সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নির্বাচনী মৌসুম ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ


সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন এসব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন নির্বাচনের মৌসুম চলছে। যদিও এগুলোর কোনটিতেই আর রাজনীতির উত্তাপ নেই। এগুলোর মধ্যে ডাকসু বাদ দিলে অন্য সব নির্বাচনী আয়োজনের ফলাফল এখন কার্য্যত ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিরসনের ওপরই নির্ভরশীল। সরকারের ভেতরের কত বড় নেতার আর্শীবাদ কোন প্রার্থীর ওপর আছে, তারই একটা পরীক্ষা হবে এসব আয়োজনে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসার মূল্যায়নে যেসব সাময়িকীকে মন্ত্রী, সাংসদ ও বিশেষজ্ঞরা প্রায়শই উদ্ধৃত করেন, তার শীর্ষে আছে ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট। ওই পত্রিকাটির ভাষায়, আমাদের একাদশ সংসদ নির্বাচনটি ছিল স্বচ্ছ্ব জালিয়াতি বা খোলামেলা কারচুপি। কিন্তু, প্রধান নির্বাচন কমিশনার খান মোহাম্মদ নুরুল হুদা অবশ্য বলছেন, সংসদ নির্বাচন যেরকম স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ছিল, উপজেলা নির্বাচনেও সেরকম স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ হতে হবে। সিইসি বলছেন যে প্রয়োজনে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হবে, কিন্তু অনিয়মের সঙ্গে আপস করা যাবে না। তাঁর এসব বক্তব্য যে সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনীব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ধ্বংসের আত্মপীড়া থেকে এমনটি অবশ্য মনে করার কোনো কারণ নেই। সেরকম আত্মোপলব্ধি ঘটে থাকলে নির্বাচনী ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তাঁরা নতুন কোনো নির্বাচন আয়োজনের আগে সব রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকসমাজের অনুযোগ-আপত্তি নিরসনে উদ্যোগী হতেন। মাঠপর্যায়ে অনিয়মের যেসব অভিযোগে উঠেছে, সেগুলো পর্যালোচনার ব্যবস্থা নিতেন। আইনগত সমাধানের দায়িত্ব নির্বাচনী ট্রাইবুনালের হাতে রেখেও এই পর্যালোচনা সম্ভব ছিল। ট্রাইবুনালেও অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে আস্থা সৃষ্টি ও দ্রুততম সময়ে সেগুলো নিষ্পত্তির তাগিদ তৈরি হতো।

প্রধানত, ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নির্বাচনী লড়াইকে প্রতিদ্বন্দিতার্পূণ করার চেষ্টা বা অঙ্গীকারে কমিশন রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। ঢাকা সিটি করপোরেশন এবং উপজেলা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ঢালাও বয়কট কমিশন এবং সরকার কারও জন্যই ভালো নয়। কার্যত, ১৯৮৫ সালে সামরিক শাসক এরশাদের আয়োজিত উপজেলা নির্বাচনের পর এটিই হচ্ছে প্রথম এমন একটি নির্বাচন, যা এতো বড় আকারের বয়কটের মুখে
পড়ছে।

