সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নেট ব্যবহারের দুই আইনের লক্ষ্য কি আগামী নির্বাচন

ইন্টারনেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত দুটি আইনের খসড়া প্রকাশের পর সাধারণ নাগরিক এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। এই আইনগুলো কয়েক বছর আগেই তৈরি করা উচিত ছিল, কিন্তু তা হয়নি। এখন সরকারের হঠাৎ তাড়াহুড়োর  আগ্রহ এবং উদ্দেশ্য কি তারা যা বলছে তাই, নাকি আরও কিছু? এই দুটি খসড়া আইন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ২০২১ এবং ডেটা সুরক্ষা আইন ২০২২-এর একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ইন্টারনেটে আমরা যা কিছু করি তার উপর  সরকারের আরও বেশি নিয়ন্ত্রণের আইনি ব্যবস্থা করা৷ সেকারণেই ওটিটি প্রবিধানের খসড়ায় নাগরিকদের নির্ভয়ে সাইবার-জগত উপভোগ করার স্বাধীনতা দেওয়ার পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নামে সেখানকার সবকিছুর ( সোশ্যাল মিডিয়া, মাল্টিমিডিয়া, বিনোদন ও সংবাদমাধ্যমের পোর্টাল, কথা বলা ও বার্তা আদানপ্রদানের অ্যাপ ইত্যাদি) ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারির অনুমতি দেওয়ার সুযোগ প্রসারিত হয়েছে। একইভাবে ব্যক্তির গোপনীয়তা অধিকারের জন্য বৃহত্তর সুরক্ষা প্রদানের পরিবর্তে খসড়া ডেটা সুরক্ষা আইনের অনেক প্রস্তাবই আসলে একান্ত ব্যক্তিগত তথ্যে (ডেটা) সরকারের অনুপ্রবেশ সহজ ও গভীরতর করবে, যার ফলে তাদের নজরদারি সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।


রাষ্ট্র এবং তার নাগরিকদের জন্য ডেটা সুরক্ষার প্রশ্ন কখনোই এক নয়, বিশেষ করে স্বৈরাচারী বা হাইব্রিড গণতন্ত্রের দেশগুলোতে। সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেশিরভাগ দেশে গোপনীয়তার অধিকার সংবিধানে একটি মৌলিক অধিকার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও স্বৈরাচার এবং দুর্বল গণতন্ত্রে রাষ্ট্র নিজেই ব্যক্তির গোপনীয়তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো অভিযোগ করছে যে বাংলাদেশেও সরকার নাগরিকদের গোপনীয়তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।  


যুক্তরাষ্ট্রের সুপরিচিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস প্রকাশিত ফ্রিডম অন দ্য নেট রিপোর্ট ২০২১ বলছে, 'বাংলাদেশে ইন্টারনেটে স্বাধীনতা সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।' তারা যেসব কারণ দেখিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অপপ্রয়োগ এবং সরকারি নজরদারির মাত্রা সম্পর্কে নতুন যেসব তথ্যপ্রমাণ (স্পাইওয়্যার ও মোবাইল ফোনে আড়িপাতার প্রযুক্তি কেনার খবর) প্রকাশ পেয়েছে। ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে অনলাইন পরিসরে সরকার-নিয়োজিত বেসামরিক ঠিকাদাররা অ্যাকাউন্ট হ্যাক করাসহ নানাভাবে প্রভাব খাটায় এবং অপ্রিয় বক্তব্য, তথ্য বা আধেয় (কনটেন্ট) সরানোর জন্য মিথ্যা কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ ব্যবহার করে। এ ছাড়া তারা উল্লেখ করেছে যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার সময়ে ইন্টারনেট এবং যোগাযোগ পরিষেবা বন্ধ বা সীমিত করার মত বিধিনিষেধ আরোপ এখন নিয়ম হয়ে উঠেছে। কৌশলগত পরামর্শক সেবা সংস্থা, বিজিএ এশিয়া পরবর্তী নির্বাচনের আগেই নতুন ডেটা সুরক্ষা আইন কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছে। তারা বলছে, আশাবাদীরা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির দিকে ইঙ্গিত করে বলতে পারেন যে সব দেশে ডেটা সুরক্ষা আইন হয়েছে সে সব দেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা । কিন্তু, বাংলাদেশে অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তি একে অন্যভাবে ভাবছেন।'


প্রস্তাবিত ডেটা সুরক্ষা আইনের খসড়ায় উল্লিখিত কারণ বা উদ্দেশ্যেই স্পষ্ট হয় যে সরকারের অগ্রাধিকার এবং জোর যে বিষয়ে, তা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষা নয়। যেহেতুর তালিকায় ব্যাক্তিগত গোপনীয়তার উল্লেখ রয়েছে তৃতীয় ও চতূর্থ স্থানে। যদিও বলা করা হচ্ছে যে আমাদের নিজস্ব আইন তৈরি করার জন্য নজির বা মডেল হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ইউরোপীয় ডেটা সুরক্ষা আইন, জিডিপিআর, কিন্তু মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে তা অনেকটাই সত্যের অপলাপ। কারণ, জিডিপিআর-এর এক নম্বর উদ্দেশ্য বলছে, "এই বিধানটি ব্যক্তিগত ডেটা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যক্তির (ন্যাচারাল পারসন) ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা এবং ব্যক্তিগত ডেটার অবাধ চলাচল সম্পর্কিত নিয়মাবলী নির্ধারণ করে।"  আর দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে,, "এই বিধানটি প্রকৃত ব্যক্তির মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতা এবং বিশেষ করে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার অধিকার রক্ষা করে।"


