সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোটা সংস্কারের যুবকম্প ঘিরে কিছু প্রশ্ন

কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে তিন দিনের টানা উত্তেজনার পটভূমিতে প্রধানমন্ত্রী কোনো কোটাই রাখার প্রয়োজন নেই বলে যে মন্তব্য করেছেন, তার আলোকে সরকারি আদেশ কী জারি হয়, তা জানার জন্য আমাদের হয়তো আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের যে ইতি ঘটেছে, তাতে সন্দেহ নেই। সুতরাং ঘটনাক্রমের স্মৃতি তাজা থাকা অবস্থায়ই এর একটা পর্যালোচনা প্রয়োজন।
এই আন্দোলনকারীদের প্রথম বৈশিষ্ট্য তাঁদের বয়স। তাঁরা সারা বিশ্বে ‘মিলেনিয়ালস’ বা সহস্রাব্দের প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত। দ্বিতীয় প্রযুক্তি তাদের হাতের মুঠোয়। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তাঁদের অনেকেই হাঁটতে শুরু করার আগেই মোবাইল ফোনে ছড়াগান শুনে অথবা কার্টুন দেখে অভ্যস্ত। প্রচলিত রীতিনীতি, আচারব্যবস্থা, যোগাযোগমাধ্যমের ওপর এই প্রজন্ম যে খুব নির্ভরশীল নয়, তার প্রমাণও তারা প্রতি পদে দিয়েছে। গভীর রাতে মোবাইল ফোনে তাদের সম্প্রচারের ক্ষমতাও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোকে যে ধরনের জমায়েতের জন্য দিনের পর দিন, কখনো কখনো মাসের পর মাস সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হয়, বিজ্ঞাপন, পোস্টার, ব্যানারে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়, শত শত বাস-ট্রাক ভাড়া করতে হয়, তার বিপরীতে তারা দেখিয়ে দিয়েছে দ্রুততম সময়ে কীভাবে সংগঠিত হওয়া যায়, একটা আলোড়ন সৃষ্টি করা যায়।
অক্সফোর্ড ডিকশনারি গত বছরের আলোচিত শব্দ হিসেবে যে ‘ইয়ুথকোয়েক’-এর কথা বলেছিল, বস্তুত বাংলাদেশে আমরা সেই যুবকম্পই প্রত্যক্ষ করলাম। ইউরোপের যুবকম্পে অবশ্য তরুণেরা তাঁদের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন ঘটাতে যতটা না রাজপথে নেমেছেন, তার চেয়ে বেশি হয়েছেন ভোটকেন্দ্রমুখী। তবে তাঁদের বড় মিলটা হচ্ছে তাঁদের চাওয়া বা আকাঙ্ক্ষায়। তাঁরা চান সামাজিক ন্যায্যতা। কোটা সংস্কারের দাবির মূলে আছে সেই ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনা। পরপর তিনটি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন চালু কোটাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে তার ন্যায়সংগত পরিবর্তনের সুপারিশ করলেও সরকারগুলো তা উপেক্ষা করে এসেছে। এর সঙ্গে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি, বেসরকারি খাতের সঙ্গে সরকারি চাকরির বেতন-ভাতার ব্যবধান এবং সামগ্রিক উন্নয়ননীতিতে বৈষম্য কমার বদলে বাড়তে থাকার কারণে সহস্রাব্দের প্রজন্ম ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় উদ্বিগ্ন হয়ে অস্থিরতায় ভুগবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। কোটা সংস্কারের আন্দোলন এখন এসব বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের নজর দিতে যে বাধ্য করছে, সেটাই আন্দোলনকারীদের সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
কোটা সংস্কারের দাবির এ আন্দোলনটি তরুণ প্রজন্মের হলেও এটি অন্য অনেকের জন্যই ছিল একটি কঠিন পরীক্ষার বিষয়। সরকার, ক্ষমতাসীন দল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা ছিল দৃশ্যমান; যে কারণে তারা যথেষ্ট সমালোচিতও হয়েছে। সমালোচিত হয়েছে গণমাধ্যমও। তবে যাদের কোনো দৃশ্যমান ভূমিকা দেখা যায়নি, সেই সব ছাত্রসংগঠন ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল কি তাদের দায় এড়াতে পারে? কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ সরকারসমর্থক ছাত্রসংগঠনে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেলেও সংগঠন পরিচালনার মতো নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা তাঁদের ছিল না। সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় এক মাস অপেক্ষার প্রস্তাবে সম্মত হয়ে এসেও তাঁরা তাই সেটা অন্যদের মানাতে পারেননি। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে তিনি এক মাসের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দেওয়ার পরও অর্থমন্ত্রীর বাড়তি সময় নেওয়ার ইঙ্গিত এবং কৃষিমন্ত্রীর রাজাকার অভিধার অপপ্রয়োগ যে আন্দোলনকারীদের আরও উত্তেজিত করেছে, সন্দেহ নেই।
