সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যেসব কারণে এই ঋষি সেই ঋষি নন

ভারতে ব্রিটিশরাজের শাসন অবসানের ৭৫ বছর পর একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত খোদ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় এ অঞ্চলে এবং তার বাইরে বিশ্বের নানা প্রান্তে বিপুল আগ্রহ ও উৎসাহ তৈরি হয়েছে। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বুহারি যেমন বলেছেন ঋষি সুনাক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়া ২৪০ কোটি মানুষের কমনওয়েলথে তরুণদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করবে।
নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক কীভাবে বা কোন যোগ্যতায় এমন চমক দেখাতে সক্ষম হলেন, তা নিয়েও চলছে নানা ধরনের আলোচনা, বিতর্ক ও বিচার-বিশ্লেষণ। তাঁর ৪২ বছরের জীবনকাহিনি নিবিড়ভাবে পর্যালোচনায় অবশ্য যা দেখা যায় তাতে বলতেই হয়, এই ঋষি সেই ঋষি নন। বরং তাঁর নাটকীয় উত্থানের পেছনে যেমন আছে মেধা ও নিষ্ঠা, তেমনই আছে অভিবাসী পিতা–মাতার সযত্ন নজর এবং অল্প বয়সেই বিপুল ধনসম্পদের অধিকারী হওয়া। বস্তুত ঋষি ব্রিটেনের রাজার চেয়েও ধনী এক প্রধানমন্ত্রী।
ঋষি সুনাক নিজের ব্রিটিশ পরিচয় সম্পর্কে ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকাকে বলেছিলেন, ‘আমি আদমশুমারিতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশের ঘরটিতে টিক চিহ্ন দিই। আমি পুরোপুরি ব্রিটিশ, এটি আমার জন্মভূমি, এটি আমার দেশ। তবে আমার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হচ্ছে ভারতীয়, আমার স্ত্রী ভারতীয়। আমি একজন হিন্দু এবং এ ব্যাপারে কোনো রাখঢাক নেই।’
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নন কেন?
ভারতের সঙ্গে তাঁর বংশগত যোগসূত্র সম্পর্কে দেশটির অনলাইন প্রকাশনা দ্য প্রিন্ট জানাচ্ছে, তাঁর দাদু রামদাস সুনাক অবিভক্ত পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালা থেকে ১৯৩৫ সালে কেনিয়ায় কেরানির চাকরি নিয়ে অভিবাসী হন। ঋষির অনুমোদিত জীবনীকার মাইকেল অ্যাশক্রফটকে উদ্ধৃত করে দ্য প্রিন্ট জানাচ্ছে, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকার কারণেই তাঁর এই দেশত্যাগ। তার আগেই অবশ্য রামদাস তাঁর স্ত্রী রানি সুনাককে নিয়ে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। গুজরানওয়ালার ক্ষত্রি বংশের উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেকে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত পরিচয় না দেওয়ার কারণ হয়তো এটিই। রামদাস পরে কেনিয়ায় ব্রিটিশরাজের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েছিলেন। তাঁদের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। তাঁদের একজন ঋষির বাবা ইয়াশভির সুনাকের জন্ম ১৯৪৯ সালে নাইরোবিতে। ইয়াশভির ১৯৬৬ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে ডাক্তারি পড়তে আসেন এবং এখন সাদাম্পটনে বাস করেন।
ঋষির মায়ের পরিবারও পাঞ্জাবের এবং তাঁরাও আফ্রিকায় অভিবাসী হয়েছিলেন। তাঁর নানা রঘুবির বেরি রেলের প্রকৌশলী হিসেবে তাঞ্জানিয়ায় অভিবাসী হন। তিনি সেখানে জন্ম নেওয়া সরক্ষা সুনাককে বিয়ে করেন। জীবনীকার অ্যাশক্রফটের ভাষ্যমতে, সরক্ষা তাঁর গয়না বিক্রি করে ১৯৬৬ সালে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন এবং কিছুদিন পর তাঁর স্বামীও তাঁর অনুগামী হন। রঘুবির বেরি এরপর ব্রিটিশ রাজস্ব দপ্তরে চাকরি নেন এবং ১৯৮৮ সালে যুক্তরাজ্য সরকার তাঁকে মেম্বার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (এমবিই) খেতাব দেয়। রঘুবিরের তিন কন্যার একজন উষা হলেন ঋষির মা। উষা অ্যাস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্মাকোলজিতে ডিগ্রি নেন এবং তিনি একটি ফার্মেসি পরিচালনা করেন।
ডাক্তার পিতা ও ফার্মাসিস্ট মা ঋষির লেখাপড়ায় বিশেষভাবে নজর দেন এবং উচ্চ ব্যয়ের বেসরকারি আবাসিক স্কুল উইনচেস্টার কলেজে ছেলেকে ভর্তি করান। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ওই স্কুলে বার্ষিক ফি ৫০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০ লাখ টাকা)। এরপর একইভাবে বেশ ব্যয়বহুল অক্সফোর্ড ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে তাঁর উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা হয়। অক্সফোর্ডে তিনি পড়েছেন দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি। ১৭২১ সাল থেক যুক্তরাজ্যে যতজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তার অর্ধেকের বেশি অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেছেন।
বাংলাদেশি কুটি মিয়ার রেস্তোরাঁর কর্মী ঋষি
ঋষির অক্সফোর্ডে পড়ার সময়টি বাংলাদেশিদের জন্য কিছুটা প্রাসঙ্গিক। ঋষি গ্রীষ্মকালীন অবকাশের সময়ে কাজের অভিজ্ঞতার জন্য সাদাম্পটনে একটি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কারি হাউসে কাজ করেন। কুটি’স ব্রাসারি নামের রেস্তোরাঁটি বেশ জনপ্রিয় এবং এখনো তা চালু আছে। কুটি মিয়া রেস্তোরাঁটির মালিক। কারিবিষয়ক সাময়িকী কারি লাইফ–এর প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা জানান, কুটি’স ব্রাসারি তার বিভিন্ন খাবার ও সেবার জন্য রন্ধনশিল্পে বেশ কয়েকবার পুরস্কারও পেয়েছে।
কোভিডের সময়ে রেস্তোরাঁগুলোর জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করায় ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা তাঁর প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। ডাউনিং স্ট্রিটে দেওয়ালির উৎসবে আমন্ত্রিত হয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুনা তাসনিম সে কথাই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম দেওয়ালির আয়োজনে শুধু দুজন রাষ্ট্রদূত আমন্ত্রিত হয়েছিলেন, যাঁদের একজন মুনা তাসনিম ও অপরজন ভারতের বিক্রম দোরাইস্বামী।
ডিশি ঋষি

