সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলাদেশ কেন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মডেল হবে

 


ভিসা নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে স্পষ্ট হয়েছে, বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই একটা মডেল হিসাবে নিয়েছে এবং নতুন নতুন নজির তৈরি করছে । এ বছরেই ১০ এপ্রিল ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সূচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, ’আমরা তাকিয়ে আছি, বিশ্ব তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের দিকে, এটা নিশ্চিত করতে যে সেখানে ওই অঞ্চল ও বিশ্বের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের একটি শক্তিশালী নজির তৈরি হবে।’ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মডেল তৈরির সেই লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন যে বেশ অবিচল, একের পর এক বিভিন্ন পদক্ষেপে তা এখন নিশ্চয়ই স্পষ্ট হয়েছে। 


একদিকে ক্ষমতায় ফেরার জন্য ব্যাকুল বিরোধীদল বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো এবং গত দুটি নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার কারণে ক্ষুব্ধ বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের এ সব পদক্ষেপ ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। বিপরীতে, আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গীরা একে তাদের ক্ষমতাচ্যূত করার ষড়যন্ত্র হিসাবেই চিত্রিত করছে। এর সম্ভাব্য কারণ হয়তো তারা সত্যিই বুঝতে পারছে যে সত্যিকার নির্বাচন বলতে যা বোঝায়, সে রকম ভোট হলে তারা আর ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না। 


পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ওই বৈঠকের মাত্র মাসখানেকের মাথায় গত ৩ মে সরকারিভাবে বাংলাদেশকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা বা তাকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করার সঙ্গে যারাই সহযোগী হবে, তাদের যুক্তরাষ্ট্র ভিসা না দেওয়ার নীতি গ্রহণ করবে। এরপর ২৪ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেখোলাখুলিভাবে বলেন, ’বাংলাদেশে যারা গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চাইছে তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন জানাতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।’ 


এরপর ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার ঘোষণা করেন যে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে খর্ব করার জন্য যে সব ব্যক্তি দায়ী বা তাতে সহযোগিতা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যেই কার্যকর করা শুরু হয়েছে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজ কী কী, তার ব্যাখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হবার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা। যাদের ওপর এ নীতি প্রয়োগ শুরু হয়েছে, তারা ক্ষমতাসীন দল, নিরাপত্তা বাহিনী ও বিরোধী দলের সদস্য বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। 


যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপগুলোর কিছু বিষয় অপ্রত্যাশিত ও ব্যতিক্রমী। প্রথমত, দুবারই যুক্তরাষ্ট্র তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে এমন সময়, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। দ্বিতীয়ত, অন্য প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে অন্য যেসব দেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হয়েছে নির্বাচনের পর। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় নির্বাচনের অন্তত চারমাস আগেই যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যবস্থা নিয়েছে। কূটনীতি ও রণনীতির পরিভাষায় এ যেন ’প্রিএম্পটিভ স্ট্রাইক’। 


তৃতীয় লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে যে ধরনের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এবং সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করা ও অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টার গুরুতর অভিযোগ আনা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রই ততই নিরুত্তাপ ও স্বাভাবিক সম্পর্কের বাতাবরণ ধরে রাখার চেষ্টা করছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে একের পর এক যুক্তরাষ্ট্রের পদস্থ কর্মকর্তারা ঢাকা সফর করছেন। যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংলাপ সচল আছে। অর্থাৎ, কূটনৈতিক সম্পর্ককে কোনোভাবেই তারা বৈরিতার দিকে যেতে দিতে চায় না বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশই প্রথম কোনো রাষ্ট্র, যেখানে নির্বাচন হওয়ার আগেই নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ হলো, সেহেতু বোঝা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র একটি জোরালো নজির তৈরির বিষয়ে খুবই সিরিয়াস। 


অন্যদিকে জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে সাধারণ সৌজন্যনির্ভর শুভেচ্ছা বিনিময় এবং সেলফি তোলা নিয়ে বিরোধী দল বিএনপির ঘুম হারাম হওয়ার কথা প্রচারে মন্ত্রীরা যেভাবে নেমে পড়েছিলেন, তার জন্য তো তাঁদের এখন নিজেদের হাত কামড়ানোর কথা! ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এমন ধারণাও দেওয়া হচ্ছিল যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অন্য কথায় আওয়ামী লীগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার গুরুত্ব দিল্লির তরফ থেকে ওয়াশিংটনকে বোঝানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা  নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পদক্ষেপে ইঙ্গিত মেলে যে বাইডেন প্রশাসনের বাংলাদেশ নীতির প্রশ্নে আদতে ভারত হয় নীরব থেকেছে, নয়তো তাদের অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্র আমলে নেয়নি।  


