সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জরুরি জিজ্ঞাসা - বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী


কাহিনিটা অনেকটা এরকম। একটি অনগ্রসর জেলায় সম্ভাবনাময় তরুণদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে সরকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলো। বিশ্ববিদ্যালয় পেয়ে এলাকার লোকজন তো মহা খুশি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় শুধু যে এলাকার ছেলেমেয়েদের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে, তা-ই নয়, অন্যান্য জায়গা থেকে জ্ঞানী-গুণীদের সমাবেশ ঘটেছে, নতুন নতুন ভবন গড়া হয়েছে , শিক্ষা-গবেষণার জন্য আধুনিক বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম এসেছে, অনেক মানুষের কাজের সংস্থান হয়েছে, স্থানীয় লোকজনের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হয়ে যিনি আসেন তাঁকে ঘিরে তৈরি হয় অনেক প্রত্যাশা। এলাকার লোকজনও তাঁকে সমীহ করেন, শ্রদ্ধা এবং আস্থায় তাঁর অবস্থান অনন্য হয়ে ওঠার কথা।
গত এক দশকে এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে অনেকগুলো। কিন্তু, দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণী উপাচার্যগণের অনেকেই তাঁদের পদমর্যাদার সঙ্গে অসঙ্গতির্পূণ বিভিন্ন কথাবার্তা ও কাজকর্মে তাঁরা যে শুধু বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন তা নয়, প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন ক্ষতি করছেন যা অনেককাল ধরে অনুভূত হবে। অবশ্য সরকারী অর্থে পরিচালিত পুরোনো প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরাও যে পিছিয়ে আছেন তা নয়। মাত্র সপ্তাহখানেকের সংবাদ শিরোনামগুলো স্মরণ করে দেখুন। খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তিনি চিরকুট দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই কয়েক ডজন ছাত্রলীগকর্মীকে ভর্তির সুবিধা করে দিয়েছেন। এরা পরে ছাত্র সংসদ (ডাকসু এবং হল সংসদগুলোর) নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কারসাজির দোষে দুষ্ট নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আনুগত্য ও পক্ষপাতের কারণেই যে তার ছাত্রসংগঠনের প্রতি এই উদারতা, সেরকম ধারণাকে নাকচ করা সহজ নয়। তার আগে সিনেটে ভিসি প্যানেল নির্বাচনের ফলাফলে তালিকায় নাম ওলট-পালট করার কেলেংকারির নৈতিকতার প্রশ্ন না হয় না-ই তুললাম।
ওদিকে প্রায় একইসময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কথিত পরিবেশনাশী উন্নয়ন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সৃষ্ট ক্ষোভ দমনে ছাত্রনেতাদের টাকা-পয়সা দেওয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগে নেতৃত্বে রাতারাতি যে রদবদল ঘটে গেল, তা রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের সমতুল্য। ছাত্রলীগের পদচ্যূত সভাপতি ও সম্পাদক হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্পে ৫ থেকে ৬ শতাংশ হারে কমিশন দাবি করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। এই অভিযোগ তিনি তখনই প্রকাশ করেছেন যখন একটি টেলিফোন সংলাপ ফাঁস হয়েছে। টেলিফোন সংলাপে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার হিসাব আছে, যে টাকা উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের মধ্যে নেতাদের ওজন অনুযায়ী ভাগ করে দিয়েছেন। উপাচার্য পরে অবশ্য দাবি করেছেন যে টেলিফোন সংলাপটি বানোয়াট এবং তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে অপদস্থ করতেই ষড়যন্ত্র করে ওই সংলাপের জন্ম দেওয়া হয়েছে। কেউ টাকা  না পেয়ে বলবেন লাখ লাখ টাকা পেয়েছেন, তা-ও ন্যায্য ভাগের দাবিদার ছাত্রলীগ নেতারা, এমন অবিশ্বাস্য যুক্তি উপাচার্য কীভাবে দিলেন তা ব্যাখ্যা করা কঠিন। তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা এতোটাই হালকা বা ঠুনকো যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক উপাচার্য আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন জাহাঙ্গীরনগরের মত ঘটনা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও হচ্ছে। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা থেকেই কথাগুলো বলেছেন এমনটি ধারণা করা নিশ্চয় অন্যায় হবে না?
