সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গনতন্ত্রের ক্ষয়সাধন ও রাজনীতির হালচাল


গত বারো বছর ধরে ১৫ই সেপ্টেম্বর আর্ন্তজাতিক গণতন্ত্র দিবস পালিত হয়ে আসছে, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রত্যেককে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা ও শান্তি এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যয্যতা প্রতিষ্ঠায় তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। দূর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে, ২০০৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এই দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে বিশ্ব জুড়েই গণতন্ত্রের অধোগতি বেড়েছে। গণতন্ত্রের মান সম্পর্কে মোটামুাটভাবে গ্রহণযোগ্য মূল্যায়নের জন্য স্বীকৃত ফ্রিডম হাউজের ২০১৯ সালের প্রকাশিত বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচক সেরকমই বলছে। তারা বলছে, সূচকে প্রতিবছরই বৈশ্বিক গড় কমেছে এবং যেসব ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটেছে তার তুলনায় অবনতির পরিমাণই বেশি। এধরণের প্রতিষ্ঠানগুলোর সূচক নিয়ে বাংলাদেশে যাঁরা সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করে থাকেন, গত ডিসেম্বরের অভিজ্ঞতার পর ধারণা করি তাঁরা তা পাল্টেছেন। অনেকের কাছে এই দিবসটি পরিহাস বলেই মনে হয়।
ফ্রিডম হাউজ ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের মূল্যায়নে যুক্তরাষ্ট্রও বাদ যায়নি। তাদের বিবেচনায় বৈশ্বিক মানে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র শক্তিশালী হলেও আইনের শাসন, তথ্যভিত্তিক সাংবাদিকতা এবং গণতন্ত্রের অন্যান্য রীতিনীতির প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অব্যাহত আক্রমণের কারণে তা হুমকির মুখে রয়েছে। যেসব দেশকে পুরোপুরি মুক্ত হিসাবে বিবেচনা করা হয়, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানেও অবনমন ঘটেছে। দেশটির অবস্থান এখন জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের নীচে। তাদের বিবেচনায় বিশ্বের মোট ৬৮টি দেশে রাজনৈতিক এবং নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে অবনতি ঘটেছে।
বাংলাদেশ এই গণতন্ত্র সূচকে আগেও ছিল আংশিক মুক্ত শ্রেণীতে, এখনও তাই আছে। তবে, সূচকে অবনতি ঘটেছে, ৪৫ থেকে ৪১। রাজনৈতিক এবং নাগরিক অধিকারগুলো যেসব নিক্তিতে মাপা হয় সেগুলোর প্রায় সবগুলোতেই অবনতি ঘটেছে। স্পষ্টতই গতবছরের বহুল আলোচিত নিশিভোট বা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন এই অবনতির একটা বড় কারণ। অবাধ ও সুষ্ঠূ নির্বাচনে বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত কি না - এই প্রশ্নের জবাবে তারা সহিংসতা, বিরোধীপ্রার্থীদের আইনী এবং বেআইনী পন্থায় হয়রানি ও হুমকি, প্রতিদ্বন্দিতার সুযোগ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সংকোচন, আইনশৃংখলাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কর্মীদের ব্যাপকভিত্তিক ভোট জালিয়াতি, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সুনাম রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ না দেওয়ার কারণগুলো উল্লেখ রয়েছে। ফলে, নির্বাচনের মান নির্ধারণে বাংলাদেশের জুটেছে ৪ এর মধ্যে ১ পয়েন্ট। আগে এটি ছিল ২ পয়েন্ট। নির্বাচনী আইন এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার বিষয়েও একই অবস্থা। ৪ পয়েন্টের মধ্যে আগে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩, গত নির্বাচনে তা নেমে হয়েছে ২।
রাজনৈতিক দল গঠন এবং অবাধে তাদের অধিকার চর্চা, নির্বাচনের মাধ্যমে বিরোধীদের ক্ষমতায় যাওয়ার বাস্তবভিত্তিক সুযোগ, সামরিকবাহিনী, বিদেশি শক্তি, ধর্মীয় নেতা এবং একচেটিয়া বাণিজ্যিক প্রতিপত্তির অধিকারী গোষ্ঠীগুলোর প্রভাবমুক্ত হয়ে মানুষের মতপ্রকাশের সুযোগ আছে কিনা এসব বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ‌মূল্যায়ন করেই গণতন্ত্র সূচকের অবস্থান নির্ধারিত হয়। এছাড়াও রয়েছে জনপ্রতিনিধিরা অবাধে সরকারী নীতিনির্ধারণের সক্ষম কিনা, সরকারী দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কতটা শক্তিশালী ও কার্যকর  সরকার কতটা স্বচ্ছ্বতার সঙ্গে কাজ করে ইত্যাদি প্রশ্ন। এসব বিষয়েও পরিস্থিতির হয় অবনতি ঘটেছে , নয়তো তা স্থির হয়ে আছে।
এগুলোর বাইরে দুটো বিষয় এখানে উল্লেখ করা জরুরি, যেগুলো গণতন্ত্রকে দূর্বল করায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। একটি হচ্ছে আইনের শাসন এবং অপরটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও আমাদের স্কোর এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১। এর কারণ হিসাবে তাঁরা বলছেন রাজনৈতিক চাপ, হুমকি এবং স্বেচ্ছানিয়ন্ত্রণ বা সেলফ সেন্সরশিপ। এক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চিন্তার স্বাধীনতার বিষয়টিও বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
