সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

'লিখতে পারি না' বলার স্বাধীনতা


প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিকতম সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক গণমাধ্যম সংকটের মধ্যে রয়েছে বলে সাংবাদিকদের চাকরি হারানোর কিছু ঘটনার প্রতি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। গণমাধ্যম সংকটে আছে, সন্দেহ নেই। তবে, গণমাধ্যম সরকারের ভর্তুকিতে বিপদ থেকে রক্ষা পাবে এমন ধারণা আত্মঘাতি। সরকারী সহায়তানির্ভর গণমাধ্যম আর যাই পারুক, সরকারের জবাবদিহিতা চাওয়ার সামর্থ্য পুরোটাই হারাবে।

গণমাধ্যম সংকটে কেন ? এই প্রশ্নটার বস্তুনিষ্ঠ জবাব না পেলে এর বাস্তবসম্মত সমাধানও সম্ভব নয়। এই খাতে নতুন যত বিনিয়োগ হয়েছে, তার সবটুকুর পিছনে যে জনসেবার মহান উদ্দেশ্যই প্রধান সেকথা কেউই বলবেন না। বরঞ্চ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে সুরক্ষা দেওয়া, অতিরিক্ত সুবিধা পেতে প্রভাব খাটানো এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা পাওয়ার বাসনাই প্রধান। শ্রোতা-দর্শক-পাঠক কি চান, সেই চাহিদা পূরণের সামর্থ্য আছে কিনা এবং বাণিজ্যিকভাবে তা লাভজনক হবে কিনা এসব বিষয়ে সমীক্ষা করে কেউ টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স নিয়েছেন বা পত্রিকা প্রকাশ করেছেন এমন নজির বিরল। ফলে, তিন ডজনেরও বেশি টিভি চ্যানেল এবং তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি সংবাদপত্র না পারছে দর্শক-পাঠকের চাহিদা পুরণ করতে, না পারছে টিকে থাকার মত আয় বাড়াতে।

দলীয় আনুগত্য, যোগ্যতা প্রমাণের প্রতিযোগিতা ছাড়াই লাইসেন্স পাওয়ার কারণে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং অঘোষিত সরকারী নিয়ন্ত্রণের কারণে সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটও এমন চরমে। টিভি চ্যানেল আর সংবাদপত্রের সংখ্যাধিক্য এই শিল্পের জন্য সমস্যা তৈরি করলেও এতে লাভবান হচ্ছে সরকার। প্রথমত: সাহায্যের (নীতিগত ও বস্তুগত) জন্য সরকারের প্রতি সবার মুখাপেক্ষিতা বাড়ছে; আর দ্বিতীয়ত: সরকার গণমাধ্যমে বহুত্বের বিষয়টিকেই তার গণতান্ত্রিক চরিত্রের প্রমাণ হিসাবে প্রচার করছে। অথচ, বেশি চ্যানেল আর বেশি পত্রিকা মানেই বেশি স্বাধীনতা নয়।   

গণমাধ্যমের মধ্যে আবার সংবাদপত্রগুলো পড়েছে বাড়তি বিপত্তির মুখে। টিভি চ্যানেল নানাধরণের বিনোদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করেও লাভজনকভাবে চালানো সম্ভব। কিন্তু, সংবাদপত্রের সাফল্য নির্ভর করে সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা, তথ্যের গভীরতা, খবরের পেছনের খবর, নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ, বিভিন্ন মতের যথাযথ ও ভারসাম্যর্পূণ প্রতিফলনের মাধ্যমে। সংবাদপত্রের পাতায় এসব উপাদান ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হলে সংকট মুক্তি অসম্ভব। বর্তমান গুমোট রাজনৈতিক পরিবেশে এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত এবং বিস্তৃত হওয়াই স্বাভাবিক।

রাতের ভোটের মাধ্যমে মানুষ যেভাবে ভোটের অধিকার হারিয়েছে মতপ্রকাশের অধিকার হারানোর ধারাবাহিকতা সেভাবে কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা আমাদের অজানা। যা লিখতে চাই লিখতে পারি না কথাটুকু বলার স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখার জন্য ধন্যবাদ। এটুকু টিকে না থাকলে উত্তর কোরিয়ার মত দেশের সঙ্গে আমাদের আর ফারাক করা যেত কিনা সন্দেহ। কিন্তু, এটুকু স্বাধীনতায় সংবাদপত্র টেকে না, সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে।

