সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সরকার ক্যাসিনোতে কোন শুদ্ধি খুঁজছে


কিছুদিন ধরে গণমাধ্যমে একের পর এক বড় বড় দূর্নীতির খবর ফাঁস হচ্ছিলো। রুপপুরের বিদ্যূৎ প্রকল্পের বালিশের দাম জানার পর যখন তা পারমাণবিক বালিশ হিসাবে পুরিচিতি পেল তখন দূর্নীতির দায় চাপাতে বলা হলে ক্রয়কর্তা বিএনপির ছাত্রসংগঠন করতেন। কিন্তু, ফরিদপুরের হাসপাতালের পর্দা, বান্দরবানের ঘরের চালের টিন, মেডিকেল কলেজের বইয়ের মত একের পর এক সরকারী ক্রয়ের যেসব বিবরণ ছাপা হয়েছে সেগুলোর শিরোনাম এক নিবন্ধে ধরানো সম্ভব নয়। সরকারের ভেতরে প্রয়োজনীয় সংখ্যায় বিএনপিকর্মীর আকাল দেখা দেওয়ায় ওই অজুহাতও আর চলছিলো না। কিছুদিন পরপর ছোট-মাঝারি-বড়-অতিশয় বড় প্রকল্পগুলোর ব্যয় যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার খবর শোনা যায়, তাতে দূর্নীতির বিকেন্দ্রীকরণের চেহারা বুঝতে আর কারও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। পুলিশের ডিআইজি, কারা অধিদপ্তরের ডিআইজি, দূর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তার কোটি কোটি টাকার সম্পদের বিবরণগুলোর কথাও বা ভুলি কী করে।পাশাপাশি, জেলা প্রশাসক এবং পুলিশের ওসির মত দায়িত্বশীল কর্মকর্তার যৌন অপরাধের খবরগুলোতে প্রতিশ্রুত সুশাসনের কী দূর্গতিই না প্রকাশ পাচ্ছিলো।
দিন দশেক ধরে সেই আলোচনায় ছেদ ঘটিয়েছে ক্যাসিনো-বার-স্পাবিরোধী অভিযোন। প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ করে এখন ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান কেন ? সরকারের তরফে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলেনি। অজুহাত এসেছে দুটো প্রথমত: অন্যান্য সব খারাপ কাজের মত এটিও বিএনপির আমলেই শুরু হয়েছে এবং দ্বিতীয়ত: গ্রেপ্তারকৃতরা অধিকাংশই আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী, এঁরা আগে বিএনপি করতেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একসময়ে অনুপ্রবেশকারীদের কাউয়া বলতেন কিন্তু বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা গেছে এসব কাউয়ারা দলের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। এখন অবশ্য এঁদের কাউয়া না বলে ডাকা হচ্ছে হাইব্রিড।   
গণমাধ্যমে এখন প্রতিদিন কথিত ক্যাসিনোওয়ালাদের যেসব কাহিনী উঠে আসছে, সেগুলোতে একযুগ আগের সেনাসমর্থিত সরকারের দূর্নীতিবিরোধী অভিযানের কিছুটা মিল দেখা যায়। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হেফাজতে থাকা সন্দেহভাজন ক্যাসিনোওয়ালারা কথিত যেসব স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন তা কোনোধরণের যাচাই-বাছাই ছাড়া ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। তবে, ক্যাসিনোওয়ালারা তাঁদের পৃষ্ঠপোষক কোন কোন নেতাদের নিয়মিত উপঢৌকন পাঠাতেন বা বখরা দিতেন সেই নামগুলো রহস্যের আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে। ওই রহস্যের পর্দা কোনোদিন সরবে বলেও মনে হয় না। দলীয় অর্ন্তকলহ বা ক্ষমতার দ্বন্দের কারণে একপক্ষ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার খেলায় নেমেছে, এমন জল্পনা সত্য হলে অবশ্য নেপথ্যচারী পৃষ্ঠপোষকদের দু-চারজনের নাম গায়েবি সূত্র থেকে গণমাধ্যমে আসলেও আসতে পারে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন জোট ২৮ সেপ্টেম্বর এক বৈঠকের পর জুয়া এবং ক্যাসিনোর প্রসার ঘটার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতার নিন্দা করেছেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এই খবরে অবশ্য কর্তৃপক্ষ কে বা কারা তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। ১৪ দলের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন সমন্বয়কারী আওয়ামী লীগের জৈষ্ঠ নেতা মোহাম্মদ নাসিম, ওয়ার্কাস পার্টির রাশেদ খান মেনন এবং জাসদের হাসানুল হক ইনু। এঁরা তিনজনই সরকারের আগের মেয়াদে অর্থাৎ গতবছর পর্যন্ত মন্ত্রী ছিলেন। একটি রাষ্ট্রে সরকারের চেয়ে বড় কর্তৃপক্ষ আর কে থাকতে পারে? এই সাবেক এই তিন মন্ত্রী যদি তা ব্যাখ্যা করে বলতেন তাহলে আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে দোষীদের চিনতে সুবিধা হোত। রাজধানীর কথিত অন্ধকার জগতের কায়-কারবার আইন-শৃংখলাবাহিনীর মত তাঁদেরও ১০ বছরে নজরে পড়েনি এরকম অজুহাত দেওয়ার আগে তাঁদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করা উচিত ছিল।
ছাত্রলীগের এক সভায় প্রশাসনে নিজেদের লোক দিয়ে ২০১৪র একতরফা নির্বাচন সফল করার কথা বলেছিলেন যিনি সেই এইচ টি ইমাম এবং সরকারের প্রচারমন্ত্রী বলেছেন দেশে জুয়া এবং ক্যাসিনোর শুরু জিয়ার আমলে। প্রচারমন্ত্রী আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন যে লন্ডনে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের কাছে নিয়মিত ক্যাসিনোর টাকা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে ২০০৫ সালে ক্ষমতা থেকে বিদায় হওয়ার ১৪ বছর পরও বিএনপির চালু করা ক্যাসিনোগুলো তাঁদের চোখে পড়েনি ? না কি গত প্রায় ১১ বছর ধরে তাঁদের সরকার বিএনপি দমনে এতোই ব্যস্ত ছিল যে অন্য কোনোকিছুতে তাঁরা নজর দেওয়ার ফুরসত পাননি ?
সামগ্রিকভাবে দূর্নীতিবিরোধী অভিযান হলে, শুধুমাত্র কয়েকজন ঠিকাদার গ্রেপ্তার হলেই কি সব দূর্নীতির অবসান হয় ? ব্যাংকের টাকা নয়-ছয়, শেয়ারবাজারের লুটপাট, জমি দখল, নদী দখল, কমিশন বাণিজ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দলীয় উপাচার্যদের বেশুমার কেনাকাটা এবং কাগুজে উন্নয়ন প্রকল্প এগুলোর বিষয়ে কোনো নড়াচড়া নেই কেন? অভিযানটিকে অনেকে ক্ষমতাসীন দলে শুদ্ধি অভিযান বলেও অভিহিত করেছেন। ছাত্রলীগের দুজন শীর্ষনেতাকে অপসারণ এবং যুবলীগের কয়েকজন মেঠোনেতার ধরপাকড়ই এই ধারণার জন্ম দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ-যুবলীগের কিছু নেতাকর্মীর বাড়াবাড়িতে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার খবর প্রকাশের পরই এই অভিযান শুরু হয়। তাঁর অনুপস্থিতিতে অভিযানে ক্ষমতাসীন বলয়ের বড়মাপের আর কেউ আটক হননি। কমিশন দাবি করায় দুজন ছাত্রনেতা ছাত্রলীগের পদ হারালেও চাঁদাবাজির অপরাধে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও হয় নি।
এখন পর্যন্ত অভিযানের ধরণ দেখে মনে হয় যে এর লক্ষ্য হচ্ছে যুবলীগ।অথচ, নানাধরণের দূর্নীতিও অপরাধের অভিযোগ দলটির অন্য অনেক নেতার বিরুদ্ধেই রয়েছে। যেমন বলা যায়, মাদক কারবারের অভিযোগের শীর্ষে থাকা কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ বদির কথা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সরকারের গোপন নথিতেই আটকে আছে। কোনো মামলা বা বিচারের পথে এগোয় নি।নানারকম অভিযোগের কারণে তাঁর মত আরও কয়েক ডজন নেতার সংসদে ফেরার সুযোগ না হলেও তাঁদের কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়েরের খবর পাওয়া যায় না।সুতরাং, একে শুদ্ধি অভিযান বলা বিভ্রান্তি সৃষ্টিরই নামান্তর।