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী ও পেশাদার কূটনীতিকদের রেখে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত দেনদরবার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমান। ভিসা নীতি কার্যকরের পদক্ষেপকে তিনি ইতিবাচক বলে অভিহিত কোর পরপরই নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় আবহটাই যেন বদলে গেল। বিরোধী দল ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে – তথ্যটিকে তাঁরা হয়তো প্রথমে ইতিবাচক মনে করেছিলেন, কিন্তু এখন তাঁরা আর ইতিবাচক কিছু বলছেন না; বরং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও টেনে আনা হচ্ছে।


বিদেশি কাউকে ভিসা দেওয়া – না দেওয়ার এখতিয়ার যেহেতু স্বাগতিক দেশের, সেহেতু এমনিতে ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্তে কারোই আপত্তি থাকার কথা নয়। বাংলাদেশের আপত্তির কারণ এটিকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু সেই রাজনৈতিক কারণ হচ্ছে, ’গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতি সমর্থন’ এবং ’গণতান্ত্রিক নির্বাচন’। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের প্রতিক্রিয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, মনে হচ্ছে সুষ্ঠ্র ও অবাধ নির্বাচন হলেই তাঁরা ক্ষমতা হারাবেন এবং তাই কেউ সেরকম নির্বাচন দাবি করুক সেটা তাঁরা চান না; যা আপাতদৃশ্যে গণতন্ত্রেরও বিরুদ্ধে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিশ্বাস ও আস্থা থাকলে তো এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক নয়; বরং নির্বাচনের প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে, সেটাই তুলে ধরার কথা।


নির্বাচন যেহেতু এখন মাস চারেক দূরে সেহেতু ভিসার নিষেধাজ্ঞা নিশ্চয়ই ’ভোট কারচুপি’ বা ’ভোটারদের ভয় দেখানোর জন্য’ কার্যকর হয়নি। তাহলে বাকি থাকছে আর কোন কারণগুলো? ’সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হবার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া’ এবং ’বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা’। এসব অভিযোগ তো অস্বীকার করা যাবে না। প্রায় প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে সভা–সমাবেশে বাধা দেওয়া, হামলা, ভয়ভীতি দেখানো, গ্রেপ্তার ও গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানির ছবি ও খবর প্রকাশ পাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস যে বিশ্বাসযোগ্য নয়, সেটাই তো এ নিষেধাজ্ঞার বার্তা। অথচ, বিরোধীদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনায় বসলে ও সমাধান খুঁজলে নিপীড়ণ ও হয়রানি যেমন বন্ধ হতো, তেমনই নিষেধাজ্ঞা এড়ানো যেত।   


যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কারণে ব্যক্তিগতভাবে কারা সমস্যায় পড়েছেন, তা আমরা সাধারণ মানুষ না জানলেও ভুক্তভোগীরা জানেন। রাজনীতিকেরা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য মরিয়া হলেও সরকারি চাকরিজীবি ও ব্যবসা–বাণিজ্য যাদের জীবিকা, তাঁরা যে সন্তানদের ভবিষ্যতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাইবে না, সেটাই স্বাভাবিক। গত জুলাই মাসে দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী  ২০২১–২২ সালে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১০,৫৯৭। এদের অভিভাবকদের উদ্বেগ–উৎকন্ঠা কতটা, তা সহজেই অনুমেয়। 


উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ব্যবসা–বাণিজ্য নিয়েও। শেয়ারবাজারে তার নেতিবাচক প্রভাবের খবর বেরিয়েছে প্রায় সব কাগজেই। বাণিজ্যবিষয়ক দৈনিকের প্রধান শিরোনাম হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বে ব্যবসা নিয়ে স্নায়ুচাপ বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। কেননা, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে আমাদের প্রায় নয়শো কোটি ডলারের রপ্তানির বাজার। ২০২১–২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিনিয়োগ এসেছে ৩৪৪ কোটি ডলার। র‍্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার পর অবশ্য বিনিয়োগের হার অনেক কমেছে। সুতরাং রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আর বিলম্ব করা কিম্বা সংকটকে আরো জটিল করে নিষেধাজ্ঞার মডেল হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়।   


(২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...