সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভারত কেন গণতন্ত্রের বদলে স্থিতিশীলতার কথা বলছে

শুরুতেই চলতি সপ্তাহের দুটো খবরের দিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। প্রথমটি বাংলাদেশের সরকারি বার্তা সংস্থা, বাসসের  ১৭ ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদন। এতে তারা জানিয়েছে, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর বলেছেন, ’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী। কারণ, তিনি স্বৈরাচার থেকে  দেশকে মুক্ত করেছেন।’ ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘৫২ বছরে বাংলাদেশের অর্জন এবং আগামী দশকগুলোতে এই অঞ্চলে এবং এর বাইরে দেশটির অবস্থান’ শীর্ষক একটি আলোচনায় তিনি ছিলেন মূল বক্তা। তিনি আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ’বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় তিনি এখানে দারুণ আনন্দ দেখতে পাচ্ছেন।’  


দ্বিতীয় খবরটিও ভারতের আরেকজন সাবেক কূটনীতিকের বক্তব্যসম্পর্কিত, যা তিনি ১৮ ডিসেম্বর ঢাকাতেই একটি দৈনিকের আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলেছেন। বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কে নির্বাচিত হবেন, সে বিষয়ে দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটা বোঝা যে নির্বাচনে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ভারত গণতন্ত্র চায়, কিন্তু আমরা গণতন্ত্র রফতানি করি না। সব দেশেই গণতন্ত্রের নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে, আমরা সে পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দেই।’ 


এর বিপরীতে বছরখানেক ধরে নির্বাচনে বিদেশিদের নাক গলানো নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এবং তাদের সমর্থকেরা যেসব বক্তব্য দিয়ে এসেছেন, সেগুলো স্মরণ করে দেখুন। সেগুলো উদ্ধৃত করতে গেলে এই নিবন্ধে আর অন্য কিছু লেখার জায়গা হবে না। এম জে আকবর ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও পেশাদার কূটনীতিক নন, বরং বিজেপির একজন সক্রিয় রাজনীতিক। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নির্বাচনকালীন সময়ে একজন বিদেশি রাজনীতিকের মুখ থেকে আমাদের সরকারপ্রধানের প্রশংসা শোনার দরকার পড়ল কেন, সে প্রশ্ন নিশ্চয়ই করা যায়। 


রাজনীতিতে আসার আগে তিনি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছেন। তাঁর তো জানার কথা যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মেদিই সম্ভবত একমাত্র সরকারপ্রধান, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জো বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য ভোট চেয়ে বলেছিলেন ’আব কি বার ট্রাম্প সরকার’! এম জে আকবর ঢাকায় বক্তৃতা দেওয়ার আগে  টাইমস অব ইন্ডিয়ার ’টেনস অব থাউজ্যান্ডস অ্যাটেন্ড বাংলাদেশ অপজিশন র‍্যালি কলিং ফর গর্ভণমেন্ট টু রিজাইন’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি পড়লে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দেখে আনন্দিত হওয়ার কথা বলতেন কি না, বলা মুশকিল। রাষ্ট্রীয় খরচে বিজেপি নেতাকে আতিথেয়তা দিয়ে আমাদের সরকার নিশ্চয়ই প্রমাণ করল যে নির্বাচনকালে সরকার নির্বাচনকে প্রভাবিত করার মতো কিছু করে না!


পঙ্কজ সরণের সফরে সরকারের হয়তো কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই। কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে একজন বিদেশির মন্তব্য হস্তক্ষেপতুল্য কি না, তা বিচারের দায়িত্ব নিশ্চয়ই অস্বীকার করা যায় না। বাংলাদেশের যে নির্বাচন বিরোধীদের বর্জনপীড়িত এবং ক্ষমতাসীনদের আসন ভাগাভাগির প্রহসন হিসাবে দেশে–বিদেশে সমালোচিত হচ্ছে,তখন আগবাড়িয়ে তাকে ’গণতন্ত্রের নিজস্ব পদ্ধতি’ অভিহিত  করে আগাম ’স্বীকৃতি’ দেওয়ার কথা তিনি কেন বলবেন? স্মরণ করা যেতে পারে যে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সবাই যখন নির্বাচন বর্জনের পথে তখন পঙ্কজ সরণ ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন এবং তাঁর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এসে জাতীয় পার্টি প্রধান জেনারেল এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। 


জাতীয় পার্টি এর আগে ২০০৬ সালে  আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে মহাজোটে গঠন করেছিল। তা সত্ত্বেও তারা স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় প্রতিদ্বন্দিতা থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত  ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ৪০টি আসন ছেড়ে দিয়ে তাদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করে, যা নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে। জেনারেল এরশাদ তিনটি আসনে তাঁর মনোনয়পত্র প্রত্যাহারের চিঠি দিলেও লালমনিরহাটের  রিটার্নিং অফিসার তা গ্রহণ করেন নি এবং রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে রওশন সংসদে বিরোধী দলের নেতার আসনে আসীন হন। এরশাদ তাঁর জীবদ্দশায় সত্যটা জানিয়ে গেছেন যে সেই চাপের মুখে তাঁর দল নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হয়। 


