সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পরিবহন ধর্মঘট কেন রাজনৈতিক হাতিয়ার

মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধান। ২২ ও ২৮ অক্টোবর, ঘটনাস্থল খুলনা। দুটি জনসভা—প্রথমটি বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ আর দ্বিতীয়টি চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। প্রথম সমাবেশটির কারণে খুলনা বিভাগজুড়ে তিন দিন ধরে সব সড়কে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় সমাবেশটিতে লোকজনকে বাস ও ট্রাকে চড়ে স্লোগান দিয়ে যোগ দিতে দেখলাম। তাঁরা কোথাও কোনো বাধার সম্মুখীন হননি। (রংপুরে বিএনপির সমাবেশ ও একই দিনে ঢাকায় আওয়ামী লীগের জেলা সম্মেলনের সমাবেশের তুলনা মোটেও যৌক্তিক নয়। ক্ষমতাসীন দল সব সময়ই যে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনকি আওয়ামী লীগের সম্মেলন যে মাঠে হয়েছে, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনার নিরাপত্তার কারণে অন্য কোনো দল কখনো সেটি ব্যবহারের সুযোগ পাবে বলে মনে হয় না।)

ইসলামী আন্দোলন যেভাবে সমাবেশ করতে পেরেছে, সেটাই হওয়ার কথা। সংগঠন ও সভা–সমাবেশের অধিকার সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১৮-এর নির্বাচনের সময় সংলাপে পাওয়া আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এবং তখনো দেখা গেল ঢাকায় নির্বাচনী জনসভা করার জন্য বিএনপি অনুমতি পেল না, কিন্তু ইসলামী আন্দোলন বড় সমাবেশ করার সুযোগ পেল। এসব ঘটনার উল্লেখ করার কারণ এটি বলা নয় যে ইসলামী আন্দোলন সরকারের আশীর্বাদ পেয়েছিল, বরং বিএনপির প্রতি যে বৈষম্য করা হয়েছিল, সেটা মনে করিয়ে দেওয়া।

বিএনপির প্রতি বৈষম্য করে এবং বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ক্ষমতাসীন দল বা সরকার কতটা লাভবান হচ্ছে বা আদৌ হচ্ছে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর তারাই ভালো দিতে পারবে। তবে বিএনপির সমাবেশে নানা ধরনের বাধা ও প্রতিকূলতা সৃষ্টি করায় ঝিমিয়ে পড়া দলটি যে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে, তা মোটামুটি স্পষ্ট। এ জন্য বিএনপি আওয়ামী লীগকে বরং আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে পারে। মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা লংমার্চের পর আর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে দলের কর্মী-সমর্থকেরা চিড়া-মুড়ি-গুড় নিয়ে আগের দিনই সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন, মাটিতে শুয়ে রাত কাটিয়েছেন, এমন দৃশ্য বিরল। এসব ছবি সংবাদমাধ্যমেই উঠে এসেছে। মোটরযান বন্ধ রাখায় তাঁরা নৌকা কিংবা ট্রলারে, ট্রেন ও ভ্যানে চেপে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।

দেড় দশকের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং নানা ধরনের মামলা-হামলার পরও বিএনপি দলটি যে নিঃশেষ হয়ে যায়নি, তা বেশ ভালোভাবেই তারা বুঝিয়ে দিয়েছে। সমাবেশের আকার বা পরিধি নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু তারাই যে এখনো সরকারের প্রতিপক্ষ, সেটা অস্বীকারের উপায় নেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বরং কিছুটা বিস্মিত যে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও দলটির সমর্থকেরা এসব সমাবেশে হাজির হচ্ছেন। খালেদা জিয়া যখন বাড়িতে বিভিন্ন শর্তের জালে বন্দী এবং দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান যখন কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে নির্বাসনে, তখন নেতৃত্বশূন্যতার কারণে যে ধারণাটি চালু ছিল, তা হলো দলটি ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হবে। ক্ষমতাসীন দল থেকেও বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে, কে দেবে দলটির নেতৃত্ব? এসব জনসমাবেশ থেকে সম্ভবত এ প্রশ্নের উত্তর কী হতে পারে, তার আভাস মেলে। উপমহাদেশের অনেক পুরোনো ও বড় দলে এর নজির রয়েছে। ভারতে কংগ্রেসে মল্লিকার্জুন খাড়গে দলের সভাপতি নির্বাচিত হলেও সুতার নাটাই যে গান্ধী পরিবারের হাতেই থাকছে, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, সরকার এবং মুসলিম লীগের নেতা হলেও নেপথ্যের ক্ষমতা যে তাঁর বড় ভাই নওয়াজ শরিফের কাছে, তা সবার কাছেই স্পষ্ট।

