সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রপ্তানিমুখী দেশ কেন আমদানি নির্ভর হয়

 বেশ কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে, দেশের জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ায় বিদ্যূৎ–সংকটের শিগগিরই কোনো সমাধানের সম্ভাবনা নেই। ফলে ’শতভাগ বিদ্যূৎায়িত দেশে’ হাতপাখা, মোমবাতি, হারিকেন, কুপি ইত্যাদির প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। 


এখন কাঁচা মরিচ আমদানিনির্ভর হওয়ায় খাদ্যতালিকায় কী বদলাবে, তা অবশ্য বলা যাচ্ছে না। তবে আমদানির খবরেও যেহেতু বাজারে দাম কমেনি, সেহেতু ধারনা করা যায়, অনেকের খাদ্যতালিকা থেকে কাঁচা মরিচ বাদ পড়বে। অন্তত রেস্তোরাঁ ও ভাতের হোটেলে টেবিলে টেবিলে আর বিনা মূল্যের কাঁচা মরিচ থাকবে না। রোদে শুকানো মরিচ পানিতে ভিজিয়ে সতেজ করে খাওয়ার ফর্মূলা এবারের ঈদের জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। অবশ্য আগামী মৌসুমের  কাঁচা মরিচের পূর্বাভাস চিন্তায় রেখে ফর্মূলা দেওয়া হয়ে থাকলে ভিন্ন কথা। 


খাদ্য পণ্যে স্বয়ংসর্ম্পূণ হওয়ার দাবিও আমরা বহুদিন ধরে শুনে আসছি। কিন্তু, তারপরও চাল, গম, ডাল থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের খাদ্য পণ্য আমদানির ওপর এখন বাজারে এগুলোর প্রাপ্যতা নির্ভর করে। আমদানির পরও যে তা দামের ওপরে সবসময় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, সে কথাও বলা যাচ্ছে না। সম্প্রতি পেঁয়াজের বেলায় সে রকমই দেখা গেছে। আমদানির পেঁয়াজ বাজারে আসার পরও দাম কমেছে সামান্যই। চিনি ও ভোজ্য তেলের বেলায়ও একইরকম প্রবণতা দেখা গেছে। এখন সর্বসম্প্রতি যুক্ত হলো সবজি হিসাবে গণ্য হওয়া কাঁচা মরিচ ও টমেটো। এর আগে কখনো কাঁচা মরিচ ও টমেটোর ঘাটতির কথা শোনা যায় নি এবং হাজার হাজার টন পরিমাণে তা আমদানির প্রয়োজনও হয়নি। 


এখন সংবাদমাধ্যমের খবর হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার কাঁচা মরিচ ও টমেটো আমদানির অনুমতি দেওয়া শুরু হয়েছে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর জানায়, প্রথম দিনে ১১ হাজার ৬০০ টন কাঁচা মরিচ ও ৫৫ হাজার ৬০০ টন টমেটো আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা বাড়তি থাকলেও এবার স্বাভাবিক আবহাওয়ার মধ্যেই তার দাম বেড়ে কোথাও কোথাও ৯০০ টাকায়ও উঠেছে, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আট–নয় গুণ। 


কিছুদিন আগে গরুর মাংসের দাম বাড়ায় যখন চারিদিকে চাপা অসন্তোষ দেখা দিল, তখন প্রথমে স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প হিসাবে কাঁচা কাঠালের নানা পদের খাদ্যের পরামর্শ এল। কিন্তু গরুর মাংসের স্বাদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি ত্যাগে তেমন কেউ রাজি হলো বলে মনে হলো না। এর আগে তেল ছাড়া রান্না কিম্বা পেঁয়াজ ছাড়া তরকারিতেও খুব বেশি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। শুরু হলো আড়াই শ গ্রাম মাংস বিক্রির ফর্মূলা, যা দেশের জন্য একটা নতুন রেকর্ড। এরপর খবর বেরোল, দেশে মহিষের মাংস আমদানি হয়েছে, যাতে মাংসের চাহিদা কিছুটা হলেও মেটানো যায়। অথচ প্রথম আলোতেই ২০১৯ সালে খবর ছাপা হয়েছিল, ’গরু–ছাগলে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ’। 


নিত্যপণ্যবি, শেষত খাদ্যসামগ্রীর ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি বারবার কেন হচ্ছে? সরকারি হিসাবে দেশের উৎপাদনের যেসব পরিসংখ্যান পাওয়া যায়, তার সঙ্গে  চাহিদা ও সরবরাহের ফারাক থাকছে কেন? নাকি ফারাকটা পুরোটাই কৃত্রিমভাবে তৈরি ও কারসাজির ফল? বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে তাদের একটি দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল আছে। ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর সেলটি গঠিত হয়েছে।  


মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে:  ”এই সেল নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা, আমদানির পরিমাণ, মজুদ ও সংগ্রহ পরিস্থিতি এবং বিতরণ ব্যবস্থাসহ বিবিধ তথ্যের পর্যালোচনা এবং আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনামুলক বিশ্লেষণ করে থাকে । এই কাজের অংশ হিসেবে এই সেল বিভিন্ন সংস্থা থেকে পণ্যের উৎপাদন, মজুদ, সংগ্রহ পরিস্থিতি ও বিতরণ ব্যবস্থা, পণ্যের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারদর, বন্দরে পণ্য খালাসের পরিমান, পণ্যের এলসি খোলা ও নিস্পত্তির তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণপূর্বক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরকারের করণীয় নির্ধারণে সহায়ক হিসেবে কাজ করে ।” 


সেলটি বিলুপ্ত করার কোনো তথ্য কোথাও নেই। তাহলে যে সেল বারবার তার দায়িত্ব পালনে অক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে, তা টিকিয়ে রাখার কারণ কী? দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণহীন উর্দ্ধগতির কারণে সংসদেও গত সোমাবার বিতর্ক হয়েছে। সংসদে সরকারের সমর্থক ও অনুমোদিত বিরোধীরা ছাড়া আসল বিরোধী কেউ নেই। তারপরও সংসদেই অভিযোগ উঠেছে, ”বাজার সিন্ডিকেটের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর যোগসাজশ রয়েছে।” জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি যা বলেছেন, তাতে কার্যত স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে সরকার বৃহৎ ব্যবসায়ীদের জোটের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। তিনি বলেছেন, ‘সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়। এটা ঠিক বড় বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। চাইলে জেল-জরিমানাসহ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার— আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম; সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে, সেটাও তো সইতে আমাদের কষ্ট হবে। এজন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি (যুগান্তর)।’ 


কারা আমদানির ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে, আমদানি ও বাজারজাত করার প্রক্রিয়ায় প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, তাদের নাম ও কাজের ধরন সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। এদের প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ আর্শীবাদই তাদের সাফল্যের অন্যতম প্রধান রহস্য। তাদের উত্থান আইনের শাসনভিত্তিক প্রতিযোগিতার বাজারে নয়। সে কারণেই সরকার চিনির দাম বা ভোজ্য তেলের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করার আগেই নিজেদের মতো করে তারা তা বাড়িয়ে নেয় এবং শেষ পর্যন্ত সংকট এড়ানোর দোহাই দিয়ে সরকার তা মেনে নেয়। সাধারণ ভোক্তার কষ্টের উপার্জন মুফতে তারা পকেটস্থ করে।


শুরুতে জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর হওয়ার বিপদের কথা বলেছিলাম। জ্বালানি খাত কতটা আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গত দুই বছর ধরে ছাপা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের জন্য এমনিতেই আমরা পুরোপিরি বিদেশের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিদ্যূৎ উৎপাদনের যত প্রকল্প হয়েছে, তার জন্য বিদেশ থেকে তরলীকৃত গ্যাস, কয়লা এবং ফার্নেস তেল আমদানির চাহিদা যেভাবে বেড়েছে, তার পরিণতি হচ্ছে ডলার–সংকটে আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বিদ্যূৎ উৎপাদনক্ষমতার অর্ধেকই কাজে লাগানো যাচ্ছে না।  


সত্তর ও আশির দশকে আমরা শুনতাম বাংলাদেশ স্বনির্ভর হবে এবং সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। তবে সামরিক শাসনামলের সে স্লোগান বর্জন করে নতুন যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তা হলো, আমরা শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো, তা–ই না, দেশের অর্থনীতি হবে রপ্তানিমুখী। রপ্তানি হবে অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। রপ্তানি বেড়েছে ঠিখই, কিন্তু আমদানি বেড়েছে আরও বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব (বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান-২০২১-২০২২) বলছে, গত পাঁচ বছরে আমদানি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। 


বিশ্বায়নের কালে মুক্ত বাণিজ্যে আমদানিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে না দেখে কয়েক দশক ধরে তার পক্ষে নানা যুক্তি দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার কারণে ভোক্তা সবচেয়ে কম দামে পণ্য পাবে, সেটাই ছিল এর পক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি এখন হঠাৎ করে বদলে গেছে দুটো কারণে– কোভিড মহামারিতে সরবরাহব্যবস্থায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটায়, আর ভূ–রাজনীতির নতুন মেরুকরণ প্রক্রিয়ার প্রভাবে। 


গত বছরের মার্চে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পের ভবিষ্যত. অর্থনীতির ভবিষ্যত, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটের সমাধান মিলবে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পণ্যে। চীনের প্রসিডেন্ট সি জিনপিং ’আত্মনির্ভর’ হওয়ার কথা বলেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ’ভারতে তৈরি’ র স্লোগান গ্রহণ করেছেন। সবাই যখন আমদানিনির্ভরতা কমাতে চায়, তখন রপ্তানিমুখী বাংলাদেশ কেন এতটা  আমদানিনির্ভর হলো যে সাড়ে ১১ হাজার টন কাঁচা মরিচ আমদানি করতে হচ্ছে? 


(প্রথম আলো অনলাইনে ১ জুলাই,২০২৩ এ প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...