সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সুখের সূচক নাকি অসুখের ?


অনেকদিন ধরে ভালোই তো আছি ধরণের একটি বোধ অনেকের মধ্যে জেঁকে বসে আছে। এমন একটি আবহ দেশে বজায় থাকুক সেটা সব সরকারের মতই আমাদের সরকারও চায়। আর, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা চ্যানেলগুলোতেও এরকম একটি ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টাও বেশ লক্ষণীয়। বিশ্বে কোন দেশের নাগরিক কতটা ভালো আছেন, নিজেদের কতটা সুখী ভাবেন তার ওপর বছর কয়েক ধরে একটি বার্ষিক সমীক্ষা প্রকাশ করছে জাতিসংঘ। এবারের সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে ১৪ মার্চ বুধবার। এতে দেখা যাচ্ছে ১৫৫ টি দেশের মধ্যে ফিনল্যান্ড হচ্ছে সবচেয়ে সুখী, আর সবচেয়ে কম সুখী দেশ হচ্ছে বুরুন্ডি। বাংলাদেশ আগেও যে খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল তা নয়। কিন্তু, এবছরে তার আরও অবনতি হয়ে দাঁড়িয়েছে ১১৫তে।

বাংলা কাগজগুলোর অনেকেই খবরটি অবশ্য প্রকাশযোগ্য মনে করেনি। ইংরেজি একটি পত্রিকার শিরোনামের অনুবাদ দাঁড়ায় বাংলাদেশ ভারত এবং শ্রীলংকার চেয়ে সুখী । শিরোনামটি থেকে ধারণা করা অন্যায় হবে না আমরা সবকিছু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখতেই পছন্দ করি। খবরটিতে আমাদের দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশিরা কারা এগিয়ে আছেন সেগুলোর দিকে নজর না দিয়ে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি যারা আমাদের থেকে পিছিয়ে আছে তাদের দিকে। অথচ, অপ্রিয় বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিলে শিরোনামটি হতে পারতো বাংলাদেশ ভুটান, নেপাল এবং পাকিস্তানের চেয়ে অসুখী। নেপালের অবস্থান আমাদের চেয়ে চৌদ্দ ধাপ ওপরে, ভুটান আঠারো ধাপ , আর পাকিস্তান চল্লিশ ধাপ।

আগের বছরে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১০তম, এবারে ১১৫। যে টি উপাদানের ভিত্তিতে একটি দেশ বা জাতির সুখ এর মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে : মাথা পিছু আয়, সামাজিক নিরাপত্তা, জনগণের সুস্থ জীবনের প্রত্যাশা, সামাজিক স্বাধীনতা, ঘুষ ও দুর্নীতির হার। ২০০৯-১০ সালের তুলনায় এসব উপাদানের গড়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে প্রায় ০.৪৯ শতাংশ। জাতিসংঘের এই সমীক্ষার যথার্থতা নিয়ে বাংলাদেশে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলেছেন বলে এখনও আমার চোখে পড়েনি। সরকারের মন্ত্রীরা কি তাহলে এর কোনো ব্যাখ্যা দেবেন? ক্ষমতায় আসার শুরুতে আমরা যতটা সুখী ছিলাম এখন ততটা নই, এমন কথা নিশ্চয়ই উন্নয়নের রাজনীতিবিরোধী ষড়যন্ত্র!

আমরা জানি আমাদের মাথাপ্রতি আয় বেড়েছে, নিম্ন-আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ ঘটেছে। জাতীয় উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার বছরওয়ারি বেড়ে এখন সাত শতাংশের ঘরে।আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছিল। মাছ উৎপাদন, সবজির ফলন এসব কিছুতে আমরা বিশ্বের চর্তূথ নয়তো শীর্ষ দশের মধ্যে। তবে, আমরা এমন হিসাবও দেখি যাতে প্রমাণ হয় আমাদের রাস্তা নির্মাণের ব্যয়, রেলপথ সংস্কার কিম্বা  সেতু নির্মাণের খরচ বিশ্বের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ। ব্যাংকের ঋণখেলাপিতেও আমরা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক প্রতিবেশীর চেয়ে এগিয়ে। এগুলো নিশ্চয়ই অনেকের (সংখ্যায়, শতাংশে নয়) ভালো থাকার রসদ।