কারির সঙ্গে যোগসূত্রের কারণে না হলেও ঋষি সুনাককে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডিশি (বাংলা উচ্চারণে দিশিও বলা চলে) ঋষি অভিহিত করে থাকে। এই অভিধা প্রথম চালু করে ডেইলি মেইল। কোভিড মহামারি নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের সময় বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে সহায়তার জন্য অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি সরকারের তহবিল থেকে বেতন দেওয়ার এক নতুন নজির চালু করেছিলেন, যা ফারলো স্কিম নামে পরিচিত। এ ছাড়া রেস্তোরাঁ ও ফাস্ট ফুড ব্যবসাগুলোর সহায়তায় তিনি চালু করেন ‘ইট আউট টু হেল্প আউট’ প্রকল্প।

এ প্রকল্পে ২০২০ সালের জুলাই-আগস্টে নাগরিকেরা রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে মাথাপ্রতি ১০ পাউন্ড করে ছাড় পেয়েছেন, যে টাকাটা সরকার সরাসরি রেস্তোরাঁমালিককে দিয়েছে। হাউস অব কমন্সের ব্রিফিং পেপার বলছে, ওই প্রকল্পে রাষ্ট্রের খরচ হয়েছে ৮৪ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ড। সে সময়ে কোনো কোনো রেস্তোরাঁ দিশি মেনু নামেও আলাদা মেনুর কথা রেস্তোরাঁর বাইরে টাঙিয়ে রাখত। ওই প্রকল্পের কারণে রেস্তোরাঁগুলোতে জনসমাগম বেড়ে যাওয়ায় তা দ্বিতীয় দফায় কোভিড সংক্রমণের কারণ হয়েছে বলে সমালোচনা রয়েছে।

