সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জাতিসংঘেও কোটা সংস্কারের প্রশ্ন


সরকারী চাকরিতে চালু কোটাব্যবস্থা সংস্কারের প্রশ্নে গত কিছুদিন ধরে যে আন্দোলন এবং জোর বিতর্ক চলছে তার যুক্তিগুলোর দিকে নজর দেওয়ায় সরকারের ন্যূনতম আগ্রহ না দেখানো খুবই দূর্ভাগ্যজনক। বিপরীতে,  আবেগনির্ভর  রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সমালোচনা মোকাবেলায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রসঙ্গ টেনে খোঁজা হচ্ছে আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। যেটি অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক। অথচ, বিষয়টি এমন নয় যে এই কোটাব্যবস্থায় বঞ্চিত হচ্ছেন শুধুমাত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতাকারী কিম্বা রাজাকার-আলবদরদের বংশধররা।  

ঐতিহাসিকভাবেই আমাদের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ খুব সীমিত। ফলে, রাজনীতিতে পিছিয়ে থাকা নারীদের এগিয়ে নিতে সংসদে তাদের জন্য কোটা চালু হয় কয়েক দশক আগে। প্রধানমন্ত্রী এবং বড় দুই দলের প্রধান নারী এবং তাঁরা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হলেও সামগ্রিকভাবে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ এখনও যথেষ্ট নয়। ফলে, জাতীয় সংসদে সেই নারী কোটা বহাল আছে এবং আসনসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলেও নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল বিধিতে কোটা পূরণের বাধ্যবাধকতা রেখেছে নির্বাচন কমিশন।

সাধারণত কোটার উদ্দেশ্য হয় জনগোষ্ঠীর অনগ্রসর কোন অংশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া। সেই ধারণায় মুক্তিযোদ্ধাদের পোষ্যরা কিভাবে অর্ন্তভুক্ত হন তার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা নেই। মুক্তিযোদ্ধারা সমাজে বিশেষভাবে সম্মানিত এবং তাঁদের অধিকাংশই সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নন। তবে, রাজনৈতিক উত্থান-পতনের ধারায় বিভিন্নসময়ে তাঁরা উপেক্ষা ও অবহেলার শিকার হয়েছেন একথা সত্য। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ যখন মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদের জন্য ত্রিশ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয় তখন সাধারণভাবে তাই এর কিনো বিরোধীতা আসেনি। কিন্তু, ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে  ওই কোটার সম্প্রসারণ ঘটিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সন্তান পর্যন্ত – অর্থাৎ তিন প্রজন্মের জন্য সুবিধাটি প্রসারিত করা হয়। এবিষয়ে জারি করা পরিপত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ বা প্রয়োজনীয়তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। পরিপত্রের ভাষায় বরং স্পষ্ট হয় যে প্রয়োজনীয়তা শেষ হওয়ার পরও শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা কোটার পূরণের উদ্দেশ্যেই এটি সন্তানদের সন্তান পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়েছে। 

মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ মর্যাদার স্বীকৃতির জন্য সরকার অনেক পদক্ষেপই নিয়েছেন যেগুলো নিয়ে তেমন কোনো  বিতর্ক নেই। কেননা, সেগুলো মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম পর্যন্ত প্রসারিত নয়। কিন্তু, সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে এই সুবিধা কার্যকর করায় প্রতিদ্বন্দী ছাত্র-তরুণরা তাকে অবিচার এবং অন্যায় হিসাবেই দেখছে। অন্যদিকে, এসব বিশেষ রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য লাভের উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টির অপব্যবহারের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আসল মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরির চেষ্টায় সরকারকে বারবার গলদঘর্ম হতে হচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা যদি পিছিয়ে থাকা মানুষ হন তাহলে এই কোটার ব্যবস্থা সংসদের ক্ষেত্রে নেই কেন? সন্দেহ নেই মূল দল আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠই মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু, তারপরও  রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর গঠনতন্ত্রে কি মুক্তিযোদ্ধাদের পোষ্য হিসাবে কোনো কোটা আছে? ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিম্বা স্বেচ্ছাসেবক লীগ এর মত অঙ্গ সংগঠনগুলোর পদ-পদবীতে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্যদের অগ্রাধিকার গঠনেতন্ত্রে নেই?

