সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাজনীতি রাজনীতিকদের জন্য কঠিন হয়েছে কেন

আইনপ্রণেতা – জনপ্রতিনিধি বা সাংসদদের আর্ন্তজাতিক ইউনিয়ন, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা সংসদে আছি শুধু হ্যাঁ বা না বলার জন্য‘। কথাটি তিনি বলেছেন তিনি যে সংসদে আছেন, সেই বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সম্পর্কে।

গত ১২ জুন তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেট সংলাপে আরও বলেছেন, ‘অনেকেই বলেন, বাজেট হতে হবে অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই। এখানে যেন কোনো অপচয় না হয়। কিন্তু আমরা যে আলোচনা বা বিতর্ক করব, তার ভিত্তিটা তো ঠিক থাকতে হবে।‘ সাংসদদের মতামত সরকারের কাছে কতটা গুরুত্বহীন তা বোঝাতে বাজেট প্রণয়নের আগে তাঁদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর কোনো ধরনের আলোচনা না হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছেন, ‘বাজেটের গুণগত মান পরিবর্তনে সাংসদেরা তেমন একটা কিছু করতে পারছেন না।’ সাবের হোসেন চৌধুরী সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। তিনি আরও বলেছন যে ‘আরেকটা ভূমিকা রাখতে পারে রাজনৈতিক দল। কিন্তু আমাদের সরকারি দল বা মুখপাত্র বাজেটের সঙ্গে সঙ্গেই বলে দেন যে বাজেটটা ভালো এবং এখানে সাধারণ মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন আছে।‘  

সাবের হোসেন চৌধুরীর এই বক্তব্যটি শুধু বাজেট নয়, সরকারের অধিকাংশ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য। সংসদ এবং রাজনৈতিক দলের এই যে হ্যাঁ বা না বলার ভূমিকা – অন্য কথায় রাবার স্ট্যাম্পে রুপান্তরিত হওয়ার অবনমন, এর দায় কার? রাজনীতিকদের আক্ষেপ প্রকাশের পাশাপাশি যদি আত্মজিজ্ঞাসা এবং ভুল সংশোধনের কথা না থাকে, তাহলে প্রশ্ন ওঠে যে এগুলো কি আদৌ আত্মেপলব্ধি, না হতাশায় আত্মসমর্পণ? অবশ্য সরকার ও রাষ্ট্রের বিরাজনৈতিকীকরণের আরও করুণ চিত্রটি উঠে এসেছে ২৮ জুন খোদ সংসদেই বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায়।

‘হ্যাঁ বা না বলার সংসদে‘ করোনা মহামারি মোকাবিলায় জেলাওয়ারি কার্যক্রম সমন্বয়ে সচিবদের দায়িত্ব দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারি দলের প্রবীণ সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদসহ বেশ কয়েকজন। এতে রাজনীতিবিদের কর্তৃত্ব ম্লান হয়েছে বলে অভিযোগ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, দায়িত্ব দেওয়া হলেও সচিবদের অনেকেই সংশ্লিষ্ট জেলায় যাননি। তোফায়েল আহমেদের দু:খ জেলায় জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং মানুষ মনে করে সরকার যা দিচ্ছে সেগুলো দেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। তাঁর অভিযোগ, তাঁর নিজের জেলা ভোলায় যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি তাঁর বক্তৃতার দিন পর্যন্ত সেখানে যাননি। রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের কথায়, ‘এটা একটা রাজনৈতিক সরকার। রাজনীতিবিদদের যে একটা কর্তৃত্ব বা কাজ সেটা কিন্তু ম্লান হয়ে যায়‘।

সামরিক সরকারের মন্ত্রীত্ব করা ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদের বক্তব্যে যে অভিযোগ রয়েছে, তাতে মনে হয় সামরিক সরকারের আমলেও রাজনীতিকরা এতটা অবহেলিত ছিলেন না। সচিবদের জেলার দায়িত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে ‘প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে কথা বলেন, আর এমপি সাহেবরা পাশাপাশি বসে থাকেন, দূরে। এরপর বলেন, ‘‘ডিসি সাব, আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।‘‘ এই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা।’

লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সাধারণ মানুষ সেবা পাচ্ছে কিনা, অথবা সরকারের নীতিগুলো মানুষের চাহিদা পূরণের উপযোগী কিনা সে সব বিষয়ে সরকারের নীতির বিচার-বিশ্লেষণের চেয়ে তাঁদের সব ক্ষোভ ও সমালোচনার লক্ষ্য ছিলেন আমলাকুল। ‘ফেরাউনের সময়েও আমলা ছিল‘ বলে সাবেক আমলা ও পরিকল্পনামন্ত্রীর সাম্প্রতিক এক মন্তব্য উদ্ধৃত করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেসব কথাবার্তা বলি মানুষ এসব পছন্দ করে না।‘ ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম)-এ এমপিরা সচিবদের ওপরে উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘রাজনৈতিক সরকার। যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান যেখানে আছে সেখানে থাকা উচিত‘। মন্ত্রী হিসাবে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি দু:খ করেছেন যে আগে তাঁরাই জেলার দায়িত্বে ছিলেন, সেখানে গেলে নেতাকর্মীরা আসতেন, তাঁরা গ্রামে যেতেন। এখন সেগুলো হারিয়ে গেছে বলে তিনি যে আক্ষেপ করেন, টিভির সম্প্রচারে তা দেখার সময়ে বোঝা যাচ্ছিলো যে তাঁর গলা ধরে আসছে।

