সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভিন্নমত ও প্রতিবাদ দমনের পদক

ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মায়ের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে লুটিয়ে পড়ার ছবিটি দেখে অপরাধীরা ছাড়া আর সবারই বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠার কথা। এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরেও দিয়াজের মা ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে আমৃত্যু অনশনে বসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। হত্যার বিচারের আশ্বাসে তখন তিনি অনশন ভেঙেছিলেন। কিন্তু ২০১৬ সালের নভেম্বরের সেই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত একটি গোষ্ঠীর প্রকাশনায় হত্যায় অভিযুক্ত একজনের বাণী ছাপা হয়েছে। অর্থাৎ দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অভিযুক্ত ব্যক্তির রাজনৈতিক পুনর্বাসন অনেকটাই সাধিত হয়েছে।

বিচারপ্রার্থী দিয়াজের মা যখন দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে লুটিয়ে পড়েছেন, ঠিক তখনই ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টের আঙিনায় অসহায় অজ্ঞাতনামাদের অবিচার থেকে মুক্তি চাওয়ার আর্তি। ধান বিক্রি করার টাকা খরচ করে পুলিশি হয়রানি থেকে রেহাই পেতে জামিনের জন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ধরনা দিয়ে বসে আছেন শত শত মানুষ। এঁদের অনেকেই হয়তো এর আগে কখনো ঢাকায় পা ফেলেননি। বছরের শুরু থেকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে জামিনের আশায় ভিড় করছেন ৪ হাজারের বেশি গায়েবি মামলার আসামি শত শত মানুষ। এঁদের মধ্যে আছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সত্তরোর্ধ্ব প্রায় চলনশক্তিহীন মানুষও, যাঁরা দলবাজির রাজনীতির ধারেকাছেও নেই। এ রকম গায়েবি মামলায় কতজন কারাগারে বন্দী আছেন, সেই হিসাব কারও কাছেই নেই। তবে মানবাধিকার সংগঠক সুলতানা কামাল বলেছেন, দেশের কারাগারগুলোতে বন্দীদের প্রতি তিনজনের দুজনই বিনা বিচারে আটক রয়েছেন। অবিচারের শিকার নির্দোষ জাহালমের তিন বছর কারাভোগের পর মুক্তিলাভের খবরের পটভূমিতে এসব বিনা বিচারের বন্দীর দুর্ভোগের বিষয়টি মোটেও উপেক্ষণীয় নয়।

