সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সরকারবিরোধিতা গণতন্ত্রে বৈধ, আড়ি পাতার যুক্তি নয়

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বৃহস্পতিবার সংসদে বলেছেন, সরকার রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধে ‘আইনসম্মতভাবে’ আড়ি পাতার ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। সম্ভবত এই প্রথম সরকারের পক্ষ থেকে আড়ি পাতার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হলো। বহুদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা চলছে, বিদেশি সংবাদমাধ্যমে এসব সরঞ্জাম সংগ্রহের কথা লেখা হচ্ছে এবং অভিযোগ উঠছে নাগরিকদের মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের। গুরুতর লঙ্ঘন এ কারণে যে সংবিধানে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং যোগাযোগর গোপনীয়তার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। 

বিষয়টিতে সরকারের অবস্থান তুলে ধরায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চয়ই ধন্যবাদ দাবি করতে পারেন। তবে সমস্যা হলো তাঁর বক্তব্যে এখনো অস্পষ্টতা আছে এবং তিনি যাকে আইনসম্মত বলে বর্ণনা করছেন, তা পুরোপুরি আইনসম্মত নয়। তাঁর বক্তব্যে প্রথম অস্পষ্টতার জায়গা হচ্ছে, তিনি বলেছেন আইনসম্মত আড়ি পাতার ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর বক্তব্যের আরেকটু পরের দিকে বলেছেন, দেশের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখতে দৃঢ় অবস্থান ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তাহলে কি আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ইতিমধ্যেই এ ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে? তাহলে তাকি আইনসম্মতভাবে হয়েছে? নাকি আইনের তোয়াক্কা না করেই এরকম ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে? 

  

দেশের অভ্যন্তরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিংয়ের (নজরদারি) মাধ্যমে দেশ ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধে এনটিএমসিতে (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজির (ওএসআইএনটি) মতো আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে। একই সঙ্গে একটি ইন্টিগ্রেটেড ল’ফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম (আইনসম্মতভাবে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট মাধ্যমে যোগাযোগে আড়ি পাতার ব্যবস্থা) চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজির কথা বলেছেন, তা কিন্তু আড়ি পাতা নয়। ওপেন সোর্স হচ্ছে জনসমক্ষে ইতিমধ্যে প্রকাশিত তথ্য সংগ্রহ, বাছাই ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে গোয়েন্দা তথ্য সংকলন করা। 


বিষয়টি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যেমন একটি রাজনৈতিক দল একটি কর্মসূচি ঘোষণা করে সংবাদমাধ্যমকে জানানোর পর তা পত্র–পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর এরকম প্রকাশ্য উৎস থেকে তথ্য নিয়ে কর্তৃপক্ষকে তা জানানো। কিন্তু ওই একই কর্মসূচি ঘোষণার আগে দলের কর্মকর্তরা নিজেদের মধ্যে ইমেইল, কিম্বা ক্ষুদে বার্তা অথবা টেলিফোনে আলাপ করার সময় তাদের সেই একান্ত নিজস্ব যোগাযোগব্যবস্থায় আড়ি পেতে সে তথ্য সংগ্রহ করা হলে সেটি আর উন্মুক্ত সূত্রের তথ্য নয়। তখন সেটি ওই রাজনৈতিক দলের নেতাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন। শুধু পত্রপত্রিকা নয়, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেক উন্মুক্ত তথ্য থাকে, যেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ আইনসম্মত। যেমন ছাত্র বা কোনো সামাজিক গোষ্ঠী যখন ফেসবুক কিম্বা সবার জন্য উন্মুক্ত ব্লগ বা কোনো সাইটে কোনো তথ্য প্রকাশ করলে সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ আড়ি পাতা নয়। কিন্তু কারো ইমেইলে অনুপ্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করা হলে তা হবে বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশ বা হ্যাকিং। আর এখন ওয়াইফাইতে আড়িপাতার প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম উদ্ভাবনের পর ইমেইলও অনেকক্ষেত্রে আর নিরাপদ নয়। 

সুতরাং ওএসআইএনটির কথা বলে আইনসম্মত গোয়েন্দা কার্যক্রমের কথার কোনো মাহাত্ম্য নেইা। কিন্তু ইন্টিগ্রেটেড লফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেমটা কী, তার কোনো বিবরণ বা ব্যাখ্যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে নেই। ফলে সরকারের নীতিতে একটা জটিল রহস্য থেকেই গেল। ইন্টারসেপশন কখন, কীভাবে আইনসম্মত ( লফুল) হচ্ছে, প্রশ্নগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি আইনসম্মত হতে হলে কোন আইনে, তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, এতে আদালতের ভূমিকা কী? যেসব আলামতের ভিত্তিতে কাউকে সন্দেহ করা হচ্ছে, সেগুলো যৌক্তিক কি না, তা বিচারে আদালতের ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। সোজা কথায় গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে আদালতের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া এধরনের আড়ি পাতা বৈধ হিসাবে গণ্য হয় না। 

