সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোভিড ১৯ মোকাবিলা: কম মৃত্যুহার ও বাংলাদেশের অবস্থান


বিশ্বের চার ভাগের এক ভাগ মানুষের বসতি এই দক্ষিণ এশিয়ায়। উচ্চ জনঘনত্বের কারণে এই অঞ্চলটিতে মহামারি যতটা প্রাণঘাতি হবে বলে সংক্রমণবিশেষজ্ঞরা আশংকা প্রকাশ করেছিলেন, পরিসংখ্যান বলছে দুর্যোগ ততটা ঘটেনি। অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যেও বড়ধরণের বৈপরিত্য দেখা যাচ্ছে। একদিকে আছে, যেখানে ভুটান সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জীবনহানি শূণ্যের ঘরে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে। নেপাল ও শ্রীলংকাও সেদিক থেকে কিছুটা সফল। অন্যদিকে, ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সংক্রমণ এখন ক্রমশই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। তবে, মৃত্যুর সংখ্যা এখনও তুলনামূলকভাবে বিশেষত: ইউরোপ ও আমেরিকার তুলনায় অনেক কম। এরকম জটিল ও বিচিত্র বাস্তবতায় বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় কোভিড নাইন্টিন সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি এবং মৃত্যুর হার নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই অনেক সন্দেহ, প্রশ্ন এবং ব্যাখ্যা আলোচিত হচ্ছে। মহামারির কাল পেরেনোর পরই হয়তো এর পুরো চিত্রটা বোঝা যাবে এবং তার যথাযথ মূল্যায়ন সম্ভব হবে। কিন্তু, প্রায় চার মাস পরও যখন সরকারি পরিসংখ্যানে এটা উর্ধ্বমুখী না নিম্নমুখী, তা বোঝা যায় না, তখন অন্যান্য দেশের সঙ্গে ফারাকগুলো অন্তত বোঝা দরকার। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের দেশে হতাশাজনক কিছু ঘটলেই বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় নিয়োজিত মধ্যব্ত্তি  সোশ্যাল মিডিয়ায় উগান্ডার কথা বলেন। মূলত, ব্যর্থতা , অপশাসন বা শাসনহীনতার পরিণতি বোঝাতে নেতিসূচক অর্থেই এঁরা উগান্ডার কথা বলেন। সেই উগান্ডায় কোভিড নাইন্টিনে মৃত্যুর সংখ্যা শূণ্য। মোট আক্রান্ত ১০৭৫ এবং সেখানে শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হয়েছে আড়াই লাখ। সাড়ে চার কোটি জনসংখ্যার দেশে টেস্টের হার প্রতি দশ লাখে ৫,৪৫৯ জন। অন্যদের হেয় করার মানসিকতার জন্য এখন কি আমরা কিছুটা লজ্জিত হবো? অতিছোঁয়াচে একটি ভাইরাসের  ছোবল থেকে জীবন বাঁচাতে উগান্ডার এই সাফল্যের কারণে আমাদের অন্তত এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা উচিত।

কোভিড নাইন্টিনের সংক্রমণ মোকাবিলায় উগান্ডা কিভাবে সফল হলো ? বিবিসির রেডিও ফোরের এই প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক ড. মাতিসিদিসো মোয়েটি জানালেন দেশটি ইবোলা মহামারির শিক্ষা কাজে লাগিয়েছে। সংক্রমণ বন্ধের জন্য কারফিউ দিতেও পিছপা হয়নি। সবাইকে সচেতন করার পাশাপাশি রোগী শনাক্তকরণ, তাকে বিচ্ছিন্ন করা ও তার সংস্পর্শে আসা সবাইকে খুঁজে বের করায় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেছে। তিনি আরও জানান যে উগান্ডার জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ তরুণ। ফলে, তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেশি। বয়স এই রোগের ঝুঁকির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বর্পূণ বিষয় হিসাবে ইতোমধ্যেই স্বীকৃতি পেয়েছে।

