সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দেশীয় রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপের ভিন্ন পাঠ

 বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবির আড়ালে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ রাশিয়ার। গত ২২ নভেম্বর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টে এক বার্তায় এ অভিযোগ করেন। তিনি সেখানেই থামেন নি, বরং আরও বলেছেন যে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সরকারবিরোধী মহাসমাবেশ আয়োজনে বিরোধী দলের সঙ্গে পরিকল্পনা করেছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র তাঁর ওই অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। দুই পরাশক্তির মধ্যে পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক অভিযোগ নতুন কিছু নয়, কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে প্রকাশ্য অভিযোগ নতুন সংযোজন। 


গত সপ্তাহে একটি টিভি চ্যানেলে ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার ভি মন্টিটস্কির বিশেষ সাক্ষাৎকার শুনলাম। সাক্ষাৎকারের প্রথম প্রশ্নই ছিল, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন। আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশিদের কথিত নাক গলানোর বিষয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের স্পর্শকাতরতার পটভূমিতে নির্বাচনী মৌসুমে এরকম প্রশ্নে অবশ্য তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি। 


ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক হিসাবে সুপরিচিত বিশিষ্ট নাগরিকদের একটি গোষ্ঠী আমাদের রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁরাও বিষয়টি উপেক্ষা করে গেছেন। তাঁদের আপত্তি হলো – যারা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার কথা বলছে – প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের কথায়। 


যাহোক, সাক্ষাৎকারটিতে রুশ রাষ্ট্রদূত মন্টিটস্কির কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো–প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কেও একটি প্রশ্ন ছিল। রাষ্ট্রদূত তার উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত লক্ষ্য ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরকে উন্মুক্ত রাখার নীতিকে নাকচ করে দিয়ে একে বাইরে থেকে এসে ওই অঞ্চলে অনৈক্য তৈরির চেষ্টা হিসাবে বর্ণনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রর নীতিটির লক্ষ্য চীন বলেও তিনি মত দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারটিতে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা কতটা জোরদার হচ্ছে, তার একটা বিবরণ রয়েছে। 


রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত সমর্থনের গুরুত্ব অপরিসীম। তখনকার দুই পরাশক্তির ঠান্ডা লড়াই আমাদের স্বাধীনতার লড়াইয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলেই অনেকের মত। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মস্কো আমাদের স্বীকৃতি দিতে জানুয়ারির ২৬ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এরপর দ্রুতই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বাড়তে থাকে। এর একপর্যায়ে ব্রেজনেভের ’এশিয়ার সম্মিলিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা’য় বাংলাদেশের সমর্থন চাওয়া হয়। 


১৯৭৩ সালের অক্টোবরে মস্কোতে বিশ্ব শান্তি কংগ্রেসে অংশগ্রহণের সময়ে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের কাছে এই পরিকল্পনার একটি খসড়া দেওয়া হয় বলে লিখেছেন  অটোয়ার কার্লটন ইউিনভার্সিটির গোলাম মোস্তফা তাঁর ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট এন্ড ফরেন পলিসি বইটিতে। বইটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার উত্তরাধিকারী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটি নিবিড় পর্যালোচনা। সেখানে লেখা হয়েছে, পরিকল্পনাটি ভারতের সমর্থন পা্য়নি এবং বাংলাদেশও তাতে কোনো উৎসাহ দেখায়নি। তখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন গড়ে ওঠা সম্পর্কের আলোকে এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব ক্ষূণ্ণ হওয়ার বিষয়ে রাশিয়া উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা। রুশ রাষ্ট্রদূতের ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চল সম্পর্কিত বক্তব্যে বোঝা যায়, এ অঞ্চল নিয়ে রাশিয়ার রাজনৈতিক দূর্ভাবনা এখনো রয়েই গেছে। তবে পার্থক্যটি হচ্ছে, এখন তার নতুন মিত্র চীন। 


মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। গোলাম মোস্তফার বইতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৭৩ সালে প্রাভদা পত্রিকায় নিয়মিত বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে মতামত ছাপা হতো। এসব লেখায় বাংলাদেশ–সোভিয়েত সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টার জন্য অভিযোগ করা হতো প্রতিক্রিয়াশীল ডানপন্থী এবং বাম চরমপন্থীদের (পিকিংপন্থী হিসাবে অধিক পরিচিত)। নতুন তৈরি হওয়া দল জাসদ এবং ভারতবিরোধী ও চীনপন্থী বামপন্থী দলগুলোর তৎপরতার মুখে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ মস্কোপন্থী কম্যুনিষ্ট পার্টি সিপিবি ও মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাপের সঙ্গে গণ ঐক্যফ্রন্ট গঠন করলে সোভিয়েত পত্রপত্রিকায় তাকে ব্যপকভাবে স্বাগত জানানো হয়। 