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশ আবারও সংবাদ শিরোনামে ফিরে এসেছে। নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়টি নিয়ে জানুয়ারিজুড়ে নানা ধরনের বিচার-বিশ্লেষণের পর ফেব্রুয়ারির শুরুতে আলোচনায় এসেছে হারকিউলিস। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা কথিত ক্রসফায়ারের অভিযোগ কয়েক বছর ধরে বেড়েই চলেছে। এই পটভূমিতে ধর্ষণের অভিযোগে কয়েকজন সন্দেহভাজনের সাম্প্রতিক রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড এই আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ রকম কয়েকটি শিরোনাম হচ্ছে: ‘হারকিউলিস ভিজিল্যান্টে কিলস্ সাসপেক্টেড রেপিস্টস ইন বাংলাদেশ’ (আল-জাজিরা, ৬ ফেব্রুয়ারি), ‘ডেথস অব অ্যাকিউজড রেপিস্টস ইন বাংলাদেশ টায়েড টু সাসপেক্টেড ভিজিল্যান্টে’ (ইউপিআই, ৬ ফেব্রুয়ারি), ‘ইন বাংলাদেশ, এ সিরিয়াল কিলার কলড হারকিউলিস ইজ টার্গেটিং অ্যালেজড রেপিস্টস’ (জি নিউজ, ৫ ফেব্রুয়ারি), ‘হারকিউলিস সাইনস ডেথ ওয়ারেন্টস অব অ্যালেজড রেপিস্টস ইন বাংলাদেশ’ (টিআরটি ওয়ার্ল্ড, ৫ ফেব্রুয়ারি)। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এসব সংবাদ শিরোনাম বাংলাদেশে আইনের শাসনের দুর্বলতার করুণ প্রতিফলন।
এই সপ্তাহেই সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে পুলিশ সপ্তাহ। এ সময়ে পুলিশের প্রায় ৪০০ কর্মকর্তা পেশাগত কাজে কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য পদক ও প্রণোদনামূলক পুরস্কার পেয়েছেন। কেউ কেউ দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মতো পুরস্কৃত হয়েছেন। যাঁরা পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে যোগ্য কেউ ছিলেন না, তা নয়। তবে অনেক পুরস্কারের ক্ষেত্রে কারণগুলো স্পষ্টতই গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের মূল্যবোধের পরিপন্থী। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী বাহিনীর কথিত সাফল্য ও ব্যর্থতার প্রকট বৈপরীত্যের প্রতিফলন আর কী হতে পারে? নিরীহ কাউকে হয়রানি না করতে পুলিশের প্রতি নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গাছের ছায়ায় জামিনের অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলোর কানে কি পরিহাসের মতো শোনায়নি?
যাঁরা পদক পেয়েছেন তাঁদের কৃতিত্বের যেসব বিবরণ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে আছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন ও কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ, কথিত ‘রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণামূলক’ সাক্ষাৎকারের জন্য (আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে) গ্রেপ্তারে ‘পেশাগত দক্ষতা’র স্বীকৃতি, ডিজিটাল মাধ্যমে কথিত অপপ্রচার বন্ধে সাফল্য ইত্যাদি। প্রতিবাদ-বিক্ষোভের বৈধ নাগরিক অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চার বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও দমন-পীড়নের স্বীকৃতি দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদক দেওয়ার ঘটনা এক নতুন দৃষ্টান্ত। দৃশ্যত এর উদ্দেশ্য: ১. পুলিশকে দমনমূলক নীতি অনুসরণে উৎসাহ দেওয়া; ২. সরকারবিরোধী সব দল, গোষ্ঠী ও ব্যক্তির মধ্যে ভীতি ছড়ানো, যাতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলন দানা বাঁধতে না পারে।
রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রতিবাদ জানানোর শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলেছে, তাতে সন্দেহ নেই। এর ফলে নাগরিক সমাজে সৃষ্ট উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে যে তারা উদ্বিগ্ন। কেননা, যেসব সাফল্যের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের পদক দেওয়া হয়েছে, সেসব ঘটনার প্রতিটির ক্ষেত্রেই পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’, ‘পক্ষপাতিত্ব’ বা ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগ সর্বজন বিদিত।
টিআইবি আরও বলেছে, পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরে শুদ্ধাচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি চর্চা সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও আইনের সমান সুযোগ লাভের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য। তাই শান্তি ও জনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ আইন লঙ্ঘনকারীকে বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীকে সর্বোচ্চ পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের যেসব অভিযোগ উঠেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই বাহিনীর প্রতি জনগণের নির্ভরশীলতা প্রতিষ্ঠায় এই মুহূর্তে এটাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।
টিআইবির এই দাবি নতুন নয়। বরং পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য একটি আলাদা ও স্বাধীন তদন্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি অনেক দিনের। পুলিশে যেসব সংস্কারের জন্য ২০০৯ সালে সরকার জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সঙ্গে সমঝোতা করেছিল, তাতে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা ছিল। পুলিশ কমপ্লেইন্টস কমিশন বা পুলিশ কমিশন গঠিত হলে পুলিশের কর্তাব্যক্তিদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা কিছুটা খর্ব হবে বলে তাঁরা এ বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি নন, এটা জানা কথা। কিন্তু রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা দুর্ভাগ্যজনক।
গত এক দশকেও আমাদের রাজনীতিকেরা ওই সুপারিশটি বাস্তবায়নের পথে পা বাড়াননি। এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যা পুলিশকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার ছাড়া আর কী হতে পারে? রাজনীতিকেরা এটা ভালোই জানেন যে এ রকম স্বাধীন ও নিরপেক্ষ জবাবদিহির ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হলে পুলিশকে দলীয় কাজে ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়বে। ৩০ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে দলীয় স্বার্থে নজিরবিহীনভাবে পুলিশকে কাজে লাগানো অথবা নিষ্ক্রিয় করায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। নির্বাচনের মাত্র এক মাসের মাথায় পুলিশ কর্তাদের পুরস্কারের বিষয়ে তাই প্রশ্ন ওঠা মোটেও অস্বাভাবিক নয়।
পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সদস্যদের বীরত্বপূর্ণ কাজ কিংবা জনস্বার্থমূলক ব্যতিক্রমী ভূমিকার স্বীকৃতি দেওয়ার রীতি সব দেশেই আছে। সাধারণত স্বাধীনতা দিবস বা জাতীয় দিবসগুলোতে এসব পদক দেওয়া হয়। সমাজ-সংস্কৃতির অগ্রযাত্রায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের যেভাবে সম্মান জানানো হয়, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও তাঁদের দায়িত্ব পালনে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য এ ধরনের স্বীকৃতির ন্যায্য দাবিদার। কিন্তু জনমনে যদি এমন ধারণা হয় যে এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক স্বার্থ, বিশেষত দলীয় বিবেচনার ছায়া পড়েছে, তাহলে তা বিতর্কের জন্ম দিতে বাধ্য। এবারের পুলিশ সপ্তাহে বিদেশে দূতাবাসে পদায়ন ও আলাদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মতো বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবিগুলোও এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পুলিশের সাম্প্রতিক ভূমিকা ও তাদের পুরস্কার ও প্রণোদনার পদক্ষেপগুলো সেই বিতর্ক বাড়িয়েই দিয়েছে।
(৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত নিবন্ধ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...