গতমাসের ১৫ তারিখের কথা। সেদিনের খবরের কাগজগুলোতে ঢাকায় ছাত্র-তরুণদের কোটাবিরোধী মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটার যে ছবি ছাপা হয়েছিল তাতে কারও  চোখ না পড়ার কথা নয়। আর, সেদিনেই জেনেভায় জাতিসংঘের এক কমিটিতে বাংলাদেশে সবার জন্য সমঅধিকার এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আইনগত ব্যবস্থার সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশকে অস্বস্তিকর যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তার মধ্যে কোটার বিষয়টিও ছিল।  আলোচনায় প্রথমে প্রশ্নটি ওঠে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী দলিত সম্প্রদায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে। জাতিসংঘের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারবিষয়ক কমিটিতে কমিটির সভাপতি পর্তূগালের মিসেস মারিয়া ভার্জিনিয়া ব্রাস গোমেস মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পোষ্যদের জন্য ত্রিশ শতাংশ কোটার কথা উল্লেখ করে অন্যান্য অনগ্রসর জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর জন্য এধরণের সুবিধা দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা তা জানতে চান।

ওই আলোচনায় বাংলাদেশের বেশ বড় একটা প্রতিনিধিদল অংশ নেয় যার নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। প্রতিমন্ত্রী দেশে যে কোটাব্যবস্থা চালু আছে তার একটি সামগ্রিক বিবরণ তুলে ধরেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী দেশে জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলো আকার ষাট লাখ, যার মধ্যে পাবর্ত্য অঞ্চলের বাসিন্দা দশ লাখ। পাবর্ত্য অঞ্চলের উপজাতীয় বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য কোটা রয়েছে পাঁচ শতাংশ। পাবর্ত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার সদস্য ছাড়া অন্য সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বাগুলোর সবাই মূলধারায় বেশ ভালোভাবেই সম্পৃক্ত হয়ে গেছেন এবং সরকার সেকারণে তাঁদের জন্য আলাদা কোনো কোটা সংরক্ষণ প্রয়োজন বলে মনে করে না।

মুক্তিযোদ্ধাদের পোষ্যদের জন্য সংরক্ষিত কোটার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে অবশ্য শাহরিয়ার আলম ওই কমিটিতে কিছুই বলেন নি। তাহলে হয়তো সরকারের যুক্তিটা বোঝা যেত। সংসদের কথিত বিরোধীদল সরকারের অংশীদার হওয়ায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া থেকে চার বছর রেহাই পলেও জাতিসংঘ কমিটিতে শাহরিয়ার আলমের সেই সৌভাগ্য হয় নি। দেশে দলিত সম্প্রদায়ের অবস্থান সম্পর্কে তিনি কিছুটা সংশয় প্রকাশ করে জানান যে হরিজন সম্প্রদায় নামে পরিচিত একটি জনগোষ্ঠী আছে এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরিতে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। সরকারের এসব ব্যাখ্যা জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের যে তুষ্ট করতে পারেনি তা জানা গেল ৩ এপ্রিল প্রকাশিত কমিটির পর্যবেক্ষণ এবং সুপারিশগুলোতে।  কমিটি অনগ্রসর জনগোষ্ঠীগুলোর জন্য কোটা বাড়ানোর কথা বলেছে। আর, দলিত সম্প্রদায়কে অচ্ছ্যুৎ পেশায় আটকে রাখার নীতি যথার্থ নয় জানিয়ে তাদের জন্যও সবজায়গায় সমসুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