একথা ঠিক যে বহুমুখী ও বিচিত্র সব অনিয়মের কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে দেশের ভেতরে যেমন কোনো রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি, তেমনি বর্হিবিশ্বে যতটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, তা সীমিত আছে প্রধানত: পাশ্চাত্যের গনতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে। গত প্রায় এক দশকের পূর্বমুখী কূটনীতি, ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটে অংশগ্রহণের  কারণে কূটনৈতিক অঙ্গণে সরকার একেবারে বন্ধুহীন নয়। তবে, এর মধ্যেই ক্ষমতাসীন জোটের শরীক ওয়ার্কাস পার্টির নেতা সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন বাংলাদেশটাও ভেনিজুয়েলা হয়ে যেতে পারে। রাতের আঁধারে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলার বিষয়ে বিরোধীদের অভিযোগকে বিএনপির অজুহাত তৈরির চেষ্টা হিসাবে তুলে ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্র্রের প্রতি এই ইঙ্গিত করেন। তাঁর এই আশংকার ভিত্তি কী তা আমাদের জানা নেই।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভেনিজুয়েলার সবচেয়ে বড় ফারাক হলো দেশটিতে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেলের মজুদ। বাংলাদেশের গ্যাসের যে মজুদের কথা আগে বলা হোত তা এখন দেশের চাহিদাও মেটাতে পারছে না। তবে, ভেনিজুয়েলার মত না হলেও বাংলাদেশে যে তাদের কোনোই আগ্রহ ও স্বার্থ নেই, তা-ও নয়। এই পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সর্বসাম্প্রতিক পদক্ষেপকে উপেক্ষা করা কঠিন। কংগ্রেসের প্রতিনিধিপরিষদে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির পদক্ষেপটি এসেছে দ্বিদলীয় ভিত্তিতে। কমিটির চেয়ারম্যান ডেমোক্র্যাট এলিয়ট এল অ্যাঞ্জেল, জ্যেষ্ঠতম সদস্য রিপাবলিকান মাইকেল টি ম্যাকগল, এশিয়া এবং প্রশান্তমহাসাগরীয় সাবকমিটির চেয়ারম্যান ব্রাড শেরম্যানসহ ছজন কংগ্রেসসদস্য যৌথভাবে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতি হুমকির বিষয়টিতে ব্যবস্থা নিতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্মেওকে লেখা চিঠিতে তাঁরা নির্বাচনের আগের সহিংসতা, গণগ্রেপ্তার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতির কথা বলেছেন।  তাঁরা এশিয়ার চারটি দেশে আসন্ন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অব্যাহত অঙ্গীকার প্রদর্শন করা জরুরি এবং বাংলাদেশেই তার সূচনা হওয়া উচিৎ। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের এসব সদস্য যেদিন এই চিঠি দেওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, সেই একই দিন ১২ ফেব্রুয়ারি সিনেটের সশস্ত্রবাহিনী বিষয়ক কমিটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভারত- প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলের অধিনায়ক অ্যাডমিরাল অ্যাডাম ফিলিপ এস ডেভিডসন তাঁর বক্তব্যেও এই অঞ্চলের আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোয় বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ শরীক উল্লেখ করে গত নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনেছেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্ষমতা আরও কেন্দ্রীকরণের উদ্বেগজনক প্রবণতা অভিহিত করে তিনি বলেছেন, এতে আশংকা তৈরি হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী  হাসিনা দেশটিকে কার্য্যত একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছেন।

বাজেট বিষয়ক টানাপোড়েনের কারণে ইতিহাসের দীর্ঘতম সময় প্রায় ৩৩ দিন সরকার অচল থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা তাঁদের কাজকর্ম শুরু করার দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তাঁদের এই আগ্রহকে ছোট করে দেখার অবকাশ আছে কিনা তা কূটনীতিকেরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে, স্মরণ করা দরকার যে ভোটের মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগে দেশটির কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অত্যন্ত জোরালো একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়েছিলো। সেই প্রস্তাবে নির্বাচনের আগে বিরোধীদের হয়রানি ও ভিন্নমত দমন বন্ধ করে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছিলো। সুতরাং, ইঙ্গিত মিলছে ১২ ফেব্রুয়ারিতে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্যরা যে বিবৃতি দিয়েছেন তা একেবারে বিচ্ছিন্ন একটি পদক্ষেপ নয়। বরং, ধারাবাহিকতার প্রমাণ। প্রশ্ন হচ্ছে, এর পর কংগ্রেস কী করতে পারে? তাছাড়া, কংগ্রেসের প্রস্তাব বা অনুরোধ কি প্রেসিডেন্ট মেনে নেবেন?  

ভিনদেশে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র বছর ছয়েক আগে, ২০১২ সালে একটি নতুন আইন হয়, যেটি ম্যাগনেটস্কি অ্যাক্ট নামে পরিচিত। ম্যাগনেটস্কি আইন ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলের যৌথ উদ্যোগে তৈরি। এই আইনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, নির্যাতন এবং আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত অন্যান্য মানবাধিকারের গুরুতর লংঘনের জন্যে দায়ী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং তাঁদের সম্পদ আটক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এটি সর্বপ্রথম প্রয়োগ করা হয় রুশ কর্মকর্তা এবং পুতিনের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের উপর। সর্বসম্প্রতি এটি প্রয়োগ হয়েছে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডের জন্য ১৭জন সৌদি নাগরিকের বিরুদ্ধে। অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত কারণে সউদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা সত্ত্বেও দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তারাই এই নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছেন। ২০১৬ সালের পর থেকে শতাধিক বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন। এরকম কোনো পদক্ষেপ কাঙ্খিত নয়।