ওই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন ১৩ ডিসেম্বর ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়ে যান। এর ফলে দেশের ভোটারদের এক–তৃতীয়াংশ ভোটাধিকার প্রয়োগের কোনো সুযোগই পাননি। বাকি আসনগুলোতে অবশ্য প্রতিদ্বন্দিতা দেখানোর সাধ্যমতো চেষ্টা চলেছিল। যে কারণে তখনকার পুর্তমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান, ঢাকায় সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে হেরে যান। একটিমাত্র বিষয় ছাড়া এবারের আয়োজনকে ২০১৪ সাল থেকে ফারাক করা আসলেই কঠিন। ফারাকটি হচ্ছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দল অনুমোদিত স্বতন্ত্রের। সেবারও ১৭টি দলকে অংশ নেওয়াতে পেরেছিল সরকার, এবার তা বেড়ে হয়েছে ২৯, যার সবই মূলত কাগুজে দল। এখন তাই জোর সমঝোতার ভাগাভাগিকে প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ করে তোলায়। 


ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মতো দেশটির গণমাধ্যমে বুদ্ধিজীবি ও সাংবাদিকেরা যে সব মতামত প্রকাশ করছেন, তা প্রায় সবই তাদের সরকারি দৃষ্টিভঙ্গী ও নীতির পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছু নয়। আরও বিস্ময়ের কথা হচ্ছে, তাঁরা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি বহুমত ও সহনশীলতার নীতিকে অগ্রাহ্য করে প্রতিবেশী দেশের স্থিতিশীলতা , অন্য কথায় বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকাকে অপরিহার্য গণ্য করছেন। এটা শুধু ভারতের জাতীয় স্বার্থকেন্দ্রিক হলেও তাকে তাঁরা বাংলাদেশের জন্যও অপরিহার্য হিসাবে প্রচার করছেন। 


কয়েকটি নমুনা এখানে তুলে ধরা যায়। ফার্স্ট পোস্ট –এ সাংবাদিক উৎপল কুমার লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বোঝা উচিত বাংলাদেশে তাদের গণতন্ত্রের পরীক্ষার ফল হবে মধ্যপ্রাচ্যের ’আরব বসন্তের’ মতো দূর্যোগ। তাঁর মতামত প্রকাশের দুই দিন পরই রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা অভিযোগ করেন যে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের পর বাংলাদেশে আরব বসন্তের মতো অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে।  


দ্য প্রিন্ট –এ সাংবাদিক দীপ হালদার লিখেছেন, সংখ্যালঘুদের জন্য আওয়ামী লীগ হচ্ছে ডুবন্তের আশা। তিনি জামায়াতকে পুর্নবাসনের চেষ্টার অভিযোগ তূলেছেন। ’হাসিনা সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে না পারলে উদারবাদী কন্ঠগুলো স্তব্ধ হয়ে যাবে’ এমন মন্তব্য করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ন্তজাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ি। সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ বিপন্ন হবে, যা দক্ষিণ এশিয়ার সংহতির জন্যও একটি সমস্যা। 


এসব ব্যাখ্যা একদিকে যেমন বিভ্রান্তিকর, তেমনি বাইরে থেকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা । তাঁদের বক্তব্যের এক নম্বর সমস্যা হলে তাঁরা ধরেই নিয়েছেন, গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবন মানেই ক্ষমতার পালাবদল ঘটবে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র বিরোধীদলকে সমর্থন করছে এবং তাদের ক্ষমতায় বসাতে চায়। তৃতীয়ত, সরকারবিরোধী আন্দোলন মানেই জামায়াতে ইসলামীর পুর্নবাসন এবং সেই সূত্রে ইসলামি জঙ্গীবাদের পুনরুত্থান। যদিও এগুলোর কোনোটিই বস্তুনিষ্ঠ বা তথ্যভিত্তিক নয়; বরং তা তাদের রাজনৈতিক মনোভাব ও অভিমতের প্রতিফলন। সর্বোপরি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিরোধীদলকে সমর্থনের অভিযোগ করার কারণে ভারত নিজেই ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ নিচ্ছে, সেটা কি তারা অস্বীকার করতে পারে?  


তাহলে কি কথিত স্থিতিশীলতার জন্য গণতন্ত্র বর্জনীয়? বাংলাদেশে মূলধারার রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার বিপদ যেমন অনস্বীকার্য, ভারতে কি তা উপেক্ষণীয়? সাম্প্রদায়িক রাজনীতিই তো ভারতে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সেখানকার মূলধারায় প্রাধান্য বজায় রেখেছে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় তার কি কোনো প্রভাব নেই? বাংলাদেশের নির্বাচন শুধুমাত্র বাংলাদেশিদের বিষয় এ কথা যে তাঁদের বলার কথা নয়, সেটা কি তাঁরা বুঝতে রাজি আছেন?  


(২১ ডিসেম্বর, ২০২৩–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...