সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

করোনাকালে সাংবাদিকতার বিপদ ও রুপান্তর


করোনাভাইরাস মহামারির ছোবল বিশ্বের কোনো দেশ এবং কোনো জনগোষ্ঠীকেই যেহেতু ছাড় দেয় নি, সেহেতু গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকতাও এখন এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অন্য সবকিছুর মতই গণমাধ্যমও আর তার ছকবাঁধা নিয়মে চলছে না। লকডাউন, কারফিউ কিম্বা চলাচলে নিয়ন্ত্রণের কারণে ছাপা কাগজ বিতরণ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় বিঘ্ন সৃষ্টির কারণে পত্রিকার প্রচারসংখ্যা কমেছে। কিন্তু, অনলাইনে পাঠকসংখ্যা বেড়েছে নাটকীয় হারে। টিভির দর্শকসংখ্যাও বেড়েছে। শ্রোতারা আবার রেডিওমুখী হয়েছেন। পাঠক-দর্শক-শ্রোতার চাহিদা পূরণে সাংবাদিকতা এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বর্পূণ ও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

রাজনৈতিক সংকট এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময়ে এরকম পাঠক-শ্রোতাদের আগ্রহকে ক্রাইসিস রিডিং /লিসেনিং বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।  মানুষ যখন তার বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের কাছে আস্থা রাখার মত তথ্য ও বিচার-বিশ্লেষণ আশা করে তখন সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে সেই প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা যে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু, এই প্রত্যাশা পূরণে গণমাধ্যম যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে তাও নজিরবিহীন। মোটাদাগে এই চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে : নানাধরণের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সঠিক এবং বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহ ও তা তুলে ধরা, সাংবাদিক ও কুশলীদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের অচলাবস্থায় প্রতিষ্ঠান চালু রাখার জন্য অর্থের সংস্থান করা।
নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থায় তথ্যপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার সমস্যা কতটা প্রকট হতে পারে তার অভিজ্ঞতা আমাদের অল্প-বিস্তর আছে। করোনা টেস্ট, রোগী শনাক্তকরণ, হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা, নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) ও কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের (ভেন্টিলেটর) সংখ্যা, কিম্বা, পোশাক কারখানা খোলা এবং বন্ধের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে অন্তহীন লুকোচুরিতে জনমনে প্রশ্নের শেষ নেই। দেশব্যাপী চাল চুরি, রাতেরভোটের  জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দূর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার, অসহায় দরিদ্র মানুষের বিক্ষোভের যেসব বিচ্ছিন্ন চিত্র সোশ্যালমিডিয়ায় আসছে মূলধারার মাধ্যমে তা প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় এক বাধা হয়ে আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
করোনার বহু আগে থেকেই এই আইনের যথেচ্ছ অপপ্রয়োগের কারণে দেশে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশ ও সেগুলোর বিচার-বিশ্লেষণে স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে স্বনিয়ন্ত্রণ বা সেলফ-সেন্সরশিপের চর্চা প্রকট হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল বেসরকারি টিভি চ্যানেলের মালিক সমিতি তথ্য মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছে ( তাঁদের ভাষায় পর্যবেক্ষণ) অনুযায়ী সাংবাদিকদের সংকটকালে টকশোতে নেতিবাচক আলোচনা না করার উপদেশ দিয়েছে।  মহামারির কালেও একাধিক এলাকায় দূর্নীতির খবর প্রকাশের জন্য সাংবাদিকরা প্রহৃত হয়েছেন। গুম হওয়া সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের সন্ধান মেলেনি। ফেসবুকে ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের সমালোচনার জন্য মানহানির মামলা এবং গ্রেপ্তারও অব্যাহত আছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির ভয়ের চেয়ে এই হয়রানির ভয় কোনো অংশেই কম নয়। 
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি এই ঝুঁকি আরও বাড়বে বৈ কমবে না। জনদূর্ভোগ বাড়তে থাকলে সরকারের মধ্যেও অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা আরও বাড়বে। করোনা ভাইরাসের সময়ে বিভিন্ন দেশে এই বিপদের আশংকায় ইতোমধ্যেই কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস, সিপিজে এবং ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনিস্টিটিউট, আইপিআই তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। সর্বসম্প্রতি গত ৬ এপ্রিল কানাডা, জার্মানি, নেদারর‌্যান্ডস, লাটভিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র এক যৌথ বিবৃতিতে এই সংকটকে কেন্দ্র করে কিছূ দেশে স্বাধীন ও মুক্ত সংবাদপ্রবাহে অন্যায় বিধিনিষেধ আরোপের উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের অন্যান্য পেশাদারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও বিবৃতিতে সব দেশের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
২.