অপর প্রস্তাবিত আইন, রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ২০২১ এর খসড়াও ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতা রোধে কথিত `সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ` নামে ( দেশের মধ্যে ডেটা সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা) সরকারের নিয়ন্ত্রণকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ আইনের খসড়ার বিষয়ে বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান, ইন্টারনেট সোসাইটি তাদের ইন্টারনেট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট টুলকিট ব্যবহার করে উপসংহারে পৌঁছেছে যে প্রস্তাবিত আইনটি `আগ্রহীদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সংকুচিত করে দেবে।` আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য যারা পরিষেবাটি দেয়, তাদের উপর উল্লেখযোগ্য বাড়তি ব্যয় চাপানো হচ্ছে উল্লেখ করে তারা বলছে যে এর ফলে উন্নত সেবা দেওয়ার জন্য তারা বাড়তি বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবে এবং বাংলাদেশিরা নিম্নমানের ইন্টারনেট সংযোগে আবদ্ধ থাকবে। এই খসড়ায়, `আপত্তিকর` বিশেষণটি স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত না থাকায় তার অপব্যবহারের ঝুঁকি বাড়বে। ইন্টারনেট সোসাইটি বলেছে যে বিধানটি সরকারী আইনপ্রয়োগকারী এবং মাঝখানে থাকা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান - উভয়ের জন্য আইনমান্যতার অজুহাতে অনেক দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ করে দেবে, কিন্তু তার কোনো জবাবদিহিতা থাকবে না। তাদের মতে, এ আইনের কারণে অনলাইন যোগাযোগে গোপনীয়তার অভাব একটি অনিশ্চিত, অপ্রত্যাশিত এবং অ-স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি করবে, যার ফলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট এবং অনলাইন পরিষেবাগুলো কম বিশ্বস্ত এবং নাগরিকদের জন্য কম আবেদন তৈরি করবে। 


দুই আইনেই নিয়ন্ত্রক (রেগুলেটর) হিসাবে যাদের কথা বলা হয়েছে, তাদের স্বাধীনতা একেবারেই অনুপস্থিত এবং তারা অন্য যেকোনো সরকারি দপ্তরের অনুরুপ। এই খসড়া আইনে সরকারী সংস্থাগুলোকে যে ধরণের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ও প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কার্যত অক্ষম দর্শকে পরিণত হবে। এটি ইউরোপ এবং অন্যান্য অনেক উন্নত দেশে্র নিয়ন্ত্রকদের ভূমিকার সম্পূর্ণ উল্টো। 


নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষায় নিয়ন্ত্রকের কী ধরনের স্বাধীনতা থাকা উচিত, তার দুটি দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করা যায়। গত জানুয়ারিতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেটা সুরক্ষা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইউরোপীয় ডেটা প্রোটেকশন সুপারভাইজার (ইডিপিএস) ইইউ-এর পুলিশ সংস্থা ইউরোপোলকে ব্যক্তিগত ডেটার একটি বিশাল ভাণ্ডার মুছে ফেলতে বাধ্য করেছিল; কেননা সেগুলো বেআইনিভাবে সংগৃহীত হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে ৷ এই সংবেদনশীল তথ্যগুলি বিভিন্ন অপরাধের প্রতিবেদন থেকে নেওয়া, এনক্রিপ্ট করা ফোন পরিষেবাগুলি হ্যাক করে সংগৃহীত এবং কোনো অপরাধে জড়িত না থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় ঘটনাটি যুক্তরাজ্যের। সেখানে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে নববর্ষের খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশের সময়ে তাদের ঠিকানা ও ফোন নম্বরগুলো মুছে না ফেলার জন্য মন্ত্রিপরিষদ দপ্তরকে আড়াই লাখ পাউন্ড জরিমানা করে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান তথ্য কমিশনার, আইসিও।  

 

বিপরীতে, আমাদের দেশে বায়োমেট্রিক তথ্য সহ সব ধরনের ডেটা লঙ্ঘনের নজিরের অভাব নেই, যা সরকারী সংস্থা গুলোর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছাড়া সম্ভব ছিল না। এ ধরনের লঙ্ঘনের জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হয়েছে বলে শোনা যায়নি। অথচ, শুধু সন্দেহ ও বানোয়াট দাবির ভিত্তিতে অনেক সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মী নির্যাতিত হয়েছে। 

এই প্রেক্ষাপটে, প্রশ্ন উঠতে পারে যে এসব নিয়ন্ত্রণমূলক আইনের জন্য আকস্মিক তাড়াহুড়োর কারণ আসলে রাজনৈতিক। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে নাগরিকদের অনলাইন কার্যকলাপের উপর সরকারের নজরদারি ও অধিকতর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাই কি সরকারের প্রধান লক্ষ্য নয়? স্মরণ করা যেতে পারে, সরকার যে আইনটির অপপ্রয়োগের কথা এখন স্বীকার করছে, সেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটিও তড়িঘড়ি করে পাশ করা হয়েছিল ২০১৮ সালের অক্টোবরে, নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে। 

(১৩ এপ্রিল, ২০২২-এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...