সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ব্রেক্সিট বিতর্কে গণতন্ত্রের নতুন রুপ


ব্রিটেনে সবচেয়ে পুরোনো বাংলা সংবাদপত্র সাপ্তাহিক জনমতের অর্ধশত বছর পূর্তির বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনপর্বটি কয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত হলো হাউজ অব কমন্সের একটি কক্ষে। ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার মুখে ওয়েস্টমিনস্টার প্রাসাদের বাইরে একজন বিক্ষোভকারীর হাতে থাকা একটি ফেস্টুনে চোখ আটকে গেল। ইউরোপীয় জোট থেকে বিচ্ছেদ বা ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংকটে বেশ কিছুদিন ধরেই পার্লামেন্টের বাইরে ব্রেক্সিটের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ প্রতিবাদ চলছে। উভয়পক্ষই পাশাপাশি ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকা নিয়ে অবিরাম পরষ্পরবিরোধী শ্লোগান দিয়ে চলেছে। একপক্ষের কথা হচ্ছে লিভ মিনস্ লিভ (বিচ্ছেদ মানে বিচ্ছেদ) এবং তার জন্য যা-ই করতে হয় করতে হবে। অন্যপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে বিচ্ছেদের চুক্তিতে প্রমাণ মিলছে যে গণভোটের আগে যা বলা হয়েছিল তা ছিল ভুল বা প্রতারণা। সুতরাং, আরেকটি গণভোট ছাড়া কোনো বিচ্ছেদ নয়।

এসব বক্তব্য ও শ্লোগানের মাঝে যে ফেস্টুনটিতে আমার চোখ আটকে গিয়েছিল তাতে লেখা ছিল গাই ফক্স যা করতে চেয়েছিল আমারও তাই ইচ্ছে করছে। ইতিহাসে আগ্রহীরা জানেন ১৬০৫ সালে গান পাউডার দিয়ে ওয়েস্টমিনস্টার প্রাসাদ উড়িয়ে দেওয়ার এক ষড়যন্ত্র হয়েছিলো যা গান পাউডার ষড়যন্ত্র নামে পরিচিত। ওই বছরের ৫ নভেম্বর গাই ফক্স ধরা পড়ে যান এবং ষড়ডন্ত্রের কথা স্বীকার করে নেন। এরপর থেকে প্রতিবছর ব্রিটেনে ৫ নভেম্বর নানাভাবে গাই ফক্স নাইট পালন করা হয়ে আসছে। মূলত রাজা প্রথম জেমসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার জন্যই কৃতজ্ঞতাপ্রকাশের উদ্দেশ্যে দিবসটি  পালন করা হয়। ব্রেক্সিটপন্থী ওই বিক্ষোভকারীর ক্ষোভের কারণও স্পষ্ট গণভোটের ফল অনুযায়ী পূর্বঘোষিত সময়সূচির মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে পার্লামেন্টের ব্যর্থতা। তবে, পুলিশ বা সন্ত্রাসবিরোধী কোনো নিরাপত্তা সংস্থার কাউকে ওই বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় নি। স্পষ্টতই প্রতিবাদের শ্লোগান আর সত্যিকার সন্ত্রাসের মধ্যেকার ফারাকটা তাঁরা ভালোই বোঝেন।
     
ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনে একের পর এক যেসব নাটকীয়তা ঘটছে তা গণতন্ত্রের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। মাদার অব অল পার্লামেন্ট হিসাবে খ্যাত ব্রিটেনের হাউজ অব কমন্সের কার্যবিধির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছেন এমপিরা। অনেকেই একে পার্লামেন্টোরি ব্যবস্থায় বিপ্লব বলে অভিহিত করেছেন।ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতির পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছায় পার্লামেন্ট পরিচালিত হয়ে থাকে। কিন্তু, এবারই প্রথম প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং ক্ষমতাসীন দলের হাত থেকে এমপিরা সংসদীয় কার্যবিধির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের বিষয়ে অচলাবস্থা নিরসনের দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের বিবেচনায় পছন্দের ক্রমানুসারে ব্যালটে ভোট দিয়ে সিদ্ধান্তে পৌছানোর কার্যবিধি ঠিক করেছেন, যা সংসদীয় ব্যবস্থায় বিরল। সম্ভাব্য সমাধানের উপায় হিসাবে নানাধরণের প্রস্তাবের ওপর এমপিরা এখন যে ভোট দেবেন তাকে বলা হচ্ছে ইঙ্গিতবহ ভোট ( ইনডিকেটিভ ভোট)। কেমন সমাধান তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য সেটা প্রকাশ করাই এর উদ্দেশ্য।