ডিশির অবশ্য অন্য আরেকটি অর্থ আছে। কোনো কিছুর আকর্ষণীয় পরিবেশনকেও ডিশি বলা হয়। কারও কারও মতে, ঋষি যেসব দামি পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করেন এবং নিজেক আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরেন, সে কারণেও তিনি কারও কারও কাছে ডিশি ঋষি।

কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থক ট্যাবলয়েড ডেইলি এক্সপ্রেস জানায়, ডিশি ঋষি অভিধা সম্পর্কে তিনি ব্লু কলার কনজারভেটিজম সম্মেলনে বলেছিলেন যে তাঁর চেয়ে তাঁর স্ত্রী এতে বেশি মজা পেয়েছেন।

ঋষির স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি হলেন বিশ্বের প্রযুক্তিজগতের অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির কন্যা। যার মানে হচ্ছে অক্ষতা নিশ্চিতভাবে শতকোটি ডলার সম্পদের একজন উত্তরাধিকারী। অক্ষতার সঙ্গে ঋষির পরিচয় স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে, যেখানে তিনি ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করছিলেন।


রাজনীতিতে অভাবনীয় দ্রুত উত্থান

ঋষি প্রথমে চাকরি করেছেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসে। ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে চাকরি করেন। এরপর দুটো বিনিয়োগ তহবিল (হেজ ফান্ড) প্রতিষ্ঠায় অংশীদার হন ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজ করেন। রাজনীতিতে বলতে গেলে তিনি নবাগত। মাত্র সাত বছর আগে ২০১৫ সালে প্রথম তিনি কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে মনোনয়ন পান দলটির সাবেক নেতা লর্ড উইলিয়াম হেগের ছেড়ে দেওয়া আসন ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ডে।

২০১৯ সালে বরিস জনসন তাঁকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিফ সেক্রেটারি (প্রতিমন্ত্রী) নিয়োগ করেন, যখন অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন আরেকজন দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাজিদ জাভেদ। বছরখানেকের কম সময়ের মধ্যে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাজিদ জাভেদের স্থলাভিষিক্ত হন ঋষি সুনাক। চলতি বছরেই বরিস জনসনের বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কারণে তিনি এবং সাজিদ জাভেদ কয়েক মিনিটের ব্যবধানে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁদের ওই পদত্যাগের মিছিলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আরও শ’খানেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা শামিল হন এবং শেষ পর্যন্ত বরিস জনসন পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।

বরিস জনসনের পদত্যাগের কারণে কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন অপরিহার্য হয়ে উঠলে তিনি প্রার্থিতা ঘোষণা করেন এবং দলীয় এমপিদের মধ্যে সর্বাধিক ভোট পান। তবে তৃণমূল তাঁর বদলে বেছে নেয় লিজ ট্রাসকে। তিনি লিজ ট্রাসের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে কল্পনার অর্থনীতি বলে বর্ণনা করেন। ট্রাসের বিভ্রান্তিকর করছাড়ের ঘোষণায় যে সংকট তৈরি হয়, তাতে ঋষির প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে তিনি যাঁর কাছে হেরে গিয়েছিলেন, তাঁর পদত্যাগের পরিণতিতে এমপিরা ঋষির নেতৃত্বকেই ভরসা মানেন। ফলে দ্বিতীয় দফা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে তিনি দলের মধ্যেও কোনো ভোট ছাড়াই অভিষিক্ত হন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে। তিনি হলেন গত এক দশকে কনজারভেটিভ পার্টির তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি কোনো সাধারণ নির্বাচন ছাড়াই ওই পদে আসীন হলেন। মাত্র ৪২ বছর বয়সে তিনি শুধু আধুনিক ইতিহাসে যুক্তরাজ্যের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী হলেন তা-ই নয়, তাঁর সরকারি দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাও মাত্র তিন বছরের।

বিপুল বিত্ত ও জনবিচ্ছিন্নতা

প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সবচেয়ে বড় সমালোচনা হচ্ছে তিনি জনবিচ্ছিন্ন। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নেই। তাঁর কোনো শ্রমিকশ্রেণির বন্ধু নেই, এমন একটি বক্তব্যের ভিডিও তাঁর জন্য বিশেষ সমালোচনার কারণ হয়েছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরিণতিতে জ্বালানি ও খাদ্যসামগ্রীর সরবরাহ–সংকট ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে সুদের হার বাড়তে থাকায় মানুষের জীবনে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন তাঁর অগাধ বিত্ত এবং বিলাসী জীবনযাত্রা যে বাড়তি নজরদারির কারণ, হবে তা বলাই বাহুল্য।