অর্থনীতিবিদরা এর ব্যাখ্যা জানলেও সবসময়ে বলেন না। তবে, সম্প্রতি বণিক বার্তায় অধ্যাপক এম এ তসলিম তাঁর এক নিবন্ধে ওই যৌক্তিক ব্যাখ্যাটি তুলে ধরেছেন।  নিবন্ধটিতে তিনি সরকারী প্রতিষ্ঠান পরিসংখ্যান ব্যুরোর ( বিবিএস) জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যানের কিছু ফাঁক-ফোকরের কথা স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফলগুলো কোথায় হারাল?, বণিক বার্তা ৬ মার্চ, ২০১৮) । তিনি বিবিএস এর করা হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভের (এইচআইইএস ২০১৬) সম্প্রতি প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্টের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে মানুষের প্রকৃত আয় আসলে কমেছে। অধ্যাপক তসলিম লিখেছেন মাথাপিছু আয় ও ভোগে পরিবর্তনের যে তথ্য জাতীয় হিসাবের ডাটা থেকে পাওয়া যায়, তা এইচআইইএস ২০১৬ সালের দেয়া তথ্যের বিপরীত। এইচআইইএস ও জাতীয় হিসাবের মধ্যে পার্থক্য এত বেশি যে, এটিকে সাধারণ পরিসংখ্যানগত ভুল বা হিসাবের ভিন্ন পদ্ধতির তারতম্য হিসেবে গণ্য করা বেশ কঠিন। তাঁর বিশ্লেষণে ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে পারিবারিক প্রকৃত আয় আদতে কমেছে ১১ শতাংশ। একই সময়ে প্রকৃত ভোগও কমেছে প্রায় একই হারে। কিন্তু বিবিএসের জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের প্রকৃত জাতীয় আয় ২০০৯-১০ থেকে ২০১৫-১৬ সালের মধ্যে বেড়েছে ৪২ শতাংশেরও বেশি, যে সময় প্রকৃত মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩১ শতাংশ। অন্যভাবে বললে, জাতীয় পর্যায়ে গড়ে মোট জনসংখ্যার প্রতিটি সদস্য এ ছয় বছরে প্রকৃত আয় ৩১ শতাংশ বাড়াতে অবদান রেখেছে। আয়ের এ বৃদ্ধির সঙ্গে একই হারে বেড়েছে প্রকৃত মাথাপিছু ভোগ। কিন্তু, এইচআইইএস ২০১৬ অনুযায়ী পারিবারিক পর্যায়ে প্রতিটি ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে আয় করেছে (পারিবারিক আয় পারিবারিক আকার দিয়ে ভাগ করে পাওয়া) ২০১০ সালের আয়ের তুলনায় ২ শতাংশ কম এবং ভোগের জন্য প্রত্যেকের প্রকৃত ব্যয় কমেছে প্রায় ১ শতাংশ।

চলতি বছরের শুরু থেকেই আমার মাথায় একটি প্রশ্ন ঘুরছে। প্রশ্নটির পটভূমিটা ব্যাখ্যা করে নেওয়া ভালো। ব্রিটেনে বছরের শুরুতে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেল ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার পর এই প্রথমবারের মত দেশটির গড় মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, অর্থনীতিবিদরা বললেন যে জিনিষপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির হার এখনও মজুরিবৃদ্ধির হারের চেযে বেশি। তাঁদের কথায় এই ফারাক, যাকে তাঁরা মিজারি গ্যাপ বলে অভিহিত করেন (র্দূভোগের ব্যবধান), দূর হওয়া না পর্যন্ত জীবনযাত্রায় আগের স্বাচ্ছন্দ্য ফিরেছে এমন কথা বলা যাবে না।  প্রশ্নটি হলো অর্থনীতিবিদরা কেন একটি মিজারি ইনেডেক্স বা কষ্টের সূচক প্রকাশ করেন না?

 

অধ্যাপক তসলিম এইচআইইএস এর তথ্য উদ্ধৃত করে দেখিয়েছেন দেশে জনপ্রতি পুষ্টিগ্রহণের হার ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১০ এ কমেছিল পাঁচ শতাংশ, আর ২০১৬ তে কমেছে আরও নয় শতাংশ। দেশের মোট শ্রমশক্তির পঁচাশি শতাংশ যে অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সেই খাতে মজুরি কমেছে সাড়ে সাত শতাংশ। দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য এখন সর্ব্বোচ্চ।

 

আরও কিছু সর্বসাম্প্রতিক বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল হতাশাজনক। যার মধ্যে খুবই গুরুত্বর্পূণ হচ্ছে ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (ডব্লিউজেপি)র আইনের শাসন সূচক-২০১৭।  বিশ্বের মোট ১১৩টি দেশের মধ্যে আইনের শাসনের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০২ নম্বরে। এখানেও আমরা দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশিদের মধ্যে নেপাল, শ্রীলংকা এবং ভারত আমাদের থেকে এগিয়ে।

 

ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট কোনো দেশে আইনের শাসন কেমন তার মান নির্ধারণে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয় তার মধ্যে আছে মৌলিক অধিকার, দূর্নীতি, সরকারের স্বচ্ছ্বতা, বিচারব্যবস্থার মত বিষয়গুলো। আবার, মৌলিক অধিকারের মধ্যে আছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সংগঠন এবং ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা, জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্নগুলো । সুখী দেশের তালিকা এবং আইনের শাসন সূচকের অবস্থান এই দুটির ক্ষেত্রেই মৌলিক অধিকার এবং দূর্নীতি যে গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রাখে সন্দেহ নেই। এগুলোর ক্ষেত্রে আমরা যে কতটা ভালো আছি সেকথা জানার জন্য অবশ্য বিদেশি কোনো সূচক দেখার প্রয়োজন পড়ে না।

 

বৈশ্বিক সুখ প্রতিবেদন তৈরির জন্য জনমত  জরিপকারী প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ যে সমীক্ষা চালায় তাতে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব চিহ্নিত করতে তারা যেসব প্রশ্ন করেছে সেগুলো উল্লেখ করেই শেষ করবো। তারা জানতে চেয়েছিল গতকাল আপনার দিনটিতে কি প্রচুর ভালো লাগা ছিল? অনেক হেসেছেন? অনেক আনন্দ করেছেন? অনেক বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন? দিনটা কি অনেক বিষাদময় ছিল? অনেক রাগ হয়েছিল? নিজেকে এসব প্রশ্ন করার পর কার মনে হবে আহ ভালোই তো আছি?

(১৮ মার্চ , ২০১৮ প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের কলাম।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...