গণমাধ্যম কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি যে কত জটিল এবং গুরুতর, তা ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। অনেকটা অত্যাবশকীয় এবং জরুরি সেবা দূর্যোগে তাঁদের ভূমিকা আরও বেশি। সুরক্ষা শুধু গণমাধ্যমকর্মীর নয়, তাঁর পরিবারের অন্যদেরও। দূর্ভাগ্যজনকভাবেই অনেকেই ইতোমধ্যে এই সংক্রমণের শিকার হয়েছেন, পরিবারের সদস্যরাও সংক্রমিত হয়েছেন।
এমনিতেই গণমাধ্যমকর্মীদের ব্যাক্তিগত নিরাপত্তার ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতনতা এবং সুরক্ষামূলক সতর্কতা অনুসরণের বিষয়টি বাংলাদেশে অনেকটাই উপেক্ষিত থেকেছে। গণমাধ্যম কর্মীদের ঝুঁকি এড়াতে যেধরণের প্রস্তুতি প্রয়োজন ছিল অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই তা নিতে পারে নি। আবার অনেকে তা চেয়েছে কিনা, সেটাও স্পষ্ট নয়। অন্তত: টিভির টকশোতে অতিথিদের আসনবিন্যাসে যেটুকু সর্তকতা সহজেই নেওয়া যেতে, সেটুকুও সময়মত অনেকে নেননি। কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য যেসব প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল তাও হাতে গোণা দুএকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অনেকেই নেয় নি। সব কর্মীর যে নিজের আলাদা ল্যাপটপ থাকবে, বা ব্রডব্যান্ডের অসীম সুবিধা অথবা প্রয়োজনীয় মোবাইল ডাটা থাকবে, এমন নয়। অফিসের নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার আলাদা নিরাপত্তাকাঠামোর প্রশ্নও গুরুত্বর্পূণ। আর, মাঠের কাজে নিয়োজিতদের ব্যাক্তিগত সুরক্ষা পোশাকের বিষয়টিকে যে সবাই সমান গুরুত্ব দিয়েছেন, তাও নয়। সর্বোপরি, এঁদের অধিকাংশেরই ঝুঁকি বীমা নেই।
৩.
