সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের রাজনৈতিক পাঠ

ভারতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময়ে যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে, তার প্রকাশিত বিবরণে দুই প্রতিবেশীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রকৃত রুপ আবারও প্রতিফলিত হয়েছে। আর দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের এক দিন পর প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতেও রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেল না। 


বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তা জানানোর পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পরিক স্বার্থ ও সহযোগিতার প্রশ্নে আলোচনার পর সই হয়েছে সাতটি সমঝোতা স্মারক। যেসব বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, সেগুলো হলো অভিন্ন নদী কুশিয়ারা থেকে পানি প্রত্যাহার,  ভারতে বাংলাদেশের রেলকর্মীদের প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশ রেলওয়ের আইটি সিস্টেমে ভারতের সহযোগিতা, ভারতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল অফিসারদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে ভারতের কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) ও বাংলাদেশের কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) মধ্যে সমঝোতা, মহাকাশ প্রযুক্তিতে সহযোগিতা এবং প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মধ্যে সম্প্রচার সহযোগিতা।


এ সফর ঘিরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বেশ কয়েকদিন ধরেই নানা ধরনের বিশ্লেষণ ও অভিমত ছাপা হয়েছে, যেগুলোর মূল কথা ছিল, ভারতের উচিত বাংলাদেশকে হতাশ না করা। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও তা সম্প্রসারণ ও গভীরতর করার কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে এসব ভারতীয় পর্যবেক্ষক মূলত তাঁর প্রতি আস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় জয়দ্বীপ সাইকিয়া `শেখ হাসিনা ভিজিট; হোয়াই ইন্ডিয়া শুড বি গ্রেটফুল টু বাংলাদেশ পিএম` শিরোনামে লিখেছেন মৌলবাদ ও ভারতীয় বিদ্রোহীদের দমনে ভূমিকা রাখার মাধ্যমে সম্পর্ক গাঢ় করায় দিল্লির উচিত বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া। ফার্স্ট পোস্টে অভিজিৎ মজুমদার অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, শেখ হাসিনার সফরে দৃশ্যমান এবং অর্থবহ কিছু দেওয়া হলে তা শুধু তাঁকেই সাহায্য করবে না, ভারতের ভাবমূর্তিরও কাজে লাগবে, যা বাংলাদেশে এখন আক্রমণের মুখে। 


ডেকান হেরাল্ড পত্রিকায় ৪ সেপ্টেম্বর পারুল চন্দ্র লিখেছেন, বাংলাদেশে ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে সম্ভবত তাঁর শেষ সফরে শেখ হাসিনার প্রয়োজন হবে তাঁর দেশের মানুষকে দেখানো যে এতে উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি আছে। পরদিন অনির্বান ভৌমিক ওই একই পত্রিকায় লিখেছেন, নয়াদিল্লির প্রতি বাড়াবাড়ি রকম বন্ধুত্বের জন্য বিরোধীদের কাছে সমালোচিত আওয়ামী লীগের আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য বাড়তি কিছুর প্রয়োজন রয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণ, কল্যাণমূলক কর্মসূচি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রাজনৈতিক সুফল পেতে ঢাকার আরও চাওয়া আছে। তবে অনির্বান ভৌমিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের এক দিন আগে চীনের প্রায় ৬৯ কোটি ডলার সহায়তায় কচা নদীর ওপর নির্মিত সেতু উদ্বোধনের প্রসঙ্গ টেনে লিখেছেন, এর মাধ্যমে দিল্লিকে চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। 


ভারতীয় বিশ্লেষকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরকে তাঁর আগামী নির্বাচনের জন্য আলাদা গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছেন এবং দিল্লির নেতৃত্বের প্রতি বাংলাদেশের জন্য দৃশ্যমান সহায়তা দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ আবার বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধীদল বিএনপিকে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট হিসাবে চিত্রিত করেছেন; যদিও তাঁরা এর ফলে পাল্টা প্রচারকে উসকে দেওয়ার যে ঝুঁকি রয়েছে, তা তাঁরা পুরোপুরি উপেক্ষা করেছেন। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকারকেও যে খাটো করা হচ্ছে, সেটিও তাঁরা ভুলে গেছেন। অবশ্য সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতের সাহায্য চাওয়ার কথা জানিয়ে  আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই যেভাবে দেশের মর্যাদাহানি ঘটিয়েছেন, তাতে ভিনদেশি পর্যবেক্ষকদের উন্নাসিকতাকে দোষ দেওয়া বৃথা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের সমর্থনে ভারতীয় গণমাধ্যমে আওয়াজ উঠলেও শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বের যে প্রশংসা করেছেন তা সংবাদ শিরোনামে তুলে এনেছে ইন্ডিয়া টুডে।  তাদের খবরের শিরোনাম ছিল, `উইথ পিএম মোদি এট হেল্ম, ইন্ডিয়া এন্ড বাংলাদেশ উইল রিজল্ভ অল ইস্যুজঃ শেখ হাসিনা।` প্রধানমন্ত্রী মোদি অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে তাঁর বক্তব্যে যোগাযোগব্যবস্থার সম্প্রসারণ বা সংযুক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে উভয় অর্থনীতি আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে সংযুক্তির সবচেয়ে বেশী সুফল লাভ করছে ভারত। 