গণমাধ্যমের গণছাঁটাইয়ের প্রশ্নে বাংলাদেশে অনেকেই প্রযুক্তির অগ্রগতির অনুসঙ্গ হিসাবে আর্বিভূত হওয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর জনপ্রিয়তা এবং দাপটের কথা বলেন। সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের বদলি সামাজিক মাধ্যমে যে আলোড়ন তোলে তাতে ফিনল্যান্ড থেকে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল বলে তাঁর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছিল। ফেসবুক ও টুইটারের এই ক্ষমতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। মুহুর্তের মধ্যে যে কোনো ঘটনার খবর প্রচার বা কথিত ব্রেকিং নিউজের ক্ষেত্রে টিভি-রেডিওর যে একাধিপত্য ছিল সামাজিক মাধ্যম তার অনেকটাই অবসান ঘটিয়েছে। সামাজিক মাধ্যম স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক গণতন্ত্রায়ন ঘটিয়েছে বলেও অনেকে বলে থাকেন। তবে, বাস্তবতা হচ্ছে, প্রচলিত সংবাদমাধ্যমের মতোই সামাজিক মাধ্যমেও সরকার নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করতে পারে। বিগত নির্বাচনে সামাজিক মাধ্যমে অনিয়ম-জালিয়াতি-অন্যায়ের প্রশ্নে আলোড়ন কিন্তু সরকার নির্বিঘ্নেই উপেক্ষা করেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে সংবাদপত্রের ভবিষ্যত কী ? দূর্বল গণতন্ত্রে সংবাদপত্রের ভবিষ্যত ঝাপসা হওয়ারই কথা। অর্থাৎ, গণতন্ত্রের সংকট কাটলে সংবাদপত্রের স্বাভাবিক বিকাশের পথ উন্মোচিত হবে এবং যোগ্যরা নিশ্চিতভাবে সজীব-সচল থাকবে। আর, দেশের উল্টোমুখি যাত্রায় করুণানির্ভরতায় বিশ্বাসীরা ধুঁকে ধুঁকে ক্ষয়িষ্ণুতার পথে ধাবিত হবেন।

প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা এবং সামাজিক মাধ্যমের দাপটের মুখে সংবাদপত্রগুলো কিভাবে টিকে আছে এবং থাকবে সে বিষয়ে ব্রিটেনের ২৩৫ বছরের পুরোনো পত্রিকা দ্য টাইমসের সম্পাদক জন উইদারোর অভিজ্ঞতা, প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনার কথা শুনলাম গত সোমবার। ব্রিটেনের সম্পাদকদের সংগঠন সোসাইটি অব এডিটরসের সঙ্গে সৌভাগ্যক্রমে আমার যোগাযোগ হয় বছর দশেক আগে এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বব স্যাচওয়েলের সূত্র ধরে। বছর দুয়েক আগে অসুস্থতার কারণে অবসরে যাওয়া বব স্যাচওয়েলের সম্মানে সোসাইটি স্যাচওয়েল লেকচারের আয়োজন করছে। এবারে দ্বিতীয় লেকচারে বক্তা ছিলেন জন উইদারো। মি উইদারোর নেতৃত্বে টাইমস সাম্প্রতিক বছরগুলোর লোকসান কাটিয়ে আবারও মুনাফার মুখ দেখতে শুরু করেছে। ছাপা কাগজের বিক্রি দুই শতাংশ হারে কমলেও প্রচারসংখ্যা এখনও পাঁচ লাখ। অনলাইনে টাইমস ও সানডে টাইমসের পয়সা দেওয়া গ্রাহকের সংখ্যাও পাঁচ লাখ। বিনা পয়সায় সীমিতসংখ্যক খবর পড়ার জন্য তালিকাভুক্ত গ্রাহক পঞ্চাশ লাখ। বিশ্বের নামকরা কাগজগুলোর মধ্যে টাইমস হচ্ছে পে-ওয়াল দিয়ে পত্রিকা অনলাইনে দেওয়ার অন্যতম পথিকৃত। অনেকে পে-ওয়ালের স্থায়ীত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষণ করলেও পত্রিকাটি সাফল্যের নজির গড়েছে।