ইউরোপ এবং আমেরিকায় মৃত্যুহার বেশি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ সেসব জায়গায় বয়স্ক বা প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যাধিক্য। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে করোনায় মারা যাওয়াদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি প্রবীণনিবাসের বাসিন্দা। শরীরে অন্যান্য রোগের উপস্থিতিও এই বয়স্কদের মধ্যেই বেশি থাকে এবং সেকারণেও ষাটোর্ধদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি। ইউরোপ-আমেরিকার স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত হওয়া সত্ত্বেও বয়স্কদের জীবনরক্ষায় তেমন একটা সাফল্য আসেনি। সংক্রমণের ভয়াবহতাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি কার্যকরে অনীহার মূল্য যে কত চড়া তা যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিল এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। সংক্রমণ শুরুর তিন মাস পর এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পও মাস্ক পরাকে দেশপ্রেমিকের কাজ বলে মেনে নিয়েছেন।

প্রাচ্যের দেশগুলো বিশেষ করে পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে আমাদের চেয়েও কম। ওয়ার্ল্ডোমিটারে ২০ জুলাইয়ের হিসাব বলছে উগান্ডার মতো ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওসেও মৃত্যুর সংখ্যা শূন্য। আক্রান্ত যথাক্রমে ৪০৮, ২২৩ এবং ১৯ জন। মিয়ানমারে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের, আক্রান্ত ৩১২জন। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের যাওয়া-আসার জন্য উচ্চঝুঁকিতে থাকা থাইল্যান্ডে মারা গেছেন ৫৮ জন, আর আক্রান্ত ৩২৬০। ১৮ জুলাইয়ের সরকারি হিসাবে সাত সপ্তাহ সেখানে কোনো স্থানীয় সংক্রমণ ঘটেনি। থাই সরকারের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. তাউইসিন ভিসানুইয়োথিন এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, সংক্রমণের তীব্রতা থেকে রেহাই পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ সাংস্কৃতিক ( থাইল্যান্ডস ডুইং থিংস রাইটস হোয়েন ইট কামস টু কনটেইনিং কোভিড ১৯, সিটিএন নিউজ, ১৮ জুলাই, ২০২০)। তিনি বলছেন শুধু থাইল্যান্ড নয়, চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে উৎসারিত মেকং নদীর তীরবর্তী সবকটি দেশ-  ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার এই ধাক্কা এড়াতে পেরেছে তাদের সংস্কৃতির কারণে।

ওই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জিনগত গঠনপ্রকৃতি একইরকম হওয়ার কারণে তাদের মৃত্যুহার কম এমন একটি তত্ত্বও চালু আছে। তবে, থাই স্বাস্থ্য দপ্তরের মুখপাত্র বলছেন জিনগত প্রকৃতি কোনো ভূমিকা রেখে থাকলেও এর পিছনে প্রধান ভূমিকা সাংস্কৃতিক। তাঁর ব্যাখ্যায় তাঁরা যেহেতু সামাজিক সাক্ষাতের সময় করমর্দন বা কোলাকুলি করেন না, দুই হাত জোড় করে আধা-প্রণামের মত করে কুশল বিনিময় করেন, সেহেতু ছোঁয়াচে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি তাঁদের অনেক কম। তবে, পাশ্চাত্যের সংবাদমাধ্যমগুলোতে মিয়ানমার ( সংঘাতপীড়িত অঞ্চলে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার না থাকার কারণে) ছাড়া ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শুরুতেই দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়ার কথাই বলা হচ্ছে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে আছে আন্তসীমান্ত চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, রোগ শনাক্তকরণ এবং সংস্পর্শে আসা ব্যাক্তিদের খুঁজে বের করে ( টেস্ট অ্যান্ড ট্রেস) সঙ্গনিরোধের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করা।  

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভুটানে এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা শূণ্য এবং রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষার হারে এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী একজন পেশাদার চিকিৎসক হওয়ায়  সেখানে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলার বিষয়টির অগ্রাধিকার পাওয়াই স্বাভাবিক। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তাদের সাফল্যের এটাও একটা কারণ হতে পারে। নেপাল এবং শ্রীলংকাতেও সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কম হওয়ার পিছনে মহামারির শুরুতেই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণই প্রধান কারণ। শ্রীলংকা এমনকি কারফিউ দেওয়ার মত কঠোর ব্যবস্থা নিতে দ্বিধান্বিত হয়নি।