তবে এরই মধ্যে দুটি ঘটনা ঘটে। মন্ত্রীসভা রদবদলে মস্তোপন্থী হিসাবে পরিচিত আবুস সামাদ আজাদকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রপন্থী হিসাবে পরিচিত ড. কামাল হোসেনকে। আরেকটি ঘটনায় ঢাকা থেকে রাষ্ট্রদূত ভ্যালেন্টিন পোপভকে মস্কো প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের অনুরোধে। বইটিতে লেখক বলেছেন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অত্যধিক নাক গলানোর কারণেই বাংলাদেশ ওই অনুরোধ জানিয়েছিল।  


১৯৭৫ সালে রক্তক্ষয়ী অভ্যূত্থানে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর খোন্দকার মোশতাক পররাষ্ট্রনীতির গতিমুখ অনেকটাই বদলে ফেলেন। এরপর সামরিক শাসক হিসাবে জেনারেল জিয়াউর রহমানও চীন ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সচেষ্ট হন। চীনের প্রতি ঢাকার ঝুঁকে পড়া মস্কো ভালো চোখে দেখেনি। ইতিমধ্যে বিশ্ব পরিসরেও রাজনৈতিক পটভূমি বদলে যায় আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের কারণে। বাংলাদেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখলেও ইসলামি সম্মেলন সংস্থার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন ডেকে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। 


এরকম পটভূমিতে চট্টগ্রামে সোভিয়েত ইউনিয়নের কনসুলেট খোলা এবং ঢাকায় দূতাবাসে অতিরিক্তসংখ্যক কূটনীতিক ও কর্মী নিয়োগ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। আওয়ামী লীগের শাসনকালেই ঢাকায় বড় আকারে রুশ দূতাবাস নির্মিত হয়, যেখানে ৪০ জন কূটনীতিক ও একশ অকূটনীতিক কর্মী ছিলেন। বিপরীতে মস্কোতে বাংলাদেশের কূটনীতিক ছিলেন মাত্র চারজন। গোলাম মোস্তফা লিখেছেন, ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বরের আগেই জিয়ার সরকার তখন ঢাকায় রুশ কূটনীতিকের সংখ্যা কমানোর অনুরোধ জানালেও মস্কো তা উপেক্ষা করে। সে সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়ই অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ করা হতো । ১৯৮১ সালে সম্পর্কের এতটাই অবনতি ঘটে যে তখনকার তথ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন যে রাশিয়া কূটনৈতিক নীতি না মেনেই চট্টগ্রামে কনসুলেট চালু করেছে।


সম্পর্কে আরও জটিলতা তৈরি হয় জিয়া নিহত হওয়ার পরপরই ঢাকায় এরোফ্লোটের বিমানে দূতাবাসের জন্য আসা ’নির্মাণসামগ্রী’ লেবেল আঁটা বাক্সে নিষিদ্ধ যোগাযোগ সরঞ্জামের একটি চালান শুল্ক কর্তৃপক্ষ আটকে দেওয়ায়। থবরটি প্রকাশের পর ব্যাপক জনপ্রতিক্রিয়ার মুখে সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি বিবৃতি দিতে হয়েছিল। 


এরপর দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের আরও নাটকীয় অভিযোগ ওঠে ১৯৮৩ সালে ক্ষমতা নেওয়া  আরেক সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের আমলে। জেনারেল এরশাদের সরকার একসঙ্গে ১৪ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে, যা বাংলাদেশ থেকে কূটনীতিক বহিষ্কারের ক্ষেত্রে একটি রেকর্ড। যদিও এরশাদের ক্ষমতাগ্রহণের পর লিওনিদ ব্রেজনেভ তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছিলেন বলে বার্তা সংস্থা তাস খবর দিয়েছিল। রাশিয়ার নিউ টাইমস পত্রিকায় তাদের দিল্লি সংবাদদাতা এস ইদরভ লিখেছিলেন, ওয়াশিংটনের ইন্ধনে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছিল, এরশাদ তা নস্যাৎ করে ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়েছেন। 


কিন্তু হঠাৎ ১৯৮৩ সালের  ২৯ নভেম্বর সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতকে দূতাবাসের কূটনীতিকের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা এবং চট্টগ্রামের কনসুলেট বন্ধের জন্য বলা হয়। এরপর ১৯৮৪ সালের জানুয়ারিতে ১৪ জনকে বহিষ্কারের পাশাপশি মস্কো থেকে বাংলাদেশের দূতকেও ঢাকায় ফেরৎ আনা হয়। এসব ব্যবস্থার কোনো সরকারি ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলেও তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রাজনীতির যোগসূত্র থাকার ধারণা করা হয়। ওই বছরই ২৮ নভেম্বর  বিরোধীদলগুলোর ঢাকায় সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ছিল। 


অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশিদের নাক গলানো নিশ্চয়ই কারও কাম্য নয়, তবে বিতর্কটি একপেশে হওয়া যেমন অনাকাঙ্খিত, তেমনি নিজেদের পক্ষে হয় – এমন মন্তব্যকে উৎসাহিত করাও অন্যায়। তবে আর্ন্তজাতিক আইনে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়টি সর্বজনীন হওয়ায় তার সমর্থনকে হস্তক্ষেপ বলারও কোনো অবকাশ নেই।  


(৭ ডিসেম্বর, ২০২৩–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...