সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অপ্রয়োজনীয় কূটনৈতিক বিতর্কে কী লাভ ?

লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশন যে ভবনে অবস্থিত, সেই ইন্ডিয়া হাউসের লাগোয়া ঐতিহাসিক স্থাপনা বুশ হাউস ১৫ বছর ছিল আমার কর্মস্থল। আমি বিবিসি ছাড়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তারা বুশ হাউসও ছেড়ে যায় এবং তাদের বর্তমান ঠিকানা নিউ ব্রডকাস্টিং হাউস। বুশ হাউসের আরেক পাশে অস্ট্রেলিয়া হাউস, যেখানে অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনের অবস্থান। আমি ওই ১৫ বছরে এক দিনের জন্যও ভারতীয় বা অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনে ব্রিটিশ পুলিশের কাউকে পাহারা দিতে দেখিনি। এমনকি লন্ডনে যখন একযোগে তিনটি জায়গায় সন্ত্রাসী হামলা হয়, তখনো না।


সম্ভবত ২০০২-০৩ সালের দিকে ভারতের তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী এল কে আদভানি ইন্ডিয়া হাউসে যে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন, সেখানে যেতেও কোনো পুলিশি তৎপরতা বা তল্লাশির মুখে পড়িনি। ব্যতিক্রম শুধু দেখেছি বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর ইস্যুতে কয়েকবার প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সময়। তখন অল্প কিছু পুলিশ কাছেই প্রস্তুত থাকত আর বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের দূরত্ব ঠিক করে দিয়ে সাময়িক বেষ্টনী বসিয়ে দিত। অন্য সব সময়ে হাইকমিশনের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থায় ওই ভবনে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত হতো। এখন ওই ভবনে বসেন আমাদের বাংলাদেশিদের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত কূটনীতিক বিক্রম দোরাইস্বামী। তিনি এখন লন্ডনে ভারতের হাইকমিশনার।

মাস দু-এক আগের কথা। ইন্ডিয়া হাউসের সামনে ব্রিটিশ ভারতীয় শিখরা কয়েক দিন ধরে প্রতিবাদ সমাবেশ করছিলেন। শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী ধর্মগুরু অমৃতপাল সিংকে গ্রেপ্তারের অভিযানকে কেন্দ্র করে ওই বিক্ষোভ। গত ১৯ মার্চ তাঁদের মধ্য থেকে কয়েকজন দেয়াল বেয়ে দোতলার ব্যালকনিতে উঠে ভারতের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলেন। অঘটনের পর পুলিশ এসে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের সরিয়ে দেয় এবং পরে কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। তবে একটি রাষ্ট্রের কূটনৈতিক স্থাপনার মর্যাদা রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য পুলিশ ব্রিটিশ সরকার যে বিব্রত হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ঘটনার জন্য তারা দুঃখপ্রকাশ করে এবং সেখানে নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

তিন দিন পর ২২ মার্চ নয়াদিল্লিতে চাণক্যপুরিতে ব্রিটিশ হাইকমিশন রাজাজি মার্গে হাইকমিশনারের বাসভবনের সামনে রাস্তায় যে বিশেষ নিরাপত্তা প্রতিবন্ধক বসানো ছিল, তা সরিয়ে নেওয়া হয়। ব্যারিকেড সরিয়ে নিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা একটু কমিয়ে দিলেও তা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টিতে কোনো কথা বলেনি। ব্রিটিশ হাইকমিশনের কাছে ভারতীয় সাংবাদিকেরা জানতে চাইল এটা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তারা দেখছে কিনা। জবাব ছিল; নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা প্রকাশ্যে কিছু বলি না।

ভারতে এর আগেও রকম ঘটনা ঘটেছে। ২০১৩ সালে গৃহসেবকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগেড়েকে ওয়াশিংটন পুলিশ ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে আটক করেছিল। এরপর দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সামনে থেকে একইভাবে নিরাপত্তা ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এবার সানফ্রান্সিসকোতেও ভারতীয় কনস্যুলেটে জানালা-দরজা ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। তবে তাতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে মন্ত্রণালয়ে তলব করে প্রতিবাদ জানানোর বাইরে ভারত আর কিছু করেনি। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সামনের নিরাপত্তাবেষ্টনী অপসারণ করেনি।

