সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এমপি পদত্যাগে সংসদের কিছু হয় না, তবে –

আগামীকাল স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের ৫২তম দিবস। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের ৫১ বছরের অভিযাত্রায় আমাদের শাসনব্যবস্থা ও রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে যত ধরনের পরীক্ষা–নিরীক্ষা হয়েছে, তার তুলনা বিশ্বের আর কোনো দেশের আছে কি না, বলা মুশকিল। এর মধ্যে অবশ্য দুই দফার সামরিক শাসনও কিছু রাজনৈতিক সমস্যার জন্ম দিয়েছে, যার প্রভাব থেকে এখনো নিষ্কৃতি মেলেনি। একটি বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের আকাঙ্খা থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হলেও আমরা রাষ্ট্রপতিশাসিত একদলীয় এবং বহুদলীয় উভয় রকম ব্যবস্থাই দেখেছি। আবার সংসদীয় ব্যবস্থায় উত্তরণের পর আমরা যেমন বহুদলীয় সংসদ পেয়েছি, তেমনই একইসঙ্গে মন্ত্রীসভা ও বিরোধী দলের আসন অলংকৃত করা অদ্ভুতুড়ে ব্যবস্থাও দেখেছি। 


এখন সংসদের বিরোধীদলের আসন থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের পর আমরা দেখবো আরেক ধরনের সংসদ, যে সংসদে বিরোধীদলের আসনে বসা কেউ আর মন্ত্রীসভায় নেই, কিন্তু আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচিত হওয়ায় তাঁদের কার্যকর বিরোধী দল গণ্য করাও কঠিন। তাঁরা সরকারি ঘোষণায় বিরোধী দল, কিন্তু বাস্তবে সরকারের সহযোগী। অন্য সব কিছু বাদ দিলেও শুধু এরকম অনন্য নজির তৈরির জন্যই আমরা নিজেদের বিশ্বের রোল মডেল ভাবতে পারি।   


ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এমপিদের সংসদ থেকে পদত্যাগে সংসদের কিছুই হবে না। তিনি আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতার আলোকে হয়তো ঠিকই বলেছেন। সংসদ থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করে যে নতুন কোনো নজির তৈরি করলেন, তা নয়। এর আগেও অনেকবার অনেক দলের ষংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন, তবে সেখানেও আওয়ামী লীগই এগিয়ে আছে। বিএনপির এমপিদের আগে অন্য যে সংসদ সদস্য নিজে থেকেই পদত্যাগ করেছিলেন, তিনি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ। তিনি সংসদ সদস্যপদ ছাড়ার আগে ছেড়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীর পদ, কিন্তু ২০০৯ সালের জুনের সে পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। এর প্রায় তিনবছর পর ২০১২ সালের এপ্রিলে তিনি সংসদের সদস্যপদ থেকেই ইস্তফা দিয়ে স্পিকারের কাছে ই–মেইল পাঠান। তখনো তা গৃহীত হয়নি। অবশেষে ওই বছরের ৭ জুলাই তিনি সশরীর স্পিকাবের দপ্তরে হাজির হয়ে পদত্যাগপত্র দিলে তখন তাঁর পদত্যাগপত্রগুলো কার্যকর হয়। 


তার আগের পদত্যাগের নজিরটি ১৯৯৪ সালের এবং ডিসেম্বর মাসের। সংসদ থেকে পদত্যাগের অন্তত তিনটি ঘটনা দেখা যাচ্ছে ডিসেম্বরেই ঘটেছে। সে বছরের ২৮ ডিসেম্বর  পঞ্চম সংসদের বিরোধীদলগুলোর মোট ১৪৬ জন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেন, যাঁদের মধ্যো আওয়ামী লীগের ছিলেন ৮৮ , জাতীয় পার্টির ৩৫, জামায়াতে ইসলামীর ১৮,  বাকশালের ৫, সিপিবির ৫, ন্যাপ এবং গণতান্ত্রিক পার্টি, ওয়াকার্স পার্টি, জাসদ ( সিরাজ), এনডিপি ও ইসলামী ঐক্যজোটের  একজন করে। নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে সংসদ থেকে তাঁরা একযোগে পদত্যাগ করেন। 


২৯ ডিসেম্বরের দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় ’শেষ চেষ্টা ব্যর্থ: বিরোধী দলের পদত্যাগ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে লেখা হয়, স্পিকারের দপ্তরের পাশের কক্ষে রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে সংসদের উপনেতা বি চৌধুরী, সালাম তালুকদার ও কর্ণেল অলি আহমেদ বিরোধী দলীয় নেতাদের বৈঠকে এসে পৌঁছান। তাঁরা বলেন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ৩০ দিন আগে পদত্যাগ করবেন, তবে মেয়াদ শেষে নির্বাচনের আগে বিরোধী দল হরতাল, ধর্মঘট, ঘেরাও ইত্যাদি কোনো কর্মসূচি দিয়ে সরকারের কার্যক্রমকে ব্যহত করতে পারেব না – মর্মে চুক্তি হতে পারে। এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেন পদত্যাগের। অবশেষে ৯টা ১৫ মিনিটে উক্ত বৈঠকে উপস্থিত স্পীকারের কাছে তিন দলের সংসদীয় নেতা মোট ১৪৬ জন সাংসদের পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেন। 


সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পর প্রথম প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকারের সমঝোতার প্রস্তাব এভাবেই ভেস্তে যায় বলে সেদিনের ডেইলি স্টার ও বাংলাদেশ অবজারভাবরের খবরেও বিবরণ পাওয়া যায়। তৎকালীন স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী অবশ্য পদত্যাগপত্রগুলো গ্রহণ করেন নি। ১৯৯৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি স্পিকার সিদ্ধান্ত দেন, পদত্যাগপত্রগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। তবে বিরোধী দল সংসদ বর্জন অব্যাহত রাখে। ১৯৯৫ সালের ১৯ জুন সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিতির ৯০ দিন পূরণ হলে সংবিধান অনুসারে এসব সদস্যদের পদ শূন্য হয়ে যায়। এরপর স্পিকার এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়ে পাঠান। সুপ্রিম কোর্ট এসব সংসদ সদস্যের পদ শূন্য হওয়ার রায় দেন। তবে সে সব শূণ্য হওয়া আসনে কোনো উপনির্বাচন হয়নি। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন তীব্রতা লাভ করে এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন দলগুলো বয়কট করে। সেই ষষ্ঠ সংসদেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার জন্য সংবিধানের সংশোধনী পাশ হয় এবং সংসদ গঠিত হওয়ার পর মাত্র চার কার্যদিবস তা অধিবেশনে বসে। ৩০ মার্চ ষষ্ঠ সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে গঠিত হয় বিচারপতি হাবিবুর রহানের নেতৃত্বাধীন তত্বাবধায়ক সরকার। 


এর আগেও সংসদ থেকে এমপিদের পদত্যাগের নজির আছে। জেনারেল এরশাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকার গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের আশ্বাস দিয়ে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৮৬ সালে সংসদের নির্বাচন আয়োজন করেন। সেই নির্বাচন সব দল বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট শেষমূহুর্তে নির্বাচনে অংশ নেয়। জামায়াতে ইসলামীও সে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সেটি ছিল চতূর্থ সংসদ, যাতে আওয়ামী লীগের আসন ছিল ৭৬ টি এবং জামায়াতে ইসলামীর ১০। এছাড়া, সিপিবি, ন্যাপ, জাসদ (রব)সহ আরও কয়েকটি দলের কয়েকজন সদস্য ছিলেন। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসাবে বিরোধীদলগুলোর সদস্যদের পদত্যাগের কথা ওঠে। ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস টাইমস বার্তা সংস্থা এপির একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে বলা হয় যে  এরশাদ সংসদ ভেঙ্গে দিয়েছেন (বাংলাদেশ’জ পার্লামেন্ট শাট এমিড স্ট্রাইকস, আনরেস্ট) । ওই বছরের নভেম্বরের ১০ তারিখ থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট যুগপথ আন্দ্রলনে একের পর এক হরতাল পালনের কর্মসূচি শুরু করলে এরশাদ জরুরি অবস্থা জারি করেন। ওই খবরেই বলা হয় যে ৩ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর ১০ জন এবং একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। 


তারও আগে, বস্তুত প্রথম সংসদেই পদত্যাগের নজির তৈরি হয় ১৯৭৫ সালে। সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে বাকশাল গঠিত হলে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এম এ জি ওসমানী এবং ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন পদত্যাগ করেন। আর জাসদের  ময়েনউদ্দিন আহমেদ মানিক ও আব্দুল্লাহ সরকার বাকশালে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁদের আসন শূণ্য ঘোষণা করা হয়। 


সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগ রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থায় যেমন ঘটেছে, তেমনি ঘটেছে সংসদীয় ব্যবস্থায়ও। শারীরিক অক্ষমতা বা অন্য কোনো কারণে যোগ্যতা হারানোর কারণে কেউ পদত্যাগ করেননি; এঁদের সবার পদত্যাগের কারণ রাজনীতি এবং তা প্রতিবাদ হিসাবেই। আবার তা শুধু সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদলের প্রতিবাদ নয়,  এমপিদের পদত্যাগে তাৎক্ষণিকভাবে হয়তো সরকারের পতন হয়নি, ক্ষমতাসীন দলের ভেতরের প্রতিবাদও আছে। এসব প্রতিবাদের কোনোটিতেই তাৎক্ষণিক কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে রাজনীতিতে তার প্রভাব ঠিকই অনুভূত হয়েছে।   


(১৫ ডিসেম্বর, ২০২২–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

  1. শুভেচ্ছা নিন। প্রাসঙ্গিক একটা তথ্য উল্লেখ করা দরকার। ১৯৭০ সালে যশোর থেকে নির্বাচিত এমপিএ মোশাররফ হোসেন ১৯৭২ সালে গণপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। অর্থাৎ প্রথম সংসদের আগেও পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছিল।
    মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোশাররফ হোসেন জাসদের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-সভাপতিদের একজন ছিলেন। ১৯৭৪ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।

    গেজেট https://www.facebook.com/photo/?fbid=413509185714189&set=a.410127792718995

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...