সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রুশ আগ্রাসনের চার সপ্তাহ কী ইঙ্গিত দেয়

বিশ্বজুড়ে অস্ত্র এবং তেলের ব্যবসায় নিজেদের একচেটিয়া পুঁজির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে দেশে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন ও যুদ্ধ এবং নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ বহুদিনের। এসব যুদ্ধে কখনো কখনো তার ইউরোপীয় মিত্ররাও সহযোগী হয়েছে, আবার মাঝে-মধ্যে বিরোধিতাও করেছে। আফগানিস্তানে আল-কায়েদা ও তালেবানবিরোধী যুদ্ধে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গী হয়েছে তার নেতৃত্বধীন সামরিক জোট ন্যাটোর বাইরেও অনেক দেশ। কিন্তু ইরাকে কথিত গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মূলের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানে ইউরোপের অধিকাংশ দেশি অংশ নেয়নি, ন্যাটোও জোট হিসাবে ইরাক যুদ্ধে যুক্ত হতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তখন রাশিয়া কিম্বা চীনের মত শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো কোনো পাল্টা জোট গড়ার চেষ্টা করেনি; অন্যান্য দেশের তো প্রশ্নই ওঠে না। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ অনেকেই তাই এখন রাশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার চেষ্টাকে সমর্থন করছেন। তাঁদের কাছে প্রতিবেশী একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লংঘনে রাশিয়ার আগ্রাসন গুরুতর কোনো অপরাধ হিসাবে বিবেচ্য নয়; বরং রাশিয়ার পরাশক্তি হিসাবে পুনরুত্থান বিশ্বের জন্য মঙ্গলদায়ক হবে বলেই তাঁদের ধারণা। 


রাশিয়ার অভিযানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তাঁরা অন্য যে যুক্তি দেন, তা হলো বিভিন্ন দেশে সরকার পরিবর্তন বা রেজিম চেঞ্জের জন্য প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যেসব কৌশল অনুসরণে যুক্তরাষ্ট্রের যে রেকর্ড আছে, তা অনেকক্ষেত্রেই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানি ও সহিংসতার জন্ম দিয়েছে। এক অন্যায়কে অন্য অন্যায়ের যৌক্তিকতা দেওয়ার এক অদ্ভুত প্রচেষ্টা। রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনে যে জাতীয় ঐক্য ও প্রতিরোধ, তাকে খাটো করে দেখা অনুচিত। সাবেক প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কোর বিরুদ্ধে যে গণঅভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের কারসাজির কথা বলা হয়, যাঁর পতনের কারণেই জেলেনেস্কির নির্বাচিত হওয়ার পথ খুলে যায়, সেই পোরোশেঙ্কো তখন রাশিয়ায় আশ্রয় নিলেও এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।  


যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানগুলোর থেকে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের সবচেয়ে বড় ফারাক হচ্ছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর নজিরবিহীন ঐক্য। ইউরোপীয় ঐক্যে এমনকি নিরপেক্ষ সুইজারল্যান্ডও শামিল হয়েছে। অবশ্য শুধু ইউরোপ ও পাশ্চাত্য বললে কম বলা হয়। কেননা জাপান, অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মত দেশগুলোও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ক্রিমিয়া দখলের পর যুক্তরাষ্ট্র ও তার কয়েকটি মিত্র সীমিত আকারে কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তা রাশিয়ার ওপর খুব বড় আঁচড় কাটতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো এবারও সীমিত ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যে বিপুল পরিমাণে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে, তা পুতিনের কাছে হয়তো অপ্রত্যাশিত ছিলনা। তবে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আইনী লড়াই যে এতটা ব্যপক বিস্তৃত রুপ নিতে পারে, তা ছিল মস্কোর কল্পনারও বাইরে। 