বিএনপির অবশ্য আরও একটি লাভ হয়েছে। গত এক দশকে, বিশেষ করে খালেদা জিয়াকে দণ্ড দিয়ে জেলে পাঠানোর পর বিএনপি সংবাদমাধ্যমে ক্রমেই গৌণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। সংবাদপত্রের পেছনের পাতা কিংবা ভেতরের পাতায় এক কলামে কয়েক ইঞ্চি বরাদ্দই যেন তাদের নিয়তি হয়ে উঠেছিল। টিভি পর্দায়ও তারা ছিল সংবাদক্রমের তলানিতে। কিন্তু সাম্প্রতিক সমাবেশগুলো তাদের প্রথম পাতায় ও টিভির মূল শিরোনামে উঠিয়ে এনেছে। রাজনীতিতে ঠ্যাংগাড়ে ভাষায় ‘খেলা হবে’ হুংকার যখন থেকে শুরু হয়েছে এবং মারধর করা ও নানাভাবে সভা–সমাবেশে বাধা তৈরি বেড়েছে, তখন থেকেই সংবাদমাধ্যমে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রমের গুরুত্ব বহুগুণে বেড়ে গেছে। সরকার-সমর্থক বা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতানির্ভর সংবাদমাধ্যমগুলোর পক্ষেও এসব খবর উপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ নিবন্ধের আলোচ্য অবশ্য বিএনপির লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ নয়, বরং বিএনপিকে চাপে (শায়েস্তাও পড়তে পারেন) রাখতে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দেওয়া কেন, সেই প্রসঙ্গ। বাস-ট্রাক ধর্মঘট সরকার ডাকেনি ঠিকই, কিন্তু সরকারের কোনো দায় নেই, এমন দাবি দুর্ভোগের শিকার কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে কি উপহাস নয়? বাস-ট্রাকমালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনগুলোয় ক্ষমতাসীন দলের প্রাধান্য ও নিয়ন্ত্রণের কথা সবারই জানা। যখন যে দল সরকারে থাকে, এসব সমিতিতে তখন সেই দলেরই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পায়। সুতরাং ক্ষমতাসীন দলের যে এসব ধর্মঘটে ভূমিকা রয়েছে, তা নিয়ে জনমনে কোনো সংশয় নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, গণপরিবহন ধর্মঘটকে রাজনৈতিক হাতিয়ারে রূপান্তরের পরিণতি কী?

চট্টগ্রাম ও খুলনার ধর্মঘটগুলোর সময় সরকারের মন্ত্রীরা বললেন যে এসব আঞ্চলিক ধর্মঘটের বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই। পরে সমালোচনার মুখে তাঁরা এখন বলা শুরু করেছেন যে বাস-ট্রাকে আগুন লাগানো হতে পারে, এমন আশঙ্কায় মালিক-শ্রমিকেরা পরিবহন বন্ধ রেখেছেন। তাঁরা এ জন্য ২০১৩-১৪ সালের কথিত আগুন–সন্ত্রাসের ইতিহাস তুলে ধরে ওই আশঙ্কার যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের এ দুটি যুক্তিতেই সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, ধর্মঘটকারীরা ধর্মঘটের যে কারণগুলো বলেছেন, তা কিছু আঞ্চলিক দাবি এবং তাতে ‘আগুন-সন্ত্রাসের’ আশঙ্কার কথা নেই। আর সরকার যদি ‘আগুন–সন্ত্রাসের’ আশঙ্কা করে থাকে, তাহলে তাদের শঙ্কামুক্ত করার মতো উপযুক্ত নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কার? সরকার যদি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে না পারে, তাহলে তারা কীভাবে শাসনকাজ পরিচালনা করবে?

দ্বিতীয়ত, পরিবহন ধর্মঘট আঞ্চলিক হোক কিংবা জাতীয় পরিসরে হোক, তা নিরসনের দায়িত্ব কার? বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাজ কী? দ্য মোটর ভেহিকেলস অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩–এর ৫২ অনুচ্ছেদে সড়ক পরিবহনের নিয়ন্ত্রণে সরকারের ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট করে বলা আছে। অনুচ্ছেদ ৬০–এ রয়েছে গণপরিবহনের অনুমতি বা পারমিট দেওয়ার শর্তগুলো। আর ৭২–এ আছে অনুমতি বাতিল বা স্থগিত করার ক্ষমতা। এই ৭২–এর(ই)–তে বলা হচ্ছে, যে উদ্দেশ্যে পারমিট দেওয়া হয়েছে, কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া সেই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হলে বেসরকারি সেই যান বা যানগুলোর পারমিট বাতিল বা স্থগিত করা যাবে।

হঠাৎ যারা ধর্মঘট শুরু করে, তারা যে স্পষ্টভাবে পারমিটের শর্ত লঙ্ঘন করছে, তা নিয়ে কি সন্দেহের কোনো অবকাশ আছে? আইন অনুযায়ী সরকার পরিবহন সমন্বয় কমিটির (ট্রান্সপোর্ট কো–অর্ডিনেশন কমিটি) সভা করে অথবা অন্য কোনোভাবে ধর্মঘট নিরসনের ব্যবস্থা নেবে, সেটাই তো প্রত্যাশিত। অথচ সে রকম কিছু না করে সরকার নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলেই মনে হয়েছে। বিএনপির জনসমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধর্মঘটও শেষ হয়েছে। কোনো দাবি পূরণ হয়েছে অথবা সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে—এমন কিছু শোনা যায়নি। এগুলো সরকারের পরোক্ষ উৎসাহ বা পৃষ্ঠপোষকতা বলে যদি কেউ দাবি করে, তাহলে তা কি নাকচ করা সম্ভব?

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের জন্য বাধাবিঘ্ন সৃষ্টির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সেই অক্ষমতার জন্য করুণা করা যায়। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীকে হেনস্তা করতে গিয়ে জনভোগান্তি তৈরি নিন্দনীয়। সেই পরিস্থিতিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

(৩ নভেম্বর, ২০২২–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...