ভিন্নমত ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নেও দেশটি নতুন আরেকটি আইন করেছে যা তারা অন্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। তালেবানদের হাতে নিহত সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লের নাম অনুসারে তৈরি ড্যানিয়েল পার্ল ফ্রিডম অব দ্য প্রেস অ্যাক্টে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে তার বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে আলাদা করে প্রত্যেকটি দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের প্রতি হুমকির বিষয়টির মূল্যায়ন করতে হয়। পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই বার্ষিক প্রতিবেদন দেশটির বৈদেশিক সহায়তা এবং অন্যান্য নীতির ওপর যে প্রভাব ফেলে সেকথা বলাই বাহুল্য।

কংগ্রেস চাইলেই যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই সুপারিশ গ্রহণ করবেন বা দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবেন এমনটি ধরে নেওয়ার কারণ নেই। কিন্তু, নেতৃস্থানীয় কংগ্রেসসদস্যদের বক্তব্যের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থানের মধ্যে যদি তেমন কোনো পার্থক্য না থাকে তাহলে প্রশাসন ভিন্নপথে চলবে এমন ভাবনাও যৌক্তিক নয় । প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনের ১৯ দিন পর ১৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে চিঠি দিয়েছিলেন সেখানেও তিনি লিখেছিলেন রাজনৈতিক বিরোধী এবং তাঁদের সমর্থকদের ওপর হামলা এবং সাংবাদিকদের নির্যাতনের খবরগুলো অব্যাহত থাকায় জাতীয় নির্বাচন এবং বাংলাদেশের আর্ন্তজাতিক ভাবমূর্তি কলংকিত হচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮র জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের জন্য আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানের কথাও তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন।   

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাকের বৃহত্তম বাজার। আবার বাংলাদেশে বিদেশি বেসরকারী বিনিয়োগের দিক থেকেও দেশটির অবস্থান শীর্ষে। নিরাপত্তা সহযোগিতাও বেশ গভীর এবং জোরালো। সন্দেহ নেই প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর সহায়তার প্রশ্নে বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকার কারণে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টিতে বিশ্বের প্রায় সব দেশ সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু, বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধ্বংসসাধনকে তাঁরা কতটা প্রশ্রয় দিতে প্রস্তুত তা এখনও স্পষ্ট নয়। এরকম পটভূমিতে নির্বাচনী ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারে মনোযোগী না হয়ে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন একের পর এক প্রহসনের জন্ম দিলে তা দেশের জন্য মোটেও শুভ হবে না।

(১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯‘র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

How to Describe the Awami League Accurately?

In an article titled ‘How Not to Describe the Awami League’ , published in this paper, British journalist David Bergman rightly underscores the importance of accuracy in labeling a political party—particularly when such labels carry potential legal consequences. Those familiar with Bergman’s work over the years know that he has consistently taken on politically sensitive and controversial subjects, often at significant personal and professional cost. His courage and commitment to journalistic integrity deserve recognition. Bergman is correct in asserting that “while serious criticisms of the Awami League are both valid and necessary, they must be proportionate and grounded in fact.” His analysis focuses primarily on the legal validity and appropriateness of labeling the Awami League as “fascist” or “Nazi.” He argues that comparing the party to the Nazi regime trivialises the scale of Nazi atrocities and misrepresents the complexities of Bangladeshi politics. Indeed, any historical comp...

স্বৈরতন্ত্রের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার নিকৃষ্ট পরিণতি

ছাত্র–জনতার অভ্যূত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত মন্তব্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। গত ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণ এবং সম্প্রতি মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতায় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য – এই দুইয়ের একটি যে অসত্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিতর্ক শুরু হওয়ার পর তাঁর দপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা–ও অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। তিনি সর্বশেষ বিবৃতিতেও মতিউর রহমান চৌধুরীকে অসত্য কথা বলার বিষয়টি স্বীকার যেমন করেন নি, তেমনি এমন দাবিও করেননি যে তাঁকে ভূলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।  ৫ আগস্ট যদি তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রশ্নে অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তা খুবই গুরুতর হিসাবে বিবেচিত হতে বাধ্য। কেননা তা ছিল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের তথ্য। আবার যদি তিনি মানবজমিন সম্পাদকের কাছে আলাপচারিতায় অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তাঁর কাছে যে দেশবাসী প্রশ্নের জবাব চাইতে পারে, তা হলো অর্ন্তবর্তী সরকার যখন সবকিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছে, দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তখন তিনি কেন এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন? তাঁর উদ্দ...