এই যে বিরাজনৈতিকীকরণ তা কি হঠাৎ করে হয়েছে? নাকি এতটাই নীরবে ও সবার অগোচরে ঘটেছে যে তাঁর মত প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিকেরা তা টের পাননি। তিনি অবশ্য এর দায় চাপিয়েছেন সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ওপর। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী রাজনীতিকে রাজনীতিকদের জন্য কঠিন করে দেওয়ার কাজটা জেনারেল জিয়ার সাড়ে তিন বছরে যতটা হয়েছে, তা আওয়ামী লীগ মোট ১৭ বছর ক্ষমতায় থেকেও ঠিক করতে পারেনি। কথাটি যদি ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে এই ব্যর্থতার দায় তো আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কারও নয়।

আওয়ামী লীগ এবং তার ক্ষমতার বর্তমান সহযোগীরা ছাড়া অন্যরা এতোদিন কথাগুলো হয়তো স্পষ্ট করে বলেন নি। কিন্তু এখন তাঁরা খোলামেলাভাবেই বলছেন। সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে নব্বুইয়ের গণঅভ্যুত্থানের তিন জোটের যে যৌথ ঘোষণা, তাতে রাজনীতিকে কালোটাকা এবং সামরিক-বেসামরিক আমলাদের কবলমুক্ত করার অঙ্গীকার ছিল। কিন্তু সেই অঙ্গীকার পরিত্যক্ত হয়েছে, যার দায় কোনো রাজনৈতিক দল ও জোটই এড়াতে পারে না। গত তিন দশকে প্রধান দুটি দলই সৎ-অসৎ ব্যবসায়ী,  সামরিক-বেসামরিক আমলা, ভাগ্যান্বেষী ও অযোগ্য সুবিধাবাদী পেশাজীবি এবং নানাধরণের অপরাধে জড়িত দুর্বৃত্তদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। অবশ্যম্ভবীভাবে ক্ষমতাসীন দলেই এদের প্রাধান্য ও দাপট বেড়েছে।

রাজনীতির স্বাভাবিক গতিধারাকে জোর করে বদলে দিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার যে নতুন নজির তৈরি হয়েছে, তার সুদূরপ্রসারী ক্ষতি যে দেরিতে হলেও অনুভূত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগের সাবেক মিত্র কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের কথায় ব্যাখ্যাটি বেশ ভালোই মিলেছে। প্রথম আলোকে দেওয়া মন্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীনেরা আমলানির্ভর হয়ে পড়েন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমলারা পুরোপুরি এই সরকারকে ঘিরে ফেলে।‘ তাঁর কথায় রাজনীতিবিদেরা একেবারেই প্রান্তিক হয়ে গেছেন। রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের আসল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মহাসচিবের কথাতেও কোনো ভিন্নতা নেই। তিনিও ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে সরকারের প্রশাসননির্ভর হয়ে পড়াকেই সংকটের কারণ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি অবশ্য এ কথাও বলেছেন যে একসময় প্রশাসন–পুলিশ কেবল বিরোধী দল দমনে ব্যস্ত ছিল, এখন সরকারি দলের ওপর ভর করেছে। মন্ত্রী–সাংসদেরা এদের কাছে এখন কিছুই নন।

বিনা প্রতিদ্বন্দিতার নির্বাচনের যে ধারা ২০১৪ সালে শুরু হয়েছে, তার উৎস হচ্ছে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনী ব্যবস্থার অবলুপ্তি। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসাধনে পঞ্চদশ সংশোধনী অনুমোদন থেকেই বস্তুত জাতীয় সংসদ ‘হ্যাঁ  বা না বলার সংসদে‘ রুপান্তরিত হয়েছে। রাজনীতিকেরা যে রাজনীতিতে ক্রমশই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছেন, সে বিষয়ে এখন ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে আর কোনো মতভিন্নতা নেই। আমলাদের দায়ী করলেই এই অবনমন থেকে মুক্তি মিলবে না। নিজেদের দায়টাও স্বীকার করতে হবে এবং সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান দিতে হবে। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনেই রয়েছে রাজনৈতিক সমাধান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে রাজনীতিকেরা কি সেই সমাধানের পথে হাঁটবেন? আর্ন্তজাতিক সংসদীয় দিবসে (ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ পার্লামেন্টারিজম) সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য রাজনীতিকদের উদ্দেশ্যে একথাটি স্মরণ করিয়ে দেওয়া ছাড়া আমরা আর কীই-বা করতে পারি!

(৩০ জুন, ২০২১-‘র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...