সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে অজুহাত আর নয়

 


দিন দুয়েক  আগে বরিশালের একটি অনলাইন সংবাদ পোর্টালের সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী ই–মেইলে আমাকে কিছু নথির কপি পাঠিয়েছেন। নথিটি তাঁর একটি মামলার অভিযোগপত্র। তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলার আসামী। ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়রের ছবি ধারণ করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে এ মামলাটি হয়। ছবিটি প্রকাশ্য জায়গার এবং জনপ্রতিনিধি হিসাবে তাঁর প্রকাশ্য কর্মকান্ড জনস্বার্থসর্ম্পকিত হওয়ায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রশ্ন ওঠারও কোনো অবকাশ নেই। তবু মামলা হয় এবং তিনিসহ আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুই সপ্তাহ জেল খাটার পর তিনি জামিন পান। পুলিশ জব্দ করা ভিডিও ফুটেজ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠালে ছবিতে কারো চেহারা চেনা না যাওয়ায় অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু এরপরও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দে্‌য়া হয়েছে। 


এর মধ্যে মামুনুরকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিতও করা হয়েছে। তাঁর আশঙ্কা অভিযোগপত্র দেওয়ার কারণে এখন তাঁকে আর জামিন দেওয়া হবে না এবং বিচার চলাকালে তাঁকে জেল খাটতে হবে। তা ছাড়া রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তির অভিযোগের কারণে মামলায় সুবিচার মিলবে না বলেই তাঁর ভয়। ফরেনসিক রিপোর্টে প্রমাণ না মেলার পরও অভিযোগপত্র দায়েরে সেই ইঙ্গিত রয়েছে বলেই তাঁর ধারণা। 


ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সুবিচার না পাওয়ার আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার সাম্প্রতিক একটি প্রমাণ হচ্ছে রংপুর সাইবার ট্রাইবুনালে হিন্দু কিশোর পরিতোষ সরকারের সাজার রায়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার এবং তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদন্ড। ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর রংপুরের পীরগঞ্জে ফেসবুকে মন্তব্যের অভিযোগে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামায় ৬০টি বাড়িঘরে ভাংচুর করা হয়। পরিতোষ তখন দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তার কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোনে ফরেনসিক পরীক্ষায় কোনো প্রমাণ উদ্ধার করতে পারে নি এবং সে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিল। কিন্তু তারপরও তাকে দোষী সাব্যস্ত করে দন্ড দেওয়া হয়েছে। নেতৃস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠক, অধ্যাপক সি আর আবরার ডেইলি স্টার পত্রিকায় লিখেছেন, পরিতোষের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ ঘটেছে। সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য দায়ী অভিযুক্তদের সঙ্গে একই কারাগারে আটক রাখার জন্য নিরাপত্তার অজুহাতে পরিতোষকে আট মাস নির্জন কক্ষে বন্দী রাখা হয়েছিল বলেও কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।   


ওপরের ঘটনা দুটো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সম্ভাব্য অপপ্রয়োগে কী ধরণের ভোগান্তি হয়, তার নজির। যেসব অভিযোগে ওই মামলা দুটো হয়েছে, তার বেলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিদ্যমান ধারাগুলো প্রয়োগের বিষয়ে দেশের মানবাধিকার কর্মী ও নাগিরক সংগঠনগুলো শুরু থেকেই উদ্বেগ ও আপত্তি জানিয়ে আসছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা, অফিস অফ দি হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর)ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে সব অংশের ওপর উদ্বেগ প্রকাশ করে তা সংশোধনের সুপারিশ করেছে, তার মধ্যেও ওইসব ধারার কথা আছে। প্রথম আলোর প্রশ্নের জবাবে ওএইচসিএইচআর গত মাসের মাধামাঝি জানিয়েছিল যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের জন্য তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা মূলত তিনটি বিষয়ে 