টাইমস সম্পাদকের কথায় নতুন প্রযুক্তিকে সৃজনশীলতার সঙ্গে কাজে লাগানোই হচ্ছে তাঁদের সাফল্যের রহস্য। পত্রিকাটি রেডিও-টিভি-সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে নিউজ ব্রেক করার সার্বক্ষণিক প্রতিযোগীতায় লিপ্ত নয়। বরং, দিনের নির্দিষ্ট কয়েকটি সময়ে তারা খবরের সারাংশগুলোর সংকলন প্রকাশ করে। বিভিন্ন মাধ্যমে যখন খবরের  ছড়াছড়ি তখন তাঁরা মনোযোগী হয়েছেন কিভাবে পাঠকের কাছে সামগ্রিক চিত্রটি তুলে ধরা যায় সেদিকে। এজন্যে তাঁরা নজর দিয়েছেন চারটি উপাদানে : মন্তব্য, বিশ্লেষণ, একান্তই নিজস্ব এবং অনুসন্ধান (কমেন্ট, অ্যানালিসিস, এক্সক্লুসিভ ও ইনভেস্টিগেশন)। সংবাদপত্রের ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার যুগে প্রতিবেদন চুরি বা নকলের প্রবণতা কতটা প্রকট হয়েছে তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন এখন যে কোনো প্রতিবেদনের নিজস্বতার মেয়াদ শুধু তা প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত। কেননা, প্রযুক্তির কল্যাণে কপি-পেস্ট এখন মুহুর্তের ব্যাপার। তবুও, স্বকীয়তাই পাঠককে টানে।  

সংবাদপত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও ( আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স - এআই) তাঁরা কাজে লাগাচ্ছেন। তবে, পত্রিকাটির সুপরিচিত কলামিস্টদের ভাষা এবং বিশ্লেষণক্ষমতা এআই কোনোদিন অর্জন করবে বলে টাইমস সম্পাদক মনে করেন না। তথ্য পাওয়া ও তার তাৎপর্য্য বোঝানোর ধারা অতীতে যা ছিল, এখনও তা টিকে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে তাঁর বিশ্বাস। নিজের পত্রিকার পাশাপাশি তিনি নিউইর্য়ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, গার্ডিয়ানের সাফল্যের কথা বলেন। তাঁর কথায় পত্রিকার উপাদান এবং লক্ষ্য একই আছে, বদলেছে শুধু প্রকাশের মাধ্যম। তবে, এই মাধ্যম বদলের বিষয়েও তাঁর অভিমত ছাপা পত্রিকা টিকে থাকবে এবং কোনো পত্রিকা যদি শুধু ডিজিটাল সংস্করণের পথ বেছে নেয় তবে তা দ্রুতই জনমানস থেকে হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। এর নজির হচ্ছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট। পত্রিকা হিসাবে ছাপানো বন্ধ হওয়ার পর ডিজিটাল মাধ্যমে তার উপস্থিতি ক্রমশই দৃষ্টির বাইরে চলে যাচ্ছে।

সংবাদপত্র এবং বৃহৎ অর্থে গণমাধ্যমের সামনে এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গুগল এবং ফেসবুকের মত প্রযুক্তিনির্ভর দৈত্যসম প্রতিষ্ঠানগুলো। গণমাধ্যম অতীতে যেসব বিজ্ঞাপন পেত, তার সিংহভাগই নিয়ে যাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। অথচ, তারা প্রকাশ করছে অন্যের তৈরি সামগ্রী (কনটেন্ট)। সাংবাদিকতায় তাদের কোনো বিনিয়োগ নেই এবং সাংবাদিকরা যেসব ঝুঁকি নেন সেগুলো এড়াতে বা তার ক্ষতি পোষাতে তাদের কোনো ব্যয় নেই। কিন্তু, তাদের সৃজনশীল সামগ্রীর প্রচার-প্রসারেই এসব প্রযুক্তি কোম্পানি বিজ্ঞাপন পায় এবং লাভ বাড়ে। এসব প্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক পরিসরে সংবাদপত্রের সৃষ্টি প্রকাশ করে কিন্তু প্রকাশক হিসাবে কোনো দায় গ্রহণ করে না। টাইমসের সম্পাদক এই চ্যালেঞ্জের বিষয়ে আলোকপাত করে বলেন যে এগুলোর একচেটিয়া দাপট ভেঙ্গে দেওয়া প্রয়োজন। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য নিয়মনীতি তৈরি ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন যে যুক্তরাষ্ট্রও অচিরেই একইধরণের ব্যবস্থা নেবে।  

সোসাইটি অব এডিটরসের মঞ্চের একপাশে লেখা ছিল মানুষের জানার অধিকারের জন্য লড়ছি (ফাইটিং ফর দ্য পিপলস রাইট টু নো)। দেশ-কাল ভেদে সবজায়গাতেই সাংবাদিকদের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের কাছে তথ্য অবিকৃত অবস্থায় পৌঁছে দেওয়া, ক্ষমতাধররা যেভাবে চান সেভাবে নয়। তাই সংবাদমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাশা আত্মঘাতি বৈ অন্য কিছু নয়।  

(১৩ জুন, ২০১৯র প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের কলাম।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...