শুরু করেছিলাম অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের কয়েকজনের বিতর্কিত কর্মকান্ড ও আচরণ নিয়ে। সে প্রসঙ্গেই ফিরে যাই। এই তালিকাটা একটু লম্বা। তাই যতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সবার কথা এখানে বিশদভাবে আলোচনার সুযোগ নেই। অতএব, দুএকজনের মধ্যেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখবো। কিছুদিন আগে সংবাদ হয়েছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। তাঁর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ এনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা একজোট হয়ে আন্দোলন করলেও তাঁকে পদত্যাগের হাত থেকে রক্ষা করে ছুটিতে পাঠিয়ে মেয়াদ পুরো করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঢাকায় বসেই তাঁর কাজ চালাচ্ছেন। মনে হয় উপাচার্যের পদটি শুধুমাত্র তাঁর জন্যই খন্ডকালীন। তিনি যতটা সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ব্যয় করেন, এনজিও এবং সংবাদপতের জন্য তার চেয়ে কোনো অংশে কম সময় ব্যয় করেন বলে মনে হয় না। তাঁর পূর্বসূরির বিরুদ্ধে পরিবারের সদস্যদেরসহ আত্মীয়-স্বজনদের জন্য পদ তৈরি করে ঢালাও নিয়োগদানের অভিযোগ ছিল। বর্তমান উপাচার্যও নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত নন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বতন উপাচার্যকেও নিয়ে কম হইচই হয়নি।
এঁদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর তিনি দ্বিতীয় উপাচার্য। কেউ কোনো প্রশ্ন করুক তা উনি একদমই সহ্য করতে পারেন না। আর, সমালোচনা করলে তো কথাই নেই। সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার। ফেসবুকে নজরদারি করার জন্য সম্ভবত তাঁর বিশেষ কোনো কর্মচারী বা বাহিনী আছে। শ্রেণিকক্ষ অপরিষ্কার থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও মন্তব্য (কমেন্ট) করায় গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাধরণের অনিয়ম-অসঙ্গতির খবর প্রকাশের জন্য তিনি ক্ষুব্ধ হন আইনবিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে। ফাতেমা ঢাকার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। তাঁর ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি ফেসবুকে এমন একটি প্রশ্ন লেখার কারণেই উপাচার্য তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ব্যাক্তির মধ্যেকার টেলিফোনের আলাপচারিতা যেভাবে সামাজিকমাধ্যমে চলে আসতে দেখা যায়, সেরকম একটি অডিওতে উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনকে টেলিফোনে ফাতেমার উদ্দেশে অনেক অশোভন কথাবর্তা বলতে শোনা যায়। তাঁকে বলতে শোনা যায় আমি বিশ্ববিদ্যালয় খুলছি বলেই তো তোর চান্স হইছে। না হলে তো তুই রাস্তা দিয়া ঘুরে বেড়াতি। আরেক জায়গায় ফাতেমার বাবা কোনোদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন কিনা এরকম প্রশ্ন তুলে কটু কথা বলতে শোনা যায়। অডিও রেকর্ডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী প্রশ্নটির প্রসঙ্গও উপাচার্যের বক্তব্যে রয়েছে। ফাতেমাকে বহিষ্কারের কারণ ব্যাখ্যা করতে মঙ্গলবার  যে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি অভিযোগ এনেছেন, ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে শিক্ষকদের সম্পর্কে কুরুচির্পূণ মন্তব্য করায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি এমনকি তাঁর নিজের ফেসবুক আইডিও ফাতেমা এর আগে দুবার হ্যাক করেছে বলে অভিযোগ করেছেন। যিনি ফেসবুকে শ্রেণিকক্ষ নোংরা থাকার কথা জানানোর জন্য ছয়জন শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে বহিষ্কার করেন, তিনি তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার পর কিছুই করেন নি এমন যুক্তি হাস্যকর। তাঁর এই অভিযোগের আসল উদ্দেশ্য সম্ভবত ওই শিক্ষার্থীকে ক্রমাগত অপরাধ করে অভ্যস্ত বা সিরিয়াল অফেন্ডার হিসাবে প্রমাণের চেষ্টা।
সবচেয়ে বড় কথা, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই তাঁর বিরুদ্ধে চরম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না। কোনো তদন্ত নেই, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেই। অথচ অভিযোগকারীই বিচারক এবং অভিযোগের বিচারে চরম শাস্তি। বশেমুবিপ্রবি আইন ২০০১ সালের  ৩৪ ধারায় শৃংখলা বোর্ড গঠনের কথা আছে। অথচ এসব বহিষ্কারের ক্ষেত্রে ওই বোর্ডের কোনো ভূমিকার কথা শোনা যায়নি। বরং, উপাচার্য তাৎক্ষণিক ও সংক্ষিপ্ত বিচারের পথ অনুসরণ করেছেন।এগুলো রাজা-রাজড়ারা করতেন। সামন্তবাদী মানসিকতায় পরিচালিত ব্যাক্তিমালিকানার প্রতিষ্ঠানেও এখন এধরণের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।  
উপাচার্য নাসিরউদ্দিন এর আগে, গত ১৫ মে ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন করায় ১৪ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করিয়েছিলেন। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া সরকার ও প্রশাসনবিরোধী প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন বহন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে তাঁদের ওইসব নোটিশ পাঠানো হয়। স্পষ্টতই: মে মাসে তাঁর ভূমিকা ছিল সরকারবিরোধী মত দমনের। আর, তাঁর এখনকার ভূমিকা আরও একধাপ ওপরে। এখানে তিনি নিজেই এতটা কর্তৃত্ববাদী যে তিনি তাঁর কোনো সমালোচনা সহ্য করতে রাজি নন।
গণতন্ত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয় মুক্তবুদ্ধি চর্চার তীর্থকেন্দ্র, যেখানে প্রশ্নের কোনো সীমানা থাকে না, যুক্তির পিঠে পাল্টা যুক্তি ও বিতর্কের ঝড় ওঠে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী কারও ওপরই সেখানে ক্ষমতার কর্তৃত্ব ও বিধিনিষেধের খড়্গ ঝুলে থাকে না। অথচ, আমরা চলেছি উল্টো পথে। রাষ্ট্রব্যবস্থায় যেভাবে গণতন্ত্র ও অধিকার সংকুচিত হয়েছে এবং হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সেই একই পথে ধাবিত হচ্ছে। একদল শিক্ষক এখন শুধু দলান্ধতা এবং সুবিধাবাদিতার নজির গড়ছেন, ছাত্ররাও সেই পথকে পাথেয় ভাবছে। আমাদের সবারই এখন ফাতেমার মত প্রশ্ন করা প্রয়োজন : বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী ?
(১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯এর প্রথম আলোয় প্রকাশিত নিবন্ধ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...