সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একটি মধুর সফর ও প্রবাসী ভোটার


সিঙ্গাপুরের চেয়ে ভালো অর্থনীতির দেশে মৌমাছির চাষ বাড়িয়ে মধু উৎপাদন বাড়াতে ইউরোপ যেতে চান ১৩০ জন আমলা। তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি শিরোনামে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেওয়া এক প্রকল্প প্রস্তাবে কর্মকর্তাদের ইউরোপ সফরের এই সুযোগ রাখা হয়েছে। (মধু ভ্রমণে ইউরোপ যাবেন ১৩০ কর্মকর্তা, দেশ রুপান্তর, ১৪ ফেব্রুয়ারি)। সফরকালে শুধু মধু চাষ দেখাই নয়, তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জ্ঞান অর্জন করবেন তারা। আমলাদের মধু ভ্রমণের প্রতিযোগিতার আরও নানারকম খবর সম্প্রতি পত্রিকার পাতায় একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুকুর খনন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক গর্ভণরের বাড়িতে তাপানুকুল যন্ত্র বসানোর বিষয়ে প্রশিক্ষণের মত হাস্যকর বিষয়গুলোর শিরোনামও অনায়াসে মধুর সফর হতে পারতো।
সম্প্রতি লন্ডনে এরকম এক মধুর সফর করে গেছেন দেশে আর্ন্তজাতিক মানের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কুতিত্বের দাবিদার প্রধান নির্বাচন কমিশনার খান মোহাম্মদ নুরুল হুদা। ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কষ্ট থেকে মুক্তিদানকারী কমিশন প্রধানের এই সফরের সরকারিভাবে ঘোষিত কারণ ছিল প্রবাসীদের ভোটার করার লক্ষ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করা। সফরটি তাঁর কতটা মধুময় ছিল তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়, তবে যুক্তরাজ্যের প্রবাসীদের মধ্যে যে কিছুটা তিক্ততা বেড়েছে তা মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা চলে। স্থানীয় বাংলা সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তত সেরকম প্রতিক্রিয়াই চোখে পড়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের কাজটা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর মানে দাঁড়ালো আইপ্যাড দিয়ে সাংবাদিকদের নিবন্ধনের ওয়েবসাইটটি দেখানো এবং পদ্ধতিটা জানানো। কিন্তু, তাতেও দেখা গেল তাঁর বর্ণিত পদক্ষেপগুলোর সঙ্গে ভিডিও সংযোগের অপরপ্রান্তে থাকা কমিশনার রফিকুল ইসলামের ভাষ্য মিললো না। কমিশনার রফিকুল ইসলাম এর আগে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধনের বিষয়ে কথা বলতে গতবছরের জুলাই মাসে লন্ডন ঘুরে গেছেন। ফলে, দুটো ভিআইপি সফরের ফলাফল হচ্ছে নিবন্ধনের পদ্ধতি বর্ণনা।
বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সময়ে ১. প্রবাসী আবেদনকারীর বৈধ পাসপোর্টের ফটোকপি, ২. বিদেশি পাসপোর্টধারী হলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের ফটোকপি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র, ৩. বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে শনাক্তকারী একজন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের পাসপোর্টের কপি, ৪. বাংলাদেশে বসবাসকারী রক্ত-সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ের নাম, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ৫. বাংলাদেশে কোথাও ভোটার হননি মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা এবং ৬. সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। তবে, কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন যে প্রবাসীদের বাংলাদেশি পাসপোর্টের কপি জমা দিলেই চলবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকরা এসব নতুন বিধি-বিধান আরোপের বিষয়ে যেসব প্রশ্ন করেছেন কার্যত সেগুলোর কোনোটিরই সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেন নি। বরং, উল্টো বলেছেন যে দেশে যাঁর রক্তের সম্পর্কের কেউ নেই তাঁর ভোটার হতে হবে কেন?
যেসব দেশের প্রবাসীদের দ্বৈত নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তাঁরা তাঁদের বাংলাদেশি পাসর্পোট দেখিয়ে নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন করলে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো তাঁদের বিদেশি পাসর্পোটে নো ভিসা রিকোয়ার্ডসিল লাগিয়ে দেন, যাতে তাঁরা বিদেশি পাসপোর্টেই ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে যাওয়া-আসা করতে পারেন। পাসপোর্টেই যখন দূতাবাস একজন প্রবাসীর দ্বৈত নাগরিকত্বের স্বীকৃতি নিশ্চিত করছে তখন কোন যুক্তিতে নাগরিকত্বের সনদ অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির একটি জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঝক্কি প্রবাসীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা কোনোভাবেই বোধগম্য হয় না।  
দূতাবাস বাংলাদেশি পাসপোর্টের যথার্থতা যাচাইয়ের পরও দ্বৈত নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার পর তাঁকে অন্য আরেকজন প্রবাসীর শনাক্ত করা এবং দেশে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের পরিচয় নিশ্চিতকরণের এসব অযৌক্তিক শর্ত আরোপের আসল উদ্দেশ্য যে তাঁদেরকে ভোটার হতে নিরুৎসাহিত করা এটা বুঝতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়। দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী যাঁরা কোনো দলের হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করতে আগ্রহী একমাত্র তাঁরা ছাড়া অন্য কেউ এতোটা ভোগান্তি মানতে যাবে কেন?