চলমান অভিযানে আটককৃতদের ধনসম্পদে নাটকীয় সমৃদ্ধিকে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বা ব্যাতিক্রম হিসাবে তুলে ধরার একটা চেষ্টা আছে। কিন্তু, গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের সময়ে নির্বাচন কমিশনে মন্ত্রী- সাংসদদের পেশ করা হলফনামায় ঘোষিত সম্পদের হিসাবগুলোর কথা এতো দ্রুত সবার ভুলে যাওয়ার কথা নয়। মন্ত্রী হয়ে আয় বেড়েছে, বাড়-বাড়ন্ত সম্পদেও শিরোনামের খবরে যে মাত্র আটজন মন্ত্রীর হলফনামার বিশ্লেষণ ছিল তাঁদের কয়েকজন বর্তমান মন্ত্রীসভাতেও আছেন। ওই হিসাবে একজনের সম্পদ পাঁচ বছরে দশগুণ বাড়ার তথ্য ছিল। ২০১৩ আর ২০১৮র হলফনামার তুলনামূলক বিশ্লেষণে সাংসদদের কারো কারো সম্পদ যে হারে স্ফীত হয়েছে বলে দেখা গেছে তাকে অবিশ্বাস্য বললেও কম বলা হয় (৫ বছরে গুলশান-উত্তরায় চারটি ফ্লাট, বাড়ির মালিক, কিম্বা ১০ বছরে অস্থাবর সম্পদ ৪৫ গুণ বেড়েছেশিরোনামের সংবাদ)। সাংসদদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের কতজন ব্যাংক-ইন্সুরেন্স-বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক হয়েছেন তার নির্ভরযোগ্য তালিকা পাওয়া দুষ্কর। এগুলো দূর্নীতির ফসল কিনা তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু, এই ফুলে-ফেঁপে ওঠার ব্যাখ্যা প্রকাশ করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারের কাছ থেকে সেই জবাবদিহিতা আদায়ের কাজটি যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরোধী রাজনৈতিক দল কিম্বা দুদকের মত প্রতিষ্ঠান সেগুলোর কার্যকারিতা কতটা ধ্বংস করা হয়েছে, তা আমাদের সবারই জানা।
বর্তমান অভিযানে লক্ষ্যণীয় একটি বিষয় হচ্ছে, পুলিশের চেয়ে র‌্যাবের প্রাধান্য এবং অপেক্ষাকৃত বেশি সাফল্য।এমনও দেখা গেছে পুলিশ যেখানে ব্যর্থ হয়েছে সেখানে পরে র‌্যাব গিয়ে সাফল্য দাবি করেছে। অভিযান শুরুর দিন দশেক পর ২৮ তারিখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে র‌্যাবকে। স্বভাবতই এমন প্রশ্নও উঠেছে যে, বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের জন্য দেশের বাইরে বিশেষ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে ব্যাপকভাবে নিন্দিত আইন-শৃংখলাবাহিনীর এই শাখাটির ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য থেকে এই সিদ্ধান্ত কিনা?
রাজনীতির সংকট প্রকট হলে শাসনব্যবস্থায় তার যে একটা সর্বগ্রাসী প্রভাব পড়ে তা মোটামুটি সর্বজনস্বীকৃত। আর, শাসনব্যবস্থার সংকটকালে দূর্নীতি এবং নানাধরণের অপরাধ দমনে চটকদার অভিযান চালানোর নজির প্রায় প্রতি দশকেই রয়েছে। স্বাধীনতার পর প্রথম সরকারের আমলে কালোবাজারি-মজুতদারির বিরুদ্ধে অভিযান, জিয়া এবং এরশাদের সামরিক শাসন জারির সময়ে এবং ১/১১র সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দূর্নীতিবিরোধী অভিযানগুলোর কথা এক্ষেত্রে স্মরণীয়। খালেদা জিয়ার দ্বিতীয়মেয়াদে অপারেশন ক্লিন হার্টও ছিল বহুল আলোচিত।ক্লিনহার্টের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সন্দেভাজন অপরাধীদের বিচারবর্হিভূত হত্যা। এটি ছাড়া অন্যগুলোর প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই ধরপাকড়ে যাঁরা আটক হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই কিছুদিন পর সদর্পে রাজনীতিতে ফিরে  এসেছেন। প্রয়োজনে কেউ দল বদল করেছেন, নয়তো অন্য কোনোভাবে রফা করে নিয়েছেন। মাশুল দিয়েছেন হাতে গোণা দু-চারজন। তবে, সাময়িককালের জন্য জনআলোচনার মোড় ঘুরে গেছে এবং কিছুটা হাততালিও মিলেছে। কিন্তু, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হয় নি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক সংকটের মূলে ছিল গণতন্ত্র হরণ কিম্বা সংকোচন। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ও গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার না ঘটলে সুশাসন ফিরবে এমন ভাবনা অবাস্তব।
(৩০ সেপ্টেম্বর , ২০১৯র প্রথম আলোয় প্রকাশিত)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...