বিবিসি রেডিওর এক অনুষ্ঠানে তিনি কেমন রুটি খান, প্রশ্ন করায় জানা যায় যে তাঁর চার সদস্যের পরিবারে একেকজনের পছন্দে একেক রকমের রুটি খাওয়া হয়। তাঁর বয়স যখন ২১, তখনই লন্ডনে তাঁর মা–বাবা তাঁকে একটি ফ্ল্যাট কিনে দেন। সম্পদের নথিপত্রের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ঋষি-অক্ষতা দম্পতির যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকায় রয়েছে একটি পেন্ট হাউস, ৮০ লাখ ডলারের পাঁচ শয়নকক্ষের একটি টাউনহাউস, লন্ডনে ধনীদের এলাকা কেনসিংটনে আছে একটি অ্যাপার্টমেন্ট এবং ইয়র্কশায়ারে ২৩ লাখ ডলারের একটি ম্যানর হাউস। ওই ম্যানর হাউসের সুইমিংপুলের সংস্কারে ব্যয় হচ্ছে ৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

গত গ্রীষ্মে অক্ষতার বিদেশি আয়ের ওপর করের প্রশ্ন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়। আইনত বিদেশে কর দিলে যুক্তরাজ্যে সেই আয়ের ওপরে তাঁকে আর নতুন করে কর দিতে হয় না। এই সুবিধার কারণে তাঁর প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেঁচে যায় বলে হিসাব দেখায় দ্য ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকা। তবে সমালোচনার মুখে অক্ষতা তাঁর বিদেশে অর্জিত আয়ের ওপর যুক্তরাজ্যে কর দিতে সম্মত হন।

ইনফোসিসে এখন বাড়তি নজর

নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা ২৮ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে নারায়ণ মূর্তির ইনফোসিস পরিচালনার নীতি ও পদ্ধতির বিষয়ে নতুন কিছু প্রশ্ন তুলেছে। কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের কাজ ভারতে স্থানান্তরের (অফশোরিং) মাধ্যমে আমেরিকান কর্মীদের ক্ষতি করেছে বলে এতে অভিযোগ করা হয়।

পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমেও কোম্পানিটি লাভবান হয়েছে বলে পত্রিকাটি দাবি করে। এতে বলা হয়, কোম্পানির একজন কর্মকর্তার (হুইসেলব্লোয়ার) অভিযোগ পেয়ে ২০১৩ সালে কংগ্রেস একটি শুনানি করে এবং মামলা হয়। ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে বিচার দপ্তরের একটি মামলা আপসে নিষ্পত্তি করতে ইনফোসিস ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার দেয়। ২০১৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে একটি করের অভিযোগও আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি করা হয়।

ইনফোসিসের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের একটি চুক্তি নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠছে বলে পত্রিকাটি জানিয়েছে। মূলত অক্ষতা মূর্তি এবং তাঁর স্বামী হিসেবে ঋষি সুনাক ইনফোসিসের যেসব শেয়ারের অধিকারী এবং ভবিষ্যতে উত্তরাধিকারী হবেন, তার কারণেই কোম্পানিটির কার্যক্রম বাড়তি নজর কাড়ছে।

ঋষি জানেন তাঁর কত সম্পদ, জনগণ জানে না

ঋষি সুনাক যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় সেখানে বসবাসের জন্য যে গ্রিন কার্ড নিয়েছিলেন, তা যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী থাকার সময়ও তিনি ত্যাগ না করায় প্রশ্নের মুখোমুখি হন এবং গত বছরে সেই সুবিধা তিনি ত্যাগ করেন। গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঋষি সুনাক অর্থমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর পরিবারের আর্থিক স্বার্থের বিষয়গুলো প্রকাশ করেননি।