কার্যকর বিরোধী দলবিহীন সংসদে যেহেতু জবাবদিহির অবকাশ নেই, সেহেতু ক্ষমতাসীন দল ক্রমশ অতি-আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে, সেটাই স্বাভাবিক। এ ধরনের রাজনৈতিক বাস্তবতায় অরাজনৈতিক আন্দোলনকে উপেক্ষা করার প্রবণতাও তাই অপ্রত্যাশিত নয়। তারপরও অতীতে বিভিন্ন সময়ে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের কর্মীদের দিয়ে ছাত্র আন্দোলন দমনের ব্যর্থ চেষ্টার কৌশল অনুসরণ যে ভুল ছিল, আশা করি দলটি তা উপলব্ধি করবে।
এই আন্দোলনের আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় ছিল সরকার ও ক্ষমতাসীন দল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক সমিতির অভূতপূর্ব মতৈক্য এবং সমন্বয়। সরকার যতক্ষণ কোটা সংস্কারের দাবিকে অযৌক্তিক অভিহিত করে আন্দোলনে সরকারবিরোধীদের ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব প্রচার করল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক সমিতিও ততক্ষণ প্রায় একই পথে হাঁটল। ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডব বন্ধের অনুরোধ জানাতেও তারা তখন আগ্রহী হলো না। ভিসির বাসভবনে অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীরা বহিরাগত বলার পরও শিক্ষক সমিতির আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে আন্দোলনকারীদের প্রতি দেশে সরকারবিরোধী অস্থিতিশীলতার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করা হলো। অথচ রাত পোহালে যখন জানা গেল প্রধানমন্ত্রী কোটাব্যবস্থাই বাতিল করতে যাচ্ছেন, তখন তাঁরা আন্দোলনের প্রতি সমর্থনের কথা জানালেন, পুলিশকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে নিরুৎসাহিত করে বিবৃতি দিলেন।
আন্দোলন দমনে পুলিশের পাশাপাশি সরকারসমর্থক ছাত্রলীগকে দেখা গেলেও শিক্ষাঙ্গনের পরিচিত অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর কোনোটিই দৃশ্যমান ছিল না। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ছাত্রসংগঠন কি তাহলে কোটার সংস্কার চায় না? বিএনপির সহযোগী ছাত্রদল ক্যাম্পাসছাড়া হওয়ার পর এখনো যে ফিরতে পারেনি, সেটা আমরা জানি। কিন্তু অন্যরা কোথায় গেল? নাকি ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের কাছে মার খেয়ে তারাও চিরতরে ক্যাম্পাস ছেড়েছে? অবশ্য জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতায় আসার আশঙ্কায় বন্ধুপ্রতিম আওয়ামী লীগকে বিরক্ত না করার নীতি অনুসরণে অভ্যস্ত দলগুলোর সহযোগী ছাত্রসংগঠনেরও একই নীতি অনুসরণের সম্ভাবনাই প্রবল।
এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেকটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে অতীতের ছাত্র আন্দোলনগুলোর মতো এখানে গণতান্ত্রিক অধিকারবিষয়ক কোনো দাবি উত্থাপিত হয়নি। প্রায় আট বছর ধরে ছাত্রলীগের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের পরিণতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ভিন্নমতের স্থান নেই বললেই চলে। এমনকি শিক্ষক ও গবেষকেরাও এখন একাডেমিক প্রয়োজনে ভিন্নমত প্রকাশে বিরত থাকেন। হয়রানি ও চাকরিচ্যুতির খড়্গ তাঁদের মাথার ওপরে ঝুলছে। গণতন্ত্রচর্চার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য অপরিহার্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবির প্রতি নতুন প্রজন্মের এই অনাগ্রহের ব্যাখ্যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরাই দিতে পারবেন। তবে এটুকু বলা যায় যে পরিচিত ছাত্রসংগঠনগুলো এই আন্দোলনে যুক্ত থাকলে ডাকসুসহ ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচনের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হতো। ডাকসু ও হল সংসদগুলো সক্রিয় থাকলে হলগুলোয় রাতের বেলায় আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য কারও ওপর জবরদস্তি করা সম্ভব হতো না।