যে কোনো আইন তৈরি বা সিদ্ধান্তের বিষয়ে পার্লামেন্টে প্রস্তাব উত্থাপন করেন সরকারের মন্ত্রীরা। এর বাইরে এমপিরা কোনো আইনের প্রস্তাব করতে চাইলে তা উত্থাপিত হয় বেসরকারী কার্যদিবসে বেসরকারী বিল হিসাবে। অবশ্য, পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পরও সরকার ক্ষমতাচ্যূত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী উল্টো দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে অচলাবস্থার জন্য এমপিদের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থেরেসা মের সরকার যে বিচ্ছেদ চুক্তি চূড়ান্ত করেছে পার্লামেন্ট তা পরপর দুবার প্রত্যাখ্যান করেছে। এরমধ্যে প্রথমবার যে ব্যবধানে প্রস্তাবটি নাকচ হয়েছিল তা পার্লামেন্টারি ইতিহাসে সর্ব্বোচ্চ ব্যবধানের রেকর্ড। মিস মে সরকারের আরেকটি রেকর্ড হচ্ছে আড়াইবছরে ৩৯জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ যা এর আগে কখনো ঘটেনি। দলীয় হুইপ অমান্য করার কারণেই এসব পদত্যাগ।
মিস মের সরকার এমনিতেই একটি সংখ্যালঘু সরকার এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের দল ডিইউপির ১০ জন সদস্যের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। এরকম একটি দূর্বল সরকার এতো রক্তক্ষরণের পরও কীভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর দুটি। প্রথমত: প্রধানমন্ত্রী মের পূর্বসূরি ডেভিড ক্যামেরন যখন লিবারাল ডেমেোক্রাটদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গড়েছিলেন তখন সরকারকে স্থিতিশীল করার স্বার্থে তাঁরা ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্ট বিধি পাশ করেন যাতে পার্লামেন্টের মেয়াদ পাঁচবছরের জন্য নির্দিষ্ট।এই বিধির কারণে আগাম নির্বাচন করতে হলে পার্লামেন্টে তার জন্য নতুন করে সংশোধনী অনুমোদন প্রয়োজন এবং বাস্তবতা হচ্ছে এমপিরা এখনই ভোটারদের কাছে ফিরতে আগ্রহী নন। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে বিরোধীদলের নেতা , জেরেমি করবিন, যাঁকে তাঁর নিজের দলের অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর পদে দেখতে চান না। একইভাবে, টোরি পার্টিতে নিজেদের মধ্যে যতোই মতবিরোধ থাকুক না কেন মি করবিনকে ঠেকাতে তাঁরা সবাই সরব। একারণেই, যাঁরা মিস মের পদত্যাগ চাইছেন তাঁরাও টোরি পার্টির মধ্যেই বিকল্প খুঁজছেন।
ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টে অনুমোদিত না হওয়ায় বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গত ২১ মার্চ মিস মে যখন ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন সেই একইদিনে ইউরোপীয় আলোচকদলের প্রধান মিশেল বার্ণিয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মি করবিন। এর আগেও তিনি একাধিকবার ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং একপর্যায়ে ইউরোপীয় নেতাদের অনেকেই মি করবিনের প্রস্তাবকে অনেকটাই বাস্তবসম্মত বলে মন্তব্য করেছেন। আমি নিশ্চিত, আমাদের উপমহাদেশের কোনো দেশের বিরোধীদলীয় নেতা যদি প্রতিবেশীদের সঙ্গে এধরণের আলোচনার সূচনা করতেন তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ থেকে তাঁর রেহাই মিলতো না।