এশিয়ার এসব প্রতিবেশিদের থেকে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের চিত্র একেবারেই আলাদা। দীর্ঘ দুই দশকের সংঘাতের পুরোপুরি অবসান না হওয়ায় আফগান্স্তিানকে ব্যাতিক্রম হিসাবে দেখাই ভালো। কিন্তু, উপমহাদেশের বাকি তিনটি জনবহুল দেশে সংক্রমণের চিত্র প্রায় একইরকম। এই তিনদেশেই জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ তরুণ, যার গড় বয়স ২৭ বছরের মত। কিন্তু, সংক্রমণের যেহারে বাড়ছে তাতে তরুণদের রোগপ্রতিরোধক্ষমতা কতটা সফল হচ্ছে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে। এই তিন দেশেই সংক্রমণের বিস্তার বন্ধে লকডাউন দেওয়ার ক্ষেত্রে অদ্ভূতরকমের খাপছাড়া পদক্ষেপ, যখন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব ছিল তখন দ্বিধাগ্রস্ততা, রোগ শনাক্তকরণে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব এবং মনেোযোগ না দেওয়া, স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করায় ব্যর্থতা এবং আগাম অর্থনীতি সচল করার সিদ্ধান্ত সংকটকে আরও গভীর ও জটিল করে তুলেছে।  

শুরুতে অবশ্য সংক্রমণের হার কম থাকার বেশ কিছু ব্যাখ্যা আলোচিত হয়েছে। এর মধ্যে জনগোষ্ঠী অপেক্ষাকৃত তরুণ হওয়ার বিষয়টি ছাড়াও উষ্ণ আবহাওয়া বিশেষত গ্রীষ্মের খরতাপে ভাইরাসটি টিকবে না বলেও বলা হয়েছিল। এসব ব্যাখ্যার যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য কুয়ান্টা ম্যাগাজিন গতমাসে জনস্বাস্থ্য ও সংক্রমণ বিষয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১৫জন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে। হারভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রফেসর বিক্রম প্যাটেলের কথায় মধ্যগ্রীষ্মের তাপদাহের মধ্যে মুম্বাই, চেন্নাই এবং নয়াদিল্লীর সংক্রমণ হারে তা প্রমাণ হয়ে গেছে। উপমাহাদেশে অন্য কয়েকটি মারণব্যাধির ঝুঁকি মোকাবিলায় যে বিসিজি টিকার প্রচলন ছিল, সেই টিকার সুবিধা পাওয়ার কথাও অনেকে বলেছিলেন। কিন্তু, গত এপ্রিরৈ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তিনটি গবেষণায় সেরকম কোনো প্রমাণ মেলেনি। আরেকটি তত্ত্ব হচ্ছে উপমহাদেশে কোভিড নাইন্টিন ভাইরাসের প্রকৃতি বদলে গিয়ে তার ক্ষতিকর ক্ষমতা অনেকটাই মিইয়ে এসেছে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ম্যাথমেটিকাল জেনোমিকস এর পরিচালক রাউল রাবাদান বলছেন সংক্রমণ বা তার তীব্রতার সঙ্গে ভাইরাসের কোনোধরণের রুপান্তর বা মিউটেশনের যোগসূত্র থাকার কোনো প্রমাণ এখনও মেলেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন তাঁদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান। মাসদুয়েক ধরে কথাটি আমরা দেশীয় বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেও শুনে আসছি। শনাক্তকরণ পরীক্ষার স্বল্পতা এবং বিশৃংখলা বাংলাদেশে যে কীধরণের জটিলতা তৈরি করেছে তা বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন। বাংলাদেশে এই পরীক্ষার হার হচ্ছে প্রতিবেশিদের মধ্যে সর্বনিম্ন। ফলে,  আক্রান্তের হার  শনাক্তকরণ পরীক্ষার বিপরীতে প্রায় ২৫ শতাংশ। তাছাড়া, একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দশ হাজারেরও বেশি করে পরীক্ষায় জালিয়াতির কথা স্মরণ করলেই এই জটিলতার সামান্য কিছু আন্দাজ মেলে।

