সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

করোনা পরিস্থিতি: অর্থনীতির মূলে যাঁরা, তাঁদের উপেক্ষা নয়

দেশভেদে মহামারির সময়ে কঠোর বা ঢিলেঢালা কিংবা সীমিত পরিসরের লকডাউনেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেবা অপরিহার্য হিসেবে সচল ছিল। এসব জরুরি সেবায় যুক্ত পেশাজীবীরা স্বভাবতই বাড়তি ঝুঁকির মুখে পড়েছেন এবং রোগাক্রান্ত হয়েছেন। অনেকেরই অসময়ে মৃত্যু হয়েছে। লক্ষণীয় হচ্ছে, এসব জরুরি সেবার অধিকাংশ পেশাজীবীকে লকডাউনের মধ্যেও কাজ করতে হয়েছে এবং অপেক্ষাকৃত বেশি বেতনের লোকজন যেখানে বাড়িতে বসে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, অন্যরা তেমনটি পাননি।
অত্যাবশ্যকীয় পেশাজীবীদের মধ্যে আছেন চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, প্রহরী-চৌকিদার, প্রশাসনের সীমিতসংখ্যক দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণমাধ্যমকর্মী, ত্রাণকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ট্রাক ও জরুরি সেবার যানচালক, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস-টেলিফোন-ইন্টারনেট সেবা খাতের কর্মী, কিছু ব্যাংকার, সুপার স্টোরের কর্মী, ফার্মেসি ও মুদিদোকানি, কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী প্রমুখ। আর যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা হলেন গ্রামের কৃষক। আবাদের যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে ধান ও অন্যান্য ফসল তোলার কাজ বন্ধ রাখা যায় না। তবে সেগুলো বিক্রি করায় রাষ্ট্রীয় সহায়তা অথবা তার ন্যায্য দাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেলেনি, ব্র্যাকের জরিপে যেখানে ক্ষতির পরিমাণ কৃষকপ্রতি দুই লাখ টাকার বেশি।
বিপরীতে, বিপুলসংখ্যক সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, প্রকৌশলী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার লোক গৃহবন্দী থেকেছেন। তৃতীয় আরেকটি গোষ্ঠী আছে—যাঁরা দিন এনে দিন খাওয়ার কাজ করেন বা বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী—তাঁরা কর্মহীন হওয়ার পাশাপাশি আয়-রোজগারহীন হয়ে সঞ্চয় শেষ করেছেন, নয়তো ধারদেনা অথবা সাহায্যের জন্য হাত পাততে বাধ্য হয়েছেন। রাজধানীতে এ রকম যাঁরা ছিলেন, বিশেষ করে গৃহকর্মী, রিকশা ও সিএনজির চালক, ফুটপাতের হকার, দিনমজুর, তাঁদের অনেককেই গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের অনেকের মতে, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৮৫ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। প্রমাণ হয়েছে, অর্থনীতি ও দেশ সচল রাখায় তাঁদের ভূমিকাই প্রধান।
করোনার অর্থনৈতিক আঘাত যেটা পড়েছে তা হচ্ছে আক্ষরিক অর্থেই মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। আমাদের কথিত উন্নয়নের অর্থনীতিতে বৈষম্য বাড়ছিল অনেক দিন ধরে। হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে, এইচআইইএস-২০১৬ বিশ্লেষণ করে করোনার আগে গত বছরেই অর্থনীতিবিদেরা জানিয়েছিলেন, পারিবারিক পর্যায়ে ব্যক্তির আয় ২০১০ সালের আয়ের তুলনায় গড়ে ২ শতাংশ কমেছে। আর অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমজীবীদের মজুরি কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ। কিন্তু বৈশ্বিক সাময়িকী ওয়েলথ এক্স-এর হিসাবে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ধনীদের ধনবান হওয়ার হার ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ।
করোনার কারণে শুধু যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আঘাত এসেছে, তা নয়। সারা বিশ্বেই এর প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। বহু প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে গেছে, অথবা দেউলিয়াত্বের মুখে আছে। কোটি কোটি মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। সরকার তিন থেকে ছয় মাস বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতনে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিলেও অর্থনীতি শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে, এমনটি কোনো দেশই আশা করছে না। এমনকি, বিশ্বের কারখানা হিসেবে পরিচিত চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি এবারে পার্টি কংগ্রেসে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা সমীচীন মনে করেনি। আমাদের উপার্জনের প্রধান দুটি খাত—রপ্তানি এবং প্রবাসী আয়—দুটির উৎস দেশগুলো সংকট মোকাবিলায় আত্মনির্ভরতার নীতি অনুসরণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। যেসব সামগ্রীর ক্ষেত্রে তারা আমদানির ওপর ভরসা করত, সেগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের কথা বলা হচ্ছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী, পিপিই তৈরির জন্য ব্রিটেনে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সরকার আগাম চুক্তি করেছে। এমনকি, বিভিন্ন রাজ্য বা স্থানীয় পর্যায়ে স্থানীয় কৃষি ও শিল্পকে উৎসাহিত করে ‘বাই লোকাল’ মন্ত্র উচ্চারিত হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জন্য নির্ধারিত দোকানগুলোতে এখন রাখা হচ্ছে শুধু ‘ভারতে প্রস্তুত’ ভোগ্যপণ্য। আর জ্বালানি তেলের দামে ধস নামায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের জন্য যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা-ও কতটা দীর্ঘায়িত হবে, তার ভবিষ্যদ্বাণী কেউ করছেন বলে চোখে পড়েনি।
আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হওয়া এসব কোটি কোটি মানুষ গত তিন মাসে রাষ্ট্রীয় সহায়তা তেমন একটা পায়নি। দরিদ্র মানুষের জন্য যে সামান্য খাদ্য ও আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, প্রশাসনিক ও অনিয়ম-দুর্নীতিজনিত জটিলতায় তা কাঙ্ক্ষিত লোকজনের একটা বড় অংশের কাছেই পৌঁছায়নি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মানদণ্ডে এসব শ্রমজীবী দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের ভাগ্য শিল্প-বাণিজ্য, বিশেষ করে রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীদের মতো সুপ্রসন্ন নয়। উপরন্তু, লকডাউন কার্যকর করার ক্ষেত্রে শৈথিল্য বা ব্যর্থতার জন্য এই জনগোষ্ঠীর জীবিকাকেই অজুহাত করা হয়েছে। কর্মহীন, মজুরিহীন এবং খাদ্য বা আর্থিক সহায়তাহীন অবস্থায় তারা ঘরে থাকবে সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস, এমন অবাস্তব প্রত্যাশা কেউ করে থাকলে তার জন্য করুণা প্রকাশ করা ছাড়া উপায় কী? প্রশ্ন হচ্ছে, এবারের বাজেটে কি রাষ্ট্র তাদের প্রতি কিছুটা সদয় হবে?