কথিত আইএস-কনে শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের মামলায় সম্প্রতি ইংল্যান্ডের হাইকোর্ট বলেছে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব জন্মসূত্রে পাওয়া অধিকার, যা কেউ কেড়ে নিতে পারে না। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁরা এই রায় দিয়ে বলেছেন শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল হলেও সে রাষ্ট্রহীন হবে না, কেননা জন্মসূত্রে সে বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের শুরু মূলত ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্টের আদেশ জারির মাধ্যমে, যাতে ১৯৫১ সালের নাগরিকত্ব আইনকেই প্রায় হুবহু গ্রহণ করা হয়েছে। তবে, মাত্র একবছরের মধ্যেই , ১৯৭৩ এর রাষ্ট্রপতির আরেকটি আদেশে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পরে ১৯৭৮ সালে আবারও আরেকটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে তা সংশোধন করে যুক্তরাজ্য ছাড়াও ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোয় বসবাসরত প্রবাসীদের একই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রবাসীদের দ্বৈত নাগরিকত্বের স্বীকৃতির প্রশ্নে এই ইতিহাস উপেক্ষা করে বর্তমান কমিশন কার্যত তাঁদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার পথেই হাঁটছেন।
লন্ডনে অবস্থানের সময়ে খান মোহাম্মদ নুরুল হুদা যুক্তরাজ্যের ইলেক্টোরাল কমিশনের চেয়ার স্যার জন হোমসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো সূত্র উদ্ধৃত না করলেও বলা হয়েছে যে, স্যার জন বাংলাদেশের ইভিএম পদ্ধতির প্রশংসা করেছেন (সমকাল, ১৫ ফেব্রুয়ারি)। সৌজন্যের খাতিরে ইভিএমের প্রশংসার সময়ে স্যার জন রাতের ভোটের কৌশল শেখানোর কোনো অনুরোধ করেছেন কিনা সেটা অবশ্য জানা যায় নি। ব্রিটিশ নির্বাচন কমিশন বৈঠকটির বিষয়ে যদি কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতো তাহলে তা হয়তো আমরা আরও ভালো করে জানতে পারতাম। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় অবশ্য তিনি ইভিএম এর সাফই দিতে গিয়ে কারো প্রশংসার কথা বলেন নি। তিনি সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, জার্মানির কথা উল্লেখ করে বলেছেন সেখানে যুদ্ধের মত বিভিন্ন সদস্যদের  মোতায়েন করতে হয় না। তিনি বলেছেন লন্ডনে ভুয়া ভোটার নেই বলেই তারা ধরে নেয়। আর বাংলাদেশে মলম পার্টি, পকেটমার, ব্যাগ টানা পার্টি, ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত লোকদের নিয়েও কাজ করতে হয় নির্বাচন কমিশনকে (মলম পার্টি, পকেটমার নিয়েও কাজ করতে হয় ইসিকে: সিইসি, প্রথম আলো, ১৭ ফেব্রুয়ারি)।
মলম পার্টি, ব্যাগ টানা পার্টি বলে তিনি কাদেরকে বোঝালেন, জানি না। তবে, কোনো রাজনৈতিক দল তাঁর এই কথাকে গুরুত্ব না দিলেও সেটা উপেক্ষণীয় নয়। বিশেষত: নিজেদের নৈতিক অবস্থানটা উঁচুতে রাখতে না পারলেও রাজনীতিকদের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশে তিনি মোটেও কুন্ঠিত হননি। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের ভাষায় ভারতের  নির্বাচন কমিশনের চেয়েও আইনগতভাবে শক্তিশালী কমিশনের প্রধান হয়েও তিনি কেন পকেটমার বা গুলিস্তানের চাঁদাবাজদের মোকাবেলা করতে পারেন না সেটা উপলব্ধি করার সামর্থ্য অবশ্য সবার কাছে প্রত্যাশিতও নয়। ব্রিটেনের নির্বাচন কমিশন থেকে শিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা থাকলে তার লক্ষণ অনেক আগেই দেখা যেতো। অন্তত: নিজেকেই কমিশনের সর্বেসর্বা ভাবা কিম্বা একজন কমিশনারকে ক্ষমতাহীন করে রাখার মত ঘটনা আমাদের দেখতে হতো না। ক্ষমতাসীন দলকে নির্বাচনী আইন ভঙ্গের জন্য জরিমানা করা কিম্বা নির্বাচনী দূর্নীতির জন্য নির্বাচন বাতিলের মত নজির অনুসরণের ইচ্ছে বা সাহসের কথা বাদ দিলেও আর্থিক সততার বিষয়ে অন্তত তাঁরা নিজেদেরকে কোনোধরণের প্রশ্নের উর্ধ্বে রাখার চেষ্টা করতে পারতেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার পাঁচদিনের লন্ডন সফরকে তাই দেশের আমলাদের মধুময় সফরগুলোর থেকে আলাদা করা যাচ্ছে না।  
(২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০র প্রথম আলোয় প্রকাশিত।)
কামাল আহমেদ, সাংবাদিক

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...