মৃত্যুর পরিসংখ্যান (২৭০৯ জন) আরও অস্পষ্ট। সব হাসপাতালের বিশেষত বেসরকারিগুলোর হিসাব এবং যাঁরা বাড়িতে মারা যাচ্ছেন তাঁদের হিসাব সরকারি হিসাবে আদৌ যোগ হচ্ছে কিনা, তা বলা মুশকিল। কোভিড ১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা দক্ষিণ এশিয়ায় সরকারি পরিসংখ্যানে কেন কম? বিশেষজ্ঞরা এর অন্যতম একটি ব্যাখ্যা হিসাবে বলছেন এই অঞ্চলে সরকারিভাবে মৃত্যু নথিবদ্ধ করার ব্যবস্থা খুবই র্দূবল। ইউনিসেফ এর ২০১৮ সালের এক রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে পাঁচবছরের কমবয়সী শিশুদের জন্ম রেকর্ডভুক্ত করার হার দক্ষিণ এশিয়ায় মাত্র ৬০ শতাংশ। মৃত্যু নথিবদ্ধ করার হার তার চেয়ে আরও কম। ওই রিপোর্টে দেখা যায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ মৃত্যুই রেকর্ড করা হয়নি। ভারতে এই হার ছিল ২৯ শতাংশ। গত ছয়বছরে পরিস্থিতির বড়ধরণের উন্নতি হয়েছে ধরে নেওয়া হলেও তা ৬০ বা ৭০ শতাংশ ছুঁয়ে ফেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। হাসপাতালগুলোতে রোগীরা যাচ্ছেন না এবং কোনো কোনোক্ষেত্রে  অর্ধেকেরও বেশি শয্যা খালি থাকার যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অনেকসংখ্যাই যে সরকারি হিসাবের বাইরে থেকে যাবে সেই সম্ভাবনা প্রবল। এর সঙ্গে উপসর্গযুক্ত মৃত্যুর সংখ্যা যোগ করার প্রয়োজনীয়তাও বিবেচনার দাবি রাখে।

বিশেষজ্ঞরা আরও একটি আশংকার কথা বলেছেন। তাঁদের মতে দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যতটা দেরিতে শুরু হয়েছে, সেই সময়ের ফারাকটা হয়তো আরও বেশি। যার মানে হচ্ছে কথিত এক্সপোনেনশিয়াল স্প্রেড এখনও শুরু হয়নি, যেকোনো সময়েই তা শুরু হবে। ভারতের গতকয়েকদিনের সংক্রমণ হার বৃদ্ধিতে সেরকম আলামত মিলছে। বাংলাদেশে শনাক্তকরণ পরীক্ষা সংকোচনের কারণে হয়তো বিষয়টা এখনও ততটা স্পষ্ট নয়।
(২৩ জুলাই, ২০২০র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

স্বৈরতন্ত্রের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার নিকৃষ্ট পরিণতি

ছাত্র–জনতার অভ্যূত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত মন্তব্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। গত ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণ এবং সম্প্রতি মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতায় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য – এই দুইয়ের একটি যে অসত্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিতর্ক শুরু হওয়ার পর তাঁর দপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা–ও অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। তিনি সর্বশেষ বিবৃতিতেও মতিউর রহমান চৌধুরীকে অসত্য কথা বলার বিষয়টি স্বীকার যেমন করেন নি, তেমনি এমন দাবিও করেননি যে তাঁকে ভূলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।  ৫ আগস্ট যদি তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রশ্নে অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তা খুবই গুরুতর হিসাবে বিবেচিত হতে বাধ্য। কেননা তা ছিল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের তথ্য। আবার যদি তিনি মানবজমিন সম্পাদকের কাছে আলাপচারিতায় অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তাঁর কাছে যে দেশবাসী প্রশ্নের জবাব চাইতে পারে, তা হলো অর্ন্তবর্তী সরকার যখন সবকিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছে, দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তখন তিনি কেন এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন? তাঁর উদ্দ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...