ঘাটতি কিংবা ঋণনির্ভর বাজেটের কথা এবারে বেশ জোরেশোরেই আলোচনা হচ্ছে, যদিও তা নতুন কিছু নয়। তবে দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের সাহায্যের কথা উঠলে অর্থসংকটের কথা যে উঠে আসবে, তা নিশ্চিত। বলা হবে—সাধ আছে, সাধ্য নাই। প্রশ্নটা সাধ্যের নাকি অগ্রাধিকারের, তা অর্থনীতিবিদেরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে কয়েকটি তথ্য বিবেচনায় রাখা হলে কিছুটা অন্তত সান্ত্বনা মেলে। করোনা সংক্রমণের সংকট মোকাবিলায় সরকার ত্রাণ তহবিলে বেসরকারি খাত ও নাগরিকদের কাছ থেকে দান গ্রহণ করছে। কিন্তু সরকারি ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাতটিতে এখনো হাত দেয়নি। গত বছরের বাজেট বিশ্লেষণে অর্থনীতিবিদেরা দেখিয়েছিলেন, প্রতি ১০০ টাকার ১৯ টাকাই খরচ হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। এর সঙ্গে পেনশনের ব্যয় যোগ করলে দাঁড়াবে ২৮ টাকা। সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের প্রতি সহমর্মিতার জন্য হলেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধাগুলো থেকে সাশ্রয়ের কথা কি ভাবা উচিত না? সরকার পরিচালনায় দলের চেয়ে সরকার প্রশাসনের ওপর কতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, সেটা মোটামুটি সবারই জানা। অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে ত্রাণ বিতরণের কাজে জেলাওয়ারি দায়িত্বে গেছেন সচিবেরা। এতে কার কতটুকু উপকার হয়েছে, তা টের পাওয়া যায় রাজনীতিকদের ক্ষোভ-অসন্তোষে।
কোভিডসৃষ্ট ক্রান্তিকালে দেশের ৫০ লাখ পরিবারের জন্য সরকারের জন্য অনুদান হিসাবে বরাদ্দ হয়েছে সাড়ে বারো শ কোটি টাকা। ক্রান্তিকাল যেহেতু দীর্ঘায়িত হচ্ছে, তাই নতুন বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তা ছাড়া এর পরিধি আরও অনেক বেশি বাড়ানো প্রয়োজন। গত ২১ মে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য তারা দেবে প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা বা ৩৩ কোটি ৪০ লাখ ইউরো। যার এক-তৃতীয়াংশ রপ্তানি খাতের (মূলত পোশাক) শ্রমিকদের জন্যও তারা নগদ সহায়তার অনুদান দিচ্ছে। ইইউর ঘোষিত সাহায্যের বিপরীতে সরকারের বরাদ্দের পরিমাণকে হতাশাজনক বলা সম্ভবত অযৌক্তিক হবে না।
আমাদের সামর্থ্য নেই, যুক্তিটা এখন অনেকটাই অচল। কেননা, রাষ্ট্র তো কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে শুধু ২০১৯ সালে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে দিয়েছে ৮ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা (ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৯)। বিদেশে পাচার হওয়া লাখ-কোটি টাকার কথা না হয় বাদই রইল, কেননা তা ফেরানো প্রায় অসম্ভব। কিন্তু রাষ্ট্রের সাধ্য না থাকলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়ালেও খেলাপিতে অভ্যস্ত ঋণগ্রহীতাদের জন্য ঋণ নবায়ন, নতুন ঋণ দেওয়া এবং সুদ ছাড়ের মতো বিশেষ সুবিধা বহাল থাকতে পারে না (ব্যাংকের অবলোপন করা ঋণ ৫০ হাজার কোটি টাকা, বাংলা ট্রিবিউন, ৬ জানুয়ারি ২০১৯)। রাষ্ট্রের আর্থিক সক্ষমতা না থাকলে বিশ্বে সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক নির্মাণ কি সম্ভব ছিল? বড় বড় প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা এবং দুর্নীতির অভিযোগগুলোর কথা না হয় না-ই তুললাম। পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় পর্যাপ্ত বরাদ্দের আলোকেই এখন এই সামর্থ্যের প্রতিফলন ঘটা চাই।
(৮ জুন, ২০২০-র প্রথম আলোয় প্রকাশিত)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...