আইনের শাসন প্রশ্নে মোট ১৬ পয়েন্টের মধ্যে আমাদের কপালে জুটেছে ৪। বিচারবিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১, ফৌজদারি এবং সিভিল মামলাগুলোর ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের ক্ষেত্রেও ১, বেআইনী শক্তিপ্রয়োগ থেকে সুরক্ষার প্রশ্নে ১ এবং আইন, নীতি ও চর্চায় জনগোষ্ঠীর সবার প্রতি সমআচরণ করার বিষয়েও ১। ২০১৭ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে পদত্যাগে বাধ্য করাসহ বিচারকদের ওপর চাপপ্রয়োগের বিষয়টিকে বিচারবিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আগের স্কোর ২ থেকে ১ কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে তাঁরা তুলে ধরেছেন।  
নির্বাচনব্যবস্থা ও আইনের শাসনের এই দৈন্যদশা কতটা গুরুতর আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এখনও তা উপলব্ধি করতে পারছেন কি না, তা বোঝা মুশকিল। নির্বাচনব্যবস্থায় আস্থা পুনরুদ্ধারের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বদলে বিরোধী দল বিএনপির অর্ধডজনের মত সাংসদ তাঁদের সংসদে আসতে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। অবশ্য, বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসাবেও যে মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে , তেমনটি মনে হয় না। না হলে যে নির্বাচন কমিশন নিয়ে এতো বিতর্ক সেই কমিশনের অধীনেই বিএনপি বিনা বাক্যব্যয়ে উপ-নির্বাচন, সিটি করপোরেশন এবং উপজেলাগুলোর নির্বাচনগুলোতে অংশ নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করত না। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের অনিয়মের যেসব অভিযোগ তারা উত্থাপন করেছিল, সেগুলোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনাররা একে একে কার্য্যত  স্বীকারোক্তি দিলেও তার প্রতিকারের দাবি হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এমনকি কমিশনারদের বিরুদ্ধে ব্যাক্তিগতভাবে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগেও বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর কোনো উচ্চবাচ্য নেই।
বলা হয়, গণতন্ত্রের অন্যতম একটি গুরুত্বর্পূণ ও মৌলিক উপাদান হচ্ছে নির্বাচন, যাতে নাগরিকরা ভোট দেওয়ার মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকেন। সেই অধিকারটি হারানোর বিষয়ে কোনো রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক দল কীভাবে নির্বিকার থাকতে পারে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন বাংলাদেশকে যখন আবারো একটি একদলীয় রাষ্ট্র হিসাবে প্রতীয়মান করতে যাচ্ছিলো, তখন বিএনপির হাতে গোণা সাংসদরা সংসদে যোগ দিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও জোটকে নতুন জীবন দিয়েছেন। তাঁদের বৈধতার সংকট অনেকটাই কেটে গেছে। উপ-নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ এই বৈধকরণকে আরও এগিয়ে নেবে। বিনিময়ে হয়তো তাঁরা তাঁদের কারাবন্দী দলীয়প্রধানের মুক্তি প্রত্যাশা করেন। হয়তো এই ধারাবাহিকতায় তাঁদের দলীয় নেতাকর্মীদের মামলা-গ্রেপ্তার-হয়রানি অনেকটাই কমেছে। কিন্তু, ব্যাক্তি এবং দলীয় বৃত্তের বাইরে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন কি ঘটছে ?
আইন-শৃংখলাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহার ও অপরাধের যেসব গুরুতর অভিযোগ প্রতিদিনই প্রকাশ পাচ্ছে, সেগুলোর প্রতিকার মিলবে কিভাবে ? উন্নয়নের আড়ালে অবিশ্বাস্য সব দূর্নীতির যেসব তথ্য প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় উঠে আসছে, তার জবাবদিহি কোথায় ? মন্ত্রীরা এগুলোকে ছিঁচকে চুরি অভিহিত করে কার্য্যত স্বীকার করে নিয়েছেন দেশে এখন চুরির মহামারি চলছে। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের চিঠি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বক্তব্যে আলামত মেলে যে দেশে এখন সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হচ্ছে কমিশন-বাণিজ্য। আর, ছাত্রলীগই যখনকোটি কোটি টাকার কমিশন লেনদেনে অভ্যস্ত, তখন অন্যান্য লীগের নেতাকর্মীরা আরও কত বেশি লাভজনক কারবারে জড়িত? ব্যাংক এবং শেয়ারবাজারে বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠীর যথেচ্ছাচারের শিকার নিরীহ আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের পাশে দাঁড়ানোর কি কেউ আছে ?
সন্দেহ নেই, গণতন্ত্রের জন্য সময় এখন প্রতিকূল। কিন্তু, স্রোতের বিপরীতে লড়াইয়ের কোনো বিকল্প নেই। সেই লড়াইয়ে অনেকক্ষেত্রেই নাগরিকগোষ্ঠীগুলোই অগ্রণী ভূমিকায় এগিয়ে আসছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। ছাত্রদের সাম্প্রতিক দুটো আন্দোলন এবং ওয়াসার পানি নিয়ে ভোক্তাদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সেই আলামতই মেলে। রাজনীতিকদের মনে রাখা প্রয়োজন, তাঁরা যদি এসব নাগরিকগোষ্ঠীর ভূমিকা থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হন তবে তারা এবং তাঁদের দলগুলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। নতুন রাজনৈতিক বিকল্পের আর্বিভাব ঘটুক, আর না-ই ঘটুক, তাঁদের পুর্নবাসন বা পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা ক্রমশই ক্ষীণ হতে থাকবে।
(১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯র প্রথম আলোয় প্রকাশিত।)   

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...