কূটনীতিও যে ইটের বদলে পাটকেল ছোড়ার নীতি থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়, তার নজির আমাদের প্রতিবেশী দেশে রয়েছে। কিন্তু তারা তা নিয়ে স্বদেশে কিংবা বিদেশে বাহাদুরি দেখায়নি। আমাদের দেশের কোনো কূটনীতিককে অন্য কোনো দেশে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানীর মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি বা ভারতের লন্ডন হাইকমিশনের মতো আমাদের কোনো দূতাবাসে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ছয়টি দেশের কূটনীতিকদের যে বাড়তি নিরাপত্তার সুবিধার ইতি টানা হয়েছে, তাকে তাই দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির কারণে স্বাভাবিক পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ ছিল। কিন্তু যেভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অপ্রয়োজনীয় কৃতিত্ব জাহিরের চেষ্টা করেছেন, তাতে স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টিতে রাজনীতির যোগসূত্র খোঁজা হচ্ছে। তিনি শুধু বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের কথাই বলেননি, কূটনীতিকদের গাড়িতে পতাকা উড়ানোও বন্ধ করার কথা বলেছেন। এমনকি কৃচ্ছ্রসাধনের কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন তারা চাইলে খরচ দিলে আনসারের ব্যবস্থা করা হবে। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী উপমন্ত্রী মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত জনপ্রতিনিধির নিরাপত্তা চলাচলের জন্য রাস্তা খালি করার বিশাল উদ্যোগ-আয়োজন বহাল রেখে কৃচ্ছ্রসাধনের যুক্তি বেশ হাস্যকর শোনায়। উন্নত গণতন্ত্রে মন্ত্রীরা সাধারণ মানুষের মতো গণপরিবহনেই চলাফেরা করেন এবং তাঁদের সঙ্গে শাস্ত্রী ফরমাশখাটা বান্দারা ঘোরেন না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্যের সূত্র ধরে যেসব প্রশ্ন উঠেছে সেগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকেরা পররাষ্ট্রসচিবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদের উত্থানের যে আশঙ্কা ছিল, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে বা নিরাপত্তার বিবেচনায় তখন তাঁদের এটা (বাড়তি নিরাপত্তা) দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময় দেখা গেছে যে মূলত তারা ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্সের কাজটাই (বাড়তি পুলিশ পাহারা) করত। সুতরাং আসল নিরাপত্তার যে বিষয়, তা অপরিবর্তিত আছে। নিরাপত্তার দিক থেকে কোনো ঘাটতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না।বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের পতাকা ব্যবহারের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আসছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি তাহলে মন্ত্রী কিসের ভিত্তিতে রাষ্ট্রদূতদের গাড়িতে পতাকা উত্তোলন বন্ধের কথা বললেন?

কূটনীতিকদের আচারবিধি, অধিকার মর্যাদার বিষয়গুলো পরিচালিত হয় ১৯৬১ সালের এপ্রিলে গৃহীত ভিয়েনা সনদ অনুসারে। ওই সনদে যেসব অধিকারের বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলো সম্মত হয়েছে, তা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা সব দেশের রয়েছে। ভিয়েনা সনদের অনুচ্ছেদ ২০ স্পষ্ট করে বলছে, দূতাবাস তার প্রধান তাঁর বাসভবনসহ মিশন প্রাঙ্গণে এবং তাঁর যানবাহনে তাঁর দেশের পতাকা প্রতীক ব্যবহার করার অধিকার রাখেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি থাকার সময় আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্ক শহরে বা যুক্তরাষ্ট্রে ধরনের সুবিধা পাননি বলে দেশে দেশে রাষ্ট্রদূতদের তা প্রাপ্য নয়, এমন ধারণা দুর্ভাগ্যজনক। জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি যে সুবিধা পান না, ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূতেরা সে সুবিধা পান। ভিয়েনা সনদের সুবিধা জাতিসংঘে প্রতিনিধিত্বকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেননা, তাঁদের সুযোগ-সুবিধা প্রধানত জাতিসংঘের নিজস্ব নিয়মকানুনেই নির্ধারিত হয়।

ভিয়েনা সনদেই কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে অনুচ্ছেদ ২৯- নির্দেশনা রয়েছে। এতে শুধু শারীরিক আক্রমণ নয়, তাঁর স্বাধীনতা মর্যাদা সুরক্ষার কথাও বলা আছে। বাংলাদেশে কূটনীতিকদের নিরাপত্তার রেকর্ড যে একেবারে নির্ভেজাল, তা বলা যাবে না। ১৯৭৫ সালে ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনকে রাজনৈতিক কারণে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সশস্ত্র গোষ্ঠী জিম্মি করার চেষ্টা করেছিল এবং ধানমন্ডিতে হাইকমিশন চত্বরে হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল।

 
২০০৪ সালে সিলেটে শাহজালালের দরগায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ঢাকায় ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়ির ওপর হামলা হয়েছিল, যে মামলার বিচার এখনো সম্ভব হয়নি। কিছুদিন আগে বর্তমান রাষ্ট্রদূত পিটার হাস অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। জঙ্গি হামলার ঝুঁকি কমলেও রাজনৈতিক কারণে হেনস্তা হওয়ার ঝুঁকি যে দূর হয়েছে, সে কথা খুব জোর দিয়ে বলা যাবে কি? বিশেষ করে, পাশ্চাত্যের দেশগুলোর গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন মানবাধিকার নিয়ে অব্যাহত সমালোচনার কারণে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার কোনো প্রভাব যে দলটির সমর্থকদের ওপর পড়বে না, তার নিশ্চয়তা কী? একইভাবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রতিবেশী দেশের ভূমিকার কারণে যারা ক্ষুব্ধ হয়েছিল, তাদের সে ক্ষোভের কি নিরসন ঘটেছে?

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলের প্রতিক্রিয়ায় ততটা আশাবাদী হওয়ার অবকাশ আছে কি? ‘আমরা বিদেশিদের পাত্তা দেই না’—এমন ইমেজ তৈরির চেষ্টা রাজনীতির মাঠে চলতে পারে, কিন্তু কূটনীতিতে তা সুফল দেওয়ার নজির কই

(১৮ মে, ২০২৩–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...