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের যে অংশটুকু আরও সমস্যাপূর্ণ, তা হলো ”রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম’ তিনি একই মানদন্ডে মাপছেন। কোনো গণতন্ত্রেই যে রাষ্ট্র এবং সরকার এক নয়, কথাটি তিনি ভুলে গেছেন। সরকারবিরোধিতা কখনোই অপরাধ নয়। সরকারবিরোধিতাকে অপরাধ গণ্য করা হয় রাজতন্ত্র আর স্বৈরতন্ত্রে। গণতন্ত্রে সরকারকে বৈধপথে অর্থাৎ নির্বাচন কিম্বা গণ–আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যূত করার কার্যক্রম তো অপরাধ নয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়ে স্বাধীনতার আন্দোলনকে দমন করতে ব্রিটিশরা রাষ্ট্রদ্রোহের আইন করেছিল ঠিকই এবং সে আইনের অপপ্রয়োগ আমাদের উপমহাদেশের দেশগুলোতে এখনও অহরহই ঘটছে। তবে ভারতে সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আইনগত ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত এসেছে। 

প্রথমে ১৯৬২ সালে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন বিচারপতির একটি বেঞ্চ রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে বৈধতা দিলেও স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা দেন যে সরকারের সমালোচনাকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলা যাবে না। কেদারনাথ বরাম বিহার রাজ্য মামলায় আদালত বলেন যে পুরো আইনটি পাঠে যৌক্তিকভাবে স্পষ্ট ধারনা মেলে যে এর লক্ষ্য হচ্ছে সহিংসতার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা ও জনজীবনে শান্তি বিনষ্ট করা ঠেকানোই এর উদ্দেশ্য। সরকারের সমালোচনার বিরুদ্ধে এর অপপ্রয়োগ চলে না। 

এরপর ২০২১ সালে দিল্লিতে কৃষকদের অবস্থান ও আন্দোলনের সময়ে আবারও বিষয়টি দিল্লিতে হাইকোর্টে আসে। ওই মামলাটি ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ বা ইন্টারনেট ও মোবাইল সম্পর্কিত আইনের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। দিশা রবির জামিন আদেশ নামে খ্যাত ওই মামলায় দিশার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল গুগলের ক্লাউডে সংরক্ষিত একটি নথিকে টুলকিট অভিহিত করে রাষ্ট্রপক্ষ দিশার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত টুইটারে সরকারবিরোধী ঝড় তোলার একটি আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রদ্রোহমূলক। এতে কৃষকদের দিল্লির প্রান্ত পর্যন্ত মিছিল করা এবং বিদেশে ভারতীয় দূতাবাসগুলোতে যোগাসন ও চায়ের আসরগুলোতে বিঘ্ন ঘটানোর মত আন্দোলনের কর্মসূচির উল্লেখ ছিল। এতে হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ তৈরি এবং বিদেশিদের অংশগ্রহণের প্রমাণ হিসাবে সুইডেনের পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুর্নবাগরের কথাও উল্লেখ করা হয়। 

মানব ইতিহাসের সবচেয় বড় কৃষক আন্দোলনে আপনিও অংশ নিন আহ্বানসংবলিত প্রচারপত্র এবং ওই টুলকিট উদ্ধৃত করে আদালত বলেন যে এগুলোতে সহিংসতার কোনো আহ্বান নেই। গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকেরা সরকারকে সজাগ রাখেন। রাষ্ট্রের নীতির সঙ্গে একমত হতে না পারার কারণে তাঁদের কারাগারে পাঠানো যায় না। 

এরপর ওই বছরেই মার্চে জম্মু –কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসন স্থগিতের বিরুদ্ধে মন্তব্য করার জন্য সেখানকার সাবেক মূখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনেন একজন নাগরিক। রাষ্ট্রর নীতির বিরোধিতা রাষ্ট্রদ্রোহ নয় বলে ওই আবেদন আদালত শুধু নাকচই করেননি, বরং মামলার আবেদনকারীকে ৫০ হাজার রুপি জরিমানাও করেন।  এরপর গত বছরের ১১ মে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষাকারী একটি গোষ্ঠী ও একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার দুটি আলাদা আবেদনের শুনানি নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের কার্যকারিতা স্থগিত ঘোষণা করেন এবং পার্লামেন্ট আইনটি পর্যালোচনা করে সংশোধনের ব্যবস্থা নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন। সরকারের পক্ষ থেকেও আদালতে আইনটি সংস্কারের প্রয়োজন স্বীকার করে নেওয়া হয়। 

বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের সব দেশেই আইনের ঔপনিবেশিক উৎস অভিন্ন বলে ভারতের আদালতের রায়গুলো অন্যান্য দেশেও নজির হিসাবে অনুসৃত হয়ে থাকে। তবে তা–ও নির্ভর করে আদালতের স্বাধীনতার ওপর। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, যা আইনসম্মত ও গণতান্ত্রিক নয়, সেরকম কাজকে আইন করে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টাও পরিত্যাগ করা উচিত। আড়িপাতার ক্ষেত্র সরকারবিরোধিতা যেমন কোনো যুক্তি হতে পারে না, তেমনি রাষ্ট্রবিরোধী সন্দেহে তা প্রয়োগে বিচার বিভাগীয় তদারকি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।  

(১৫ জানুয়ারি, ২০২৩–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।) 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...