এর মধ্যে আছে ইনফোসিসে তাঁদের শেয়ারের পরিমাণ এবং ভারতে আমাজনের সঙ্গে বার্ষিক শতকোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রকল্পে অংশীদারত্বের পরিমাণ। তিনি ২০১৯ সালে তাঁর সম্পদ একটি ব্লাইন্ড ট্রাস্টে স্থানান্তর করেছিলেন এবং একটি স্বাধীন তদন্তে বলা হয়েছে যে তিনি কোনো আইন ভঙ্গ করেননি।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ব্লাইন্ড ট্রাস্টের বিনিয়োগ সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এই ট্রাস্ট কোথায় বিনিয়োগ করছে, তা অর্থের মালিক জানতে পারেন না। তবে সংসদীয় বিধিতে সাধারণ নির্দেশনা দেওয়ার সুযোগ তাঁর রয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, সুনাক জানেন তাঁর কতটা সম্পদ ট্রাস্টে রয়েছে, কিন্তু জনগণের তা জানার সুযোগ নেই। ঋষি সুনাক তো মুনি-ঋষিদের মতো কেউ নন, সে কথা নিশ্চয়ই এখন আর মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

(১ নভেম্বর, ২০২২–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime in N

একটি জরিপ, নৈরাশ্য ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্ন

উন্নত গণতন্ত্রে সরকার , সরকারপ্রধান, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল এবং বিভিন্ন বিতর্কিত ইস্যুতে প্রায়ই জনমত জরিপ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কখনো বিশ্ববিদ্যালয়, কখনো সংবাদমাধ্যম, আবার কখনো বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব জরিপ করায়। বেশ কিছু পেশাদার জরিপকারী প্রতিষ্ঠানও আছে, যারা শুধু জরিপের কাজ করে। এসব জরিপ আমাদের গণমাধ্যমগুলোর অনলাইন ভোটের মতো নয়, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুধু সেই ওয়েবসাইটের নিয়মিত ব্যবহারকারীদের মতামত ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের দেশে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রায় দুই দশক বার্ষিক জরিপে রাজনীতির গতিপ্রকৃতির চমৎকার প্রতিফলন দেখা যেত। কিন্তু গণতন্ত্রের ক্ষয়সাধনের সঙ্গে সঙ্গে সেই চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়িক প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে জরিপ করতে গেলে সরকারের সায় আছে কিনা সেটা দেখা হয়, নইলে পেশাদার বিশেষজ্ঞরা বা তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলো ওই দায়িত্ব নিতে চান না। কথা বলার ভয়ের মতো মতামত জানতে চাওয়াতেও এক ধরনের ভয়ের আসর পড়েছে। গণতন্ত্র প্রসারে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট, আইআরআই এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তারা এখনো মাঝে মধ্যে স্পর্শকাতর রাজন

ভিসা নিষেধাজ্ঞা গুরুতর, সাংবাদিক নির্যাতন কী

একই দিনের দুটি সংবাদ শিরোনাম, ’৯ মাসে ২১৭ সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার: আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ এবং ’পিটার হাসের বক্তব্য স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর চাপ, সমাবেশে সাংবাদিকনেতারা’। দুটো খবরই সাংবাদিকতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে। তবে একটি খবর, যাতে আছে সেই সব সাংবাদিকদের কথা, যাঁরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শারীরিক ক্ষতি অথবা গ্রেপ্তার ও মামলার কারণে হয়রানির শিকার হয়েছেন; আর অন্যটিতে ভবিষ্যতে কোনো গণমাধ্যমকর্মী যুক্তরাষ্ট্র যেতে চাইলে ভিসা না পাওয়ার কারণে তিনি বা তাঁর যে সম্ভাব্য ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়ে আশঙ্কা। সাংবাদিকদের নিপীড়ন–নির্যাতন ও হয়রানির বিষয়ে গবেষণার কাজ ও তা প্রকাশের দায়িত্ব পালন করেছে একটি মানবাধিকার সংগঠন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার দুশ্চিন্তায় প্রতিবাদী হয়েছেন সাংবাদিকদের অপেক্ষাকৃত নতুন একটি প্লাটফর্ম জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট।  বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিয়মিত কাজের একটি হচ্ছে বিভিন্ন নিপীড়ন–নির্যাতন ও হয়রানির মত অধিকার লংঘনের তথ্য সংগ্রহ করা এবং তারই অংশ হিসাবে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ পেশা সাংবাদিকতার ওপর তাদের আলাদা মনোযোগ। তাদের প্রকাশিত হিসাব