বিষয়গুলো হলো ভিন্নমত প্রকাশকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, কথিত অপরাধ প্রতিরোধের ক্ষমতার পরিধির ব্যাপকতা এবং জামিন ছাড়া দীর্ঘ সময়ের বন্দিত্ব। উদাহরণ হিসেবে বিদ্যমান আইনের ২৮ ধারার কথা উল্লেখ করে সংস্থা জানায়, ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন তথ্য প্রকাশের জন্য যে কেউ অপরাধী গণ্য হবে’, এমন বিধান সমস্যাপূর্ণ। পুলিশ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ, ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সিকে (ডিএসএ) দেওয়া ক্ষমতার পরিধি নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ তুলে ধরতে গিয়ে আইনের ৮ নম্বর ধারার কথা উল্লেখ করা হয়। ওই ধারায় বলা হয়েছে, ‘ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের বা উহার কোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে, বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে’ – এমন কাজ অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের তৃতীয় ক্ষেত্রটি হচ্ছে জামিন-অযোগ্য ধারাগুলো এবং বিচারপূর্ব বন্দিত্ব। ওএইচসিএইচআরের মুখপত্রের কথায়, ‘যেসব অপরাধ অজামিনযোগ্য, সেগুলোর মানে হচ্ছে বিচারের আগেই দীর্ঘ বন্দিত্ব।’ আইনে ’অপরাধের আমলযোগ্যতা ও জামিনযোগ্যতা’ উপশিরোনামের ৫৩ ধারায় মোট ১৪টি ধারা অজামিনযোগ্য হিসেবে নির্দিষ্ট করা আছে। এগুলো হচ্ছে: ধারা ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪। আইনটি জারির পর থেকে এ পর্যন্ত দায়ের হওয়া অধিকাংশ মামলাই হয়েছে এসব অজামিনযোগ্য ধারায়।


ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে দেশে–বিদেশে সমালোচনা ও সমস্যাপূর্ণ বিধিবিধান সংশোধনের দাবির মুখে সরকার প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়নে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। গত বছরের আগষ্টে বাংলাদেশ সফরের সময়ে আগের হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত বলেছিলেন যে তাঁর দপ্তর সরকারের কাছে আইনটি সংশোধনে সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা পেশ করেছে। তিনি তখন ওই সুপারিশ অনুযায়ী আইনটি সংশোধনের জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে একান্তে কথা বলেছিলেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনেও প্রকাশ্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। 


কিন্তু গত কয়েক মাসে মন্ত্রীদের অনেকে এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন পরিসরে ডিজিটাল আইনকে অপরিহার্য হিসাবে তুলে ধরায় সোৎসাহে সোচ্চার হয়েছেন। জঙ্গিবাদ ও সাইবার অপরাধের যেকোনো ঘটনার ক্ষেত্রেই এই আইনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ফলে আইনটি আদৌ সংশোধন করা হবে কি না, সে প্রশ্নে সংশয় তৈরি হয়েছে। এই পটভূমিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি  আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ওএইচসিআর সরকারের কাছে যা দিয়েছে, তা  সুপারিশমালার খসড়া, চূড়ান্ত কিছু নয়। তিনি আরও বলেন, ওই সুপারিশমালার খসড়া নিয়ে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে, আরও আলোচনার জন্য সময় চাওয়া হয়েছে। ওএইচসিআর সময় দিলে আলোচনা হবে। 


আইনমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর দুই সপ্তাহ পার হয়নি। কিন্তু মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক নতুন হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক বলেছেন, তাঁর দপ্তরের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের আহ্বান জানাচ্ছেন। তাঁর কথায় কোনো অস্পষ্টতা নেই; বরং সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শেষ হওয়ার কথা আছে। তিনি আরও বলেছেন, যারা তাদের স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং বিশ্বাসের অধিকার প্রয়োগ করছে, তাদের বিরুদ্ধে এ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ফৌজদারি সাজা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।


ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যে ভিন্নমত দমন এবং রাজনৈতিক হয়রানির পছন্দের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের বাইরে অন্য কারও মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেও অনেকে গোষ্ঠীগত ও উপদলীয় দ্বন্দ্বে এই হাতিয়ারের অপপ্রয়োগের ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। শুরুতে বরিশালের সাংবাদিক মামুনুরের যে মামলার কথা বলেছি, ওই মামলাতেই যুবলীগের একজন নেতা তাঁর সহ–অভিযুক্ত। আইনটি তৈরি হওয়ার আগেই সম্পাদক পরিষদের কাছে আইনমন্ত্রী ও তখনকার তথ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন যে নিবর্তনমূলক ধারার বিষয়ে তাঁদের প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হবে। কিন্তু ২০১৮’র নির্বাচনী মৌসুমে তড়িঘড়ি করে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই তা পাশ করা হয়। তারপর থেকেই বলা হচ্ছে, আর্ন্তজাতিক বিশৈষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। চার বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, এখন আর অপেক্ষার কোনোই যুক্তি নেই। ভিন্নমত দমনের পছন্দনীয় হাতিয়ারটি যদি রেখে দেওয়ার বাসনাই থাকে, তাহলে তা স্পষ্ট করে বলার সততাও থাকা দরকার। 


(৯ মার্চ, ২০২৩–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...