সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রোহিঙ্গাদের জন্য মানচিত্র বদলের প্রস্তাব!

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার স্বদেশে ফেরার বিষয়ে যেমনটি আশংকা করা হয়েছিল, তেমনটিই ঘটেছে। যত শিগগির সম্ভব তাদেরকে দেশে ফেরানোর কাজ শুরু হবে বলে মিয়ানমারের আশ্বাসে বিশ্বাস রাখা যে ভূল ছিল, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন। বাংলাদেশের কারণে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি বলে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছেন যে দেশটি মিথ্যাচার করছে।  তাঁর পূর্বসুরি অবশ্য নীতিকৌশলে কোনো ভুলের কথা মানতে রাজি ছিলেন বলে মনে হয় নি। বিশেষত; আর্ন্তজাতিক ফোরামে সমস্যাটির সমাধানের কৌশল অনুসরণের দাবি উঠলেও চীন এবং ভারতের উৎসাহে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে সমাধান সন্ধানেই তিনি আস্থা রেখেছিলেন। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে গত প্রায় দুবছরে বহু কথা লেখা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে। কিন্তু, এই জটিল সংকট এখন আরও জটিলতার দিকে যাচ্ছে কিনা সেই প্রশ্নটি বিবেচনা জরুরি হয়ে পড়েছে।

নতুন যে জটিলতার আশংকা দেখা যাচ্ছে তার ইঙ্গিত মেলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বাজেট বিষয়ক শুনানিতে। কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের এশিয়া প্রশান্ত-মহাসাগরীয় উপ-কমিটির চেয়ারম্যান ব্রাড শেরম্যান রোহিঙ্গাদের জন্য মানচিত্রটাই বদলে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে দেশটি থেকে আলাদা করে দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার সম্ভাবনার কথা বিবেচনার জন্য পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত ১৩ জুন অনুষ্ঠিত ওই শুনানির সূচনা বক্তব্যে ব্রাড শেরম্যান বলেন সুদান থেকে দক্ষিণ সুদানকে আলাদা করে একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে যুক্তরাষ্ট্র যদি সমর্থন করতে পারে তাহলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কেন একইধরণের পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না?

কংগ্রেস সদস্য শেরম্যান সূচনা বক্তব্যে এই ধারণার কথা বলেই ক্ষান্ত হননি। শুনানিতে অংশ নেওয়া পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিনিধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহায়তা প্রতিষ্ঠান, ইউএসএআইডির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসকের উদ্দেশ্যে তিনি পরে আবারও একই প্রশ্ন করেছেন। দক্ষিণ সুদানের সঙ্গে মিয়ানমারের পরিস্থিতির কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন যে সুদান সেখানকার নাগরিকদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করেনি। কিন্তু, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করছে, তাদেরকে পাসপোর্ট দেওয়া হয়না এবং অন্যান্য অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত। মিয়ানমারে একটি গণহত্যাও সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন যে মিয়ানমার যদি রাখাইনের রোহিঙ্গা নাগরিকদের দায়িত্ব নিতে না পারে, তাহলে যে দেশ তাদের দায়িত্ব নিয়েছে, সেই বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইনকে জুড়ে দেওয়াই তো যৌক্তিক পদক্ষেপ। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিনিধিত্বকারী কূটনীতিকরা অবশ্য কংগ্রেসম্যান শেলম্যানের বক্তব্যকে সমর্থন বা নাকচ কোনোটিই করেন নি।   

এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে রয়েছে চীনকে মোকাবেলা করার নীতি। ভারত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের প্রভাববলয় যাতে বিস্তৃত না হয় সেটাই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। কথিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির আলোকে কংগ্রেসম্যান শেরম্যানের এই বক্তব্যকে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওই শুনানিতে পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যালিস ওয়েলস বলেছেন : ভারতমহাসাগর ও প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলে উন্মুক্ত ও অবাধ বাণিজ্য, নৌচলাচলের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং শান্তির্পূণ উপায়ে বিরোধনিষ্পত্তিসহ আইনভিত্তিক ব্যবস্থার বিষয়ে (যুক্তরাষ্ট্র) প্রশাসন অঙ্গীকারাবদ্ধ। বৈশ্বিক বাণিজ্যে সত্তুর শতাংশ পরিবাহিত হয় এই ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় পথে এবং যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের সাগর ও আকাশপথকে কূটনৈতিক সম্পর্ক, উন্নয়ন উদ্যোগ এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে সুরক্ষা দেবে। ওই একই বক্তব্যে মিস ওয়েলস বলেন ওই অঞ্চলে আমাদের শরীক কোনো দেশে অস্থিতিশীল বা টেকসই নয় এমন অবকাঠামোর প্রকল্প গ্রহণ, যার পরিণতিতে অর্থনীতিতে অবাস্তব ঋণের বোঝা তৈরি হবে কিম্বা স্বচ্ছ্বতা ও গণতন্ত্রের রীতিনীতির অবক্ষয় ঘটাবে এমন কিছু আমরা চীন বা অন্য কোনো দেশকে করতে দিতে পারি না।  

যুক্তরাষ্ট্রের ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় নীতিকৌশলটির প্রতি যে দেশটির প্রধান দুই দলের সমর্থন রয়েছে সেকথাও মিস ওয়েলস কমিটিকে স্মরণ করিয়ে দেন। এক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলের সমঝোতার ভিত্তিতেই কংগ্রেসে এশিয়া রিঅ্যাশিওরেন্স ইনিশিয়েটিভ অ্যাক্ট পাশ করার কথা তিনি উল্লেখ করেন। এই পটভূমিতে কংগ্রেসম্যান শেরম্যানের প্রস্তাবকে একেবারে বিচ্ছিন্ন ব্যাক্তিগত অভিমত হিসাবে কি উপেক্ষা করা যায় ?