৩.
কোটার বিষয়টি সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। রাষ্ট্র নাগরিকদের যেসব সেবা দেয় এবং তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করে সেখানে সব নাগরিকের সমঅধিকার এবং সমসুযোগ নিশ্চিত করার কথা আমাদের সংবিধানে বলা আছে। কিন্তু, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বাসস্থানের মত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারগুলো সব নাগরিকই যে ভোগ করতে পারেন তা নয়। এসব অধিকার আদায়ে আইনগত পথ অনুসরণের সুযোগও অনেকটাই সীমিত। অধিকারগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সব আইনও এতোদিনে তৈরি হয়নি। জাতিসংঘের কমিটিতে তাই বাংলাদেশের ব্যাখ্যা ছিল পর্যায়ক্রমে এসব আইন করা হচ্ছে এবং সুনির্দিষ্ট আইনের অনুপস্থিতিতে সংবিধানের ঘোষিত নীতিমালার আলোকেই আদালত এসব অধিকার বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। বৈষম্য নিরসনের সুনির্দিষ্ট আইন থাকলে আদালত থেকে কোনো প্রতিকার মিলতো কিনা সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রশ্ন। কেননা, বিচারবিভাগের স্বাধীনতার বিষয়টিই এখন বড়ধরণের প্রশ্নের মুখে।

বৈষম্যের অবসান, আইনের শাসন কিম্বা সামাজিক ন্যয়বিচারের এই আলোচনায় ইতি টানবো রাজনীতিকদের কথা এবং বাস্তবতার মধ্যে যে ফারাক থাকে তারই আরেকটি দৃষ্টান্ত দিয়ে। জাতিসংঘের ওই কমিটিতে গণমাধ্যমে অবাধ মতপ্রকাশের পথ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশংকার কথা ওঠে। তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা এবং প্রস্তাবিত ডিজিটিাল আইনের খসড়ার উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ কমিটির একাধিক সদস্য রাজনৈতিক মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। জেনেভায় ওই আলোচনার দিনেই ঢাকার সংবাদমাধ্যমে বরিশালে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে সাংবাদিক নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা ছাপা হয়েছিল। 

প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম যথারীতি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকৃচিত হওয়ার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। সরকারকে গণমাধ্যমবান্ধব প্রমাণের চেষ্টায় তিনি দেশে চালু টিভি-রেডিও-সংবাদপত্রের সংখ্যাগত পরিসংখ্যান তুলে ধরলেন। সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ তহবিল এবং ওয়েজ বোর্ড গঠনের মত বিষয়গুলো উল্লেখ করে তিনি তাঁর সরকারের গণমাধ্যমবান্ধব নীতির কথা তুলে ধরেন। সরকারের মর্জিমাফিক খবর এবং মতামত প্রকাশের সুবিধা তৈরিতে টিভি-রেডিও লাইসেন্স দেওয়া এবং সাংবাদিকদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর উদ্দেশ্য যে সদয় সহানুভূতি লাভ ছাড়া অন্যকিছু নয় তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না।

সাংবাদিকদের স্বাধীনতার প্রতি সরকারের  অঙ্গীকারের প্রতিফলন হিসাবে তিনি এরপর অদ্ভূত এক যুক্তি হাজির করেন। তিনি বলেন যে কোনো সাংবাদিক ডিজিটাল আইনে হয়রানির শিকার হলে আইনমন্ত্রী আইনজীবি হিসাবে তাঁর পক্ষে লড়বেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হলে আইনমন্ত্রী পদত্যাগ না করে কিভাবে সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে পারেন তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। আইনমন্ত্রী ১/১১র সরকারের সময় দূর্নীতি দমন কমিশনের আইন উপদেষ্টার দায়িত্ব ছিলেন, কিন্তু, তখন তাঁর নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কমিশনের মামলায় আদালতে লড়াই করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কোনো সাংবাদিকের প্রতিপক্ষ যদি হয় তাঁর নেত্রীর সরকার তাহলে তিনি কথা রাখবেন কিভাবে? গ্রহণযোগ্য যুক্তি না থাকলে আবেগের বশে রাজনীতিকরা অনেক কথাই বলে থাকেন, কিন্তু তা বাস্তবতার সেঙ্গে মেলে না। জাতিসংঘের অধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটি তার চূড়ান্ত সুপারিশমালায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এসব নিবর্তনমূলক বিধান বিলোপের আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারের উচিত হবে এসব সুপারিশ বিবেচনায় নেওয়া।

(৬ এপ্রিল, ২০১৮তে প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের কলামা)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...