফাইয়ে অবশ্য সেরকম আলামত মেলে না।  

 

(৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...