নতুন প্রজন্মের এই আন্দোলন গণমাধ্যমের জন্যও ছিল বড় পরীক্ষা এবং স্বীকার করতেই হবে যে সেই পরীক্ষায় অনেকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের অনেকেই গণমাধ্যমের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রের মালিক কিংবা সম্পাদকীয় নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আন্দোলনকারীদের স্বাধীনতাবিরোধী অভিহিত করা শিরোনামে যে রাজনৈতিক পক্ষপাতের প্রতিফলন, সে কথা তো আর অস্বীকার করা চলে না। দুঃখজনকভাবে কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধু লাঞ্ছিতও হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের অবস্থানের কারণে এই নিগ্রহ সাংবাদিকতা পেশারই অনুষঙ্গ। তবে ডিজিটাল প্রজন্মের মোবাইল ফোনের ক্ষমতার যে কার্যকারিতা এবার দেখা গেল, আশা করি তার নিরিখে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো অচিরেই তাদের নীতিমালা ও কাজের ধারা পর্যালোচনায় মনোযোগী হবে। নাহলে প্রাসঙ্গিকতা হারানো শুধু সময়ের ব্যাপার।
গণমাধ্যমের সাহসী ভূমিকা প্রত্যাশা করে যাঁরা এর সমালোচনায় মুখর হয়েছেন, তাঁরা সম্ভবত ভুলে গেছেন যে গণতন্ত্র দীনতা থেকে মুক্তি না পেলে সংবাদমাধ্যম বিচ্ছিন্নভাবে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। সন্দেহ নেই দলীয় লেজুড়বৃত্তি, ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধাবাদিতার দোষে অনেকেই দুষ্ট। বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতা সে কারণে আরও বেশি প্রতিকূলতার মুখে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন উঠলে সরকার শুধু টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার সংখ্যার কথা বলে বহুত্ববাদিতা প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু গণতন্ত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মানে হচ্ছে অপ্রিয় কথা বলতে দেওয়া এবং শুনতে পারার যে সহনশীলতা, সেটা কিন্তু অনেক আগেই হাওয়া হয়ে গেছে।
(১৪ এপ্রিল, ২০১৮ প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের কলাম।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

How to Describe the Awami League Accurately?

In an article titled ‘How Not to Describe the Awami League’ , published in this paper, British journalist David Bergman rightly underscores the importance of accuracy in labeling a political party—particularly when such labels carry potential legal consequences. Those familiar with Bergman’s work over the years know that he has consistently taken on politically sensitive and controversial subjects, often at significant personal and professional cost. His courage and commitment to journalistic integrity deserve recognition. Bergman is correct in asserting that “while serious criticisms of the Awami League are both valid and necessary, they must be proportionate and grounded in fact.” His analysis focuses primarily on the legal validity and appropriateness of labeling the Awami League as “fascist” or “Nazi.” He argues that comparing the party to the Nazi regime trivialises the scale of Nazi atrocities and misrepresents the complexities of Bangladeshi politics. Indeed, any historical comp...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...