দুই দেশের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে এবার হলো ত্রয়োদশ বৈঠক। বৈঠকের বিষয়ে উভয়পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের যা জানানো হয়েছে, তাতে সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বাইরে জ্বালানি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের ক্ষেত্রে সহায়তার আশ্বাসের কথা বলা হয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ আশ্বাসকে অগ্রগতি হিসাবে বর্ণনা করে জানিয়েছেন, এবিষয়ে ভারতের রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে। ভারত থেকে ডিজেল ও গ্যাস আমদানির কথা আলোচনা হয়েছে এবং নেপালে একাধিক ভারতীয় কোম্পানি যে জলবিদ্যূৎ উৎপাদন করছে, তা বাংলাদেশে নেওয়ার বিষয়েও কথা হয়েছে বলে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন। ভারত থেকে যেসব খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয় সংকটের সময়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে তা বাংলাদেশে পাঠানোর প্রশ্নও আলোচনা হয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের কথায় অবশ্য এগুলো নিয়ে কিছুদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। যার মানে হচ্ছে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং ভারতের রাজনৈতিক সদিচ্ছার বাইরে এসব বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।


প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময়ে উদ্বোধন হয়েছে কয়লানির্ভর রামপালের মৈত্রী বিদ্যূৎ কেন্দ্র। যে সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়টি ছাড়া অন্যগুলোর জন্য দুই প্রধানমন্ত্রীর সময় ব্যয় করা নিতান্তই প্রতীকী, যা সরকারের অন্য যে কোনো পর্যায়েই হতে পারে। বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং দূরদর্শনের মধ্যেকার সহযোগিতা কিম্বা রেলকর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে সমঝোতা সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতির জন্য ঝুলে থাকার মতো কোনো বিষয় নয়। 


প্রায় এক যুগ ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বন্টনের বিষয়ে কোনো অগ্রগতির যে প্রত্যাশা ছিল না, তা মোটামুটি উভয়পক্ষের বক্তব্যে আগেই স্পষ্ট হয়েছে। ডেকান হেরাল্ডেই লেখা হয়েছে, ভারতের অভিন্তরীণ রাজনীতির কারণে তিস্তার পানি চুক্তি অনুমোদনে ব্যর্থ হওয়ায় দিল্লি কুশিয়ারার পানি বন্টনের অন্তর্বর্তী চুক্তিতে মনোযোগী হয়েছে। উভয় প্রধানমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁদের বক্তব্যে ৫৪টি অভিন্ন নদীর অন্যগুলোর বিষয়ও নিষ্পত্তির আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। তবে যৌথ বিবৃতিতে সীমান্ত হত্যা ক্মে আসার কথা উল্লেখ করে সন্তোষ প্রকাশ বিস্ময়কর। সন্দেহের বশে বিনা বিচারে বেসামরিক নাগরিক হত্যার জন্য দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষতিপূরণের বদলে সন্তোষ জ্ঞাপন অত্যন্ত হতাশাজনক। 


ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রশ্নে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের আলোচনা এবং ভারতীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে বৃহৎ প্রতিবেশীর রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আরও আলোচনার আশ্বাস ছাড়া বিশেষ কিছু কি পাওয়া গেল? বহুল আলোচিত আঞ্চলিক ভুরাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানের প্রশ্নেও কি সহযোগিতার পুরোনো আশ্বাসের পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছু মিলল? আমরা ভারতকে বেশি দিচ্ছি আর পাচ্ছি কম বলে যে ধারনা চালু আছে, এই সফর সে ধারনা বদলে দেবে এমনটি নিশ্চয়ই কেউ আশা করেন নি। 


(৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২-এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...