সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দূর্বল গণতন্ত্রে নির্বাচন নয়, ক্ষমতা ভাগাভাগিই শ্রেয়


দূর্বল গণতন্ত্রে নির্বাচন নয়, ক্ষমতা ভাগাভাগিই শ্রেয় পাশ্চাত্যের উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের এই নতুন তত্ত্ব অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু, না এটি কারো কোনো প্রলাপ নয়, বরং নতুন ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন)। প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি না গড়ে নির্বাচনী গণতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল যে ব্যর্থ হয়েছে সেটি মেনে নিয়েই ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পথ হিসাবে এই নতুন তত্ত্ব হাজির করেছে এলএসই-অক্সর্ফোড কমিশন অন স্টেট ফ্র্যাজিলিটি। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশনে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস (এলএসই) এবং অক্সর্ফোড ছাড়াও আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন এবং স্টানর্ফোড বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক এবং উন্নয়ন তহবিলের ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ। এই কমিশনের সুপারিশ হচ্ছে দূর্বল বা ঠুনকো গণতন্ত্রে প্রয়োজনে নির্বাচন বিলম্বিত করে প্রতিদ্বন্দীদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।

এস্কেপিং দ্য ফ্র্যাজিলিটি ট্র্যাপ র্শীষক প্রতিবেদনটি গত ১৯ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশসহ চৌদ্দটি দেশের ওপর পরিচালিত গবেষণা পর্যালোচনা ছাড়াও বিপুলসংখ্যক নীতিনির্ধারক, গবেষক, ব্যবসায়ী নেতা এবং বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে কমিশন তার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আর হ্যাঁ, কমিশনের কাজের অংশ হিসাবে ডেভিড ক্যামেরন গতবছরের এপ্রিলে বাংলাদেশে গিয়ে রাজনীতিক, বণিক সভা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছিলেন। কমিশন বাংলাদেশ ছাড়াও যেসব দেশে গবেষণা চালিয়েছে সেগুলো হচ্ছে লেবানন, ইথিওপিয়া, মিয়ানমার, সিয়েরালিওন, বুরুন্ডি, লিবিয়া, আফগানিস্তান, কঙ্গো,রুয়ান্ডা, পাকিস্তান, সুদান, আলজেরিয়া এবং দক্ষিণ সুদান।

বলে রাখা ভালো, দূর্বল গণতন্ত্র হিসাবে বাংলাদেশ আলোচিত হলেও এই কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা কোনো নির্দিষ্ট দেশকেন্দ্রিক নয় এবং ভঙ্গুর দেশের কোনো তালিকাও এতে নেই। তবে, দেশগুলোর উপসর্গের মিল অনস্বীকার্য্য। রাজনীতি ও নিরাপত্তার রুপান্তর এবং অর্থনীতির রুপান্তর শিরোনামে দুই ভাগে কমিশন মোট যে বারো দফা সুপারিশ পেশ করেছে তাতে বলা হয়েছে নির্বাচন প্রথম নয়, প্রথমে আপোষরফা বা সমঝোতাই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, গণতন্ত্র সংহত করায় বহুদলীয় নির্বাচনে উৎসাহিত করার কথাও এতে রয়েছে। অন্যান্য সুপারিশগুলোর মধ্যে তাঁরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আরও যেসব বিষয় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন, সেগুলো হচ্ছে : আদর্শবাদিতা নয়, বাস্তবতা; আর্ন্তজাতিক নয়, স্থানীয় অগ্রাধিকার; সরকারকে পাশ কাটিয়ে নয়, সরকারের সঙ্গে কাজ করা এবং প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং জাতি গঠন।

সুশাসনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ গড়ে তোলা ও সেগুলোর সক্ষমতা তৈরি ছাড়া ঠুনকো গণতন্ত্রে নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী পক্ষের সব কিছু নিয়ন্ত্রণের অধিকার লাভ (উইনার টেকস অল) অস্থিরতা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে উল্লেখ করে কমিশন প্রয়োজনে নির্বাচন বিলম্বিত করে ক্ষমতা ভাগাভাগির সমঝোতার কথা বলেছে। ক্ষমতা ভাগাভাগির সরকার অন্তৃর্ভুক্তিমূলক হবে বলে মন্তব্য করে তাঁরা বলছেন দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপ বরং বিভাজনকে আরও উসকে দিতে পারে।

অতীতে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের অনুসৃত নীতির ব্যর্থতার মূল্যায়নে বলা হয়েছে সাধারণভাবে যে চর্চা চালু ছিল তা হচ্ছে সংকটের ক্ষেত্রে দ্রুত প্রতিক্রিয়া। ইরাক, লিবিয়া, মিশর, জায়ার, দক্ষিণ সুদান এবং আফগানিস্তানে হঠাৎ করে আবির্ভূত গণতন্ত্র (পপ আপ ডেমোক্রেসি) কাজ করেনি, বরং তা আরও ভাঙ্গণের কারণ হয়েছে বলে এই কমিশন মনে করে। গণতন্ত্র যে বাইরে থেকে সেনাবাহিনী আর পরামর্শক পাঠিয়ে রপ্তানির বিষয় নয় এই উপলব্ধি পাশ্চাত্যের নীতিনির্ধারকদের হয়ে থাকলে তাকে ভালো লক্ষণ বলে মানতেই হবে। তবে, এই হঠকারি এবং প্রাণঘাতি রোমন্টিকতার কারণে যে অসংখ্য নিরীহ মানুষের জীবন গেছে তার জবাবদিহিতা কে করবে তার কোনো উত্তর এতে নেই।