সাংস্কৃতিক বর্জনের কথাই যদি বলি, রুশ অমর সংগীতস্রষ্টা চাইকোভস্কির সংগীত বাদ পড়ছে অনুষ্ঠানের তালিকা থেকে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে বার্লিন ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রার সঙ্গীত পরিচালক এবং এডিনবরার সঙ্গীত উসবের পরিচালকদের পদত্যাগ করতে হয়েছে। নেটফ্লিক্স ও ডিজনির মত প্রতিষ্ঠানগুলো রাশিয়া থেকে সরে আসছে। বিশ্ব ক্লাব কাপ ফুটবলের সদ্য শিরোপাবিজয়ী চেলসির ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। যেসব রুশ ফুটবলার ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে খেলছিলেন, তাঁরা সবাই ইউরোপে নিষিদ্ধ হয়েছেন। বিশ্ব ফুটবল এবং ইউরোপীয় ফুটবল থেকে রাশিয়া বাদ পড়েছে, তাদের আর বিশ্বকাপ ও ইউরোপীয় কাপে খেলা হবে না। রাশিয়ার এর বিরুদ্ধে ক্রীড়াবিরোধ নিষ্পত্তির আন্তর্জাতিক আদালতে আপিল করলেও তা টেকেনি। দেশটি শীতকালীন প্যারা-অলিম্পিক থেকেও বাদ পড়েছে। টেনিস তারকারা বিদেশের কোনো টুর্ণামান্টে খেলতে পারছেন না। খোদ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আন্তর্জাতিক জুডো ফেডারেশেনের প্রেসিডেন্টের পদ হারানোর মত অপমান সইতে হয়েছে। 


অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ব্যাপ্তি এতোটাই বিস্তৃত যে একে এখন বলা হচ্ছে রাশিয়ার অবিশ্বায়ন বা ডিগ্লোবালাইজেশন। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটার সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক পুঁজিবাদের প্রতীক হিসাবে ম্যাকডোনাল্ডস, নাইকির মত যেসব ব্র্যান্ড রাশিয়ায় বাজার খুঁজে পেয়েছিল, তারা প্রায় সবাই এখন দেশটি ছেড়ে যাচ্ছে। শত শত কোটি ডলারের বিনিয়োগ বাজেয়াপ্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে টয়োটার মত প্রতিষ্ঠান তার কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। রুশ বিমান সংস্থার কার্যক্রম প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে, খুচরা যন্ত্রাংশের জন্য তারা চীনের শরণাপন্ন হয়েও বিফল হয়েছে। রয়টার্সের খবরে বলা হচ্ছে, এমনকী ওষুধ কোম্পানিগুলোও জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ছাড়া অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি বন্ধের কথা ঘোষণা দিয়েছে, যার ফলে প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখের বলিরেখা দূর করার ওষুধও আর মিলছে না। বিশ্বের সব কটি নাম করা ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি তাদের সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। সম্ভাব্য আপকালের জন্য রাশিয়া যে ৬০ হাজার কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত গড়েছিল তার অর্ধেকেরও বেশি আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। সুইফটের নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও বড় ধরণের সংকটে। 


তথ্যপ্রযুক্তির লড়াইয়েও রাশিয়া এখন কোনঠাসা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ব্রিটেনের ব্রেক্সিট গণভোটে সোশ্যাল মিডিয়া ও সার্চ ইঞ্জিন ভর করে ভুয়া খবর প্রচার ও জনমতকে প্রভাবিত করার বিষয়ে রাশিয়ার বিশেষ ভূমিকার কথা বহুল আলোচিত। কিন্তু এখন সেই সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এবং সার্চ ইঞ্জিন রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম হয় বন্ধ করে দিয়েছে, নয়তো গুটিয়ে এনেছে। রুশ সরকারও ইউক্রেনের অভিযানের বিষয়ে তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে এসব মাধ্যমের ওপর নানাধরণের নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে মোবাইল ফোনের কল্যাণে পারিবারিক বন্ধনের সুযোগে ইউক্রেনের যুদ্ধের নানা সহিংসতা ও নৃশংসতার ছবি ও ভিডিও রাশিয়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। 


অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার যে সব নতুন নজির তৈরি হয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আইনগত সমস্যা। আন্তর্জাতিক আদালত গত ১৬ মার্চ রাশিয়াকে তার `বিশেষ সামরিক অভিযান` অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর মাত্র দুই দিনের মধ্যেই ইউক্রেন আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হয় এবং আদালতও অবিশ্বাস্য দ্রুততায় মামলার শুনানি করে তার অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছেন। এই আদেশের সবচেয়ে বেশি তাপর্যপূর্ণ অংশটি হচ্ছে রাশিয়া ইউক্রেনে তার `বিশেষ সামরিক অভিযান` পরিচালনার যুক্তি হিসাবে দনেতস্ক ও লুহানস্কে রূশভাষী সংখ্যালঘুদের ওপরে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী গণহত্যা পরিচালনা করছে বলে যে অভিযোগ করেছে, তা নাকচ করে দিয়ঞ্ছেন। আদালত বলেছেন, ওই দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ নেই। গণহত্যা সনদের আলোকে সেখানকার বিপন্ন জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় রাশিয়া সেখানে সামরিক অভিযান পরিচালনার অধিকার রাখে, এ দাবিকেও আদালত নাকচ করে দিয়েছেন। ১৫ জন বিচারপতির আদালতে দুজন বিচারপতি ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন, যাঁদের একজন হলেন রাশিয়ার ও অপরজন চীনের। 


যদিও আন্তর্জাতিক আদালতের রায় কার্যকর করার ক্ষমতা নেই এবং বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের ওপর নির্ভরশীল, যেখানে রাশিয়া ভেটো ক্ষমতার অধিকারী, তবু এ রায়ের আইনগত মূল্য অপরিসীম। আন্তর্জাতিক আইনে রাশিয়া এখানে আগ্রাসনকারী এবং আইন লঙ্ঘনকারী। এ বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আগ্রাসনের নিন্দা জানানো থেকে বিরত থেকেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পর কি আর সেই কথিত নিরপেক্ষতার অবস্থান চলতে পারে?  রাশিয়ার আইনগত সমস্যার অবশ্য এটিই শেষ নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিসি) দেশটির জন্য অপেক্ষা করছে বড় চ্যালেঞ্জ। রাশিয়া আইসিসির স্বাক্ষরকারী না হলেও ৩২টি দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তের জন্য আইসিসিকে অনুরোধ করেছে এবং তা আদালতের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।   

 

সামরিক দিক দিয়েও রাশিয়া যে লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে, তা-ও নয়। অসম শক্তির লড়াইয়ে তাদের যত দ্রুত কিয়েভ দখলের কথা ছিল, তা চার সপ্তাহেও হয় নি। প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে দেশটির রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যূত্থানের আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া মেলেনি। বরং কথিত কমেডিয়ান প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশের মানুষকে অভূতপূর্ব রুপে ঐক্যবদ্ধ করে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। ন্যাটো ইউক্রেনের আকাশকে সুরক্ষা দেওয়ার কাজে অংশ নিতে রাজি না হওয়ায় সমালোচনা উঠেছে যে ইউক্রেনকে যুদ্ধে নামিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই সমালোচনা একেবারে ভিত্তিহীন নয়। কিন্তু একটি সম্ভাব্য পারস্পরিক নিশ্চিত ধ্বংসসাধনের ( মিউচুয়ালি অ্যাসিউর্ড ডেস্ট্রাকশন, ম্যাড) পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকিগ্রহণও সমর্থনযোগ্য নয়। 


সমসাময়িক ইতিহাসে যারা যুদ্ধ শুরু করেছে, তারা কেউ জয়ী হয়েছে বা সাময়িক সাফল্য পেলেও তা ধরে রাখতে পেরেছে, এমন নজির বিরল। রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানেও তার ব্যাতিক্রম ঘটার কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না। 


(২৪ মার্চ, ২০২২-এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...