অচলাবস্থার সমাধানের জন্য যেসব আলোচনা চলছে তার কোনোটি গৃহীত হোক বা না হোক,  দ্বিতীয় আরেকটি গণভোট কিম্বা পুর্ননির্বাচন যা-ই হোক না কেন, ব্রেক্সিট বিতর্ক গণতন্ত্র চর্চায় অনেক নতুন উপাদান যুক্ত করেছে। এর মধ্যে, যেটি উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হলো নাগরিক পরিষদ (সিটিজেন্স অ্যাসেম্বলি) আহ্বানের প্রস্তাব। ভোটারদের মধ্য থেকে বিভিন্ন শ্রেণী, জাতিগোষ্ঠী, নারী-পুরুষ, বয়সভিত্তিক গোষ্ঠির প্রতিনিধিত্বকারী নাগরিকদের সমন্বয়ে এই পরিষদ গঠিত হয়। সমাজের সর্বস্তর থেকে বাছবিচারহীন উপায়ে ( র‌্যানডমলি) এঁদের বেছে নেওয়া হয়। এসব নাগরিক বিশেষজ্ঞদের সঞ্চালনায় বিতর্কিত বিষয়ের ওপর সবধরণের যুক্তিতর্ক শুনে আলোচনার ভিত্তিতে সুপারিশ তৈরি করেন, যার ভিত্তিতে পার্লামেন্ট আইনগত পদক্ষেপ নেয়। জাতীয় পর্যায়ের ইস্যূতে এধরণের নাগরিক পরিষদের মাধ্যমেই সুপারিশ চূড়ান্তকরণ এবং  পার্লামেন্ট তা গ্রহণের ঘটনা ঘটে গত বছর আয়ারল্যান্ডে গর্ভপাতের অধিকার বিষয়ে। কয়েকটি গোষ্ঠির এধরণের দাবির প্রতি রাজনীতিকদের অনেকেই সমর্থন দিয়েছেন এবং প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এবছরের ৯ জানুয়ারি একে সমর্থন করে একটি সম্পাদকীয়ও প্রকাশ করে।
ব্রিটিশ স্বার্থ সুরক্ষিত হয় এমন একটি বিচ্ছেদ চুক্তি দুই বছরেও সম্পন্ন করতে না পারায় সাধারণ মানুষের মধ্যে  বিরক্তি ও উদ্বেগ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে ব্রেক্সিট বাতিলের জন্য একজন সাধারণ নাগরিকের একটি আবেদনে এপর্যন্ত ৫৮ লাখেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর দিয়েছেন। যে কোনো বিষয়ে আবেদনে এক লাখ স্বাক্ষর পড়লেই বিষয়টি পার্লামেন্টে আলোচনার যে নিয়ম আছে তাতে এটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় রেকর্ড। এছাড়াও বিষয়টিতে দ্বিতীয় দফা গণভোটের দাবিতে গত শনিবার ২৩ মার্চ লন্ডনে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ এক মিছিলে অংশ নেয়। ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে এক যুগেরও বেশি আগে অনুষ্ঠিত মিছিলের পর এতো বড় জনসমাবেশ লন্ডনে আর ঘটেনি।
শুরুতে জনমত পত্রিকার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের কথা বলছিলাম। সেই অনুষ্ঠানে লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের সঙ্গে এসেছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদের একজন সাংসদ। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের এই সাংসদ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এসব নাটকীয় বিতর্ক, এমপিদের স্বাধীন বিচারবোধ ও দলীয় সংকীর্ণতামুক্ত মানসিকতার চর্চা কতটা অনুধাবন করেছেন জানিনা। অবশ্য, এগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করলেও কি কিছু আসে যায়?
(২৮ মার্চ, ২০১৯ এর প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের নিবন্ধ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...