করোনাভাইরাসের থাবা সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্যে যে স্থবিরতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে গণমাধ্যমে তার প্রভাব হয়েছে আরও মারাত্মক। করোনা থেকে বাঁচলেও গণমাধ্যমকর্মীরা জীবিকা বাঁচাতে পারবেন কিনা, সেই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশের নিজস্ব সমস্যা নয়। বিশ্বের সবপ্রান্তেই বিতরণজনিত সমস্যায় ছাপা কাগজের প্রচারে ধস নেমেছে, অনলাইনে গ্রাহক নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।  অনলাইনের বিজ্ঞাপনেও সেই রমরমা অবস্থা আর নেই।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডার মত দেশগুলোতেও ছোটখাটো সাময়িকী এবং অনেক স্থানীয় পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে অথবা প্রকাশনা স্থগিত রেখেছে। বাংলাদেশেও সম্প্রতি অন্তত আটটি পত্রিকা পুরোপুরি বন্ধ অথবা ছাপা সংস্করণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। টিভি চ্যানেলগুলোও অশনিসংকেত দিয়েছে। তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সরাসরি ভর্তুকির কথাও বলা হয়েছে। সরকারি সহায়তানির্ভর গণমাধ্যম যে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার চাহিদা পূরণে অক্ষম, সেকথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারি বিজ্ঞাপনকে পত্রিকার কন্ঠরোধের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারের অতীত অভিজ্ঞতা বিশেষ করে সামরিক শাসন আমলের কথা আমরা কেউই বিস্মৃত হইনি। রাজনৈতিক আনুগত্যের সূত্রে অনুমোদন পাওয়া টিভি চ্যানেলগুলোর সীমাবদ্ধতাও সবার জানা। 
এরকম পরিস্থিতিতে আর্থিক সংকট কাটাতে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে কীধরণের সহায়তার কথা আলোচিত হচ্ছে, সেদিকে একটু নজর দেওয়া যায়। পাশ্চাত্যের সব দেশই স্বাস্থ্যবিষয়ক বিজ্ঞাপনে সরকারের ব্যয় বহুগুণে বাড়ানোর কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে দুটো প্রস্তাব সামনে এসেছে: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অর্থনীতিতে যে দুই লাখ কুড়ি হাজার কোটি ডলারের ঋণ যোগানোর যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেই ঋণ যেসর শিল্প হিসাবে গণমাধ্যমও পেতে পারে। আর, দ্বিতীয়ত, নাগরিকরা পত্রিকা কিনতে যা খরচ করবেন, তাঁদেরকে সেই পরিমাণে কর রেয়াত দেওয়া। ফলে, করদাতারা পত্রিকা কিনতে উৎসাহী হবেন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় তার কোনো বিরুপ প্রভাব পড়বে না। স্কটল্যান্ডে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্থাপনার জন্য যে বাণিজ্যিক কর দেয় তা দুই বছরের জন্য মওকুফের কথা বলছে।
বাংলাদেশেও সরকারি অনুদানের বদলে এধরণের বিকল্পের কথা ভাবা যায়। বাংলাদেশ সরকার বর্তমান কঠিন অর্থনৈতিক বাস্তবতা মোবিলায় শিল্পখাতসহ বিভিন্ন খাতের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। সংবাদপত্র  শিল্পও যাতে সেই প্রণোদনা পায়, তা নিশ্চিত করা উচিত। বিশেষ করে দৈনন্দিন পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য যে তহবিল ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে সংবাদপত্র শিল্পকে অর্ন্তভুক্ত করা যায়। দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে এখনো ৩৫ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স দিতে হয়, যেখানে তৈরি পোশাকশিল্পকে দিতে হয় ১৫ শতাংশ। এটা কমিয়ে ফেলা যৌক্তিক। নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি দীর্ঘদিনের। সংবাদপত্র শিল্পের স্বার্থে এটা এখনই প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া যেতে পারে। বিজ্ঞাপনের ওপর মূল্য সংযোজন করে ছাড় দেওয়া হলে বেসরকারি খাতের বিজ্ঞাপনদাতারা কিছুটা হলেও ফিরতে পারেন।
সর্বোপরি, গত পাঁচ বছর ধরে যেসব সংবাদপত্রে মোবাইল ফোন কোম্পানিসহ বিভিন্ন বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা চলে আসছে, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার হওয়া প্রয়োজন। সংকটের কালে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা উপেক্ষা কিম্বা তার স্বাধীনতা খর্ব হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। সংবাদমাধ্যমের কাজ ক্ষমতাধরদের জবাবদিহিতা আদায় করা। এটি সংকটকালে আরও বেশি জরুরি। আর, দ্রুত রুপান্তরশীল প্রযুক্তিতে ভর করে করোনাকালে যে পরিবর্তনের ধারা গণমাধ্যমে এসেছে, তাও একটা স্থায়ী ছাপ ফেলবে বলেই মনে হয়।
( ১৭ এপ্রিল, ২০২০র প্রথম আলো পত্রিকায় কিছুটা সংক্ষেপিত রুপে প্রকাশিত। পুরোটা পড়তে পারেন www.prothomalo.com - এ)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...