বিশ্বজুড়ে দারিদ্র হ্রাস, শিশুমৃত্যু কমানো , প্রাণঘাতি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে টিকাদান, সুপেয় পানি ও পয়:ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং শিক্ষার প্রসারে সাফল্যগুলোর কথা উল্লেখ করে কমিশন বলছে এসব অগ্রগতি সত্ত্বেও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পার হয়ে গেলেও বিশ্বে এখনও নব্বুই কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে জীবনযাপন করছেন। তাঁদের মতে রাষ্ট্রের দূর্বলতাই বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোকে ত্বরান্বিত করছে যার মধ্যে আছে দারিদ্র, গণ অভিবাসন, সন্ত্রাসবাদ এবং মানবপাচারের মত বিষয়। অনেক দেশই সংঘাত এবং র্দূনীতির কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। অনেক দেশেই নাগরিকদের একটা বড় অংশের চোখে সরকারের বৈধতায় ঘাটতি রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতা, কর্মসংস্থান, মৌলিক সেবাগুলো দিতে পারার সামর্থ্যহীনতা এবং বেসরকারী খাতের যথাযথভাবে কাজ করার পরিবেশের অভাব এগুলোকে দূর্বলতা বা ভঙ্গুর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হিসাবে উল্লেখ করে তাঁরা বলছেন প্রায়শই এসব দেশকেই র্দূবল বা ঠুনকো গণতন্ত্র বলে অভিহিত করা হয়। বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশই এখন বাস করেন র্দূবল গণন্ত্রগুলোতে, যা তাঁদের ধারণা, ২০৩০ সাল নাগাদ বেড়ে পঞ্চাশ শতাংশে পৌঁছাবে।

কমিশন তার সুপারিশে অবশ্য বলেছে যে এসব দেশে বাইরে থেকে কোনো সমাধান চাপিয়ে দিলে তাতে সুফল পাওয়া যাবে না। বরং, সমাধান আসতে হবে ভেতর থেকে। এজন্য আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সাহায্যকে নির্দিষ্ট নীতির শর্তভিত্তিক না করে অর্থনৈতিক সুশাসন - অর্থাৎ সততা, বাস্তবনির্ভর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আর্ন্তজাতিক শক্তিগুলোর প্রতি এমন সরকার গঠনে সহায়তার কথা বলা হয়েছে যেখানে ক্ষমতা ভারসাম্যর্পূণ (চেক অ্যান্ড ব্যালান্স থাকবে) হবে, আইনের শাসন এবং সংখ্যালঘুর সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

কমিশন সফল গণতন্ত্রে উত্তরণের দৃষ্টান্ত হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার কথা বলেছে। অত্যন্ত জটিল এবং স্পর্শকাতর বিভাজন সত্ত্বেও ক্ষমতা ভাগাভাগির সমঝোতা যে কার্যকর সুশাসন, জনজীবনে নিরাপত্তা, আইনের শাসন এবং প্রবৃদ্ধি আনতে পারে তার দৃষ্টান্ত হিসাবে এতে ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ডের দৃষ্টান্তও দেওয়া হয়েছে। উদাহরণ আছে আরও কয়েকটি দেশের। স্থানীয় বাস্তবতার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণের বিষয়টি দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাবটি যে ইতিবাচক সন্দেহ নেই।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যুক্তরাজ্যের সরকার ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল সময়কালে গণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করার কাজ শুরু করে, যখন  র্দূবল গণতন্ত্রগুলোতে দেশটির বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ আনুপাতিকহারে বেড়েছে। সেসময়ে উন্নয়নের ফোকাস সরিয়ে গণতন্ত্রের কাঠামো নির্মাণেই মনোনিবেশ করেছে। উল্লেখ্য, ওই সময়কালে ক্যামেরন ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। একইসময়ে যেসব দেশে ব্রিটিশ বৈদেশিক সহায়তা বেড়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ক্যামেরন কমিশন বলছে দূর্বল রাষ্ট্রে আর্ন্তজাতিক সহায়তার লক্ষ্য হতে হবে তাদেরকে ছোট করা বা পাশ কাটানো নয়, বরং বৈধ এবং সক্ষম প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।

কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের সময়টিও লক্ষ্যণীয়। ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক এবং আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফ এর বার্ষিক সভায় উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের মিলনমেলার সময়ে এসব সুপারিশমালা তুলে ধরা হলো। বাংলাদেশের উন্নয়ন নীতি, অগ্রগতি ও সম্ভাবনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতসপ্তাহে যে প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতা করলেন সেই ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (ওডিআই) এর কথা এখন আমরা অনেকেই জানি। ব্রিটিশ বৈদেশিক সহায়তা কার্য্যক্রমে নীতিগত গবেষণার জন্য এই ওডিআই সুপরিচিত। ওডিআই এই ফ্র্যাজিলিটি কমিশনের রিপোর্টকে সমর্থন করে বলেছে তাদের মূল্যায়ন যর্থাথ। ফ্র্যাজিলিটি কমিশনের রিপোর্ট সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটি বলছে তাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন এখন আরও বেশি জরুরি। উন্নয়ন অর্থায়নে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদেরকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তারা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটেনে ক্ষমতায় ডেভিড ক্যামেরনের রক্ষণশীল দল যেহেতু ক্ষমতায় সেহেতু ব্রিটিশ সরকারের কাছে ফ্র্যাজিলিটি কমিশনের সুপারিশমালা বিশেষ গুরুত্ব পাবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে সুপারিশের অন্যতম প্রধান সূত্র অনুযায়ী দূর্বল রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলো তাদের অগ্রাধিকার ঠিক করার সুযোগ পাবে কি?


[ ২৬ এপ্রিল, ২০১৮র প্রথম আলোয় ভিন্ন শিরোনোমে (গণতন্ত্র রপ্তানির বিষয় নয়) প্রকাশিত লেখকের নিবন্ধ।]

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...