মিয়ানমারের প্রায় ৩৭ হাজার বর্গমাইল এলাকার এই রাজ্যটিতে চীনের বিশেষ আগ্রহের কথা কারও অজানা নয়। এই রাজ্যেই কিয়াকফিউতে চীন একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে। সাগর থেকে উত্তোলিত গ্যাস ইউনানে নিয়ে যেতে কিয়াকফিউ থেকেই নির্মাণ করেছে পাইপলাইন।অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা এই রাজ্যের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চীন সেখানে গড়ে তুলছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। চীনের বহুল আলোচিত এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বৈশ্বিক উদ্যোগ বেল্ট অ্যান্ড রোডের আওতায় চীন মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোরের (সিএমইসি) আওতায় রেল এবং সড়কসংযোগেরও অংশ হচ্ছে এই রাজ্য। সব মিলিয়ে বলা চলে, মিয়ানমারে চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রধান অংশই রয়েছে রাখাইন রাজ্যে। জাতিগত বিভাজন ও বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে রাজ্যটিতে শিল্পায়নসহ অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের কথা আর্ন্তজাতিক কমিশনের সুপারিশমালাতেও রয়েছে। রাজ্যটিতে ইতোমধ্যেই বড় আকারের চীনা বিনিয়োগ এসেছে। মিয়ানমার অবশ্য গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রকল্পটিকে কাটছাঁট করে সাতশো কোটি ডলারের বদলে একশো কোটি ডলারের কিছু বেশি অংকে নামিয়ে এনেছে। তবে, মূলকথা হচ্ছে, এই বন্দরটি ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের প্রভাব বজায় রাখার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বর্পূণ।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে আলোচিত প্রস্তাবটি এই সংকটে যেমন জটিলতা বাড়াতে পারে, তেমনই তা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে বাধ্যও করতে পারে। মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে এই প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য যে সহায়ক হবে না এমনটি বলা যাবে না। তবে, বাংলাদেশ তার দুই বৃহৎ এশীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কে কোনোধরণের টানাপোড়েন সৃষ্টির ঝুঁকি নেবে কিনা সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।

বৈশ্বিক রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলোর প্রভাববলয় বিস্তারের প্রতিযোগিতায় রোহিঙ্গা সংকট স্পষ্টতই একটা অংশ হয়ে পড়েছে। এই রাজনৈতিক রেষারেষির কারণেই রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যা প্রতিরোধে যেমন আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় নিষ্ক্রিয় থেকেছে, তেমনই মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের প্রশ্নেও কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ বাসভূমে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার প্রশ্নে ঐকমত্য থাকলেও তার প্রক্রিয়া এবং তদারকির প্রশ্নে রয়েছে মতভেদ। ফলে,  বৈষম্যমূলক নীতি পরিবর্তনে অনীহা, নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দানে অস্বীকৃতি এবং নানাধরণের কূটকৌশলে পুরো বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে এবং তা দীর্ঘায়িত হয়ে চলেছে। দাতা সংস্থা বা ত্রাণকর্মীরা নিজেদের স্বার্থে এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করছে বলে মূল সমস্যা থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করা হলেও মূল সমস্যা যে বৈশ্বিক রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তা অস্বীকার করা চলে না। অদূর ভবিষ্যতে এই প্রত্যাবাসন শুরু হবে এমন সম্ভাবনা যে ক্ষীণ সেকথা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিনিধির কথাতেও স্পষ্ট। ইউএসএইডের মিস গ্লোরিয়া স্টিল ওই শুনানিতে বলেছেন যে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশে অবস্থান যে দীর্ঘায়িত হবে তা মেনে নিয়েই বাজেটে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।  

এই বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুর ন্যূনতম মানবিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ঠিক কী পরিমাণ ব্যয় করা হচ্ছে তা নিয়ে আমাদের গণমাধ্যমের কোনো আগ্রহ চেখে পড়ে না। আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় মানবিক সহায়তা দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা যে প্রয়োজন মেটাতে পারছে এমন নয়। জাতিসংঘ প্রতি বছরেই অর্থায়নে ঘাটতির কথা জানাচ্ছে। এরকম বাস্তবতায় আশ্রয়দাতা দেশের ওপর যে চাপ পড়ছে তা থেকে সহসা আমাদের মুক্তি নেই। সুতরাং, অকার্য্যকর নীতিকৌশল পর্যালোচনা করে নতুন পথে চলার কথাও ভাবা প্রয়োজন। 
(২৭ জুন, ২০১৯‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের নিবন্ধ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...